ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পুলিশি বাধা শান্তিনগরে : ৫ সদস্যের প্রতিনিধির স্মারকলিপি প্রদান ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে তৌহিদী জনতার স্লোগানে প্রকম্পিত পুরো এলাকা : বর্তমান সরকার মোদির আজ্ঞাবহ হয়ে দেশ চালাচ্ছে : অভিযোগ পীর সাহেব চরমোনাই’র : খেলাফত মজলিসের দেশব্যাপী বিক্ষোভ আজ

ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস (হাইকমিশন) ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেয়া হাজার হাজার জনতার গগণবিদারী স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল রাজধানী ঢাকা। ভারতে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস, ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব ও নূপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দালকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এ কর্মসূচির আয়োজন করে। গতকাল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকা থেকে মিছিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে রওয়ানা দিলে শান্তিনগরে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এ সময় হাজার হাজার জনতা সেøাগানে প্রকম্পিত করে তোলে পুরো এলাকা। নানা ধরনের সেøাগানসম্বলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সেখানে দীর্ঘ সময় অবস্থান নেয়। পরে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে স্মারকলিপি দেন। বায়তুল মোকাররক থেকে শুরু হওয়া মিছিলের সম্মুখ ভাগ যখন শান্তিনগর মোড়ে পৌঁছে তখনও পেছনের সারি পল্টন মোড় পর্যন্ত ছিল। রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ এবং শত শত যানবাহনের যাত্রীদের মিছিলকারীদের সমর্থনে স্লোগান দিতে দেয়া যায়। এ সময় দলের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাই সভাপতির বক্তব্যে বলেন, মোদির আজ্ঞাবাহ হয়ে দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ সরকারকে মুসলমানদের সরকার বলতে পারি না; এটা মোদির আজ্ঞাবহ সরকার। অবিলম্বে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কট’ক্তির প্রতিবাদে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনুন। ভারতে এখন মুসলমানদের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো তার প্রতিবাদ করুন।

দুপুরে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে গণমিছিল পূর্ব বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ভারতে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির বিরুদ্ধে এবং দোষীদের শাস্তির দাবিত মুসলিম বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। অনেক মুসলিম দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জন শুরু করেছেএজন্য সরকার মহানবী (সা.) কে নিয়ে অবমাননার নিন্দা না জানিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এই সরকারকে মুসলমানদের সরকার বলা যায় না; এই সরকার মোদির আজ্ঞাবহ সরকার। এদিকে, ভারতে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে আজ বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালাল আহমদ সকল নবীপ্রেমিক ও দলীয় নেতা কর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন।

দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিলে বিক্ষুব্ধ তৌহিদী জনতা মূহু মূহু শ্লোগানে বলেন, নারায়ে তাকবীর আলস্নাহু আকবার, বিশ্বনবীর অপমান সইবেনা আর মুসলমান, ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই নূপুর জিন্দালের ফাঁসি চাই ! বিশ্বনবী আমার জান আমার প্রাণ আমার প্রাণ, আমার নবী তোমার নবী মুহাম্মাদ (সা.) মুহাম্মাদ (সা.), ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও হবে ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও হবে, আমরা যাচ্ছি তোমরা চলো দূতাবাস ঘেরাও করো, বিশ্বনবী বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.) মুহাম্মাদ (সা.), ফিদাকা ফিদাকা মুহাম্মাদ (সা.) মুহাম্মাদ (সা.), উহিব্বুকা উহিব্বুকা মুহাম্মাদ (সা.) মুহাম্মাদ(সা.) গুখড়াব গুখড়াব মুহাম্মাদ (সা.) মুহাম্মাদ (সা.) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ। গণমিছিলে শ্লোগান সম্বলিত বাংলা, ইংরেজী ও আরবী প্লেকার্ড শোভা পায়।

বিক্ষোভ সমাবেশে দলের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাই সভাপতির বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সরকারকে মুসলমানদের সরকার বলতে পারি না; এটা মোদির আজ্ঞাবহ সরকার। অবিলম্বে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনুন। ভারতে এখন মুসলমানদের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে। ভারতে নবীপ্রেমিকদের বাড়ী ঘর বুলডুজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা মানবতা বিরোধী অসভ্য সরকারের কাজ। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বাংলাদেশের নবীপ্রেমিক মুসলমানদের শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করতে হবে। ভারতীয়রা অসভ্য জাতি। আমরা সকল ধর্মালম্বিদের নিয়ে সহবাস্থানে বসবাস করছি। মুসলমানরা কোনো অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে পারে না। ভারত সরকারকে মহানবী (সা.) কে নিয়ে অবমাননাকারী কুলাঙ্গারদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

গণমিছিল পূর্ব বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ সৈয়দ মুসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সাবেক মেয়র প্রার্থী ও ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের শীর্ষ নেতা আলহাজ আব্দুর রহমান, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, যুবনেতা মাওলানা নেছার উদ্দিন, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম, অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান শেখ, ছাত্রনেতা নূরুল করিম আকরাম, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল মজুমদার, মাওলানা সুলতান মাহমুদ, মাওলানা কামাল উদ্দিন সিরাজ। দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওরানা আহমদ আবদুল কাইয়ূমের পরিচালনায় সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও আলহাজ আমিনুল ইসলাম।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ভারত সরকারকে মহানবী (সা.) কে নিয়ে অবমাননাকারী কুলাঙ্গারদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। শতকোটি মানুষের প্রাণের স্পন্দন মহানবী (স.)-এর সম্মানহানী করা এবং প্রতিবাদী জনতার সম্পদ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ার যে হিং¯্রতা বিজেপি শাসিত ভারত দেখাচ্ছে তা সভ্যতার এক কলঙ্ক জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিজেপির এই বর্বরতা ভারতের ভিত্তি-শর্ত ভঙ্গ করেছে। এর পরিণতিতে ভারতের অখন্ডতা হুমকিতে পড়বে, গোটা উপমহাদেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়বে।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, সভ্যতার এই উৎকর্ষের যুগে বিজেপি যা করেছে, তা রীতিমত প্রস্তর যুগীয় বর্বরতা। এই বর্বরতা অব্যাহত থাকলে বিশ্বব্যাপী শুভবুদ্ধির মানুষ সম্মিলিতভাবে এই বর্বরদের প্রতিহত করবে। পীর সাহেব চরমোনাই দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ৯২% মুসলমান ও শতভাগ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সরকার বিজেপির বিভৎস সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কোন নিন্দা পর্যন্ত জানাতে পারেনি। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না। পীর সাহেব চরমোনাই সরকারকে আহবান জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে চলতি সংসদেই ভারতীয় আচরনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনুন। অন্যথায় আপনাদেরকেও বিজেপির সহযোগী বলে ধরে নেয়া হবে। পীর সাহেব চরমোনাই জাতিসংঘ, ওয়াইসিসহ বিশ্ব শক্তির প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ভারতের বর্বরতা রোধে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। ভারত নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার দাবি করলেও হিন্দু ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের ধর্ম পালন করতে দিচ্ছে না। বিশ্ব মিডিয়ায় উঠে আসছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে সে দেশের মুসলমানরা।
মাওলানা মুসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ভারতের এই হিং¯্র সাম্প্রদায়িকতার কোন প্রভাব বাংলাদেশের সম্প্রীতির মধ্যে পড়বে না ইনশাআল্লাহ। তবে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কুরূচিপূর্ণ আচরণের দরুণ ভারতকে চরম মূল্য দিতে হবে। দলের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমেদ বলেন, ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। কিন্তু যে অবস্থা চলছে তাতে ভারত মানবতার শত্রæ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ফলে বাংলাদেশের জনতাও ভারতকে অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে রাখবে।

বেলা সোয়া ১২টায় দূতাবাসের উদ্দেশ্যে গণমিছিল দলের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাইয়ের নেতৃত্বে শুরু হয়। বায়তুল মোকাররম, পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল মোড় হয়ে শান্তিনগরে পৌঁছলে পুলিশ গণমিছিলের গতিরোধ করতে কাঁটাতারের ব্যারিকেট দেয়। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দলের আমীরের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। দলের আমীরের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও দোয়ার মাধ্যমে গণমিছিল সমাপ্ত করে সেখান থেকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারি মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ ও মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন।

কর্মসূচি : ভারতে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তিকারীদের মৃত্যুদন্ড প্রদান এবং ভারতে মুসলিম নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আজ বাদ জুমা নবীপ্রেমিক তৌহিদী জনতার উদ্যোগে লালবাগ কামরাঙ্গীর চর বেইলী (ষ্টীল ব্রিজ) সংলগ্ন বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ইমাম পরিষদ বাংলাদেশ সভাপতি মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া ও সেক্রেটারী মুফতি আ ফ ম আকরাম হুসাইন এক বিবৃতিতে নবীপ্রেমিক তৌহিদী জনতার বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর