কাতারে যেসব স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার লড়াই হবে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রবিবার স্বাগতিক কাতার ও ইকুয়েডরের ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে ২২তম ফুটবল বিশ্বকাপের। সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারে নির্মিত কাতারের আটটি স্টেডিয়ামে ৩২ দল নামবে ট্রফির লড়াইয়ে।

বিশ্বকাপের জন্য কাতার নির্মাণ করেছে অত্যাধুনিক আটটি স্টেডিয়াম। নির্মিত প্রতিটি স্টেডিয়ামেই আছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। প্রতিটি স্টেডিয়ামে সাজসজ্জায় প্রাধান্য পেয়েছে কাতারের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, স্টেডিয়ামগুলো একইসঙ্গে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিরও সর্বোত্তম ব্যবহার করবে। সেগুলো হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, শূন্যভাগ কার্বন নিঃসরণকারী এবং পরিবেশ বান্ধব। কাতারের বেশিরভাগ স্টেডিয়ামের অংশবিশেষ তৈরি হয়েছে স্থানান্তরযোগ্যভাবে, যেন বিশ্বকাপ শেষে এগুলো বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়। সবমিলিয়ে এই আট স্টেডিয়ামের সাতটি নতুন করে নির্মাণ করেছে কাতার। সেজন্য ৬.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। তবে বিশ্বকাপের পর মাত্র ২৮ লাখ লোকের দেশে এতগুলো স্টেডিয়ামের দরকার পড়বে না।

লুসাইল স্টেডিয়াম, লুসাইল

লুসাইল স্টেডিয়াম কাতার বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। এর অবস্থান রাজধানী দোহা থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে লুসাইল সিটিতে। বিশ্বকাপের ফাইনালসহ সর্বোচ্চ ১০ ম্যাচ হবে এখানে। এই স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ৮০ হাজার। বিশ্বকাপ শেষে স্টেডিয়ামটি একটি কমিউনিটিতে রূপান্তরিত হবে। যেখানে থাকবে স্কুল, দোকান, ক্যাফে, খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি ক্লিনিক।

আল বাইত স্টেডিয়াম, আল খোর

কাতারের আল-খোর শহরে আল-বাইত নামক এই স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়েছে। এটাকে বিশাল তাঁবুর আকৃতির কাঠামো দেওয়া হয়েছে। এটির নামকরণ করা হয়েছে বাইত আল শা’আ নামক তাঁবু অনুসারে যা মূলত কাতার ও উপসাগরীয় অঞ্চলের যাযাবর মানুষদের ঐতিহাসিকভাবে ব্যবহৃত তাঁবু। স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার। রবিবার কাতার ও ইকুয়েডরের উদ্বোধনী ম্যাচটি হবে এখানে। এর আগে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান চলবে টানা ৪৫ মিনিট। সবমিলিয়ে এই মাঠে নয়টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বকাপ শেষে স্টেডিয়ামের উপরের অংশটি ভেঙে ফেলা হবে।

আল থুমামা স্টেডিয়াম, দোহা

থুমামা স্টেডিয়ামটির অবস্থান রাজধানী দোহার সমুদ্রতীরের প্রমোদোদ্যান থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে। এটি দেখতে বিশাল একটি টুপির মতো, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘গাহফিয়া’ বলা হয়। হাতে বোনা এই ধরনের টুপি শুধু কাতার নয়, প্রায় সব উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রের পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আল থুমামা স্টেডিয়ামটি ‘গাহফিয়া’ টুপির নকশায় অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা। এটি আরব বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের অংশ। এর দর্শক ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার হলেও বিশ্বকাপের পর স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা ২০ হাজার আসনে নামিয়ে আনা হবে। এই ভেন্যুতে আটটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।

আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়াম, আল রাইয়ান

কাতারের আল-রাইয়ানে অবস্থিত আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামটি মূলত স্থানীয় অত্যন্ত জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব আল-রাইয়ান স্পোর্টস ক্লাবের স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটিতে কাতারের সংস্কৃতির প্রতিফলন ফুটে উঠেছে। স্টেডিয়ামটির বাইরের আবরণটি একটি সুবিশাল ত্রিমাত্রিক গোলাকার পর্দা হিসেবে কাজ করবে, যা বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন দৃশ্য দেখানো হবে। এই ভেন্যুতে বিশ্বকাপের সাতটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বকাপ শেষে প্রায় ২০ হাজার আসন কমানো হবে এবং আসনগুলি বিদেশে ফুটবল উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দেওয়া হবে।

আল জানোব স্টেডিয়াম, আল ওয়াকরা

অত্যন্ত সৃজনশীল, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং নান্দনিক ডিজাইনের এই স্টেডিয়ামটি ইরাকি-আমেরিকান স্থপতি জাহা হাদিদের অসাধারণ একটি সৃষ্টি। বক্রতার রাণী হিসেবে খ্যাত জাহা হাদিদ তার এই নকশাতেও তার ঢেউ খেলানো বক্রতলের অনন্য স্থাপত্যশৈলীর স্বাক্ষর রেখেছেন। আরব উপসাগরের বুকে মাছ ধরা ও মুক্তা সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী ‘ধো’ নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে স্টেডিয়ামটি। এটি একটি বিস্তৃত ক্রীড়া কমপ্লেক্সের অংশ যেখানে সাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে রেস্তোরা রয়েছে। ৪০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে সাতটি ম্যাচ।

খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, আল রাইয়ান

১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্টেডিয়ামটি কাতারের সবচেয়ে পুরানো স্টেডিয়ামগুলোর একটি। শুরু থেকেই এটি কাতারের ক্রীড়াজগতের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়ে এসেছে। এই স্টেডিয়ামে বিভিন্ন সময় এশিয়ান গেমস, গাল‌ফ কাপ, এএফসি এশিয়ান কাপসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলাধুলোর আয়োজন করা হয়েছে। এটি মূলত দোহা স্পোর্স্টস সিটির একটি অংশ। এর নামকরণ করা হয়েছিল কাতারের সাবেক আমির খালিফা বিন হামাদ আল থানির নামানুসারে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে এর অবকাঠামোগত পরিবর্তন করা হয়েছে। স্টেডিয়ামটিতে আংশিকভাবে ঢেকে দেওয়া গ্যালারি আছে। এখানে গড়াবে আটটি ম্যাচ। দর্শক ধারণক্ষমতা ৪৫ হাজার ৫০০।

এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম, আল রাইয়ান

হীরার আদলে নির্মিত স্টেডিয়ামটির স্টেডিয়ামটির চারপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ৪০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতায় নির্মিত এই স্টেডিয়ামে আটটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বকাপের পর আসন সংখ্যা ২৫ হাজারে নামিয়ে আনা হবে। অতিরিক্ত আসনগুলো দান করা হবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে।

স্টেডিয়াম ৯৭৪, দোহা

বিশ্বকাপের অন্যতম ভেন্যু রাজধানী দোহার ‘স্টেডিয়াম ৯৭৪’। ইতিহাস, সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত থাকা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সর্বপরি কাতারিদের ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা জানাতে গড়া এই মাঠ। ৯৭৪টি শিপিং কন্টেইনারে নির্মিত হওয়ায় মাঠটির নামকরণও ওই নামে। কাতারের আন্তর্জাতিক ফোন নম্বর কোড ৯৭৪-এর সঙ্গেও রাখা হয়েছে মিল। দোহা সমুদ্রবন্দরের সন্নিকটে অবস্থিত স্টেডিয়ামটির নকশা করেছে ফেনউইক ইরিবারেন আর্কিটেক্ট। ভেন্যুটি ঠাণ্ডা রাখতে আলাদা কোনও ব্যবস্থা রাখা হয়নি, সমুদ্রের বাতাসের অবাধ চলাচল মোহিত করে রাখবে দর্শকদের। চমক জাগানো মাঠটির স্থাপত্যশৈলী পর্যটকের কাছেও অন্যতম আকর্ষণের হয়ে উঠবে। বিশ্বকাপের পর স্টেডিয়ামটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা হবে এবং উপকরণগুলো ফের ব্যবহার করা হবে। এখানে অনুষ্ঠিত হবে সাতটি ম্যাচ। দর্শক ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার।

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর