ঢাকা ১০:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখা যাবে না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫৪:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুন ২০১৫
  • ৩৩৮ বার

শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দের বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, ‘শিক্ষা গবেষণায় বাজেটে বরাদ্দ মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখা যাবে না। অথচ আমরা কৃষি গবেষণায় সামান্য বরাদ্দ দিয়েও পাটের জিনোম আবিষ্কারের মতো সফলতা পেয়েছি।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে রবিবার বিকেলে ‘২০১৫-১৬ বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ : প্রত্যাশা ও শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, শিক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, শিক্ষার মান উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, ৮ম শ্রেণীতে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ করার কথা বলা হচ্ছে-এ সব করতে তো গবেষণার প্রয়োজন; কিন্তু সে মাপের গবেষক কই?

গণসাক্ষরতা অভিযানের এ নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষায় অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টিপাত, মাধ্যমিকের দুর্বলতা নিয়ে তার স্বীকারোক্তিসহ পুরো দর্শন দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু বাজেটের অংক শুনে আমি ভীষণভাবে হোঁচট খেয়েছি। কারণ শিক্ষা নিয়ে তার দর্শনের প্রতিফলন ঘটেনি বরাদ্দে। তা ছাড়া ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও বাজেটে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের প্রধান দিকগুলোই নেই। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের দর্শন আছে, সরকারের সদিচ্ছাও আছে, কিন্তু বাজেটে তার প্রতিফলন নেই।

বাজেট বরাদ্দের সমালোচনা করে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বাজেটে সুবিধাভোগীদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে অথচ যাদের প্রণোদনা পাওয়ার কথা তার পায়নি। যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিখাতে বরাদ্দ বাড়েনি সে বাজেট কার জন্য? যে সরকার মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিচ্ছে সে সরকারের কাছে এটা আমরা প্রত্যাশা করি না। কিন্তু সামরিকখাতে বরাদ্দ কত বেড়েছে? এটা বুঝতে হবে যে, মানবসম্পদে বিনির্মাণই সবচেয়ে বড় শক্তি।

শিক্ষা তহবিল গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত শিক্ষা তহবিল গঠন করে তা দিয়ে গরীব, মেধাবীদের প্রণোদনা দিচ্ছে। আমরাও শিক্ষা তহবিল গঠনের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই যে বাজেটকে বিনিয়োগবান্ধব বলা হচ্ছে, সেখান থেকে তহবিল আসতে পারে। দুর্নীতি কমিয়ে সেখান থেকেও শিক্ষায় তহবিল আসতে পারে।

নীতি নির্ধারকরাই শিক্ষার উন্নয়ন চান না ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, সমস্যা হচ্ছে নীতি নির্ধারক কারা? তাদের সন্তানরা এ সব স্কুলে পড়ে না। তাই আপনার-আমাদের সমস্যাগুলো তারা বোঝেন না। সে জন্যই এ সরকারের শুরুতে যেখানে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১৪ ভাগ সেখানে বর্তমানে বরাদ্দ ১১ ভাগের নিচে নেমে এসেছে। আমরা বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরব, আশা করছি তিনি এ সব শুনবেন।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। আমাদের শিক্ষানীতি আছে কিন্তু এক্ষেত্রে বরাদ্দ নেই। শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদে পাস হলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন? শিক্ষানীতিতে থাকা শিক্ষকদের মর্যাদার জায়গাটা গেল কোথায়? অথচ নীতিতে না থাকলেও প্রাথমিক পরীক্ষা ব্যবস্থা চলছেই। এতে প্রচুর অর্থও ব্যয় হচ্ছে।

শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শিক্ষাখাতে ১৪ ভাগ বরাদ্দ বৃদ্ধি করুন। আর কথা না বলে তা বাস্তবায়ন করুন, তা হলেই দেশ লাভবান হবে।

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ইনিশিয়েটিভ ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখা যাবে না

আপডেট টাইম : ০৬:৫৪:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুন ২০১৫

শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দের বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, ‘শিক্ষা গবেষণায় বাজেটে বরাদ্দ মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখা যাবে না। অথচ আমরা কৃষি গবেষণায় সামান্য বরাদ্দ দিয়েও পাটের জিনোম আবিষ্কারের মতো সফলতা পেয়েছি।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে রবিবার বিকেলে ‘২০১৫-১৬ বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ : প্রত্যাশা ও শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, শিক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, শিক্ষার মান উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, ৮ম শ্রেণীতে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ করার কথা বলা হচ্ছে-এ সব করতে তো গবেষণার প্রয়োজন; কিন্তু সে মাপের গবেষক কই?

গণসাক্ষরতা অভিযানের এ নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষায় অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টিপাত, মাধ্যমিকের দুর্বলতা নিয়ে তার স্বীকারোক্তিসহ পুরো দর্শন দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু বাজেটের অংক শুনে আমি ভীষণভাবে হোঁচট খেয়েছি। কারণ শিক্ষা নিয়ে তার দর্শনের প্রতিফলন ঘটেনি বরাদ্দে। তা ছাড়া ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও বাজেটে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের প্রধান দিকগুলোই নেই। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের দর্শন আছে, সরকারের সদিচ্ছাও আছে, কিন্তু বাজেটে তার প্রতিফলন নেই।

বাজেট বরাদ্দের সমালোচনা করে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বাজেটে সুবিধাভোগীদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে অথচ যাদের প্রণোদনা পাওয়ার কথা তার পায়নি। যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিখাতে বরাদ্দ বাড়েনি সে বাজেট কার জন্য? যে সরকার মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিচ্ছে সে সরকারের কাছে এটা আমরা প্রত্যাশা করি না। কিন্তু সামরিকখাতে বরাদ্দ কত বেড়েছে? এটা বুঝতে হবে যে, মানবসম্পদে বিনির্মাণই সবচেয়ে বড় শক্তি।

শিক্ষা তহবিল গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত শিক্ষা তহবিল গঠন করে তা দিয়ে গরীব, মেধাবীদের প্রণোদনা দিচ্ছে। আমরাও শিক্ষা তহবিল গঠনের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই যে বাজেটকে বিনিয়োগবান্ধব বলা হচ্ছে, সেখান থেকে তহবিল আসতে পারে। দুর্নীতি কমিয়ে সেখান থেকেও শিক্ষায় তহবিল আসতে পারে।

নীতি নির্ধারকরাই শিক্ষার উন্নয়ন চান না ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, সমস্যা হচ্ছে নীতি নির্ধারক কারা? তাদের সন্তানরা এ সব স্কুলে পড়ে না। তাই আপনার-আমাদের সমস্যাগুলো তারা বোঝেন না। সে জন্যই এ সরকারের শুরুতে যেখানে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১৪ ভাগ সেখানে বর্তমানে বরাদ্দ ১১ ভাগের নিচে নেমে এসেছে। আমরা বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরব, আশা করছি তিনি এ সব শুনবেন।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। আমাদের শিক্ষানীতি আছে কিন্তু এক্ষেত্রে বরাদ্দ নেই। শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদে পাস হলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন? শিক্ষানীতিতে থাকা শিক্ষকদের মর্যাদার জায়গাটা গেল কোথায়? অথচ নীতিতে না থাকলেও প্রাথমিক পরীক্ষা ব্যবস্থা চলছেই। এতে প্রচুর অর্থও ব্যয় হচ্ছে।

শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শিক্ষাখাতে ১৪ ভাগ বরাদ্দ বৃদ্ধি করুন। আর কথা না বলে তা বাস্তবায়ন করুন, তা হলেই দেশ লাভবান হবে।

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ইনিশিয়েটিভ ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ।