ঢাকা ১১:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

ভোটারবিহীন নির্বাচনের তথ্য-প্রমাণ মোদীকে দিলেন খালেদা জিয়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৪:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুন ২০১৫
  • ৪৩৩ বার

????????????????????????????????????

‘বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই’ এবং পাঁচ জানুয়ারি ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’ হয়েছে বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে অভিযোগ করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নরেন্দ্র মোদীর দু’দিনের বাংলাদেশ সফরের রবিবার শেষদিনে বিকেলে সোনারগাঁও হোটেলে তার সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এই অভিযোগ করেন। অভিযোগের পক্ষে তিনি বেশকিছু তথ্য-প্রমাণও মোদীর হাতে তুলে দিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মোদীর সঙ্গে বিএনপির ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের একাধিক সদস্য ইত্তেফাককে জানান, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিত্বশীল সরকার গঠনের বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন খালেদা জিয়া।
বিকেল চারটার কয়েক মিনিট আগে থেকে শুরু হয়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার এই বৈঠকে বেশিরভাগ সময়ে খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতারাই কথা বলেছেন। মোদী শুনেছেন বেশি, বলেছেন কম। মোদীর বক্তব্যের সারমর্ম ছিল, বাংলাদেশের নির্বাচন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সামগ্রিক বিষয়টি তার জানা রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিও ভারতের পর্যবেক্ষণে। কথা প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশেও গণতন্ত্র-ই দেখতে চায়। একইসঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূল প্রশ্নেও ভারতের কোনো ছাড় নেই বলেও খালেদা জিয়াসহ বিএনপির প্রতিনিধি দলকে জানিয়ে দেন মোদী।
প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নিয়ে খালেদা জিয়া সোনারগাঁও হোটেলে এসে পৌঁছান বিকেল চারটার কিছুসময় আগে। প্রতিনিধি দলকে নিয়ে মোদীর সঙ্গে খালেদা জিয়া বৈঠক করেন সাড়ে চারটা পর্যন্ত। এরপর প্রায় পনেরো মিনিট মোদীর সঙ্গে খালেদা জিয়া একান্তে বা ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ কথা বলেন। বৈঠক শেষে ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে বের হয়ে এসে হোটেলের লবিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া বলেন, ‘খুব সুন্দর বৈঠক হয়েছে, অত্যন্ত আন্তরিক ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’
পরে বৈঠক সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত চমত্কার পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। আমরা দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতিটি বিষয় উল্লেখ করেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি। বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, তাহলে কেবল বাংলাদেশ নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের জন্য অস্থির পরিবেশের সৃষ্টি করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গ্লোবাল ভিলেজে বাস করি। এখানে কেউ যদি মনে করে নিজের পরিম্লল শান্তশিষ্ট হয়ে ঘুমিয়ে থাকব, অন্য কেউ এখানে সমস্যা সৃষ্টি করবে না। এটা হতে পারে না।’
মঈন খান বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার, আমাদের মহাসচিব, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের হাজার-হাজার কর্মীদের অত্যাচার-অনাচার করা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আপনাআপনিই আলোচনায় উঠে এসেছে।’
বিএনপির প্রতিনিধি দলের এই সদস্য বলেন ‘জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার দেশের উন্নয়নের যেসব কথা বলছে তা অর্থহীন, যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকে। তাই জনগণের কল্যাণ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা। আমরা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি। ১৬ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ মধ্যম বা উচ্চ আয়ের দেশ হতে হলে মানুষকে কথা বলার, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিজের জীবনেও প্রমাণ করেছেন, গণতন্ত্রের কারণেই তিনি তৃণমূল থেকে এসে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র ছাড়া সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয় না। মধ্য আয়ের বা উন্নত দেশ গঠনও সম্ভব নয়, যদি গণতন্ত্র ও মানুষের কথা বলার অধিকার না থাকে। ভারতে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী। কিন্তু গণতন্ত্রহীনতার কারণে আমাদের নির্বাচন কমিশন, বিচারবিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও প্রশাসনসহ সবগুলো প্রতিষ্ঠান আজ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো চলে সরকারের কথায়। বিরোধী মতের লোকেরা বিচার পান না। সবকিছু দেখা হয় দলীয় বিবেচনায়। কাজেই এখানে যে গণতন্ত্র নেই, সেটি স্পষ্ট।
পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে আপনাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদি কী বলেছেন, জানতে চাইলে ড. মঈন খান বলেন ‘এটা আমার বলা যৌক্তিক হবে না, ভারতের কাছ থেকেই আপনারা বিষয়টি জানতে পারবেন।’
এ ব্যাপারে প্রতিনিধি দলে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ইত্তেফাককে বলেন ‘মঈন খান সাহেব যেটি বলেছেন, সেটিই আমাদের বক্তব্য, এর বাইরে আমাদের কিছু বলার নেই।’ প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন ‘আমাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদি কী বলেছেন, সেটি ভারতের কাছ থেকেই জানা ভালো, এটা আমাদের বলা সমীচীন নয়।’
অবশ্য বিএনপির প্রতিনিধি দলের একাধিক সদস্য ইত্তেফাককে জানান, বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন-জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি সত্য নয়, এটি মিথ্যা অপবাদ। ভারতের বিগত কংগ্রেস সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার এই অপবাদ রটায়। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের অনেক ঘটনা বাংলাদেশের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ঘটে, যা পরবর্তীতে রাজনৈতিক পক্ষের ওপর চাপানো হয়েছে বলেও মোদিকে জানান খালেদা জিয়া।
বিএনপির এই নেতারা জানান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কারাবন্দি জ্যেষ্ঠ নেতাদের মামলার বিবরণ হস্তান্তর করা হয়েছে মোদিকে। এছাড়াও কারাবন্দি অন্য নেতা-কর্মীদের তালিকা, গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের তালিকা, বিচারবহির্ভূত হত্যার তালিকা, পাঁচ জানুয়ারির সংসদ ও সদ্য অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের চিত্র এবং এ সংক্রান্ত সংবাদপত্রের কাটিং এবং খালেদা জিয়ার ওপর হামলার ও তাকে নিজ কার্যালয়ে আটকে রাখার চিত্রও দেয়া হয়েছে মোদিকে।
 ড. মঈন খান ইত্তেফাককে বলেন ‘নেতা-কর্মীদের নির্যাতনের সকল ডক্যুমেন্ট আমরা দিয়েছি। একেবারে নামসহ তালিকা দিয়েছি।’
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে মোদী যে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে কথা বলেছেন, সেটি পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে যৌথ ঘোষণা পাঠের সময় প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী আজ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানেও বলা হয়েছে-আমরা অবশ্যই গণতন্ত্রের পক্ষে। তবে একইসঙ্গে জঙ্গিবাদ এবং ধর্মীয় মৌলবাদের বিরোধিতা করি।’
বিএনপির প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান।
মোদীকে খালেদা জিয়া বৈঠকের সময় মোদিকে ধূতি কাপড় এবং তার মায়ের জন্য শাড়ি ও শাল উপহার দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
প্রগতি টাওয়ারে খালেদার অপেক্ষা
মোদির সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশে গুলশানের বাসা থেকে রওয়ানা হয়ে সাড়ে তিনটার দিকেই কাওরান বাজারে এসে পৌঁছান খালেদা জিয়া। আগে পৌঁছে যাওয়ার কারণে তিনি সোনারগাঁও হোটেলে অদূরে প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবনের ভেতরে প্রায় ২০ মিনিট বিশ্রাম নেন। তরিকুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম খানও তখন সেখানে ছিলেন। উল্লেখ্য, প্রগতি টাওয়ারটির অন্যতম মালিক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আলোচিত ৭ খুনের রহস্য উদঘাটন ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করা হয় ৭ জনকে

ভোটারবিহীন নির্বাচনের তথ্য-প্রমাণ মোদীকে দিলেন খালেদা জিয়া

আপডেট টাইম : ০৬:০৪:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুন ২০১৫
‘বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই’ এবং পাঁচ জানুয়ারি ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’ হয়েছে বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে অভিযোগ করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নরেন্দ্র মোদীর দু’দিনের বাংলাদেশ সফরের রবিবার শেষদিনে বিকেলে সোনারগাঁও হোটেলে তার সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এই অভিযোগ করেন। অভিযোগের পক্ষে তিনি বেশকিছু তথ্য-প্রমাণও মোদীর হাতে তুলে দিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মোদীর সঙ্গে বিএনপির ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের একাধিক সদস্য ইত্তেফাককে জানান, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিত্বশীল সরকার গঠনের বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন খালেদা জিয়া।
বিকেল চারটার কয়েক মিনিট আগে থেকে শুরু হয়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার এই বৈঠকে বেশিরভাগ সময়ে খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতারাই কথা বলেছেন। মোদী শুনেছেন বেশি, বলেছেন কম। মোদীর বক্তব্যের সারমর্ম ছিল, বাংলাদেশের নির্বাচন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সামগ্রিক বিষয়টি তার জানা রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিও ভারতের পর্যবেক্ষণে। কথা প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশেও গণতন্ত্র-ই দেখতে চায়। একইসঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূল প্রশ্নেও ভারতের কোনো ছাড় নেই বলেও খালেদা জিয়াসহ বিএনপির প্রতিনিধি দলকে জানিয়ে দেন মোদী।
প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নিয়ে খালেদা জিয়া সোনারগাঁও হোটেলে এসে পৌঁছান বিকেল চারটার কিছুসময় আগে। প্রতিনিধি দলকে নিয়ে মোদীর সঙ্গে খালেদা জিয়া বৈঠক করেন সাড়ে চারটা পর্যন্ত। এরপর প্রায় পনেরো মিনিট মোদীর সঙ্গে খালেদা জিয়া একান্তে বা ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ কথা বলেন। বৈঠক শেষে ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে বের হয়ে এসে হোটেলের লবিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া বলেন, ‘খুব সুন্দর বৈঠক হয়েছে, অত্যন্ত আন্তরিক ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’
পরে বৈঠক সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত চমত্কার পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। আমরা দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতিটি বিষয় উল্লেখ করেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি। বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, তাহলে কেবল বাংলাদেশ নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের জন্য অস্থির পরিবেশের সৃষ্টি করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গ্লোবাল ভিলেজে বাস করি। এখানে কেউ যদি মনে করে নিজের পরিম্লল শান্তশিষ্ট হয়ে ঘুমিয়ে থাকব, অন্য কেউ এখানে সমস্যা সৃষ্টি করবে না। এটা হতে পারে না।’
মঈন খান বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার, আমাদের মহাসচিব, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের হাজার-হাজার কর্মীদের অত্যাচার-অনাচার করা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আপনাআপনিই আলোচনায় উঠে এসেছে।’
বিএনপির প্রতিনিধি দলের এই সদস্য বলেন ‘জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার দেশের উন্নয়নের যেসব কথা বলছে তা অর্থহীন, যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকে। তাই জনগণের কল্যাণ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা। আমরা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি। ১৬ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ মধ্যম বা উচ্চ আয়ের দেশ হতে হলে মানুষকে কথা বলার, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিজের জীবনেও প্রমাণ করেছেন, গণতন্ত্রের কারণেই তিনি তৃণমূল থেকে এসে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র ছাড়া সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয় না। মধ্য আয়ের বা উন্নত দেশ গঠনও সম্ভব নয়, যদি গণতন্ত্র ও মানুষের কথা বলার অধিকার না থাকে। ভারতে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী। কিন্তু গণতন্ত্রহীনতার কারণে আমাদের নির্বাচন কমিশন, বিচারবিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও প্রশাসনসহ সবগুলো প্রতিষ্ঠান আজ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো চলে সরকারের কথায়। বিরোধী মতের লোকেরা বিচার পান না। সবকিছু দেখা হয় দলীয় বিবেচনায়। কাজেই এখানে যে গণতন্ত্র নেই, সেটি স্পষ্ট।
পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে আপনাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদি কী বলেছেন, জানতে চাইলে ড. মঈন খান বলেন ‘এটা আমার বলা যৌক্তিক হবে না, ভারতের কাছ থেকেই আপনারা বিষয়টি জানতে পারবেন।’
এ ব্যাপারে প্রতিনিধি দলে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ইত্তেফাককে বলেন ‘মঈন খান সাহেব যেটি বলেছেন, সেটিই আমাদের বক্তব্য, এর বাইরে আমাদের কিছু বলার নেই।’ প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন ‘আমাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদি কী বলেছেন, সেটি ভারতের কাছ থেকেই জানা ভালো, এটা আমাদের বলা সমীচীন নয়।’
অবশ্য বিএনপির প্রতিনিধি দলের একাধিক সদস্য ইত্তেফাককে জানান, বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন-জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি সত্য নয়, এটি মিথ্যা অপবাদ। ভারতের বিগত কংগ্রেস সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার এই অপবাদ রটায়। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের অনেক ঘটনা বাংলাদেশের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ঘটে, যা পরবর্তীতে রাজনৈতিক পক্ষের ওপর চাপানো হয়েছে বলেও মোদিকে জানান খালেদা জিয়া।
বিএনপির এই নেতারা জানান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কারাবন্দি জ্যেষ্ঠ নেতাদের মামলার বিবরণ হস্তান্তর করা হয়েছে মোদিকে। এছাড়াও কারাবন্দি অন্য নেতা-কর্মীদের তালিকা, গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের তালিকা, বিচারবহির্ভূত হত্যার তালিকা, পাঁচ জানুয়ারির সংসদ ও সদ্য অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের চিত্র এবং এ সংক্রান্ত সংবাদপত্রের কাটিং এবং খালেদা জিয়ার ওপর হামলার ও তাকে নিজ কার্যালয়ে আটকে রাখার চিত্রও দেয়া হয়েছে মোদিকে।
 ড. মঈন খান ইত্তেফাককে বলেন ‘নেতা-কর্মীদের নির্যাতনের সকল ডক্যুমেন্ট আমরা দিয়েছি। একেবারে নামসহ তালিকা দিয়েছি।’
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে মোদী যে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে কথা বলেছেন, সেটি পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে যৌথ ঘোষণা পাঠের সময় প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী আজ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানেও বলা হয়েছে-আমরা অবশ্যই গণতন্ত্রের পক্ষে। তবে একইসঙ্গে জঙ্গিবাদ এবং ধর্মীয় মৌলবাদের বিরোধিতা করি।’
বিএনপির প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান।
মোদীকে খালেদা জিয়া বৈঠকের সময় মোদিকে ধূতি কাপড় এবং তার মায়ের জন্য শাড়ি ও শাল উপহার দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
প্রগতি টাওয়ারে খালেদার অপেক্ষা
মোদির সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশে গুলশানের বাসা থেকে রওয়ানা হয়ে সাড়ে তিনটার দিকেই কাওরান বাজারে এসে পৌঁছান খালেদা জিয়া। আগে পৌঁছে যাওয়ার কারণে তিনি সোনারগাঁও হোটেলে অদূরে প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবনের ভেতরে প্রায় ২০ মিনিট বিশ্রাম নেন। তরিকুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম খানও তখন সেখানে ছিলেন। উল্লেখ্য, প্রগতি টাওয়ারটির অন্যতম মালিক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু।