উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় মাঠে মাঠে সরিষার চাষ করছেন কৃষকরা। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে হলুদ আর হলুদ। এরই মধ্যে বগুড়ায় গত বছরের তুলনায় চাষিরা এবার সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে। জেলার কৃষি বিভাগ প্রথমে ২৭ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। জেলার সরিষা চাষি ও মৌ-চাষিরা এ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এদিকে, বগুড়ায় সরিষা ফলন ভালো হওয়ায় সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা মধু সংগ্রহকারী চাষিরা বগুড়ার মাঠে মাঠে সরিষাক্ষেতের কোল ঘেসে বসিয়েছে মৌমাছির বাক্স।
জেলার কৃষি বিভাগ প্রথমে ২৭ হাজার ৫শ‘হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। সরিষা ফলন বেড়ে যাওয়ায় কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পরিবর্তন করে। দ্বিতীয় দফায় ৩১ হাজার হাজার ৫শ‘হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এদিকে, দ্বিতীয় দফার সরিষার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাকে পিছু ফেলে জেলায় কৃষকরা সরিষা উৎপাদন করেছে ৩৭ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে।
এ বিষয়ে জানতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক এনামুল হক বলেন, সরকার আগামী ৪ বছরের মধ্যে দেশে সয়াবিন আমদানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চায়। তিনি বলেন, ৪ বছরে দেশ সারিষায় স্বয়ং সম্পূর্ণতা লাভ করবে। আমদের শুধু শিল্পে ব্যবহারের জন্য যতটুকু সয়াবিন দরকার ততটুকু আমদানি করা হবে। আগামীতে সরকার আর সয়াবিন আমদানি বন্ধ করবে না। কৃষি মন্ত্রাণালয় এটিকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। এতদিন সয়াবিন যা ব্যবসা করার করে নিয়েছে। আগামীতে যাতে সোয়াবিন আমদানি করতে না হয় সে পথে হাটছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
তিনি আরো জানান, আগামী বছর ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে দেশে চাষের লক্ষ্যাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার মেট্রিক টন। তিনি আরো বলেন, আমার আগের মতো সরিষার যুগে ফিরে যাব। কৃষিতে দেশ মজবুদ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
এদিকে, সরিষা ক্ষেতকে ঘিরে মধু চাষিরা ও মধু সংগ্রহে খুব ব্যস্ত। প্রতি কেজি মধু সাড়ে তিনশ টাকায় বিক্রি করছে।
শাজাহানপুর উপজেলার আফজাল হোসেন জানান, বগুড়ায় এবার সরিষা চাষ বেশি হওয়ায় জেলার বাইরে থেকে অনেক চাষি বগুড়ায় এসেছে। মধু চাষিরা জানান সরিষার সময় ছাড়াও কালোজিরার মধু, লিচু ফুলের মধু খেসারীর ডালের মধুও তারা সংগ্রহ করে থাকে। সপ্তাহে তারা ৫ থেকে ৭ মণ মধু সংগ্রহ করে। মৌমাছি পরাগায়ন ঘটায়। এতে সরিষার উৎপাদন বেড়েছে।
অন্যদিকে, সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন মৌ চাষিরা।
মৌ চাষিদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাদের একজন বলেন, সরিষার ক্ষেতের পাশে মৌ-বাক্স পেতে মৌমাছি পালন এবং মধু আহরণ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। মাত্র তিন সপ্তাহে প্রায় ৪ লাখ ৮০ টাকার মধু আহরণ করছেন।
নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহা- সড়কের পাশে মান্দা উপজেলার সাতবাড়িয়া মাঠে সরিষা ক্ষেতের পাশে ২০০টি বাক্স স্থাপন করেছেন। প্রতিটি বাক্সে একটি করে রাণী মৌমাছি বসিয়ে দিয়ে মৌমাছি চাষ করেছেন। প্রতিটি বাক্সে ৩/৪টি করে চাক স্থাপন করেছেন। এখন থেকে ১৫ দিন আগে এসব চাক স্থাপন করেন।
প্রতিটি বাক্স থেকে প্রতি ৮ দিন পর মধু আহরণ করা হয়। প্রতি ৮ দিনে এসব বাক্স থেকে কমপক্ষে ৮০০ কেজি মধু আহরিত হয়। সোমবার পর্যন্ত ১৫ দিন অর্থাৎ দুই সপ্তাহে ১৬০০ কেজি মধু আহরিত হয়েছে। হারুন রশিদ জানিয়েছে তিনি সরিষার ফুল থাকতে থাকতেই আর এক সপ্তাহ মধু আহরণ করতে পারবেন। মানে তিনি আরও ৮০০ কেজি মধু আহরণ করবেন। সেই হিসেবে এ সিজনে তার মোট মধু আহরিত হবে ২৪০০ কেজি।
আহরিত মধু তাদের নির্ধারিত মধু ব্যাবসায়ী কোম্পানির নিকট ছাড়াও তার এ খামার থেকে প্রচুর সংখ্যক ক্রেতা খুচরা মধু ক্রয় করে থাকেন। প্রতি কেজি মধু ২০০ টাকা হারে বিক্রি করছেন। সেই হিসেবে হারুন রশিদ এ একটি স্পট থেকে মাত্র ৩ সপ্তাহে আয় করছেন ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এখানে মধু আহরণ শেষ করে তিনি যাবেন ফরিদপুরে।
নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেছেন, নওগাঁ জেলার কৃষকরা ক্রমেই সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এসব সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌবাক্স পেতে মধু আহরণ করে একশ্রেণির মৌয়ালরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এটি আয়ের একটি ভালো পথ।