বিএনপি নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর সিলেটের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেটে বিএনপির পূর্বনির্ধারিত গণসমাবেশ শনিবার। সমাবেশ ঘিরে উৎসবের নগরী হয়ে উঠেছে সিলেট। সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার থেকেই নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর সমাবেশস্থল সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। চারদিক থেকে আসছে বিএনপি নেতাকর্মীদের খণ্ড খণ্ড মিছিল।

অন্যদিকে বিএনপির সমাবেশের আগের দিন থেকেই সিলেটে শুরু হয়েছে দুদিনের পরিবহন ধর্মঘট। তবে বিভাগের সব জেলায় বাস বন্ধ রয়েছে বৃহস্পতিবার থেকেই। তবুও ধর্মঘট উপেক্ষা করে পথে পথে নানা ভোগান্তি পেরিয়ে এরইমধ্যে সমাবেশ মাঠে জড়ো হয়েছেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। সবমিলিয়ে সমাবেশের আগের রাতেই কানায় কানায় পূর্ণ সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ।

এছাড়া সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) নগরের ১৯ স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ সর্তক অবস্থানে রয়েছে বলে এসএমপি জানিয়েছে।

এদিকে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই বিএনপি নেতাকর্মীরা যে যেভাবে পারছেন রওনা দিচ্ছেন সিলেটের সমাবেশস্থলের উদ্দেশ্যে। কেউ কেউ ভিন্ন ভিন্ন বাহনে ধর্মঘটের আগেই পৌঁছে গেছেন সিলেটে। কেউ কেউ ধর্মঘট উপেক্ষা করে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় সমাবেশস্থল সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে কথা হয় ধর্মঘটের বাধা পেরিয়ে সিলেটে পৌঁছানো নেতাকর্মীদের সঙ্গে। তারা জানান, শুক্রবার সিলেট থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছাড়েনি। বিভাগের অন্য তিন জেলায় ধর্মঘট থাকায় শুক্রবার সেসব জেলা থেকে মোটরসাইকেল ও নৌকায় করে নেতাকর্মীরা সিলেট আসতে শুরু করেন। কেউ কেউ হেঁটে এবং যাত্রাপথের নানা ভোগান্তি পেরিয়ে সিলেট এসে পৌঁছান। এছাড়া হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জেও বিএনপির নেতাকর্মীরা ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তির শিকার হন।

সমাবেশের আগে সিলেটে আসা নেতাকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন দায়িত্বশীলরা। তাদের খাবার পরিবেশনের সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। সেখানে নেতাকর্মীদের খাবার পরিবেশন করছেন দায়িত্বশীলরা।

সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সুনামগঞ্জ থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ট্রলার ও মোটরসাইকেলে করে এসেছেন। একইভাবে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ থেকে আসেন নেতাকর্মীরা। সুনামগঞ্জ থেকে নদীপথে আসা নেতাকর্মীরা ট্রলার থেকে নেমে কেউ কেউ মিছিলসহ চলে আসেন সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে। আবার কেউ কেউ শহরের বিভিন্ন হোটেল ও কমিউনিটি সেন্টারেও অবস্থান নেন। বিভিন্ন নেতার অনুসারীরা রঙ-বেরঙের টি-শাট ও ক্যাপ (টুপি) পরে মিছিলসহ আসেন গণসমাবেশস্থলে। মিছিলে বহন করা হয় নিজ গ্রুপের নেতা এবং দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি।

দুপুরের মধ্যে যেসব নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে পৌঁছান, তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা মাঠেই করা হয়। প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মীর জন্য মোরগ-পোলাও রান্না করা হয় দলের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে ৫ হাজার নেতাকর্মীর জন্য হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ১০ হাজার নেতাকর্মীর খাবার রান্নার ব্যবস্থা করেন। সকাল থেকে শুরু হয় রান্নাবান্নার ধুম। দুপুরে সমাবেশস্থলে জুমার নামাজ আদায় করেন উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মী। সন্ধ্যার দিকে পুরো আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে। আলিয়া মাঠ ও আশপাশের সড়ক মিছিল-স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মিছিল দেন। ওই মাঠেই উপিস্থত নেতাকর্মীরা রাতযাপন করবেন বলে জানা গেছে।

দলের কয়েকজন নেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বিভাগের হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার থেকে রাতেই প্রচুরসংখ্যক নেতাকর্মী এসেছেন। এদের একটি অংশ সমাবেশস্থলে এসেছেন, বাকিদের সিলেট শহর ও আশপাশ এলাকায় রাখা হয়েছে। শুক্রবার সকালে তারা মিছিলসহ তারা সমাবশেস্থলে এসে যোগ দেবেন। এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভাগের চার জেলার দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা শোডাউন করে সমাবেশে আসার প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন। এক রঙের টিশার্ট ও ক্যাপ পরিয়ে নিজেদের অনুসারীদের সমাবেশে এনে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করবেন তারা।

অন্যদিকে সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিএনপি নেতাদের দাবি, সরকার সমাবেশ বানচাল করতে পরিবহন শ্রমিকদের বাধ্য করে ধর্মঘট দিয়েছে। যাতে নেতাকর্মীরা সমাবেশে এসে পৌঁছাতে না পারে।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, তারেক রহমানের ওপর থেকে মামলা প্রত্যাহার, সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি এবং নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিভাগে বিভাগে সমাবেশ করছে বিএনপি।

এদিকে সমাবেশ সফল করতে সিলেটের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় দুই সপ্তাহব্যাপী বিরামহীন প্রচারণা করেছেন স্থানীয় ও জাতীয় বিএনপি নেতারা। অনেক জায়গায় প্রচারণায় গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও হামলার ঘটনায় মামলাও হয়েছে। বেশ কয়েকজন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী গ্রেপ্তারও হয়েছেন।

বিএনপির সমাবেশের আগের দিন সিলেটের ৪ জেলায় দুদিনের ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন মালিক সমিতি। এতে সিলেটের সাথে শুক্রবার থেকেই সারাদেশের বাস যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে, সন্ধ্যার পর থেকে সিলেটের বিভিন্ন সড়কে পুলিশি তল্লাশি শুরু হয়। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা বাসে করে সমাবেশে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু রাস্তায় তাদের বাস আটকে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

সিলেট জেলা বিএনপির নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী জানান, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বাস আটকে তল্লাশি করে। এসময় সমাবেশে আসার জন্য ভাড়া করা বাসগুলো আটকে নেতাকর্মীদের নামিয়ে দেয় পুলিশ।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ জানিয়েছেন, ‘যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মহানগরের প্রবেশদ্বারসহ ১৯টি স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সমাবেশস্থলে শনিবার সাদা পোশাকে পুলিশের একাধিক টিম দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৪টি মোবাইল টিম মাঠে কাজ করবে।’ যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সিলেট মহানগর পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সমাবেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপির নির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বিএনপির এই কর্মসূচি দলের জন্য। দেশ ও মানুষ বাঁচানোর জন্য বিএনপি আন্দোলনে নেমেছে। জনগণ আন্দোলনের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। নেতাকর্মীদের ঢল এখন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠমুখী। পরিবহন ধর্মঘট ডেকে ভোগান্তি সৃষ্টি করেও মানুষকে আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। মানুষ যে যেভাবে পারছে সেভাবে আসছে। শনিবার শুধু আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ নয়, পুরো সিলেট নগরী জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এর মাধ্যমে সরকারকে সিলেট বিভাগের মানুষ লালকার্ড দেখাবে।

এর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি এবং নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশের ৬ টি বিভাগ ও ১ টি জেলায় গণসমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল বিভাগে ও ফরিদপুর জেলায় করা এসব গণসমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হয়েছিলেন। তারই ন্যায় সিলেটে সপ্তম গণসমাবেশ করতে যাচ্ছে দলটি। ৪ লাখ নেতাকর্মীদের উপস্থিতি টার্গেট করে এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার দুপুর ২টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিতব্য এ গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমঙ্গীর। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।

অপরদিকে, সমাবেশে আসা বিপুলসংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি থাকার সুযোগে ‘মোবাইল চুরির হিড়িক পড়েছে’। সন্ধ্যা সোয়া ৬ টা পর্যন্ত ২০টি মোবাইলসহ একাধিক মানিব্যাগ খোয়া গেছে বলে জানা গেছে। তবে মোবাইল ও মানিব্যাগ চুরির কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের ডিসি আজবাহার আলী শেখ। তিনি জানান, ‘মোবাইল বা মানিব্যাগ চুরির তথ্য আমাদের কাছে নেই। কেউ অভিযোগ করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর