হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলতি মৌসুমে কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও কৃষকেরা সঠিকভাবে বাগানের পরিচর্যা করায় ফলটির প্রচুর ফলন হয়েছে। তাদের আশা এ বছর ২২ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি করা সম্ভব হবে।
এদিকে মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পেয়ে খুশি বাগান মালিকরা। অন্যদিকে দাম হাতের নাগালে থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। জেলার বিজয়নগর, কসবা এবং আখাউড়া উপজেলার পাহাড়ি টিলাভূমির মাটি লাল হওয়ায় সেখানে কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে।
এছাড়া বিজয়নগর উপজেলার ভিটিদাউদপুর, মুকুন্দপুর, পাহাড়পুর, সেজামুড়া, বিষ্ণুপুর, কালাছড়া, ছতুরপুর, পাহাড়পুর, মেরাসানী, খাটিংগা, হরষপুর, আদমপুর, শ্রীপুর, চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল, কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর, বায়েক, মন্দভাগ, কায়েমপুর এবং আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, আমোদাবাদ, রাজাপুর এলাকায় রয়েছে কাঁঠাল বাগান। এসব বাগানে গাছে গাছে ঝুলে আছে ছোট-বড় রসালো কাঁঠাল।
বাগান মালিকরা জানান, পাহাড়ি টিলা ভূমির কাঁঠাল রসালো ও মিষ্টি হওয়ায় বাজারে এসব কাঁঠালের চাহিদা রয়েছে। প্রতি একশো কাঁঠাল ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা দরে বাগান থেকে বিক্রি হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন বাগান মালিকরা।
বিজয়নগরের পাহাড়পুর ইউনিয়নের মাধবেরবাগ এলাকার কাঁঠাল বাগান মালিক সাদ্দাম বলেন, ‘চলতি বছর আমাদের এলাকায় কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। প্রতিদিনই বাগান থেকে ১০০ থেকে ২০০ কাঁঠাল কাটা হয়। প্রতি একশ কাঠাল ৬ থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা কাঁঠাল নিতে আমাদের এলাকায় আসেন। এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ফলন ভালো হওয়ায় আমরা লাভোবান হবো বলে আশা করছি।’
একই ইউনিয়নের অপর বাগান মালিক রানা বলেন, ‘অন্য বছরের চেয়ে এ বছর আমাদের এলাকায় কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে। সাইজেও সুন্দর। প্রায় দেড় মাস আগে বাগানের কাঁঠাল বিক্রি শুরু হয়। আগামী তিন মাস পর্যন্ত বেচা-কেনা চলবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা শহরের মৌড়াইল এলাকা থেকে বিজয়নগরের আউলিয়া বাজারে কাঁঠাল কিনতে আসা শামিম মিয়া বলেন, ‘বিজয়নগরের মাটির গুণাগুন ভালো হওয়ায় এই অঞ্চলের কাঁঠাল খুব মিষ্টি হয়। সেজন্য আমরা এই এলাকার কাঁঠাল বেশি পছন্দ করি। বাজারে কাঁঠালের দামও সহনীয়, সেজন্য কিনতে আসলাম।’
বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ‘বিজয়নগরে ৩৪৩ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। এই উপজেলার কাঁঠাল সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা বেশি। বিজয়নগরে এ বছর প্রায় ৪ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি হবে।‘
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, ‘জেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ করা হয়েছে। জেলার বিজয়নগর, কসবা এবং আখাউড়া উপজেলায় কাঁঠালের আবাদ ভালো হয়। চলতি বছর কাঁঠালের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ১০ হাজার ২৬০ মে. টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও ফলন ভাল হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ বছর প্রায় ২২ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে আমি আশা করছি।’