রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘আমি ভেসে আসিনি, একেবারে তৃণমূল পাবনার রাজপথ থেকে বঙ্গভবনে গিয়েছি। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারকে রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এটা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল। কিন্তু আমি শক্ত হাতে মোকাবেলা করেছি।’
মঙ্গলবার (১৬ মে) বিকেলে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে নাগরিক সমাজের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর ছোঁয়া পেয়েছি। কারাগারে যেতে হয়েছে। চরম অত্যাচারিত হয়েছি। রাতের আঁধারে তুলে নেওয়া হয়েছে। হাতকড়া পরানো হয়েছে। ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে। রাজপথে সক্রিয় হয়ে আমি বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাকশালের পাবনার জয়েন্ট সেক্রেটারি হয়েছিলাম।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য আর মমতামাখা স্পর্শ কখনই ভুলে যাওয়ার নয়। একজন তরুণ ছাত্রনেতাকে কিভাবে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হতে অনুপ্রাণিত করতে হয়, সেদিন আমি শিখেছিলাম এই মহান নেতার কাছ থেকে। জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আমি এই পাবনা শহরে প্রতিরোধ মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট আমাকে গ্রেপ্তার করে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়াা হয়। সেখানে টানা তিন মাস চলে অসহ্য, অমানবিক নির্যাতন। তারপর তিন বছর কারাভোগের পর ১৯৭৮ সালে আমি মুক্তি পাই।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, দেশের রাষ্ট্রপতি হবো এটা কখনো ভাবিনি। কিন্তু ভাগ্য আজ আমাকে রাষ্ট্রপতির পদে বসিয়েছেন। আপনাদের দোয়াা আর ভালোবাসা ছিলো বলেই আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আপনাদের ভালোবাসাকে সঙ্গী করেই রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই। এজন্য আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা চাই। পাবনা জেলা ও দেশের উন্নয়নে আপনারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে কার্যকর অবদান রাখবেন এটাই আমি প্রত্যাশা করি।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সাথে জড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি। পাবনার আলো-বাতাস, প্রকৃতি-পরিবেশ ও সাধারণ মানুষের সাথে মিলেমিশে আমি বেড়ে উঠেছি। তাই রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগেও আমি আপনাদের ছিলাম, এখনো আমি আপনাদেরই আছি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে আপনাদের লোক হিসেবেই বেঁচে থাকতে চাই। বঙ্গভবনে অবস্থান করলেও পাবনার কথা মনে আসলেই আমি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। আমি ১৯৬৭-৬৮ সালে এই কলেজের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। পরে ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সভাপতিও হয়েছিলাম।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ক্ষমতায় যাবার একমাত্র উপায় নির্বাচন। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও হিংসার রাজনীতি কখনও দেশ সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কল্যান বয়ে আনে না। বরং রাজনৈতিক পরিবেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলে। সংঘাত ভুলে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যমতে এসে সমাধান করে গনতন্ত্রকে বিকশিত করা উচিত। সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের জনগণ নিরপেক্ষভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের চর্চার ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ ও বেগবান করবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা মুক্তিযুদ্ধের অসম্প্রদায়িক চেতনা ধ্বংস করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক চেতনা আবার ফিরে এসেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। করোনা মহামারি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা প্রভাব থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল। মানুষের গড় আয়ু ও জীবযাত্রার মান বেড়েছে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংবর্ধনায়, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস, পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন ও পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।