ঢাকা ১০:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুদের হার বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:২৯:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুন ২০২৩
  • ১০৬ বার

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে অর্থ সরবরাহ কমাতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি টাকার মান বাড়াতে নীতি সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী অর্থবছরের (২০২৩–২৪) প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশের সীমা তুলে নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১০.৯ শতাংশ।

এছাড়া নতুন মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সস্তায় ডলার কেনার পথও বন্ধ করা হয়েছে। ডলার কিনতে হবে বাজার দরে। রেপোর সুদহার বাড়ানো হয়েছে ৫০ বেসিস পয়েন্ট।

আজ রোববার (১৮ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ষান্মাসিকের জন্য (জুলাই-ডিসেম্বর-২০২৩) নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে নতুন মুদ্রানীতি তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান।

প্রশ্নোত্তর পর্বে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, বিশ্বব্যাপী বর্তমানে চার ধরনের লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক মুদ্রানীতি প্রচলিত আছে। সুদহার, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রা সরবরাহ এবং বিনিময় হার টার্গেটিং। বাংলাদেশ ব্যাংক এতদিন ‘মূল্যস্ফীতি টার্গেটিং’ মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে আসছিল। এবার ‘সুদহার টার্গেটিং’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। মুদ্রানীতিতে এটা কাঠামোগত পরিবর্তন বলা যায়।

গভর্নর বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে টাকার চাহিদা কমাতে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। ঋণের সুদহারের যে ৯ শতাংশ ক্যাপ ছিল তাও তুলে দেওয়া হয়েছে।

নতুন সুদহার ব্যবস্থা হলো ‘স্মার্ট’ তথা শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ রেট। ১৮২ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদের সঙ্গে আপাতত সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ করিডোর বা সীমা দেওয়া থাকবে। বর্তমানে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ৭ শতাংশের নিচে রয়েছে। এর মানে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ১০ শতাংশের আশপাশে।

নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি হার হিসাবে বিবেচিত রেপো সুদহার  ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো জরুরি প্রয়োজনে অর্থ নিলে গুণতে হবে অতিরিক্ত সুদ।

পাশাপাশি রিভার্স রেপো ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪ শতাংশ ২৫ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখলে ব্যাংকগুলোকে আগের চেয়ে বেশি সুদ পাবে।

নীতি সুদহার ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদহারের করিডর প্রথা চালু হচ্ছে। এখন স্পেশাল রেপোকে বলা হবে স্ট্যান্ডার্ড ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ), নীতি সুদ ও রিভার্স রোপোকে বলা হবে স্ট্যান্ডার্ড ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ)।

মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। এর আগের মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্জন ছিল অনেক কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষে তথ্যানুযায়ী, গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমেছে।অন্যদিকে সরকারি ঋণের ৪৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলন ছিল ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ এবং সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছে। যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৪০ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। এপ্রিলে তা ছিল ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অন্যদিকে, পয়েন্ট টু পয়েন্ট খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও এপ্রিলে ৯.৭২ শতাংশ পয়েন্ট থেকে বেড়ে মে মাসে ৯.৯৬ শতাংশ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সুদের হার বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

আপডেট টাইম : ০৭:২৯:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুন ২০২৩

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে অর্থ সরবরাহ কমাতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি টাকার মান বাড়াতে নীতি সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী অর্থবছরের (২০২৩–২৪) প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশের সীমা তুলে নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১০.৯ শতাংশ।

এছাড়া নতুন মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সস্তায় ডলার কেনার পথও বন্ধ করা হয়েছে। ডলার কিনতে হবে বাজার দরে। রেপোর সুদহার বাড়ানো হয়েছে ৫০ বেসিস পয়েন্ট।

আজ রোববার (১৮ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ষান্মাসিকের জন্য (জুলাই-ডিসেম্বর-২০২৩) নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে নতুন মুদ্রানীতি তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান।

প্রশ্নোত্তর পর্বে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, বিশ্বব্যাপী বর্তমানে চার ধরনের লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক মুদ্রানীতি প্রচলিত আছে। সুদহার, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রা সরবরাহ এবং বিনিময় হার টার্গেটিং। বাংলাদেশ ব্যাংক এতদিন ‘মূল্যস্ফীতি টার্গেটিং’ মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে আসছিল। এবার ‘সুদহার টার্গেটিং’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। মুদ্রানীতিতে এটা কাঠামোগত পরিবর্তন বলা যায়।

গভর্নর বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে টাকার চাহিদা কমাতে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। ঋণের সুদহারের যে ৯ শতাংশ ক্যাপ ছিল তাও তুলে দেওয়া হয়েছে।

নতুন সুদহার ব্যবস্থা হলো ‘স্মার্ট’ তথা শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ রেট। ১৮২ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদের সঙ্গে আপাতত সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ করিডোর বা সীমা দেওয়া থাকবে। বর্তমানে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ৭ শতাংশের নিচে রয়েছে। এর মানে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ১০ শতাংশের আশপাশে।

নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি হার হিসাবে বিবেচিত রেপো সুদহার  ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো জরুরি প্রয়োজনে অর্থ নিলে গুণতে হবে অতিরিক্ত সুদ।

পাশাপাশি রিভার্স রেপো ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪ শতাংশ ২৫ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখলে ব্যাংকগুলোকে আগের চেয়ে বেশি সুদ পাবে।

নীতি সুদহার ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদহারের করিডর প্রথা চালু হচ্ছে। এখন স্পেশাল রেপোকে বলা হবে স্ট্যান্ডার্ড ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ), নীতি সুদ ও রিভার্স রোপোকে বলা হবে স্ট্যান্ডার্ড ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ)।

মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। এর আগের মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্জন ছিল অনেক কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষে তথ্যানুযায়ী, গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমেছে।অন্যদিকে সরকারি ঋণের ৪৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলন ছিল ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ এবং সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছে। যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৪০ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। এপ্রিলে তা ছিল ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অন্যদিকে, পয়েন্ট টু পয়েন্ট খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও এপ্রিলে ৯.৭২ শতাংশ পয়েন্ট থেকে বেড়ে মে মাসে ৯.৯৬ শতাংশ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।