পোড়ামাটির বিকল্প ইট ব্যবহারে কঠোর হতে যাচ্ছে সরকার। দু’বছরের মধ্যে সরকারি নির্মাণ কাজে ব্লক ইটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। আর ব্যক্তিপর্যায়ে পোড়ামাটির ইট বন্ধ হবে ২০৩০ সালের মধ্যে।
ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে গড়ে উঠেছে বৈধ-অবৈধ প্রায় ১২ হাজার ইটভাটা।
এসব ভাটায় প্রতিবছর ব্যবহার হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর কৃষি জমি। মাটি ক্ষয় হচ্ছে ১১ কোটি ২০ লাখ টন। ইট পোড়াতে ব্যবহার হচ্ছে ৩০ লাখ টন কাঠ। এমনকি ৫০ লাখ টন আমদানি করা নিম্নমানের কয়লাও দূষণ ছড়াচ্ছে।
ফলে প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলে যোগ হচ্ছে কার্বন মনো-অক্সাইড, সালফার অক্সাইডের মতো দূষিত উপাদান।
এমন সংকট উত্তরণে কাঠের ব্যবহার বন্ধ করা ও পোড়া মাটি ইটের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব ব্লক ব্যবহারের জন্য ২০১৯ সালে ইটভাটা আইন সংশোধন করে সরকার। এরপরও বন্ধ হয়নি অবৈধ ইটভাটা কিংবা কাঠ পোড়ানো। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ইটভাটাগুলো তদারকির নির্দেশ দেয় আদালত।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের জ্যৈষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, “সমস্ত জেলা প্রশাসকদের পক্ষ করে মামলা করা তো কঠিন কাজ। কেবিনেট সেক্রেটারি এবং জনপ্রশাসন সচিব যার অধীনে জেলা প্রশাসকরা কাজ করেন। তাদের যদি একটা নির্দেশনা দেওয়া হয় যে, তারা জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিবেন ইট ভাটা নিয়ন্ত্রণের যে দুটি বিধান- লাইসেন্স ছাড়া চালাতে পারবে না, আর কাঠ পোড়াতে পারবেনা- এটি কার্যকর করা হোক।”
২০১৬ সালে দূষণরোধে আধুনিক ইট ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে সরকার। এতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা অটোব্রিক সেক্টরে বিনিয়োগ করেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু সংশোধিত আইনের কারণে বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে অটোব্রিকস।
বাংলাদেশ অটো ব্রিক ম্যানুফেকচারাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. বি এন দুলাল বলেন, “সরকার যদি ব্লক শতভাগ ব্যবহার করে সেই নিশ্চয়তা আমাদেরকে কেউ দিচ্ছে না। সরকারের যে চাহিদা আছে সে অনুযায়ী যদি তারা এটা ব্যবহার করে তাহলে আমরা বেঁচে যাবো।”
৭০ শতাংশ বালি ও ৩০ শতাংশ সিমেন্টের মিশ্রণে ব্লক ইট তৈরি হয়। ২০২৫ সালের আগেই সরকারি কাজে শতভাগ ব্লক ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা জানায় সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এইচবিআরআই। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এরইমধ্যে ৩০ ভাগ ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে সরকারি অবকাঠামো খাতে।
নদীর ড্রেজিং করা বালি ও মাটি দিয়ে দেশের শতভাগ ইটের চাহিদা পূরণ সম্ভব বলছেন গবেষকেরা। ফলে কৃষি জমি যেমন বাঁচবে, রোধ হবে পরিবেশ দূষণ।
এইচবিআরআই মহাপরিচালক মো. আশরাফুল আলম বলেন, “এখানে কোনো ধরনের কার্বন-ডাই অক্সাইডের মিশ্রণের দরকার নাই, কৃষিজমির দরকার হবে না। নদীর ড্রেজিং করা বালি যেটা ব্যবহার করতে পারছিলাম না, ব্যবস্থাপনা করতে পারতেছিলাম না ওটাই এখন ভাবা হচ্ছে।”
হিসেব বলছে, বিশ্বে বছরে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ইট উৎপাদন হয়। সেদিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।