ঢাকা ১১:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষতিকর বাতিল ওষুধ এখনো বাজারে!

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৫:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২
  • ১৭০ বার

Macro of background made from pills and capsules

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এমন ৪ ধরনের ওষুধের নিবন্ধন বাতিল করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এছাড়া পশুপাখির চিকিৎসায় ব্যবহৃত আরও ৪ প্রকারের ওষুধ বাতিল করা হয়।

সম্প্রতি অধিদপ্তরের এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা ওষুধ শিল্প সমিতিকে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই আদেশ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা। অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ আদেশ। গণমাধ্যমে গেল কিভাবে? অপরদিকে ওষুধ শিল্প সমিতি সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা এমন কোনো আদেশ পায়নি। এই যখন অবস্থা, তখন ক্ষতিকর এসব ওষুধ বাজার থেকে প্রত্যাহার করা তো দূরের কথা, অবাধে বিক্রি অব্যাহত আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন ও ওষুধ প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক ডা. আ ব ম ফারুক বলেন, ‘কোন কোন ওষুধের নিবন্ধন বাতিল করছে সেটি আমাদেরও জানানো হয়নি। এই আটটা ওষুধের মধ্যে সব যে ক্ষতিকর-সেটি আমার নিজের কাছেও মনে হয় না। কিন্তু কি কারণে বাতিল হলো সেটি মানুষকে জানানো দরকার।’

সূত্র জানায়, ৯ মে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক আদেশে উল্লিখিত ৮ ধরনের ওষুধ বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। অফিস আদেশের বর্ণনামতে, মানবদেহের ক্যাটাগরিতে বাতিলকৃত ওষুধগুলো হলো-গ্যাসট্রিকের চিকিৎসায় র‌্যাবিপ্রাজল সোডিয়াম এন্টেরিক কোটেড প্লেটস ৮.৫% এবং ও ২৩৫.২৯৪ এমজি ওষুধ ও র‌্যাবিপ্রাজল সোডিয়াম বিপি ২০ এমজি ক্যাপসুল, ব্যথানাশক ব্রোমেলিন-ট্রিপসিন (কম্বিনেশন ড্রাগ) গ্রুপের ১টি, অ্যাস্ট্রাজেনাথিন ইন-২ গ্রুপের ১টি এবং অ্যাস্ট্রাজেনাথিন ইন-৪ (কম্বিনেশন ড্রাগ) গ্রুপের একাধিক ওষুধ বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাস্ট্রোএন্টারোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম  বলেন, ‘কারও হাত-পা ভাঙলে সরাসরি দেখা যায়। তবে কোনো ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে নাও প্রকাশ পেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হচ্ছে কিনা তার জন্য গবেষণা দরকার। ফলে র‌্যাবিপ্রাজলসহ যেসব গ্রুপের ওষুধের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, তার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি প্রচার-প্রচারণার দরকার।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিটা দেখেছেন। সেখানে নিবন্ধন বাতিলের কারণ বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। ব্যাখ্যা দিলে চিকিৎসকদের বুঝতে সহজ হতো। বিএসএমএমইউর চিকিৎসকদের কাছেও এমন কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে গ্যাস্ট্রিকের র‌্যাবিপ্রাজলের বিকল্প আরও অন্তত পাঁচটি গ্রুপের ওষুধ রয়েছে। এই ধরনের ওষুধ একই রকম কাজ করে। র‌্যাবিপ্রাজলসহ কয়েটি গ্রুপের ওষুধের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি স্পষ্ট করলেও মানুষ উপকৃত হবে।’

অপরদিকে গবাদি পশুপাখির চিকিৎসায় বাতিলকৃত চার ধরনের ওষুধের মধ্যে রয়েছে-সেফট্রিয়াক্সোন (সোডিয়াম) (ভেট) ইনজেকশন ও সেফট্রিয়াক্সোন ০.২৫ জি ইউএসপি অথবা ভায়াল। লিভোফ্লোক্সাসিন হেমিহাইড্রেট ১০.২৫ এমজি ইকুইভিলান্ট টু লিভোফ্লোক্সাসিন ১০ এমজি অথবা ১০০ সল্যুশন (১০ শতাংশ) ওরাল সল্যুশন। মহাবিপন্ন শকুন রক্ষার্থে ক্ষতিকর সব ডোজেস ফরমের ভেটেরিনারি ওষুধ কিটোপ্রোফেন ও প্রাণী চিকিৎসায় কলিস্টিন জাতীয় ওষুধের সব ডোজ বাতিল করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স রেস্পন্স এলায়েন্স (বারা) সদস্য ডা. মো. রিদুয়ান পাশা  বলেন, ‘বিশ্বে প্রথম দেশ হিসাবে বাংলাদেশ শকুনের মৃত্যুর জন্য দায়ী ওষুধ কিটোপ্রোফেনকে বাতিল করছে। এজন্য আইইউসিএন (প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন) উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। যে তিনটি অ্যান্টিবায়োটিককে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তারমধ্যে কলিস্টিন সালফেট মানব চিকিৎসার জন্য ‘রিজার্ভ অ্যান্টিবায়োটিক’ হিসাবে এবং সেফট্রিয়াক্সোন ও লিভোফ্লক্সাসিন ‘ওয়াচ গ্রুপ অ্যান্টিবায়োটিক’ হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় আছে।’

তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকগুলো প্রাণী চিকিৎসায় ব্যবহার বন্ধের আদেশের ফলে ভেটেরিনারিয়ান ও হিউম্যান ডাক্তারদের যৌথ গ্রুপ বারার দীর্ঘদিনের আন্দোলন সার্থক হলো। তবে সেফট্রিয়াক্সোনের কী সব প্রিপারেশন বন্ধ হয়েছে, নাকি শুধু ২৫০ মিলি গ্রামের প্যাক সাইজ বন্ধ হয়েছে অধিদপ্তরের নির্দেশনায় তা সুস্পষ্ট নয়।’ তিনি মনে করেন, ‘শুধু অফিস আদেশ জারি যথেষ্ট নয় বরং বিদেশ হতে এই ওষুধগুলোর অবৈধ আমদানি বন্ধ করা এবং সেজন্য মাঠপর্যায়ে যথেষ্ট তদারকি জরুরি। সেই সঙ্গে এই আদেশ বাস্তবায়নে ওষুধ উৎপাদন, বিপণন ও ভোক্তা পর্যায়ে সবার সচেতনতা নিশ্চিত প্রয়োজন।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. আইয়ুব হোসেন  বলেন, ‘অধিদপ্তরের ওষুধ কন্ট্রোল কমিটি ল্যাবরেটরিতে মান যাচাই করেছে। এরপর তাদের পরামর্শ ও বেশকিছু বিষয় বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন বা অফিস আদেশটা অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যা নিয়ে কথা বলার সময় এখনো হয়নি। এটা গণমাধ্যমেও দেওয়া হয়নি।’ বাতিলের পরও এখনো এসব ওষুধ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অবজারভ করছি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘যে কোনো মেডিসিন বাতিল করা হলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উচিত সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বাজার থেকে উঠিয়ে নেওয়া। এর আগেও গ্যাস্ট্রিকের রেনিটিডিনের ক্ষেত্রে এমনটা করা হয়। না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি মনে করেন, ‘এ ব্যাপারে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ওষুধ শিল্প সমিতি উভয়েরই তৎপর হওয়া উচিত। না হলে চিকিৎসক ও গণমাধ্যমও মানুষকে সচেতন করতে পারে। মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো ঠিক হবে না।’

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. শফিউজ্জামান বলেন, ‘চাইলেই ঔষধ প্রশাসন কোনো ওষুধ বাতিল করতে পারে না। কারণ, স্বাস্থ্য সচিবের নির্দেশনায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটি ওষুধের নিবন্ধন দিয়ে থাকে। তাছাড়া ওষুধ বহির্বিশ্বে রপ্তানি হওয়ায় মান নিয়ন্ত্রণের বিষয় জড়িত থাকে। কোনো ওষুধের মানোন্নয়ন বা উৎপাদন বন্ধের প্রয়োজন হলে অধিদপ্তর থেকে আমাদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। যে চিঠির কথা বলা হচ্ছে সেটি আমরা এখনো পায়নি। পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ নির্দেশনার প্রায় দুই সপ্তাহ পার হলেও কেন চিঠি পেলেন না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

সরেজমিন অনুসন্ধান : বাতিলকৃত ওষুধগুলো বাজারে বিক্রি হচ্ছে কিনা তা যাচাই করতে প্রতিবেদক গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর উল্লেখযোগ্য ফার্মেসিগুলোতে ক্রেতা সেজে কিনতে যান। এতে দেখা যায়, বাতিলকৃত ওষুধগুলো বাজারে স্বাভাবিকভাবে বিক্রি হচ্ছে। পরিচয় দিয়ে বাতিলের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুললে বিক্রেতারা বলেন, এ ধরনের বিষয় তাদের জানা নেই।

তবে ধানমন্ডির নিলু ফার্মার ইনচার্জ কাওসার আহমেদ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সূত্রে শুনেছি। কিন্তু ফার্মেসি কাউন্সিল ও কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি বা কোম্পানি থেকে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাননি। ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসকরাও লিখছেন।’

জিগাতলার ইসলাম ফার্মার ওষুধ বিক্রেতা আব্দুল কাদির অভিযোগ করেন, ‘এর আগে গ্যাস্ট্রিকের রেনিটিডিন ওষুধ ছিল। বেশ ভালো চলত, কিন্তু হুট করে প্রত্যাহার করে নেয়। তবে একই ওষুধ একটি কোম্পানি ভিন্ন নামে বাজারে ছাড়ে এবং তা বিক্রিও হচ্ছে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ক্ষতিকর বাতিল ওষুধ এখনো বাজারে!

আপডেট টাইম : ১০:১৫:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এমন ৪ ধরনের ওষুধের নিবন্ধন বাতিল করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এছাড়া পশুপাখির চিকিৎসায় ব্যবহৃত আরও ৪ প্রকারের ওষুধ বাতিল করা হয়।

সম্প্রতি অধিদপ্তরের এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা ওষুধ শিল্প সমিতিকে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই আদেশ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা। অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ আদেশ। গণমাধ্যমে গেল কিভাবে? অপরদিকে ওষুধ শিল্প সমিতি সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা এমন কোনো আদেশ পায়নি। এই যখন অবস্থা, তখন ক্ষতিকর এসব ওষুধ বাজার থেকে প্রত্যাহার করা তো দূরের কথা, অবাধে বিক্রি অব্যাহত আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন ও ওষুধ প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক ডা. আ ব ম ফারুক বলেন, ‘কোন কোন ওষুধের নিবন্ধন বাতিল করছে সেটি আমাদেরও জানানো হয়নি। এই আটটা ওষুধের মধ্যে সব যে ক্ষতিকর-সেটি আমার নিজের কাছেও মনে হয় না। কিন্তু কি কারণে বাতিল হলো সেটি মানুষকে জানানো দরকার।’

সূত্র জানায়, ৯ মে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক আদেশে উল্লিখিত ৮ ধরনের ওষুধ বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। অফিস আদেশের বর্ণনামতে, মানবদেহের ক্যাটাগরিতে বাতিলকৃত ওষুধগুলো হলো-গ্যাসট্রিকের চিকিৎসায় র‌্যাবিপ্রাজল সোডিয়াম এন্টেরিক কোটেড প্লেটস ৮.৫% এবং ও ২৩৫.২৯৪ এমজি ওষুধ ও র‌্যাবিপ্রাজল সোডিয়াম বিপি ২০ এমজি ক্যাপসুল, ব্যথানাশক ব্রোমেলিন-ট্রিপসিন (কম্বিনেশন ড্রাগ) গ্রুপের ১টি, অ্যাস্ট্রাজেনাথিন ইন-২ গ্রুপের ১টি এবং অ্যাস্ট্রাজেনাথিন ইন-৪ (কম্বিনেশন ড্রাগ) গ্রুপের একাধিক ওষুধ বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাস্ট্রোএন্টারোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম  বলেন, ‘কারও হাত-পা ভাঙলে সরাসরি দেখা যায়। তবে কোনো ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে নাও প্রকাশ পেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হচ্ছে কিনা তার জন্য গবেষণা দরকার। ফলে র‌্যাবিপ্রাজলসহ যেসব গ্রুপের ওষুধের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, তার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি প্রচার-প্রচারণার দরকার।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিটা দেখেছেন। সেখানে নিবন্ধন বাতিলের কারণ বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। ব্যাখ্যা দিলে চিকিৎসকদের বুঝতে সহজ হতো। বিএসএমএমইউর চিকিৎসকদের কাছেও এমন কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে গ্যাস্ট্রিকের র‌্যাবিপ্রাজলের বিকল্প আরও অন্তত পাঁচটি গ্রুপের ওষুধ রয়েছে। এই ধরনের ওষুধ একই রকম কাজ করে। র‌্যাবিপ্রাজলসহ কয়েটি গ্রুপের ওষুধের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি স্পষ্ট করলেও মানুষ উপকৃত হবে।’

অপরদিকে গবাদি পশুপাখির চিকিৎসায় বাতিলকৃত চার ধরনের ওষুধের মধ্যে রয়েছে-সেফট্রিয়াক্সোন (সোডিয়াম) (ভেট) ইনজেকশন ও সেফট্রিয়াক্সোন ০.২৫ জি ইউএসপি অথবা ভায়াল। লিভোফ্লোক্সাসিন হেমিহাইড্রেট ১০.২৫ এমজি ইকুইভিলান্ট টু লিভোফ্লোক্সাসিন ১০ এমজি অথবা ১০০ সল্যুশন (১০ শতাংশ) ওরাল সল্যুশন। মহাবিপন্ন শকুন রক্ষার্থে ক্ষতিকর সব ডোজেস ফরমের ভেটেরিনারি ওষুধ কিটোপ্রোফেন ও প্রাণী চিকিৎসায় কলিস্টিন জাতীয় ওষুধের সব ডোজ বাতিল করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স রেস্পন্স এলায়েন্স (বারা) সদস্য ডা. মো. রিদুয়ান পাশা  বলেন, ‘বিশ্বে প্রথম দেশ হিসাবে বাংলাদেশ শকুনের মৃত্যুর জন্য দায়ী ওষুধ কিটোপ্রোফেনকে বাতিল করছে। এজন্য আইইউসিএন (প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন) উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। যে তিনটি অ্যান্টিবায়োটিককে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তারমধ্যে কলিস্টিন সালফেট মানব চিকিৎসার জন্য ‘রিজার্ভ অ্যান্টিবায়োটিক’ হিসাবে এবং সেফট্রিয়াক্সোন ও লিভোফ্লক্সাসিন ‘ওয়াচ গ্রুপ অ্যান্টিবায়োটিক’ হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় আছে।’

তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকগুলো প্রাণী চিকিৎসায় ব্যবহার বন্ধের আদেশের ফলে ভেটেরিনারিয়ান ও হিউম্যান ডাক্তারদের যৌথ গ্রুপ বারার দীর্ঘদিনের আন্দোলন সার্থক হলো। তবে সেফট্রিয়াক্সোনের কী সব প্রিপারেশন বন্ধ হয়েছে, নাকি শুধু ২৫০ মিলি গ্রামের প্যাক সাইজ বন্ধ হয়েছে অধিদপ্তরের নির্দেশনায় তা সুস্পষ্ট নয়।’ তিনি মনে করেন, ‘শুধু অফিস আদেশ জারি যথেষ্ট নয় বরং বিদেশ হতে এই ওষুধগুলোর অবৈধ আমদানি বন্ধ করা এবং সেজন্য মাঠপর্যায়ে যথেষ্ট তদারকি জরুরি। সেই সঙ্গে এই আদেশ বাস্তবায়নে ওষুধ উৎপাদন, বিপণন ও ভোক্তা পর্যায়ে সবার সচেতনতা নিশ্চিত প্রয়োজন।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. আইয়ুব হোসেন  বলেন, ‘অধিদপ্তরের ওষুধ কন্ট্রোল কমিটি ল্যাবরেটরিতে মান যাচাই করেছে। এরপর তাদের পরামর্শ ও বেশকিছু বিষয় বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন বা অফিস আদেশটা অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যা নিয়ে কথা বলার সময় এখনো হয়নি। এটা গণমাধ্যমেও দেওয়া হয়নি।’ বাতিলের পরও এখনো এসব ওষুধ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অবজারভ করছি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘যে কোনো মেডিসিন বাতিল করা হলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উচিত সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বাজার থেকে উঠিয়ে নেওয়া। এর আগেও গ্যাস্ট্রিকের রেনিটিডিনের ক্ষেত্রে এমনটা করা হয়। না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি মনে করেন, ‘এ ব্যাপারে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ওষুধ শিল্প সমিতি উভয়েরই তৎপর হওয়া উচিত। না হলে চিকিৎসক ও গণমাধ্যমও মানুষকে সচেতন করতে পারে। মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো ঠিক হবে না।’

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. শফিউজ্জামান বলেন, ‘চাইলেই ঔষধ প্রশাসন কোনো ওষুধ বাতিল করতে পারে না। কারণ, স্বাস্থ্য সচিবের নির্দেশনায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটি ওষুধের নিবন্ধন দিয়ে থাকে। তাছাড়া ওষুধ বহির্বিশ্বে রপ্তানি হওয়ায় মান নিয়ন্ত্রণের বিষয় জড়িত থাকে। কোনো ওষুধের মানোন্নয়ন বা উৎপাদন বন্ধের প্রয়োজন হলে অধিদপ্তর থেকে আমাদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। যে চিঠির কথা বলা হচ্ছে সেটি আমরা এখনো পায়নি। পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ নির্দেশনার প্রায় দুই সপ্তাহ পার হলেও কেন চিঠি পেলেন না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

সরেজমিন অনুসন্ধান : বাতিলকৃত ওষুধগুলো বাজারে বিক্রি হচ্ছে কিনা তা যাচাই করতে প্রতিবেদক গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর উল্লেখযোগ্য ফার্মেসিগুলোতে ক্রেতা সেজে কিনতে যান। এতে দেখা যায়, বাতিলকৃত ওষুধগুলো বাজারে স্বাভাবিকভাবে বিক্রি হচ্ছে। পরিচয় দিয়ে বাতিলের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুললে বিক্রেতারা বলেন, এ ধরনের বিষয় তাদের জানা নেই।

তবে ধানমন্ডির নিলু ফার্মার ইনচার্জ কাওসার আহমেদ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সূত্রে শুনেছি। কিন্তু ফার্মেসি কাউন্সিল ও কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি বা কোম্পানি থেকে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাননি। ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসকরাও লিখছেন।’

জিগাতলার ইসলাম ফার্মার ওষুধ বিক্রেতা আব্দুল কাদির অভিযোগ করেন, ‘এর আগে গ্যাস্ট্রিকের রেনিটিডিন ওষুধ ছিল। বেশ ভালো চলত, কিন্তু হুট করে প্রত্যাহার করে নেয়। তবে একই ওষুধ একটি কোম্পানি ভিন্ন নামে বাজারে ছাড়ে এবং তা বিক্রিও হচ্ছে।’