হাওর বার্তা ডেস্কঃ নাম ‘রাজা বাবু। তাকে দেখলেই মনে হবে শান্ত স্বভাবের একটি পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে।
বলছি সাভারের আশুলিয়ায় নরসিংহপুর দিয়াখালি এলাকার স্বাধীন মণ্ডলের মাটির ঘরে বেড়ে ওঠা রাজা বাবু খ্যাত তিনবছর দুই মাস বয়সী একটি ষাঁড়ের কথা। এবাবের ঈদুল আজহা উপলক্ষে কৃষক তৈয়ব আলী ও তার ছেলে স্বাধীন মিলে রাজা বাবুকে কোরবানির জন্য সম্পূর্ণ তৈরি করেছেন। তিন বছর দুই মাস আগে রমজান মাসে স্বাধীন ও তার বাবা তৈয়ব আলী স্থানীয় একটি পশুর হাট থেকে রাজা বাবুর মাকে কিনে আনে। আর্চায্যজনক বিষয় হলো যেদিন গরুটিকে ক্রয় করে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে সেদিন রাতেই গরুটি বাচ্চা (বাছুর) দেয়। বাছুরটির শরীরের গঠন দেখে সেদিন রাতেই স্বাধীনের মা বাছুরটির নাম রাখে ’রাজা বাবু’।
এরপর রাজা বাবু বেড়ে ওঠতে থাকে তাদের আদরে। এরমধ্যে তার মাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। রাজা বাবুকে তৈরি করতে আর কোনো গরু পালন করেননি তারা। মালিকের দাবি, উচ্চতার দিক থেকে সাভারের সবচেয়ে বড় গরু হলো রাজা বাবু। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কালো রঙের রাজা বাবু হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের। তার ওজন এখন ৩২ মণ ২৫ কেজি, দাঁত ৪টি, উচ্চতা ৬ ফুট, তার দেহের প্রশস্থ ১০ ফুটের মত। এমন পাহাড় সমান দেহের গঠন দেখে দরজা বড় রেখে স্বাধীন তিন কক্ষের একটি ঘরই তৈরি করেছেন। সেই ঘরের দুইটি কক্ষে রাজা বাবুকে রাখা হয় আর একটিতে তার খাবার রাখা হয়। প্রতিদিন গোসল করাতে হয় নিয়ম করে ৬ থেকে ৭ বার, দু’টি ফ্যান তার জন্য বরাদ্দ।
শুক্রবার (২৪ জুন) দুপুরে অধীর আগ্রহ নিয়ে রাজা বাবুকে দেখতে গিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে এই ষাঁড়টির সর্ম্পকে। ইতোমধ্যে রাজা বাবুর নাম-ডাক ছড়িয়ে পড়েছে সাভারসহ অনেক দূর-দূরান্তে। রাজা বাবুকে দেখতে প্রতিদিন তৈয়ব আলীর বাড়িতে আসছে অনেকেই। এমনি দুইজন আসাদুল ইসলাম সুজন ও তার বন্ধু রফিক। গরুটিকে দেখতে এসেছেন কেরানীগঞ্জ থেকে। আসাদুল ইসলাম সুজন বলেন, আমরা কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছি। শুনেছি দিয়াখালি এলাকায় একটি বড় গরু আছে। তাই দেখতে এসেছি, কিন্তু এত বড় গরু হবে ভাবিনি। মাশাআল্লাহ রাজা বাবু অনেক বড়। সুন্দর একটি গরু। দেখে ভালো লাগলো।
রাজা বাবুর মালিক তৈয়ব আলীর প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান বলেন, আমি এই এলাকার মানুষ। রাজা বাবু ছোট থেকেই আমাদের সামনে বড় হয়েছে। পুরো প্রাকৃতিক পরিবেশে ও খাবার খেয়ে ওর বেড়ে ওঠা। তৈয়ব আলী, তার ছেলে ও তার স্ত্রী রাজা বাবুকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছে। এই গরুর পেছনে ২৪ ঘণ্টায় তারা লেগেছিল। নিজেরা না খেয়ে রাজা বাবুকে খাওয়াইছে। তাই আমি বলবো ওদের এত কষ্টের গরুটি যেন নায্য দাম পায় ও ভালো একজন লোকের কাছে বিক্রি করতে পারে। তৈয়ব আলী বলেন, আমি আগে বিদেশ করতাম (ছিল)। পড়ে সবার পরামর্শে বিদেশ না গিয়ে স্থানীয় এক গরুর হাট থেকে একটি গাভী কিনে আনি। আল্লাহ সহায় যেদিন গুরুটিকে নিয়ে আসি সেদিন রাতেই গরুটি একটি দামরা বাছুর জন্ম দেয়। বাছুরটি দৈহিক গঠন বড় দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে একেই পেলে বড় করবো। তাই বাকি সব গরু বিক্রি করে দেই। সেই থেকে তিনটা বছর ধরে আমি ওকে লালন পালন করে আসতেছি। সম্পূর্ণ প্রকৃতিক পরিবেশ ও খাবার খাইয়ে ওকে আমি বড় করেছি। ওর খাবারের তালিকায় আছে কুড়া, ভুসি, খৈল, কাঁচা ঘাস, মিষ্টি আলু, মিষ্টি লাও ও মাঝেমধ্যে আম ও আপেল খাওয়ানো হয়েছে। এবার কোরবানির জন্য রাজাবাবুকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এই কোরবানিতেই ওকে বিক্রি করবো।
তৈয়ব আলীর ছেলে স্বাধীন মণ্ডল বলেন, গরুটি অনেক শান্ত স্বভাবের। অনেক কষ্ট করে এতো দিন ধরে রাজা বাবুকে এত বড় করেছি। শুধু কোরবানিতে বিক্রি করবো এই লাভের আসায়। অমাদের সংসারের সব খরচ গরুটির পেছনে করা হয়েছে। আমাদের গরুর জন্য একজন পশু চিকিৎসক সব সময় ছিল। ৬ ফুট উচ্চতার এই গরুর পেছনে আমাদের এখন দৈনিক খরচ হয় ১১শ থেকে ১২শ টাকা। আমরা গরিব মানুষ তাই ইচ্ছা থাকলেও আর গরুটি আমাদের বাসায় রাখতে পারছি না। গরুটির দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাধীন বলেন, রাজা বাবুর দাম চাওয়া হচ্ছে ২০ লাখ টাকা। তবে কেউ নিতে চাইলে কম বেশি করে রাজাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে অনেকে এসে দামাদামি করে যাচ্ছে। আমরাও দেখছি ঈদ ঘনিয়ে এলেও কম আর বেশি দামে গরুটি দিয়ে দেবো।
রাজা বাবুকে সবসময় চিকিৎসাসেবা দিতেন পশু চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ছোট থেকেই রাজা বাবুকে আমি দেখছি। একই গ্রামের বাড়ি হওয়ায় দেখা গেছে রাজার যে কোনো সমস্যা দেখা দিলেই আমাকে ফোন দিত আমি যেতাম। রাজার কোন সমস্যা নেই সে পুরোপুরি ফিট সুস্থ-সবল একটি গরু। সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, সাভারে এখন পর্যন্ত আমাদের ২৫ হাজারের মত কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে। ঢাকার পাশে আমাদের এই অঞ্চল হওয়ার কারণে এখানে প্রতিদিনই কিন্তু সারাদেশ থেকে গরু আসছে। আর কয়দিন পরেই তো গরুর হাট শুরু হবে। এর কারণে আসতে আসতে আমাদের এখানে প্রায় কয়েক লাখ গরু এসে জড়ো হবে। বাণিজ্যিকভাবে গরু পালে তাদের সংখ্যা প্রায় ২৫০। এছাড়া বাসা-বাড়িসহ যারা একটি বা দুইটি করে গরু পালন করে তাদের নিয়ে সবমিলিয়ে সাড়ে ৩ হাজারের মত খামারি রয়েছে।