সরকার পতনের আন্দোলন মোকাবিলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ব্যস্ততা শেষে এবার দল গোছানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ বছরের মধ্যেই সকল পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে তৃণমূল সম্মেলনের মাধ্যমে ঢেলে সাজানো হচ্ছে দল। ইতিমধ্যে প্রায় ৫৩টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা সম্মেলন সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে করা হবে জাতীয় কাউন্সিল।
দলীয় সূত্রমতে, সংগঠনকে সক্রিয় রাখতে সম্মেলনের পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি যেন মাঠের রাজনীতিতে সুবিধা করতে না পারে এ জন্য সুসংগঠিত করতে চায় দলটির হাইকমান্ড। এ লক্ষ্যে জুলাইয়ে শুরু হবে নতুন সদস্য সংগ্রহ, সদস্যপদ নবায়নের কাজ। এর পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, জেলা নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময়সহ বিভিন্ন দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পালন করা হবে।আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের জেলা সম্মেলন প্রায় শেষের দিকে। এগুলো শেষ হলেই জাতীয় কাউন্সিল হবে। ইতিমধ্যে ৫০-এর অধিক জেলায় সম্মেলন হয়ে গেছে।’দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলন না থাকায় আমরা এখন সংগঠনে মনোযোগ দিচ্ছি। জেলা সম্মেলন চলছে। চলতি বছরের মধ্যেই সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন শেষ করা হবে। এরপর কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের উদ্যোগ।’ দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দল ও সরকারের ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে বিএনপির আন্দোলন মাঠে মারা গেছে। এ বছরে নতুন করে আন্দোলনের সম্ভাবনা খুবই কম। আর আন্দোলন কিংবা সহিংসতা না থাকায় সরকারের ওপর কোনো চাপও নেই। দল গোছানোর এখনই সময় মনে করছেন হাইকমান্ড। নেতারা মনে করছেন, আগামী বছর বিএনপি জোট রাজপথে আবার সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে পারে। সে সময় সাংগঠনিকভাবে মোকাবিলায় এখন থেকেই সাংগঠনিকভাবে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দলকে সক্রিয় করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তৃণমূল সম্মেলন করার তাগিদ দিয়েছেন সভানেত্রী। চলতি বছরের ২৯ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মেয়াদ। ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলে দলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না এলেও এবার ছিটকে পড়তে পারেন অনেক বিতর্কিত নেতা। এবারের সম্মেলনে নবীন-প্রবীণ সমন্বিত করে সাজানো হবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। নিষ্কলুষ হিসেবে যারা স্বনামখ্যাত, তারা দলে থাকবেন। দলের জন্য যারা ‘বোঝা’ তাদের অপসারণ ছাড়া গত্যন্তর নেই। জেলা-উপজেলা সম্মেলনের পাশাপাশি দলের সহযোগী সংগঠনও ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ছাত্রলীগের কাউন্সিল ২৫ ও ২৬ জুলাই হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন এ বছরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। এর পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ জনগণের সামনে তুলে ধরতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সভা-সেমিনার করে জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে উন্নয়নমূলক কাজ। দল গোছানোর প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে ঢাকার দুই মহানগরের কমিটি গঠন। চলতি মাসেই তা ঘোষণা করা হতে পারে।