ঢাকা ০৯:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরামর্শক না নিলে বিদেশি ঋণ মেলে না: পরিকল্পনামন্ত্রী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৮:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩
  • ৮৩ বার

উন্নয়নপ্রকল্পে পরামর্শক না নিলে বিদেশি ঋণ মেলে না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এম মান্নান। তিনি বলেন, পরামর্শক খাতে বড় অংকের অর্থ চলে যায়। লেনডার্সের শর্তের খাতিরে কনসালটেন্ট নিতে হয়। আগে দেখেছি- নোট কিনলেই মূল বই পাওয়া যেতো। বাংলাবাজারে নোট না কিনলে বিক্রেতা বই বেচতো না। এখানেও ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যদি কনসালটেন্ট (পরামর্শক) না নিই, তাহলে উন্নয়ন সহযোগীরা লোন (ঋণ) দেবেন না। মন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমরা কম সুদে ঋণ নিয়ে থাকি, এজন্য অনেক বিষয় মেনে নিতে হয়। ঋণ নিই, সুদে-আসলে ফেরতও দেই। আমরা কখনো ব্যর্থ হইনি। উন্নয়ন সহযোগীদের বলবো আপনারা শর্ত কমান। আমরা রাষ্ট্র, আপনারা সংস্থা। এটা দাতা সংস্থা হতে পারে না, এটা হবে উন্নয়ন সহযোগী। শনিবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনের বলরুমে ‘আইসিসি রাউন্ড টেবিল অন ইনভেস্টমেন্ট ফর ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। উন্নয়নপ্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আরও একটি বিষয় আমি বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন, প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় খরচ করবেন না। সবার জন্য এটা সাধারণ বার্তা। আমাদের কাছে বার্তা এসেছে, আমরাও খরচ কমানোর চেষ্টা করছি। প্রকল্পের অনেক জায়গায় অপ্রয়োজনীয় খরচ হয়ে যায়। অনেক সময় পরিকল্পনা কমিশনও ধরতে পারে না। আমাদেরও লিমিটেড ক্ষমতা। একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা দুই-তিন বছরের কাঠখড় পুড়িয়ে এমন গতিতে আমাদের কাছে পৌঁছে, ওর (প্রকল্প) সামনে দাঁড়ালে আমারই মৃত্যু হয়ে যাবে। এর পেছনে অনেক উন্নয়ন সহযোগী আছে। দেশের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, ১২ বছরে দেশে পজিটিভ মুভমেন্ট (ইতিবাচক পরিবর্তন) হয়েছে। সড়ক দেখলেই আমরা আনন্দিত হয়। সড়কে কতটুকু লাভ হবে, এটা দেখি না। সড়ক ও বাস দেখলেই আমরা আনন্দিত হই। সরকার সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক নজর দিয়েছে। রেলমন্ত্রী বলেছেন, পঞ্চগড় থেকে টেকনাফ রেল হবে, এটা তো স্বপ্নের মতো। আমি মনে করি, এটি দ্রুত হওয়ার দরাকর। চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে দরকার, রেলের ডাবল লাইন হচ্ছে। এটা হলেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়বে। পরিবেশের ক্ষতি করে উন্নয়ন নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জাঁতি হিসেবে আমরা সচেতন ছিলাম না। এখন সচেতনভাবে কাজ করছি। ধানের জমি নষ্ট করবো না। সামান্য রেডিও ট্রান্সমিশন অফিস হবে অথচ বিশাল জায়গা নিয়ে বসে আছে- এমনটা হতে দেবো না। জমির সর্বোত্তম ব্যবহার করবো। দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখবো না। জলাভূমি ও প্লাবনভূমির ক্ষতি করবো না। প্লাবনভূমিতে ফ্লাইওভার করবো। হাওর অঞ্চলে ফ্লাইওভার করে দেবো। প্লাবনভূমি নষ্ট করবো না। দিরাই-শাল্লা এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। প্লাবন, চরে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে- এমন অবকাঠামো করবো না। তিনি আরও বলেন, ঢাকায় যোগাযোগের ব্যাপারে আমরা সতর্ক। ঢাকায় সার্কুলার রোড লন্ডনের আদলে হতে পারে। এটা হলে কিছু উপকার হবে। এটা সিরিয়াসলি অনুমোদন হওয়া দরাকার বলে আমি মনে করি। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চার মেয়াদে সরকার গঠন করে ইন্দিরা গান্ধী বা মার্গারেট থ্যাচারকেও ছাড়িয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে দ্য ইকোনমিস্ট এশিয়ার লৌহমানবী অভিহিত করেছে। ব্রিটিশ এ সাময়িকীর বিশ্লেষণে ১৭ কোটি মানুষের জনবহুল বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বেশিরভাগ সময় জিডিপির বার্ষিক গড় হার ছিল ৭ শতাংশ। সমকালীন বৈশ্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় এটি অভাবনীয় বলে অভিহিত করেছে ইকোনমিস্ট। এটা আমাদের সবার পড়া দরকার। শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশীয়ার আইরন লেডি। অনেকে বলছিলেন, দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে। বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়নি। আমরা পদ্মা সেতু নিজের টাকায় বাস্তবায়ন করেছি। গ্রামের মানুষ উন্নয়ন চায় জানিয়ে এম এ মান্নান বলেন, ‘আমি গ্রামের মানুষ, হাওরের মানুষ। সময় পেলেই গ্রামে ছুটে যাই। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলি। গ্রামের ভোটার অধিকার ও ডেমোক্রেসি বোঝেন না। তারা টিউবওয়েল-ল্যাট্রিন চায়, ভাতার কার্ড চান। শিশুরা যেন স্কুলে সঠিকভাবে পড়ালেখা করতে যেতে পারে, সেজন্য সড়কে ছোট ব্রিজ চান। গ্রামের মানুষের চাওয়া ও শহরের মানুষের চাওয়া এক নয়। গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি ইটিবিএল হোল্ডিংস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুবুর রহমান। এতে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ প্রমুখ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পরামর্শক না নিলে বিদেশি ঋণ মেলে না: পরিকল্পনামন্ত্রী

আপডেট টাইম : ১০:১৮:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩

উন্নয়নপ্রকল্পে পরামর্শক না নিলে বিদেশি ঋণ মেলে না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এম মান্নান। তিনি বলেন, পরামর্শক খাতে বড় অংকের অর্থ চলে যায়। লেনডার্সের শর্তের খাতিরে কনসালটেন্ট নিতে হয়। আগে দেখেছি- নোট কিনলেই মূল বই পাওয়া যেতো। বাংলাবাজারে নোট না কিনলে বিক্রেতা বই বেচতো না। এখানেও ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যদি কনসালটেন্ট (পরামর্শক) না নিই, তাহলে উন্নয়ন সহযোগীরা লোন (ঋণ) দেবেন না। মন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমরা কম সুদে ঋণ নিয়ে থাকি, এজন্য অনেক বিষয় মেনে নিতে হয়। ঋণ নিই, সুদে-আসলে ফেরতও দেই। আমরা কখনো ব্যর্থ হইনি। উন্নয়ন সহযোগীদের বলবো আপনারা শর্ত কমান। আমরা রাষ্ট্র, আপনারা সংস্থা। এটা দাতা সংস্থা হতে পারে না, এটা হবে উন্নয়ন সহযোগী। শনিবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনের বলরুমে ‘আইসিসি রাউন্ড টেবিল অন ইনভেস্টমেন্ট ফর ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। উন্নয়নপ্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আরও একটি বিষয় আমি বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন, প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় খরচ করবেন না। সবার জন্য এটা সাধারণ বার্তা। আমাদের কাছে বার্তা এসেছে, আমরাও খরচ কমানোর চেষ্টা করছি। প্রকল্পের অনেক জায়গায় অপ্রয়োজনীয় খরচ হয়ে যায়। অনেক সময় পরিকল্পনা কমিশনও ধরতে পারে না। আমাদেরও লিমিটেড ক্ষমতা। একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা দুই-তিন বছরের কাঠখড় পুড়িয়ে এমন গতিতে আমাদের কাছে পৌঁছে, ওর (প্রকল্প) সামনে দাঁড়ালে আমারই মৃত্যু হয়ে যাবে। এর পেছনে অনেক উন্নয়ন সহযোগী আছে। দেশের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, ১২ বছরে দেশে পজিটিভ মুভমেন্ট (ইতিবাচক পরিবর্তন) হয়েছে। সড়ক দেখলেই আমরা আনন্দিত হয়। সড়কে কতটুকু লাভ হবে, এটা দেখি না। সড়ক ও বাস দেখলেই আমরা আনন্দিত হই। সরকার সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক নজর দিয়েছে। রেলমন্ত্রী বলেছেন, পঞ্চগড় থেকে টেকনাফ রেল হবে, এটা তো স্বপ্নের মতো। আমি মনে করি, এটি দ্রুত হওয়ার দরাকর। চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে দরকার, রেলের ডাবল লাইন হচ্ছে। এটা হলেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়বে। পরিবেশের ক্ষতি করে উন্নয়ন নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জাঁতি হিসেবে আমরা সচেতন ছিলাম না। এখন সচেতনভাবে কাজ করছি। ধানের জমি নষ্ট করবো না। সামান্য রেডিও ট্রান্সমিশন অফিস হবে অথচ বিশাল জায়গা নিয়ে বসে আছে- এমনটা হতে দেবো না। জমির সর্বোত্তম ব্যবহার করবো। দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখবো না। জলাভূমি ও প্লাবনভূমির ক্ষতি করবো না। প্লাবনভূমিতে ফ্লাইওভার করবো। হাওর অঞ্চলে ফ্লাইওভার করে দেবো। প্লাবনভূমি নষ্ট করবো না। দিরাই-শাল্লা এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। প্লাবন, চরে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে- এমন অবকাঠামো করবো না। তিনি আরও বলেন, ঢাকায় যোগাযোগের ব্যাপারে আমরা সতর্ক। ঢাকায় সার্কুলার রোড লন্ডনের আদলে হতে পারে। এটা হলে কিছু উপকার হবে। এটা সিরিয়াসলি অনুমোদন হওয়া দরাকার বলে আমি মনে করি। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চার মেয়াদে সরকার গঠন করে ইন্দিরা গান্ধী বা মার্গারেট থ্যাচারকেও ছাড়িয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে দ্য ইকোনমিস্ট এশিয়ার লৌহমানবী অভিহিত করেছে। ব্রিটিশ এ সাময়িকীর বিশ্লেষণে ১৭ কোটি মানুষের জনবহুল বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বেশিরভাগ সময় জিডিপির বার্ষিক গড় হার ছিল ৭ শতাংশ। সমকালীন বৈশ্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় এটি অভাবনীয় বলে অভিহিত করেছে ইকোনমিস্ট। এটা আমাদের সবার পড়া দরকার। শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশীয়ার আইরন লেডি। অনেকে বলছিলেন, দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে। বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়নি। আমরা পদ্মা সেতু নিজের টাকায় বাস্তবায়ন করেছি। গ্রামের মানুষ উন্নয়ন চায় জানিয়ে এম এ মান্নান বলেন, ‘আমি গ্রামের মানুষ, হাওরের মানুষ। সময় পেলেই গ্রামে ছুটে যাই। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলি। গ্রামের ভোটার অধিকার ও ডেমোক্রেসি বোঝেন না। তারা টিউবওয়েল-ল্যাট্রিন চায়, ভাতার কার্ড চান। শিশুরা যেন স্কুলে সঠিকভাবে পড়ালেখা করতে যেতে পারে, সেজন্য সড়কে ছোট ব্রিজ চান। গ্রামের মানুষের চাওয়া ও শহরের মানুষের চাওয়া এক নয়। গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি ইটিবিএল হোল্ডিংস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুবুর রহমান। এতে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ প্রমুখ।