হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমের দেশ ডেনমার্ক। সরকারিভাবে এটি ‘কিংডম অফ ডেনমার্ক‘ নামে পরিচিত। ডেনমার্ক স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চলের অংশ। ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগলিকভাবে দেশটি উত্তরের স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইউরোপের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর কোপেনহেগেন। এ ছাড়া আরহাস ও
ডেনমার্কের আয়তন ৪২ হাজার ৯২৪ বর্গকিলোমিটার। দেশটির জনসংখ্যা ৫৮ লাখ ৪০ হাজার। ডেনমার্কের রাষ্ট্রভাষা ডেনিশ। প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। ডেনমার্কের বর্তমান জাতীয় পতাকা ১২১৯ সাল থেকে প্রচলিত। বিশ্বের অন্যতম ধনী ও আধুনিক রাষ্ট্র ডেনমার্ক। সবুজ ভূমি, পাহাড়, নদী ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশটিতে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র থাকলেও সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই দেশ পরিচালিত হয়।
ডেনমার্কে কেমন আছে মুসলিমরা?
ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমের দেশ ডেনমার্ক। সরকারিভাবে এটি ‘কিংডম অফ ডেনমার্ক‘ নামে পরিচিত। ডেনমার্ক স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চলের অংশ। ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগলিকভাবে দেশটি উত্তরের স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইউরোপের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর কোপেনহেগেন। এ ছাড়া আরহাস ও আলব্রোগা দেশটির প্রধান দুই শহর।
জামির হোসেন
ডেনমার্কের আয়তন ৪২ হাজার ৯২৪ বর্গকিলোমিটার। দেশটির জনসংখ্যা ৫৮ লাখ ৪০ হাজার। ডেনমার্কের রাষ্ট্রভাষা ডেনিশ। প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। ডেনমার্কের বর্তমান জাতীয় পতাকা ১২১৯ সাল থেকে প্রচলিত। বিশ্বের অন্যতম ধনী ও আধুনিক রাষ্ট্র ডেনমার্ক। সবুজ ভূমি, পাহাড়, নদী ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশটিতে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র থাকলেও সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই দেশ পরিচালিত হয়।
ডেনমার্কের ধর্ম
ডেনমার্কের রাষ্ট্রধর্ম ইভাঞ্জেলিক্যাল লুথারান তথা লুথারীয় খ্রিস্ট ধর্ম যা দেশটির সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশই ইভাঞ্জেলিক্যাল লুথারান ধর্মের। ৩ শতাংশ রোমান ক্যাথলিক। দেশটিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হলো ইসলাম। মুসলিমদের সংখ্যা ৩ লাখের মতো। যা মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ।
ইসলাম ও মুসলিমদের আগমনের ইতিহাস
ঐতিহাসিকদের মতে, কয়েক শতক ধরেই ডেনমার্কে বসবাস করছে মুসলিমরা। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে দেশটির প্রথম সংযোগ তৈরি হয় মধ্যযুগে। ডেনিশ ইতিহাসবেত্তা জরগেন সিমনসেনের মতে, জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মুসলিম ও সম্মিলিত খ্রিস্টান বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত ক্রুসেড যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল ডেনমার্কের সামরিক বাহিনী।
তখন থেকেই ডেনমার্ক ইসলামের সঙ্গে পরিচিতি ঘটে। ১৮৮০ সালে পরিচালিত আদমশুমারিতে ডেনমার্কে ৮ জন মুসলিমের নাম নথিভুক্ত করা হয়। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত প্রতিটি আদমশুমারিতে মুসলিমদের সংখ্যা গণনা করা হয়েছে এবং প্রতিবারই আগের চেয়ে সংখ্যা বেড়েছে। ১৯৫০-এর দশকে মুসলিম দেশগুলো থেকে ব্যাপক অভিবাসন শুরু হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শিল্পায়নের কারণে যুগোস্লাভিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিমপ্রধান দেশগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলিম ডেনমার্কে আসে। এটাকে মুসলিম অভিবাসনের প্রথম ঢেউ বলা হয়। এ সময় দেশটিতে ইসলামের প্রসার ঘটে এবং ১৯৬৭ সালে এখানে প্রথমবারের মতো মসজিদ নির্মাণ মুসলিমরা।
কিন্তু ১৯৭৩ সালে অভিবাসী আইনে পরিবর্তন এনে মুসলিম অভিবাসন একেবারে বন্ধ করে দেয় ডেনিশ সরকার। এরপর ১৯৮০-এর দশকে আবারও মুসলিম অভিবাসন শুরু হয়। যাকে দ্বিতীয় ঢেউ বলে উল্লেখ করা হয়। মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে ডেনমার্কে আসে বহু মুসলিম।
ডেনিশ সরকার এখন নাগরিকদের ধর্মের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে না। ফলে মুসলিমদের সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব নয়। তবে বেসরকারিভাবে একটা হিসাব রাখা হয়। ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগের গবেষক ব্রায়ান জ্যাকবসেন অভিবাসীদের দেশ ও জাতির ওপর ভিত্তি করে নিয়মিত একটা হিসাব রাখেন। তার হিসাব মতে, ২০২০ সালে মুসলিমদের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার।
তবে এর এক বছর আগে তথা ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ’-এর প্রতিবেদন মতে, ডেনমার্কে বসবাসরত মুসলিমদের সংখ্যা তিন লাখ ১৩ হাজার ৭১৩ জন, যা ডেনিশ জনগণের ৫.৪০ শতাংশ। ডেনিশ মুসলিমদের প্রায় ৪০ শতাংশই রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী। মুসলিমদের ৭০ ভাগই বর্তমানে ডেনিশ নাগরিক। যার বেশিরভাগই আবার প্রথম প্রজন্ম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের।
দেশ ও জাতির বিচারে ডেনিশ মুসলিমদের ২২.২ শতাংশ তুর্কি, ১০.২ শতাংশ ইরাকি, ৯.৫ শতাংশ লেবানিজ, ৮.৭ শতাংশ পাকিস্তানি, ৭.৩ শতাংশ সোমালিজ ও ৬.৩ শতাংশ আফগান। অন্যরা বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্র থেকে আগত।
বেশিরভাগ অভিবাসী হলেও ধর্মান্তরিত স্থানীয় ডেনিশ মুসলিমদের সংখ্যাও কম নয়। ২০১৭ সালে প্রায় ৩ হাজার আটশ’ ডেনিশ নাগরিক মুসলিম হন। খ্যাতিমান ডেনিশ নাগরিকদের মধ্যে ১৯২৯ সালে লেখক ও সাংবাদিক নুড হলম্বো প্রথম ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ
মুসলিমদের সঙ্গে সঙ্গে ডেনমার্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদের সংখ্যাও বাড়ছে। ২০০৬ সালে ডেনমার্কে মসজিদের সংখ্যা ছিল ১১৫টি। ২০১৭ সালে যা বেড়ে ১৭০টি হয়। সরকার স্বীকৃত এসব মসজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন। ডেনিশ মুসলিমদের ২০ থেকে ২৫ শতাংশই এসব সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
মসজিদ ছাড়াও দেশটিতে আরও অসংখ্য নামাজের ঘর রয়েছে। মুসলিমদের ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশটিতে সরকার অনুমোদিত ২২টি কমিউনিটি রয়েছে। মুসলিম শিশুদের শিক্ষার জন্য রয়েছে একাধিক ইসলামিক স্কুল। এসব স্কুল সাধারণ বিভিন্ন দেশের কমিউনিটিভিত্তিক। ডেনমার্কের প্রথম ইসলামিক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালে। বর্তমানে ২২টি স্বাধীন মুসলিম প্রাইমারি স্কুল রয়েছে।
ধর্মীয় স্বাধীনতা
ডেনমার্কে সংবিধানের মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রধর্ম খ্রিস্টান হওয়ার সুবাদে চার্চ অব ডেনমার্ক নির্দিষ্ট কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। যা অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলো পায় না। তবে দেশটিতে অন্যান্য ধর্মপালনের স্বাধীনতা রয়েছে। প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী ধর্মাচার করতে পারে।
ধর্মীয় প্রতীক ও পোশাক পরার ব্যাপারে ডেনিশদের স্বাধীনতা রয়েছে। পার্লামেন্ট, সরকারি স্কুল ও কর্মক্ষেত্রে যে যার খুশি মতো পোশাক পরতে পারে। তবে সম্প্রতি দেশটির রাজনীতিতে উগ্র জাতীয়তাবাদ, শরণার্থীবিরোধী মনোভাব ও ইসলামবিদ্বেষ বাড়ছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের সমালোচনা উপেক্ষা করে ২০১৮ সালে দেশটিতে বোরকা ও নিকাব নিষিদ্ধ করা হয়। যাতে আইন অমান্য করলে এক হাজার ডেনিশ ক্রোন জরিমানা করার বিধান রাখা হয়।
নাগরিকদের খাবারের স্বাধীনতা রয়েছে ডেনমার্কে। মুসলিমদের জন্য তাদের পছন্দ অনুযায়ী হালাল খাবার বেশ সহজলভ্য। তবে প্রাণী অধিকারকর্মীদের প্রতিবাদের মুখে ২০১৪ সালে আইন করে পশু জবেহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সংস্কৃতি ও আন্তধর্মীয় সম্পর্ক
ডেনিশ মুসলিমদের বেশিরভাগই সুন্নি। তবে উল্লেখযোগ্য অংশ শিয়া। এ ছাড়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমও রয়েছে। তবে সবার মধ্যেই একটা সম্প্রীতি রয়েছে। এ মুসলিমদের বেশিরভাগই আবার বড় শহরগুলোতে বাস করে।
রাজধানী কোপেনহেগেনে ৪৭.৪ শতাংশ, ৯.৪ শতাংশ আরহাস ও ৫.৫ ভাগ ওডেন্সে শহরে বাস করে। প্রত্যেক সম্প্রদায় তাদের নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্ম ও সাংস্কিৃতিক কর্মকাণ্ড করে থাকে। এর মধ্যে সুন্নিদের ঈদ উৎসেবর পাশাপাশি প্রতিবছর আশুরা উপলক্ষে প্রায় ৩ হাজার শিয়া মুসলিমের মিছিল উল্লেখযোগ্য।
ডেনমার্কে আন্তধর্মীয় সম্পর্ক বেশ জোরাল। মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি পুরো ডেনিশ সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টিতে কাজ করছে বেশ কয়েক মুসলিম যুব সংগঠন।
এ ছাড়া ১৯৯৬ সালে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের সমন্বয়ে এমন একটি সংগঠন গড়ে ওঠে যা আন্তধর্মীয় সম্পর্কের অনন্য দৃষ্টান্ত। দ্য ইসলামিক-ক্রিশ্চিয়ান স্টাডি সেন্টার নামের ওই সংগঠনে মুসলিম ও খ্রিস্টান সদস্যের সংখ্যা সমান সমান। উভয় ধর্মের মধ্যে একটা ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করছে সংগঠনটি।
সময় নিউজ