মাচায় তরমুজ চাষে লাভবান

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জয়পুরহাটের কালাইয়ে নতুন করে বাণিজ্যিকভাবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাচা পদ্ধতিতে বিদেশি নানান জাতের তরমুজের চাষ। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অন্য ফসল বাদ দিয়ে অসময়ে তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন এলাকার কৃষকরা।

অন্য সব ক্ষেতে তরমুজ যখন শেষ, তখন এই আগস্ট মাসে মাচায় মাচায় ঝুলছে চায়না ও থাইল্যান্ড দেশের মধুমালা আর তৃপ্তি জাতের তরমুজ। বাজারমূল্য অনেক ভালো হওয়ায় ধানসহ অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে কালচে ও হলুদ রঙের তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন এখানকার কৃষকরা। এই ফল ভিতরে লাল ও রসালু আর খেতে অনেক সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে এ তরমুজ উপজেলায় চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁ, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালাই পৌর সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রাম। উপজেলার হাতিয়র ব্লকের সেই হাজীপাড়ায় সবুজ মাঠ পেরিয়ে আঁকাবাঁকা জমির আইলপথ ধরে সামনে এগিয়েই পশ্চিম-হাজীপাড়া মাঠে চোখধাঁধানো বিদেশী জাতের তরমুজের রাজ্য।

চাষি সাগর হোসেন, বাবলু মিয়া, ছাইদুল ইসলাম ও সুজাউলসহ অনেকেই বিদেশি জাতের তরমুজের বীজ রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই জমিতে গাছগুলো বেড়ে ওঠেছে। চাষিরা জমিতে বেড করে মাটির সঠিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে রেখেছে। জুন মাসে ১৮ ইঞ্চি পর পর চায়না ও থাইল্যান্ড দেশের মধুমালা আর তৃপ্তি জাতের তরমুজের বীজ রোপণ করেন কৃষকেরা। পুরো ক্ষেতে বাঁশের খুঁটি ওপরে চিকন দড়ি দিয়ে জালের মতো করে বিছিয়ে মাচা তৈরি করা হয়েছে। বীজ রোপণের ৩০ দিনের মধ্যে গাছের লতা-পাতাগুলো মাচায় উঠেছে। রোপণের ৪০ দিনের মধ্যে গাছে গাছে প্রচুর হলুদ রঙ্গের ফুল ফুটেছে এবং অনেক গাছে কুড়িও এসেছে।

ঐসব তরমুজ ৩৫ দিনের পরিপক্ক হয়ে মাচায় ডোগায় ডোগায় ঝুলে আছে আড়াই থেকে চার কেজি ওজনের তরমুজ। এই তরমুজ দেখতে অনেকটা হলুদ রঙের মতো মনে হলে ভিতরে কিন্তু লাল টুকটুকে ও রসেভরা আর খেতে অনেক সুস্বাদু এবং মিষ্টি। এইসব তরমুজগুলো বিষ ও ফরমালিন মুক্ত পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ তরমুজগুলো খেতে সু-স্বাদ, দেখতে আকর্ষণীয় ও চাহিদা বেশি, ভালো দাম থাকায় এবং লাভজনক হওয়ায় এই জাতের তরমুজ দেখতে ক্ষেতে ভিড় করেন অনেকেই। অন্যান্য ফসলের মতো এটি বিক্রিতে সমস্যা হচ্ছে না। তাই সরাসরি ব্যবসায়ীরা ক্ষেতে এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলার হাজীপাড়ার সফল তরমুজ চাষি মো. সাগর হোসেন বলেন, আমার ৭০ শতাংশ জমিতে বেড করে মালচিং পেপার পদ্ধতিতে জুনে ২০ ইঞ্চি পর পর চায়না ও থাইল্যান্ড দেশের মধুমালা আর তৃপ্তি জাতের তরমুজের বীজ রোপণ করি। বীজ রোপণের ৩০ দিনের মধ্যে গাছ মাচায় উঠে যায়। রোপণের ৪০ দিনের মধ্যে গাছে প্রচুর ফুল ও কুড়ি আসে। তারপর ফলের ৩৫ দিনের পরিপক্ক হয়ে মাচায় ডোগায় ডোগায় ঝুলে আছে আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের তরমুজ। প্রতিটি তরমুজ গড়ে আড়াইশো টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরেক চাষি বাবলু মিয়া বলেন, এক সময় ধান, আলু, চিচিঙ্গা, বেগুনসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করতাম। জমিতে মাচায় করে তরমুজ চাষ করা যায় তা আমি জানতাম না। আমি এবার পরীক্ষামূলকভাবে দুই বিঘা জমিতে মধুমালা জাতের তরমুজের বীজ রোপণ করেছি। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৯ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করেছি প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। আরো তরমুজ বিক্রি হবে প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা।

কৃষক মো. রবিউল ইসলাম ও রাফিউলসহ অনেকেই জানান, হাজীপাড়ার কৃষকরা অসময়ে তরমুজ চাষ কিভাবে করছেন তা দেখে ও পরামর্শ নেওয়া জন্য তারা এখানে এসেছেন।

স্থানীয় তরমুজ ব্যবসায়ী ইলিয়াস ও জাহিদুল ইসলাম জানান, কালাই উপজেলার উৎপাদিত তরমুজগুলো গুনগত মান অনেক ভালো। তাছাড়া এখানকার তরমুজ ক্রেতাদের চাহিদা বেশি রয়েছে। তারা ক্ষেত থেকে প্রতি মণ তরমুজ এক হাজার আটশ টাকা দরে পাইকারী কিনছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে থাকেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।

কালাই কৃষি অফিসার নীলিমা জাহান বলেন, উপজেলায় ১০ হেক্টর জামিতে মধুমালা ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ চাষ হয়েছে। এলাকায় তরমুজ চাষের জন্য কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহের পরামর্শ এবং বালাইনাশক ব্যবহারে ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এই এলাকার কৃষকরা নতুন পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করছেন। আগামীতে এই ফসল চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরো বলেন, নতুন এ পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ ছড়িয়ে দেওয়া গেলে একদিনে যেমন তরমুজ সারাবছর পাওয়া যাবে, অন্যদিকে তরমুজ চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর