হাওর বার্তা ডেস্কঃ আর দশ দিন পর শুরু হতে যাচ্ছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফুটবল বিশ্বকাপ। প্রতিবার ফুটবলের এ মহাযজ্ঞের উত্তাপ বিশে^র প্রতিটি দেশেই ছড়িয়ে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশ যোজন যোজন পিছিয়ে থাকলেও বিশ্বকাপ ফুটবল এলে এর আমেজ ছড়িয়ে পড়ে শহর থেকে গ্রামে-গঞ্জে সবখানে। কলেজ, ইউনিভার্সিটি, অফিস-আদালতেও। সর্বত্র চলতে থাকে বিশ^কাপের ম্যাচ নিয়ে আলোচনা। চায়ের আড্ডায় জমে ওঠে বাহাস।
এবারের ২২তম বিশ্বকাপের আসর বসছে পশ্চিম এশিয়ার দেশ কাতারে। মহাযজ্ঞের শুরুর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার আর বেশি সময়ও নেই। বাংলাদেশেও এর উত্তাপ টের পাওয়া যাচ্ছে। দেশের মানুষ ইতোমধ্যে নিজ নিজ দলকে সমর্থন করার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে। রাস্তায় রাস্তায় দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের পতাকা নিয়ে ফেরি করছেন ফেরিওয়ালারা। বিভিন্ন দোকানে দেখা যাচ্ছে জার্সি কেনার হিড়িক। টেলিভিশন ব্যবসায়ীদের চলছে রমরমা ব্যবসা। বিক্রি হচ্ছে টিভি।
বিশ্বকাপ এলেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় ভাগ হয়ে যায় বাংলাদেশের মানুষ। নিজের দেশ বিশ্বকাপে না থাকলেও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সাফল্য-ব্যর্থতা দিয়েই বিশ্বকাপের উৎসবটা সারেন এ দেশের মানুষ।
দুই দলের সমর্থকরা তাদের বাসার ছাদে টাঙাচ্ছে নিজেদের দলের পতাকা। কোনো কোনো সমর্থক নিজেদের বাড়ির ছাদ থেকে পতাকা নিচ পর্যন্ত মাপের তৈরি করেছেন। কার কত বড় পতাকা সেটি নিয়ে চলছে লড়াই। শুধু পতাকা দিয়েই নয়, বাড়িও রাঙাচ্ছেন এই দুই দলের সমর্থকরা দলের রঙে রঙিন করে।
ফুটবলের প্রতি বাংলাদেশের ফুটবলভক্তরা আবেগে ভরপুর, সেই আবেগের প্রকাশও ঘটে চরম উচ্ছ্বাসে। অন্যভাবে বলতে গেলে, প্রায় প্রতিবার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে উন্মাদনার মাত্রা অনেক ক্ষেত্রে বেশিই থাকে। গত ৮ জুন কোকা-কোলার উদ্যোগে বাংলাদেশে আয়োজিত হয়েছিল ‘ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২’ ট্রফি ট্যুর। ফুটবলের প্রতি সেই আবেগ, সেই উন্মাদনা আবার জাগিয়ে তোলার জন্য আঁকা হয়েছিল গলি গ্রাফিতি।
বাংলাদেশিদের ফুটবলের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা ও ফুটবলকে ঘিরে তাদের উদযাপনের কথা এ আর্ট ওয়ার্কের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন শিল্পীরা। গ্রাফিতিগুলোতে আরও ফুটিয়ে তোলা হয়ছিল ফুটবলের প্রতীক, মহাতারকা ও ভক্তদের।
বনানী ১১ ও গুলশান সংযোগ সেতুর পাশে অবস্থিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসার্স কোয়ার্টার্সের ১২০০০ স্কয়ার ফিট দেয়ালে গ্রাফিতিটি তৈরি হয়েছে। এ উদ্যোগের পরিকল্পনা, ডিজাইন ও বাস্তবায়নের কাজটি করে কোকা-কোলা ও কমিউনিকেশনস পার্টনার বেঞ্চমার্ক পিআর।
শুধু তাই নয়, পতাকা তৈরিতে বড় ধরনের চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের সময়ের নওগাঁ প্রতিনিধি আসাদুর রহমান জয় সেখান থেকে পতাকা নিয়ে রিপোর্টও করেছেন। উন্মাদনার এমন নিদর্শন দেখা গেল নওগাঁর পোরশা উপজেলার ঘাটনগর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া নামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে।
আসাদুর রহমান জয় জানান, আসন্ন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলের প্রতি ভালোবাসা ও সমর্থন জানিয়ে কয়েক দিন আগে প্রায় ১২০ ফুট লম্বা পতাকা টাঙিয়েছেন পোরশা উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের সমর্থকরা। পাল্টা জবাব দিতে ব্রাজিল সমর্থকরা গত শুক্রবার প্রায় ২৭০ ফুট লম্বা পতাকা টাঙান। বিশ্বকাপ নিয়ে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল সমর্থকদের এমন উন্মাদনা এখন এলাকাবাসীর আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এলাকার চায়ের দোকানে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে নানাকথা। তবে যারা খেলার মধ্যে শুধুই আনন্দ খোঁজেন, তারা এতে সেই আনন্দ উপভোগ করছেন।
মোল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ব্রাজিলের সমর্থক কবির হোসেন বলেন, ব্রাজিলের কোনো তুলনা হয় না। ব্রাজিল পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে। ব্রাজিলকে সমর্থন করে ইতোমধ্যে এলাকায় আমরা ২৭০ ফুট লম্বা পতাকা টাঙিয়েছি। এবারও তারা জিতবেন বলে তিনি আশা করেন।
একই এলাকার আর্জেন্টিনার সমর্থক ফারুক হোসেন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এলাকায় আর্জেন্টিনার পক্ষে শোভাযাত্রা করেছি এবং ১২০ ফুট লম্বা পতাকা টাঙিয়েছি। এবার তার দল আর্জেন্টিনা জিতবে বলে তিনি মনে করছেন।
শুধু পতাকা নিয়েই থেমে নেই। ফেসবুক পেজে চলছে বিশ^কাপ নিয়ে সমর্থকদের বাহাস। বিশ্বকাপ ফুটবলের এ উত্তাপ শুরু হবে ২০ নভেম্বর আর শেষ হবে ১৮ ডিসেম্বর।