হাওর বার্তা ডেস্কঃ শ্রমিক সংকটের আবর্তে থাকা মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো অব্যাহত তাগাদা ও চাহিদা পত্র দিলেও বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক প্রেরণ নিয়ে জটিলতার অবসান হচ্ছে না। গত মাসে কমীদের পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ভেস্তে গেছে। কারণ হিসাবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিহ্নিত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা মন্ত্রণালয়ের কোনো নিয়মনীতি না মেনেই তাদের ইচ্ছেমতো কর্মীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাচ্ছেন। এর বিনিময়ে তারা অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা অসহায় কর্মীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন। আদায় করছেন সরকার নির্ধারিত অর্থের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এছাড়া মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো ঝুকিপূর্ণ ও কৃষি, নির্মাণ, খনি, গৃহকর্ম, বাগান, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মতো কায়িক শ্রমিকদের জন্য যে বেতন নিধার্রণ করছে তাতে অনিহা প্রকাশ করছেন বিদেশে গমনেচ্ছু কর্মীরা। এর পাশাপাশি যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি কাজ পায়নি তারা নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে এ মাসে শ্রমিক পাঠানো শুরু করা সম্ভব হবে কি না তা অনিশ্চিত।
দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, মালয়েশিয়া প্রস্তুত, আমরাও প্রস্তুত। কিন্তু সেদেশে পাঠানোর মতো পর্যাপ্ত কর্মী পাচ্ছি না। এরইমধ্যে আমরা ১৩টি এজেন্টের মাধ্যমে ২ হাজার ২০০ জনকে অনুমতি দিয়েছি। কিন্তু আমরা আরও বেশি বেশি করে কর্মী পাঠাতে চাই। তবে রিক্রটিং এজেন্টরা কেন পর্যাপ্ত কর্মী প্রস্তুত করতে পারছেন না, সে ব্যাপারে আমরা খবর নেব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেব।
কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের লেবার কাউন্সিলর মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন খাতে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। এপর্যন্ত দেশটির প্রায় ৪শ’ কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন জানিয়েছে। বায়রার একজন প্রভাবশালী নেতা জানান, গত ৩ বছর মহামারির কারণে নতুন করে বিদেশি কর্মী নিয়োগ স্থগিত থাকায় দেশটিতে চরম শ্রমিক সংকট তৈরি হয়।
মালয়েশিয়ার স্টার নিউজের খবরে বলা হয়েছে, শ্রমিক সংকট নিরসনে ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সাথে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে মালয়েশিয়া। এ বছরের ২ জুন ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। এরপর বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেও বাংলাদেশ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি দুই দেশ।
সাময়িক বন্ধ থাকবে অনলাইনে আবেদনের সুবিধা
মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের দেশে বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য চালু করা পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করার জন্য যে সেবা চালু করেছিল তা ১৫ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবেদনের জন্য নতুন সুবিধা চালুর কথাও জানানো হয় মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে।
মাসিক সর্বনিম্ন বেতন ৩২ হাজার টাকা
৩ বছর মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা মাসিক বেতন পাবেন সর্বনিম্ন ১৫০০ মালয়েশিয়ান রিংগিত, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩২ হাজার। বাসস্থান, যাতায়াত, বিমানভাড়া এবং বছরে ৬০০ রিঙ্গিত পর্যন্ত চিকিত্সা ব্যয় বহন করবে কোম্পানি। জনশক্তি কমর্সংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহীদুল আলম বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে কৃষি, শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ৬ লাখের অধিক বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন।
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার ৮
বাংলাদেশি কলিং ভিসা ও নেপালি শ্রমিক নিয়োগের জন্য মালয়েশিয়ার সরকারকে সেবা প্রদানকারী আইটি কোম্পানি বেস্টিনেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (সিইও) মোট ৮ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে এমএসিসি। বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করেছে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন (এমএসিসি)। মালয়েশিয়ার একাধিক জাতীয় সংবাদপত্র বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে। বিদেশি শ্রমিক প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান বেস্টিনেট-এর প্রতিষ্ঠাতা দাতো মোহাম্মদ আমিনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেলেও নিরপেক্ষ সুত্র থেকে তথ্যটি যাচাই করতে পারেনি সংবাদ মাধ্যম। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি শ্রমিকদের জন্য কোটা অর্জনে নিয়োগকর্তা বা এজেন্টদের সহযোগিতা করতে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমদ মুনিরুছ সালেহিন জানান, মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুকদের জন্য সরকার ৬৮ মেডিক্যাল সেন্টারের তালিকা প্রকাশ করেছে। শুধুমাত্র অনুমোদিত ঐসকল মেডিকেল সেন্টার থেকে মেডিক্যাল পরীক্ষা করেই মালয়েশিয়া যাওয়া যাবে। এদিকে এখন পর্যন্ত ১৩ টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠাতে সরকার নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিউ এজ ইন্টারন্যাশনাল, আমিয়াল ইন্টারন্যাশনাল, আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল, পাথ ফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল, গ্রীনল্যান্ড ওভারসিজ, ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল, অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ প্রভৃতি।