বড় প্রত্যাশার সঙ্গে বৃত্ত ভাঙার বিশাল বাজেট দিলেন অর্থমন্ত্রী। সবার জন্য কম-বেশি কিছু না কিছু রাখছেন তার এই নতুন বাজেটে। বড় অঙ্কের ব্যয়ের হিসাব মেলাতে বাড়াচ্ছেন করের আওতা। বেসরকারি খাতকে চাঙ্গা করতে, বিনিয়োগ বাড়াতে দিলেন নানা ধরনের ছাড় ও প্রণোদনা। হয়তো উদ্যোক্তারা কম-বেশি কিছুটা খুশি হবেন। কিন্তু অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ওপর। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সবসময় আশাবাদী। যে কারণে তিনি তার বাজেট বক্তৃতায় শেষের দিকে বলেছেন, আমি বরাবর এদেশের অপরিমেয় সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী। আমি অশোধনীয় আশাবাদী। তার আশাবাদী হওয়ার পেছনে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি সূচক ইতিবাচক। পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতিও এখন অনেকটা স্থিতিশীল।
আর সে আশা নিয়েই এবারের বাজেটের আকার আরো কিছুটা বাড়িয়েছেন তিনি। যার পরিমাণ ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তবে আশার মধ্যেও রয়েছে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমন এক সময় নতুন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেট দিলেন, যখন দেশের সার্বিক অর্থনীতির অবস্থাটা মোটামুটি ভালোই রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও পণ্যের দাম কিছুটা কম। রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। স্থিতিশীল রয়েছে মুদ্রার বিনিময় হার। ঋণের সুদের হার কমতির দিকে। এরপরও ব্যাংক ঋণ ও বিদেশি সহায়তার ওপর ভর করেই বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাজেটে সার্বিক ঘাটতি থাকছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ শতাংশ।
বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজ বলেন, রাজস্ব আদায়ের অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রশাসনিক দক্ষতার অভাবে এবারের বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। তবে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে ড. বিনায়ক সেন বলেন, দেশের পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে তা অর্জন করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে সিপিডি তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অর্থায়নের উৎস অবাস্তব। তবে প্রতিষ্ঠানটি বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলতে নারাজ।
এদিকে পিআরই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এবারের বাজেটও গতানুগতিক বাজেটেরই অনুরূপ।
বাজেট সম্পর্কে বিএনপি বেশকিছুটা নেতিবাচক মন্তব্য করে বলে, অনির্বাচিত সরকারের এ বাজেট জনগণের কাজে আসবে না। এ বাজেট গরিবের ভাগ্যের কোনো উন্নতি বয়ে আনবে না। তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এ বাজেটকে গণমুখী বাজেট বলে তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তায় মিছিল বের করে।
যেভাবে বাজেট বক্তৃতা শুরু হয়: ঘড়ির কাঁটা তখন ৩টা বেজে ২৬ মিনিট। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে হাসতে হাসতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদ ভবনে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পরনে ছিল জামদানি শাড়ি। আর অর্থমন্ত্রীর পরনে ছিল অফ হোয়াইট পাঞ্জাবির ওপরে কালো মুজিব কোট। অর্থমন্ত্রীর সম্বল ছিল একটি কালো ব্রিফকেস। বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে কোরান তেলাওয়াতের পর ৩টা ৩৩ মিনিটে স্পিকারের কাছে বাজেট উপস্থাপনের অনুমতি চান অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী প্রথমে দুই মিনিট দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেয়ার পর স্পিকারের কাছে বসে পড়ার অনুমতি চান। সেই থেকে আসর ও মাগরিবের নামাজের বিরতি দিয়ে একটানা বক্তৃতা শেষ করেন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। বাজেট অধিবেশনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ অন্য এমপিরা। ভিআইপি গ্যালারিতে বসে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা নির্ধারিত চেয়ারে বসে বাজেট বক্তৃতা প্রত্যক্ষ করেন।
বাজেটের আকার: ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, এনবিআর বহির্ভূত ৬ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। কর ব্যতীত প্রাপ্তি ২৬ হাজার কোটি টাকা। অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ৯৭ হাজার কোটি টাকা। শুধু এনবিআর থেকে আয় ও মুনাফার ওপর কর থেকে প্রাপ্তি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। মূল্য সংযোজন কর থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৪ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। আর সম্পূরক শুল্ক থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। আমদানি শুল্ক ১৮ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে আয় দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা।
বড় বাজেটে বিশাল ঘাটতি: সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। আর ঘাটতি মোকাবিলা করতে ৩টি খাতের ওপর ভরসা রাখছেন অর্থমন্ত্রী। আর খাত তিনটি হচ্ছে ব্যাংক ঋণ, বৈদেশিক সহায়তা ও সঞ্চয়পত্র। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে যা ছিল ৩১ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তি ঘাটতি ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে যা ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।
অনুন্নয়ন বাজেটে খাতওয়ারী বরাদ্দ: সর্বোচ্চ বেতন ভাতা খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৫১ হাজার কোটি টাকা।
ব্যক্তি শ্রেণীর কর বৃদ্ধির পরিমাণ: নতুন অর্থবছরে প্রথম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর কর থাকবে শূন্য শতাংশ। অর্থাৎ করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কর ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ। পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ। পরবর্তী ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ২০ শতাংশ। পরবর্তী ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ। অবশিষ্ট আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার: আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় বেশ কিছুটা কম।
অর্থমন্ত্রীর আশাবাদ: অর্থমন্ত্রী ১২৭ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতায় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আলোকোজ্জ্বল, সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই অভিযাত্রায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের উন্নয়ন ও মঙ্গলের স্বার্থে সব বিভেদ ভুলে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি পরামর্শ দেন সব ধরনের অকল্যাণকর ও জনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে যেন আমরা বিরত থাকি। তার আশা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উজ্জীবিত একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও উন্নয়নকামী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। জাতির জনকের সোনার বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যে কারণে তিনি বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম দিয়েছেন ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথ রচনা।’ তার বাজেট বক্তৃতার সময় ডিজিটাল পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বেশকিছু বিষয় উপস্থাপন করা হয়। ১০টি অধ্যায়ে বাজেট বক্তৃতায় তিনি অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও প্রস্তাবিত বাজেট কাঠামো তুলে ধরেন। পাশাপাশি খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ও সম্পদ সঞ্চালনের বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়াও সংস্কার, সুশাসন, রাজস্ব খাতের নতুন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেন।
সংসদ অধিবেশন আগামী ৮ জুন পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
আর সে আশা নিয়েই এবারের বাজেটের আকার আরো কিছুটা বাড়িয়েছেন তিনি। যার পরিমাণ ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তবে আশার মধ্যেও রয়েছে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমন এক সময় নতুন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেট দিলেন, যখন দেশের সার্বিক অর্থনীতির অবস্থাটা মোটামুটি ভালোই রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও পণ্যের দাম কিছুটা কম। রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। স্থিতিশীল রয়েছে মুদ্রার বিনিময় হার। ঋণের সুদের হার কমতির দিকে। এরপরও ব্যাংক ঋণ ও বিদেশি সহায়তার ওপর ভর করেই বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাজেটে সার্বিক ঘাটতি থাকছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ শতাংশ।
বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজ বলেন, রাজস্ব আদায়ের অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রশাসনিক দক্ষতার অভাবে এবারের বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। তবে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে ড. বিনায়ক সেন বলেন, দেশের পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে তা অর্জন করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে সিপিডি তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অর্থায়নের উৎস অবাস্তব। তবে প্রতিষ্ঠানটি বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলতে নারাজ।
এদিকে পিআরই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এবারের বাজেটও গতানুগতিক বাজেটেরই অনুরূপ।
বাজেট সম্পর্কে বিএনপি বেশকিছুটা নেতিবাচক মন্তব্য করে বলে, অনির্বাচিত সরকারের এ বাজেট জনগণের কাজে আসবে না। এ বাজেট গরিবের ভাগ্যের কোনো উন্নতি বয়ে আনবে না। তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এ বাজেটকে গণমুখী বাজেট বলে তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তায় মিছিল বের করে।
যেভাবে বাজেট বক্তৃতা শুরু হয়: ঘড়ির কাঁটা তখন ৩টা বেজে ২৬ মিনিট। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে হাসতে হাসতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদ ভবনে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পরনে ছিল জামদানি শাড়ি। আর অর্থমন্ত্রীর পরনে ছিল অফ হোয়াইট পাঞ্জাবির ওপরে কালো মুজিব কোট। অর্থমন্ত্রীর সম্বল ছিল একটি কালো ব্রিফকেস। বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে কোরান তেলাওয়াতের পর ৩টা ৩৩ মিনিটে স্পিকারের কাছে বাজেট উপস্থাপনের অনুমতি চান অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী প্রথমে দুই মিনিট দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেয়ার পর স্পিকারের কাছে বসে পড়ার অনুমতি চান। সেই থেকে আসর ও মাগরিবের নামাজের বিরতি দিয়ে একটানা বক্তৃতা শেষ করেন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। বাজেট অধিবেশনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ অন্য এমপিরা। ভিআইপি গ্যালারিতে বসে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা নির্ধারিত চেয়ারে বসে বাজেট বক্তৃতা প্রত্যক্ষ করেন।
বাজেটের আকার: ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, এনবিআর বহির্ভূত ৬ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। কর ব্যতীত প্রাপ্তি ২৬ হাজার কোটি টাকা। অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ৯৭ হাজার কোটি টাকা। শুধু এনবিআর থেকে আয় ও মুনাফার ওপর কর থেকে প্রাপ্তি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। মূল্য সংযোজন কর থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৪ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। আর সম্পূরক শুল্ক থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। আমদানি শুল্ক ১৮ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে আয় দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা।
বড় বাজেটে বিশাল ঘাটতি: সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। আর ঘাটতি মোকাবিলা করতে ৩টি খাতের ওপর ভরসা রাখছেন অর্থমন্ত্রী। আর খাত তিনটি হচ্ছে ব্যাংক ঋণ, বৈদেশিক সহায়তা ও সঞ্চয়পত্র। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে যা ছিল ৩১ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তি ঘাটতি ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে যা ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।
অনুন্নয়ন বাজেটে খাতওয়ারী বরাদ্দ: সর্বোচ্চ বেতন ভাতা খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৫১ হাজার কোটি টাকা।
ব্যক্তি শ্রেণীর কর বৃদ্ধির পরিমাণ: নতুন অর্থবছরে প্রথম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর কর থাকবে শূন্য শতাংশ। অর্থাৎ করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কর ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ। পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ। পরবর্তী ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ২০ শতাংশ। পরবর্তী ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ। অবশিষ্ট আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার: আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় বেশ কিছুটা কম।
অর্থমন্ত্রীর আশাবাদ: অর্থমন্ত্রী ১২৭ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতায় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আলোকোজ্জ্বল, সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই অভিযাত্রায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের উন্নয়ন ও মঙ্গলের স্বার্থে সব বিভেদ ভুলে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি পরামর্শ দেন সব ধরনের অকল্যাণকর ও জনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে যেন আমরা বিরত থাকি। তার আশা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উজ্জীবিত একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও উন্নয়নকামী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। জাতির জনকের সোনার বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যে কারণে তিনি বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম দিয়েছেন ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথ রচনা।’ তার বাজেট বক্তৃতার সময় ডিজিটাল পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বেশকিছু বিষয় উপস্থাপন করা হয়। ১০টি অধ্যায়ে বাজেট বক্তৃতায় তিনি অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও প্রস্তাবিত বাজেট কাঠামো তুলে ধরেন। পাশাপাশি খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ও সম্পদ সঞ্চালনের বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়াও সংস্কার, সুশাসন, রাজস্ব খাতের নতুন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেন।
সংসদ অধিবেশন আগামী ৮ জুন পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।