ঢাকা ০৮:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাপপ্রবাহ চলবে আরও কয়েক দিন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০৬:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ জুন ২০২৩
  • ৮১ বার

দেশের ওপর দিয়ে এখন মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। গরমে পুড়ছে দেশ। এটি আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিন অব্যাহত থাকতে পারে। জ্যৈষ্ঠ মাসে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ দেশবাসীর মনে একটাই প্রশ্ন- তাপপ্রবাহ কাটবে কবে? বর্ষা আসতে আর কত দিন? কিন্তু আপাতত স্বস্তির খবর নেই আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে। চলমান তাপপ্রবাহ এখনই কাটছে না বলে আভাস মিলেছে। আর বর্ষা আসতেও হচ্ছে দেরি।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এই পাঁচ-ছয় দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি নামতে পারে। তবে ১৩ তারিখের আগে সামগ্রিকভাবে তাপমাত্রা কমিয়ে ফেলার মতো ভারী বৃষ্টির দেখা পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আজকে (রবিবার) কিশোরগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। সিলেটে হবে। খুলনায় সন্ধ্যার পর হালকা বৃষ্টি হবে। কিন্তু এই সামান্য পরিমাণ বৃষ্টি বিদ্যমান তাপপ্রবাহকে কমাতে পারবে না। ১২ থেকে ১৩ তারিখের পর থেকে আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন হবে, তাপমাত্রাও কমতে শুরু করবে। ১৩ তারিখ যদি বৃষ্টি হয়, তবে চলমান তাপপ্রবাহের ঊর্ধ্বগতি অনেকটাই কমে গিয়ে কিছুটা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হবে।

আবুল কালাম মল্লিক জানান, গত কয়েক দিন ধরে দেশের তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ ডিগ্রির মাঝে ওঠানামা করছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে স্টেশন ভেদে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

এপ্রিলজুড়ে তাপপ্রবাহে নাভিশ্বাস উঠেছিল জনজীবনে; তাপমাত্রার রেকর্ডও হয়েছিল তখন। মে মাসের শুরুতে বৃষ্টিতে পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় হলেও গত সপ্তাহখানেক ধরে প্রচ- গরমে প্রাণ আবার ওষ্ঠাগত। তাপমাত্রা এপ্রিল ছাড়িয়ে না গেলেও বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে গরম হয়ে উঠেছে অসহনীয়, সেই সঙ্গে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া নগর জীবনে বাড়িয়েছে ভোগান্তি।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক

জানান, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে গরম অসহনীয় হওয়ার মূল কারণ হলো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ছোঁয়া বাংলাদেশেও লেগেছে। তা ছাড়া এল নিনো সক্রিয় অবস্থায় যাওয়া শুরু করায় এখানে আকাশ প্রায় মেঘমুক্ত। সুতরাং, ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ধরে প্রখর সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে পতিত হতে থাকে। এ কারণেই বাতাসের গতিবেগ কম, বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য বেশি। অস্বস্তিও বেশি। তবে এটা শুধু বাংলাদেশেই হচ্ছে, তা না। বাংলাদেশসহ আশপাশের সব অঞ্চলের তাপমাত্রাই এখন বেশি।

আবহাওয়াবিদ মল্লিক বলেন, এল নিনো সক্রিয় হওয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশসহ ভারতের হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, আফগানিস্তান; এই পুরো অঞ্চল এখন ‘হিট ইঞ্জিন’ হিসেবে কাজ করছে।

ঋতুর পরিক্রমায় জুন মাসের মাঝামাঝিতে বাংলায় বর্ষা ঋতু নামে। ভারত মহাসাগর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি এই সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প নিয়ে স্থলভাগে এসে ব্যাপক বৃষ্টি ঝরায়। তাতে অবসান ঘটে গ্রীষ্মকালের। আষাঢ় মাস জুনের মাঝামাঝিতে শুরু হলেও দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু অধিকাংশ সময় জুন মাসের শুরুতেই স্থলভাগে এসে পড়ে, ফলে ধীরে ধীরে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়ে। তবে এবার সাগরে দুটি লঘুচাপের কারণে মৌসুমি বায়ু আসতে দেরি হবে বলে আবহাওয়াবিদরা বার্তা দিচ্ছেন।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমার উপকূলে ৭ তারিখ একটা লঘুচাপ তৈরি হতে পারে এবং আরব সাগরে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ এখনো আছে। দুই সাগরে দুই লঘুচাপ বিদ্যমান থাকার কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের ওপর মৌসুমি বায়ু প্রবাহ আরম্ভ হতে কিছুটা দেরি হতে পারে।

থার্মোমিটারের পারদ ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে আবহাওয়াবিদরা তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলেন। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে, ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে, ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ছিল ময়মনসিংহে, ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

তাপপ্রবাহ চলবে আরও কয়েক দিন

আপডেট টাইম : ০১:০৬:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ জুন ২০২৩

দেশের ওপর দিয়ে এখন মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। গরমে পুড়ছে দেশ। এটি আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিন অব্যাহত থাকতে পারে। জ্যৈষ্ঠ মাসে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ দেশবাসীর মনে একটাই প্রশ্ন- তাপপ্রবাহ কাটবে কবে? বর্ষা আসতে আর কত দিন? কিন্তু আপাতত স্বস্তির খবর নেই আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে। চলমান তাপপ্রবাহ এখনই কাটছে না বলে আভাস মিলেছে। আর বর্ষা আসতেও হচ্ছে দেরি।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এই পাঁচ-ছয় দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি নামতে পারে। তবে ১৩ তারিখের আগে সামগ্রিকভাবে তাপমাত্রা কমিয়ে ফেলার মতো ভারী বৃষ্টির দেখা পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আজকে (রবিবার) কিশোরগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। সিলেটে হবে। খুলনায় সন্ধ্যার পর হালকা বৃষ্টি হবে। কিন্তু এই সামান্য পরিমাণ বৃষ্টি বিদ্যমান তাপপ্রবাহকে কমাতে পারবে না। ১২ থেকে ১৩ তারিখের পর থেকে আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন হবে, তাপমাত্রাও কমতে শুরু করবে। ১৩ তারিখ যদি বৃষ্টি হয়, তবে চলমান তাপপ্রবাহের ঊর্ধ্বগতি অনেকটাই কমে গিয়ে কিছুটা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হবে।

আবুল কালাম মল্লিক জানান, গত কয়েক দিন ধরে দেশের তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ ডিগ্রির মাঝে ওঠানামা করছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে স্টেশন ভেদে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

এপ্রিলজুড়ে তাপপ্রবাহে নাভিশ্বাস উঠেছিল জনজীবনে; তাপমাত্রার রেকর্ডও হয়েছিল তখন। মে মাসের শুরুতে বৃষ্টিতে পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় হলেও গত সপ্তাহখানেক ধরে প্রচ- গরমে প্রাণ আবার ওষ্ঠাগত। তাপমাত্রা এপ্রিল ছাড়িয়ে না গেলেও বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে গরম হয়ে উঠেছে অসহনীয়, সেই সঙ্গে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া নগর জীবনে বাড়িয়েছে ভোগান্তি।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক

জানান, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে গরম অসহনীয় হওয়ার মূল কারণ হলো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ছোঁয়া বাংলাদেশেও লেগেছে। তা ছাড়া এল নিনো সক্রিয় অবস্থায় যাওয়া শুরু করায় এখানে আকাশ প্রায় মেঘমুক্ত। সুতরাং, ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ধরে প্রখর সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে পতিত হতে থাকে। এ কারণেই বাতাসের গতিবেগ কম, বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য বেশি। অস্বস্তিও বেশি। তবে এটা শুধু বাংলাদেশেই হচ্ছে, তা না। বাংলাদেশসহ আশপাশের সব অঞ্চলের তাপমাত্রাই এখন বেশি।

আবহাওয়াবিদ মল্লিক বলেন, এল নিনো সক্রিয় হওয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশসহ ভারতের হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, আফগানিস্তান; এই পুরো অঞ্চল এখন ‘হিট ইঞ্জিন’ হিসেবে কাজ করছে।

ঋতুর পরিক্রমায় জুন মাসের মাঝামাঝিতে বাংলায় বর্ষা ঋতু নামে। ভারত মহাসাগর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি এই সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প নিয়ে স্থলভাগে এসে ব্যাপক বৃষ্টি ঝরায়। তাতে অবসান ঘটে গ্রীষ্মকালের। আষাঢ় মাস জুনের মাঝামাঝিতে শুরু হলেও দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু অধিকাংশ সময় জুন মাসের শুরুতেই স্থলভাগে এসে পড়ে, ফলে ধীরে ধীরে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়ে। তবে এবার সাগরে দুটি লঘুচাপের কারণে মৌসুমি বায়ু আসতে দেরি হবে বলে আবহাওয়াবিদরা বার্তা দিচ্ছেন।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমার উপকূলে ৭ তারিখ একটা লঘুচাপ তৈরি হতে পারে এবং আরব সাগরে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ এখনো আছে। দুই সাগরে দুই লঘুচাপ বিদ্যমান থাকার কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের ওপর মৌসুমি বায়ু প্রবাহ আরম্ভ হতে কিছুটা দেরি হতে পারে।

থার্মোমিটারের পারদ ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে আবহাওয়াবিদরা তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলেন। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে, ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে, ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ছিল ময়মনসিংহে, ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।