এক বছর পার করে দ্বিতীয় বছরে গড়াল ইউক্রেন যুদ্ধ। এখনো থামার বিন্দুমাত্র নিদর্শন নেই। সম্প্রতি শান্তি প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছে চীন। তবে ইতোমধ্যেই তা প্রত্যাখ্যান করেছে পশ্চিমারা।
এ যুদ্ধে জেলেনস্কি ও পুতিন কেউ-ই এখনো নিজেকে বিজয়ী মনে করতে পারছেন না। অন্যদিকে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দাবি, আরও একবছর চলতে পারে যুদ্ধ।
তবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এ বছরই শেষ হবে। আর এটি সমাপ্ত হবে রাশিয়ার পরাজয় এবং ইউক্রেনের বিজয়ের মাধ্যমে।
ইউকেনে চলমান এই যুদ্ধের শেষ পরিণতি কী হতে পারে তা আলোচনা করেছেন দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সম্পাদক ড্যান সাব্বাগ।
প্রথমত, বিজয়ী হতে পারে রাশিয়া
রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, তাদের সঙ্গে আছে ৩ লাখ সদস্যের একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী। আর এ সেনাবাহিনী রাশিয়ার বিজয় ছিনিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। এ ছাড়া রাশিয়াকে গোপনে চীন সহায়তা করতে পারে বলে শক্ত গুঞ্জন রয়েছে বিশেষজ্ঞ মহলে।
ইউক্রেনের হাতে পশ্চিমের অত্যাধুনিক অস্ত্র আসছে। এগুলো হাতে পেলে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সহজে পরাস্ত করা যাবে না। তাই প্রতিরোধ গড়ার আগেই পূর্ব ইউক্রেনে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে রুশ বাহিনীকে।
দ্বিতীয়ত, ঘুরে দাঁড়াতে পারে ইউক্রেন
ইউক্রেনকে ইতোমধ্যে লেপার্ড ট্যাংক পাঠিয়েছে পোল্যান্ড। এছাড়া জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা দ্রুত দেশটিতে ট্যাংক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে শতাধিক লেপার্ড ১ এবং ২ ট্যাংক আছে। এ ছাড়া অনুরূপ সংখ্যক সাঁজোয়া যানও আছে কিয়েভ বাহিনীর কাছে; যা কর্দমাক্ত মৌশুম শেষ হলে ব্যবহার করা যাবে।
রুশ স্থলবাহিনীকে আটকাতে রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার সংযোগকারী রেললাইন ও রাস্তাগুলো গুড়িয়ে দিতে হবে। এসবের পর পশ্চিমা অস্ত্রের সহায়তায় একের পর এক দখল হয়ে যাওয়া অঞ্চলগুলোকে মুক্ত করতে হবে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে। এই অবস্থায় রুশ বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হবে।
তৃতীয়ত, যুদ্ধে অচলাবস্থা
বসন্ত ও গ্রীষ্মে ইউক্রেনীয় বাহিনীর খুব একটা অগ্রগতি চোখে পড়েনি। এ জন্য অবশ্য পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহের ঘাটতিও বড় একটা কারণ। এতে লড়াইয়ের উদ্যম ও গতি হারাতে বসেছে ইউক্রেনীয়রা।
এমন পরিস্থিতে শান্তি আলোচনার জন্য চাপে পড়বে ইউক্রেন সরকার। এটা আসতে পারে চীনের পক্ষ থেকে। ইউক্রেন তখন তার দখল হয়ে যাওয়া অঞ্চলগুলো ফেরত চাইবে; যা পুতিন কখনই মেনে নেবেন না।
এই অবস্থায় সৃষ্টি হবে এক ধরনের অচলাবস্থা; যেমনটা ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার ক্ষেত্রে ঘটেছিল। পূর্ব সীমান্ত স্থিতিশীল রাখতে কয়েক বছর পশ্চিমা সমর্থনের প্রয়োজন হবে কিয়েভের।
চতুর্থত, বাইডেন বদলি হলে পাল্টে যেতে পারে চিত্র
জার্মানির কিয়েল ইনস্টিটিউট বলছে, ইউক্রেনকে ৪৬ বিলিয়ন ইউরোর সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ দিয়েছে ১৮.৭ বিলিয়ন ইউরো। সরকার বদলালে সব হিসাব-নিকাশও বদলে যেতে পারে।
ইউক্রেন যুদ্ধ পশ্চিমকে দীর্ঘ মেয়াদে ছায়াযুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারে বলে মনে করে রাশিয়া। এই অবস্থায় শুরুতে সামরিক এবং পরে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ হয়ে যাবে পশ্চিমের দেশগুলো। ঠিক আফগানিস্তানের ঘটনার মতো। ২০ বছর পর তালেবানদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে কাবুল ছাড়েন মার্কিন সেনারা।
এখন পর্যন্ত রাশিয়াকে মোকাবিলায় ইউক্রেনের পাশে আছে পশ্চিমারা। তবে জো বাইডেন যদি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা অন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন, তবে শক্ত বিপদে পড়তে পারে ইউক্রেন।
পঞ্চমত, পুতিনের পতনে রাশিয়ার পরাজয়
যুদ্ধ সাধাণরত পরিকল্পনামাফিক শেষ হয় না। প্রত্যাশিত বিজয় অর্জনে ব্যর্থতা প্রায়শই সরকার পরিবর্তনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। কূটনীতিক ক্ষেত্রে ইউক্রেন তাদের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর ভরসা রাখলেও, তার সামরিক কৌশল নিয়ে সন্দেহ আছে অনেকেরই।
তবে এক্ষেত্রে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন আছেন বেশি ঝুঁকিতে। যদি পুতিন অপ্রত্যাশিতভাবে ক্ষমতাচ্যুত হন, তবে তার উত্তরসূরি হয়তো অন্য পন্থা ব্যবহার করতেই পারেন।