ঢাকা ০৪:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক অতিরিক্ত ডিআইজি ও ৩ এসপিকে তিরস্কার, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৬:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ২০২২
  • ১৬১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সহকর্মীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া, জুয়া থেকে অর্থ আদায়, আওয়ামী লীগ নেতাকে বেআইনি আটকসহ বিভিন্ন অপরাধে পুলিশের এক অতিরিক্ত ডিআইজি ও তিন পুলিশ সুপারকে (এসপি) দণ্ড দিয়েছে সরকার।

অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী দণ্ড হিসেবে পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে তিরস্কার ও এক কর্মকর্তার বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরপাত্তা বিভাগ সম্প্রতি এ সংক্রান্ত পৃথক চারটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

ঊর্ধ্বতন এ চার পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- পুলিশ সদর দপ্তরে (সাময়িক বরখাস্ত) সংযুক্ত অতিরিক্ত ডিআইজি (এর আগে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) কাজী মো. ফজলুল করিম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মিজানুর রহমান ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পু্লিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (যশোরের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) মো. সালাউদ্দিন শিকদার।

জানা যায়, অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি চাকরির বিধি অনুযায়ী চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন: পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত রয়েছেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি অধীনস্থ এক এসআইয়ের স্ত্রীসহ একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান। এছাড়া প্রায় রাতেই মদ্যপান করে বাসায় ফিরতেন। অভিযোগকারী মিসেস নওশিনের (ছদ্মনাম) অভিযোগ, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং যৌতুকের দাবি করেছেন সাখাওয়াত হোসেন। এই অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে চারটি মামলা হয়েছে।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে গত বছর সাখাওয়াত হোসেনকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কারণ দর্শানো হয়। পরে ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা তদন্ত করে জানতে পারেন, একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও প্রায় রাতেই মদ্যপান অবস্থায় বাসায় ফিরতেন সাখাওয়াত হোসেন।

এছাড়া নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে এসআইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পরে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধি অনুযায়ী তাকে তিরস্কার দণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ফজলুল করিম: ২০০৮ সালের ২০ মার্চ ডিএমপির পিএসআই অলিউল হোসেন চৌধুরী (বর্তমানে বরখাস্ত) তার অন্যান্য সহযোগীসহ প্রাইভেটকারে মহাখালী টার্মিনাল ফাঁড়ির সামনে থেকে রিপন নামে একজনকে গাড়িতে তোলেন। এসময় তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চোখ বেঁধে ফেলা হয়। পরে তার কাছ থেকে ৮৬ হাজার সৌদি রিয়াল, মোবাইলফোন ও পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী রিপন বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন। মামলা তদন্তকালে পিএসআই আলীউল হোসেনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় তৎকালীন ডিএমপির ডিসিপ্লিন বিভাগের ডিসি ফজলুল করিম পিআরবি-৭৪১ বিধি মোতাবেক পিএসআইয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যক্রম শেষ করে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

তবে ডিএমপিতে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (অধস্তন কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০০৬ কার্যকর থাকা সত্ত্বেও ডিসি ফজলুল করিম পিআরবি বিধি-৭৪১ মোতাবেক পিএসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

পরবর্তীসময়ে পিএসআই আলীউল হোসেন ঢাকার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে আদালত ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে আলীউলের চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০১৯ সালে আদালত তা খারিজ করে দেন।

এদিকে তৎকালীন ডিসি ফজলুল করিমের উদাসীনতা, খামখেয়ালিপূর্ণ কর্মকাণ্ড, সরকারি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে চরম অবহেলার অভিযোগে চলতি বছরের জুলাইয়ে তাকে কারণ দর্শানো হয়। ৩১ সেপ্টেম্বর তিনি কারণ দর্শানোর জবাব দাখিলপূর্বক ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন জানান।

তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় ব্যক্তিগত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সব তথ্য প্রমাণ যাচাই-বাছাই শেষে ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে এসপি ফজলুল করিমকে তিরস্কার দণ্ড দেওয়া হয়।

জিএমপির ডিসি মিজানুর রহমান: গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে (জিএমপি) কর্মরত উপ-কমিশনার (ডিসি) মিজানুর রহমান দিনাজপুরে অতিরিক্ত পুলিশ থাকাকালে একটি বিকাশ নম্বর চালু করেন। সেই নম্বরে তিনি স্থানীয় জুয়াড়িদের কাছ থেকে চাঁদা নিতেন।

২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মিজানুর রহমানের ওই বিকাশ নম্বরে ১১ লাখ ৯০০ টাকা জমা পড়ে। এরমধ্যে ক্যাশআউট করে তুলে নেওয়া হয় সাড়ে নয় লাখ টাকা। বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তর অবহিত হলে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।

এসময় তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারেন, জুয়াড়িরা প্রতি মাসে মিজানুর রহমানকে বিকাশের মাধ্যমে ঘুসের টাকা দিতেন। ওই বিকাশ নম্বরটি সবসময় বন্ধ রাখা হতো। শুধু টাকা উত্তোলনের সময় চালু করা হতো।

তদন্তকালে বিকাশ নম্বরটি তার নয় বলে দাবি করেন এসপি মিজানুর রহমান। তবে বিকাশ নম্বরটি ব্যবহার করে বিমানের টিকিট কেটেছিলেন মিজানুর। এরপরই প্রমাণিত হয় বিকাশ নম্বরটি মিজানুর নিজেই ব্যবহার করতেন।

অসদাচরণ ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা প্রমাণিত হওয়ায় জিএমপির এই ডিসিকে আগামী এক বছরের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। তার স্থগিত বেতন বৃদ্ধি ভবিষ্যতে মূল বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে না।

ডিএমপির ডিসি সালাউদ্দিন: ডিএমপির বর্তমান উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সালাউদ্দিন শিকদার ২০১১ সালে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেসময় যশোর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাদা পোশাকে তিনজন পুলিশ সদস্য অজ্ঞাতনামা একজন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর মেলা-মেশার সময় স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি হয়।

এই ঘটনার সময় যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বিপুকে আটক করা হয়। পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে ১৫/১৬ ঘণ্টা অবৈধভাবে আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন করে পু্লিশ।

প্রথমে ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ঘটনার পরদিন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুরের পর যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠে তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে ডিএমপির ডিসি) সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদন করা হয়। প্রাসঙ্গিক দলিলপত্রাদি এবং অপরাধের প্রকৃতি ও মাত্রা বিবেচনায় সরকারি কর্মচারি বিধি অনুযায়ী তাকে তিরস্কার দণ্ড দেওয়া হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

এক অতিরিক্ত ডিআইজি ও ৩ এসপিকে তিরস্কার, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত

আপডেট টাইম : ০৬:০৬:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সহকর্মীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া, জুয়া থেকে অর্থ আদায়, আওয়ামী লীগ নেতাকে বেআইনি আটকসহ বিভিন্ন অপরাধে পুলিশের এক অতিরিক্ত ডিআইজি ও তিন পুলিশ সুপারকে (এসপি) দণ্ড দিয়েছে সরকার।

অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী দণ্ড হিসেবে পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে তিরস্কার ও এক কর্মকর্তার বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরপাত্তা বিভাগ সম্প্রতি এ সংক্রান্ত পৃথক চারটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

ঊর্ধ্বতন এ চার পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- পুলিশ সদর দপ্তরে (সাময়িক বরখাস্ত) সংযুক্ত অতিরিক্ত ডিআইজি (এর আগে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) কাজী মো. ফজলুল করিম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মিজানুর রহমান ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পু্লিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (যশোরের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) মো. সালাউদ্দিন শিকদার।

জানা যায়, অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি চাকরির বিধি অনুযায়ী চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন: পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত রয়েছেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি অধীনস্থ এক এসআইয়ের স্ত্রীসহ একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান। এছাড়া প্রায় রাতেই মদ্যপান করে বাসায় ফিরতেন। অভিযোগকারী মিসেস নওশিনের (ছদ্মনাম) অভিযোগ, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং যৌতুকের দাবি করেছেন সাখাওয়াত হোসেন। এই অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে চারটি মামলা হয়েছে।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে গত বছর সাখাওয়াত হোসেনকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কারণ দর্শানো হয়। পরে ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা তদন্ত করে জানতে পারেন, একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও প্রায় রাতেই মদ্যপান অবস্থায় বাসায় ফিরতেন সাখাওয়াত হোসেন।

এছাড়া নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে এসআইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পরে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধি অনুযায়ী তাকে তিরস্কার দণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ফজলুল করিম: ২০০৮ সালের ২০ মার্চ ডিএমপির পিএসআই অলিউল হোসেন চৌধুরী (বর্তমানে বরখাস্ত) তার অন্যান্য সহযোগীসহ প্রাইভেটকারে মহাখালী টার্মিনাল ফাঁড়ির সামনে থেকে রিপন নামে একজনকে গাড়িতে তোলেন। এসময় তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চোখ বেঁধে ফেলা হয়। পরে তার কাছ থেকে ৮৬ হাজার সৌদি রিয়াল, মোবাইলফোন ও পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী রিপন বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন। মামলা তদন্তকালে পিএসআই আলীউল হোসেনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় তৎকালীন ডিএমপির ডিসিপ্লিন বিভাগের ডিসি ফজলুল করিম পিআরবি-৭৪১ বিধি মোতাবেক পিএসআইয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যক্রম শেষ করে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

তবে ডিএমপিতে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (অধস্তন কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০০৬ কার্যকর থাকা সত্ত্বেও ডিসি ফজলুল করিম পিআরবি বিধি-৭৪১ মোতাবেক পিএসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

পরবর্তীসময়ে পিএসআই আলীউল হোসেন ঢাকার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে আদালত ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে আলীউলের চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০১৯ সালে আদালত তা খারিজ করে দেন।

এদিকে তৎকালীন ডিসি ফজলুল করিমের উদাসীনতা, খামখেয়ালিপূর্ণ কর্মকাণ্ড, সরকারি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে চরম অবহেলার অভিযোগে চলতি বছরের জুলাইয়ে তাকে কারণ দর্শানো হয়। ৩১ সেপ্টেম্বর তিনি কারণ দর্শানোর জবাব দাখিলপূর্বক ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন জানান।

তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় ব্যক্তিগত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সব তথ্য প্রমাণ যাচাই-বাছাই শেষে ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে এসপি ফজলুল করিমকে তিরস্কার দণ্ড দেওয়া হয়।

জিএমপির ডিসি মিজানুর রহমান: গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে (জিএমপি) কর্মরত উপ-কমিশনার (ডিসি) মিজানুর রহমান দিনাজপুরে অতিরিক্ত পুলিশ থাকাকালে একটি বিকাশ নম্বর চালু করেন। সেই নম্বরে তিনি স্থানীয় জুয়াড়িদের কাছ থেকে চাঁদা নিতেন।

২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মিজানুর রহমানের ওই বিকাশ নম্বরে ১১ লাখ ৯০০ টাকা জমা পড়ে। এরমধ্যে ক্যাশআউট করে তুলে নেওয়া হয় সাড়ে নয় লাখ টাকা। বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তর অবহিত হলে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।

এসময় তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারেন, জুয়াড়িরা প্রতি মাসে মিজানুর রহমানকে বিকাশের মাধ্যমে ঘুসের টাকা দিতেন। ওই বিকাশ নম্বরটি সবসময় বন্ধ রাখা হতো। শুধু টাকা উত্তোলনের সময় চালু করা হতো।

তদন্তকালে বিকাশ নম্বরটি তার নয় বলে দাবি করেন এসপি মিজানুর রহমান। তবে বিকাশ নম্বরটি ব্যবহার করে বিমানের টিকিট কেটেছিলেন মিজানুর। এরপরই প্রমাণিত হয় বিকাশ নম্বরটি মিজানুর নিজেই ব্যবহার করতেন।

অসদাচরণ ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা প্রমাণিত হওয়ায় জিএমপির এই ডিসিকে আগামী এক বছরের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। তার স্থগিত বেতন বৃদ্ধি ভবিষ্যতে মূল বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে না।

ডিএমপির ডিসি সালাউদ্দিন: ডিএমপির বর্তমান উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সালাউদ্দিন শিকদার ২০১১ সালে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেসময় যশোর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাদা পোশাকে তিনজন পুলিশ সদস্য অজ্ঞাতনামা একজন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর মেলা-মেশার সময় স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি হয়।

এই ঘটনার সময় যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বিপুকে আটক করা হয়। পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে ১৫/১৬ ঘণ্টা অবৈধভাবে আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন করে পু্লিশ।

প্রথমে ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ঘটনার পরদিন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুরের পর যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠে তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে ডিএমপির ডিসি) সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদন করা হয়। প্রাসঙ্গিক দলিলপত্রাদি এবং অপরাধের প্রকৃতি ও মাত্রা বিবেচনায় সরকারি কর্মচারি বিধি অনুযায়ী তাকে তিরস্কার দণ্ড দেওয়া হয়।