হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাজারে উঠেছে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী হাঁড়িভাঙা আম। বুধবার (১৫ জুন) থেকে আম পাড়া শুরু করেছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। ফলে বিভিন্ন মোকামগুলোতে ভিড় বাড়ছে মৌসুমী, ক্ষুদ্র ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের। চাহিদা বিবেচনা করে ক্রেতাদের কাছে আম পৌঁছে দিতে ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কৃষি বিপণন অধিদফতর ও জেলা প্রশাসন।
তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর শুরুতেই দাম একটু চড়া বলে জানিয়েছেন আমচাষি এবং ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ বাজারে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। একই অবস্থা রংপুরের সিটি বাজার, টার্মিনাল এলাকায়। আম চাষিরা গাছ থেকে আম সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে এসেছেন। ঘুরে ঘুরে দাম হাঁকাচ্ছেন ফড়িয়া ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।]
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রায় ৬ হাজার ৯৭৯ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙাসহ অন্যান্য আম বাগান রয়েছে। এতে গাছের সংখ্যা রয়েছে প্রায় দুই লাখ ৫৭ হাজার। এরমধ্যে শুধুমাত্র রংপুর জেলায় হাঁড়িভাঙা আমের জমি রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর। এবার শুধুমাত্র হাঁড়িভাঙা আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় ফলন কিছুটা কম হলেও বাজারে ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, থরে থরে আম সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। বিভিন্ন সাইজের আম ঝুড়িতে রাখা হয়েছে। আমের সাইজ দেখে ক্রেতারা দরদাম ঠিক করছেন। তবে একটু বেশি দাম হলেও ক্রেতাদের পছন্দের আম কিনতে দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর উদ্দেশ্যে আম বাজারের সঙ্গেই অস্থায়ীভাবে কুরিয়ায় সার্ভিসগুলো তাদের শাখা সেন্টার খুলেছে।
অনেকে আম কিনে বাজারের পাশে অবস্থিত কুরিয়ারগুলোর মাধ্যমে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
পদাগঞ্জ এলাকার আমচাষি মোকছেদ জানান, বড় সাইজের কাঁচা আম আজ বাজারে প্রতিমণ ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারিটা ১৪ থেকে ১৬শ আর ছোটটা ১৩শ থেকে ১৪শ টাকায় মণ বিক্রি হচ্ছে।
রংপুরের মিঠাপুকুর পদাগঞ্জ এলাকার আমচাষি হজরত আলী বলেন, গত বছর আমার ৬টা বাগান ছিল। শেষ পর্যন্ত ২১শ টাকা মণ করেছি। এবারও ৬টা বাগান আছে। কিন্তু আমের ফলন বেশি হবে না।
ওই এলাকার আমচাষি ইয়াকুব আলী বলেন, এবার শীলাবৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে অনেক আম পড়ে গেছে। এছাড়া অনেক গাছে আমের ফলনও কম হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা একটু দাম বেশি বলছেন। আমরা আশা করছি এবার ভালো দাম পাওয়া যাবে।
টার্মিনাল বাজারে ক্রেতা এনামুল কবীর বলেন, বড় সাইজের এক মণ আম ১৯শ টাকায় কিনেছি। গত বছর এই দিনে বড় সাইজের আমের দাম ছিল ১২শ থেকে ১৩শ টাকা। সেটা এবার কিনলাম ১৯শ টাকা দিয়ে। বাগান মালিকরা বলছেন, এবার গাছে ফলন কম, তাই দাম বেশি।
রংপুর কৃষি বিপণন অধিদফতরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহীন আহমেদ বলেন, এ বছর আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৯ হাজার ৪৩৬ টন। প্রতি টন গড়ে বিক্রি হবে ৩৩ হাজার টাকায়। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে প্রায় শতকোটি টাকার আম (হাঁড়িভাঙা) বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছর মাসতোয়া এগ্রো লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরে আম রপ্তানি করেছে। এবারও তারা রপ্তানি করবে। আমরা অনেকের সঙ্গে যোগোযোগ রাখছি। আশা করছি তারা এগিয়ে আসবে। আম দেশের বাইরে রপ্তানি হবে। এছাড়াও অনলাইনে আম বিক্রি করতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, আমের উপরিভাগ বেশি মোটা ও চওড়া, নিচের অংশ চিকন। দেখতে সুঠাম ও মাংসালো, শ্বাস গোলাকার ও একটু লম্বা। স্বাদে-মানে এক অনন্য আম হাঁড়িভাঙা। ছোট থেকে পাকা পর্যন্ত একেক স্তরে একেক স্বাদ পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু এই আমের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এমনকি দেশের বাইরেও। তবে আমটির পরিপূর্ণ পরিপক্কতা পেতে হলে ২০ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেও মত দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, আমের সবচেয়ে বড় হাট পদাগঞ্জে। সেখানে হাট সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। কিছু কিছু কাজ চলমান আছে। এছাড়াও যেকোনো সমস্যা সমাধানে প্রশাসন কাজ করছে।