হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্হিতির অবনতি হয়েছে। এ দুই জেলার অন্তত ১৩টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যা পরিস্হিতি সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি বেড়েছে। অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানিও অতিদ্রুত বাড়ছে। উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে এই অবস্হার সৃষ্টি হয়েছে। অফিস, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর :
সিলেট অফিস: সিলেটে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর অঝোরধারায় বৃষ্টি ও ঘন ঘন বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে। সিলেট শহরের অসংখ্য বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ৫০ ভাগ বাসায় পানি উঠেছে। ছাতক উপজেলার অবস্হা ভয়াবহ। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়ের সন্ধানে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন স্হানে পানি উঠে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জে সিলেট-ছাতক রেললাইন ডুবে গেছে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে যাদুকাটা নদীর ওপর নির্মাণাধীন ‘শাহ আরেফিন মৈত্রী সেতু’র পূর্ব ও পশ্চিম দিকে প্রবল স্রোতে দুটি গার্ডার ভেঙে পড়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ: কাজের মান ভালো হয়নি বিধায় গার্ডার দুটি ভেঙে পড়ে। সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, তিনি এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
এদিকে বন্যায় নৌকায় চলাচলের সময় নৌকাডুবির ঘটনায় সুনামগঞ্জে গত তিন দিনে চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় কানাইঘাটে সুরমার পানি বিপত্সীমার ৯৫ সেন্টিমিটার, সিলেটে ৪৪ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জ শহরের কাছে ষোলঘরে ৫০ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি ৩৪ সেন্টিমিটার, গোয়াইনঘাটে সারি নদীর পানি ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল সকালে কানাইঘাটে ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার অন্তত ১৩টি উপজেলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর ও শান্িতগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি বাড়ছেই। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, বিশ্বনাথ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও সদর উপজেলার অন্তত ৫০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বুধবার থেকে খারাপের দিকে যায় বন্যা পরিস্হিতি। ছাতকে ভয়াবহ বন্যায় অনেক মানুষ কর্মহীন ও পানিবন্দি। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সব হাটবাজার ও রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দির।
সুনামগঞ্জ: পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ জেলা সদরের বহু বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মূল্য পাঁচটি পয়েন্টে পানি থাকায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মোট ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ সব কটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। শতাধিক চরের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগবিচ্ছিন্ন রয়েছে মানুষ।
শিবালয় (মানিকগঞ্জ): পদ্মা-যমুনার পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনার পানি আরিচা পয়েন্টে গতকাল ১৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক ৭৭ স্তরে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ফসল ডুবে গেছে। যমুনাতীরবর্তী চৌহালি ও শাহজাদপুর উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।