রাজধানীসহ সারা দেশে ভবন নির্মাণে কড়াকড়ি করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি কোনে সরকারের আমলেই। এখন পর্যন্ত বহুতল ভবনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ভবন নির্মাণ তদারকি করার জন্য দীর্ঘদিনের দাবি আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়েও কোনো সরকারের আমলেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এবং সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণে বিপুল হতাহতের পর বিল্ডিং কোড মানার বিষয় নিয়ে ব্যাপক কথাবার্তা হচ্ছে। ডিবি প্রধান বলেছেন, বিল্ডিং কোড মেনে ভবনগুলো নির্মিত হয়েছিল কি না সেটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) খতিয়ে দেখবে।
অন্যদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলছেন, প্রচলিত বিল্ডিং কোড যুগোপযোগী নয়।
জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বহুতল ভবনের সংজ্ঞায়ন সুস্পষ্ট করবার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি অনতিবিলম্বে গঠন করতে হবে। ভবনসমূহের অভ্যন্তরীণ অগ্নি নিরাপত্তাব্যবস্থার সীমাহীন দুর্বলতা ও নগর সংস্থাসমুহের সার্বিক পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, নজরদারি ও আইনের প্রয়োগের দূর্বলতার বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে।
আদিল মুহাম্মদ খান অভিযোগ করেন, বর্তমানে ঢাকাসহ সারা দেশের নগর এলাকায় ব্যবসায়িক লাভকে বাড়ানোর অসদুদ্দেশ্য বিকল্প সিড়ি ও নির্গমন পথ, ফায়ার লিফট, ফায়ার ডোর, ফায়ার ডিটেক্টর, ফায়ার স্প্রিংক্লার, ফায়ার সাপ্রেশন সিস্টেম প্রভৃতি অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার যথাযথ ব্যবস্থা না করেই বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে কোনো ধরনের অকুপেন্সি সনদ ছাড়াই এই ভবনগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।
সব সরকারের আমলেই উপেক্ষিত বিএনবিসি
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পরিকল্পিতভাবে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ করতে ১৯৯৩ সালে বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) আইন করা হয়। তারপর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০০৬ সালে এটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। সে সময়ও বিএনপি ক্ষমতায়।
জানা যায়, গেজেটে এই আইন বাস্তবায়নে সরকার একটি নতুন কর্তৃপক্ষ গঠন করে দেবে অথবা বিদ্যমান কোনো সংস্থার মাধ্যমে আইনের বিধি বাস্তবায়ন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তারপর আর নতুন কোনো কর্তৃপক্ষ হয়নি এবং আইনও সর্বাত্মকভাবে কার্যকর হয়নি।
এ অবস্থায় ২০১১ সালে বিএনবিসি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। সে অনুযায়ী কিছু কাজও হয়। কিন্তু সংশোধিত বিএনবিসি পড়ে থাকে মন্ত্রণালয়ের টেবিলে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আলাদা কর্তৃপক্ষ না থাকায় এখন যে বিএনবিসি কার্যকর আছে সেটা কেউ মানছে, আবার কেউ মানছে না। কর্তৃপক্ষ থাকলে এমন হতো না বলেই মনে করেন তারা।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে বিএনবিসি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এ জন্য দ্রুত বিএনবিসি কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। কারণ, রাজউক এমনিতেই নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তারা বিএনবিসি বাস্তবায়ন করবে কীভাবে?
যা আছে বিএনবিসিতে
বিএনবিসিতে ভবনের নির্মাণ কৌশল বলে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভবনগুলো রিখটার স্কেলে কমপক্ষে সাত মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিরোধক হতে হবে।
বিএনবিসিতে আরও বলা হয়েছে, বিএনবিসি তথা বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করতে সরকার থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ কড়া নজরদারি করবে। যারা এই কোড মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এই কর্তৃপক্ষ।
সাততলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের আগে ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, গ্যাস, ওয়াসা ও বিদ্যুৎ বিভাগের ছাড়পত্র নিতে হবে। হাইরাইজ (সাততলার ওপর) ভবনের ক্ষেত্রে সংস্থার অনুমোদন নেওয়ার পাশাপাশি ফায়ার ডিটেক্টর, স্মোক ডিটেক্টর, উচ্চগতির পানি স্প্রে সিস্টেম ও কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন সিস্টেম থাকা বাধ্যতামূলক।
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী সাত তলার বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণের আগে ভবনটির সামনে কমপক্ষে ২৫ ফুট ও সাত তলার কম উচ্চতার ক্ষেত্রে ভবনটির সামনে কমপক্ষে ২০ ফুট প্রস্থের রাস্তা থাকতে হবে। এই রাস্তার সীমানা থেকে এক দশমিক পাঁচ মিটার দূরে ভবন নির্মাণ করতে হবে।