হাওর বার্তা ডেস্কঃ জেলা পর্যায়ে প্রকল্প তদারকিতে ডিসি অফিসকে দেওয়া নির্দেশ স্থগিত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ডিসিদের সভাপতি ও এডিসিকে সদস্য সচিব করে নতুন একটি কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও চলছে।
প্রকৌশলীদের সঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে নতুন করে ডিসিদের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি রয়েছে প্রকৌশলীদের। ডিসিদের প্রকল্পের তদারকির দায়িত্ব দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল না করলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন প্রকৌশলীরা। এ কারণে সরকারের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত এলো। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন বলেন, প্রকল্প তদারকির উদ্যোগটি খুবই ইতিবাচক একটি কাজ। রাষ্ট্রের স্বার্থে সবাইকে একটি টিম হিসাবে কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি এ বিষয়ে সুন্দর একটি সমাধান আসবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উল্লিখিত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার আইইবি (ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ) প্রকৌশলীরা বৈঠকে বসেছিলেন। তাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত আজ-কালের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে বলে জানা গেছে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, জনপ্রশাসনের সঙ্গে যেভাবে আলোচনা হয়েছিল কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সেটা মানা হয়নি। প্রকৌশলীরা বলছেন, ডিসিকে সভাপতি মানতে তাদের আপত্তি নেই। কমিটির সদস্য সচিব হতে হবে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীদের। অন্যদিকে জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের কমিটি ২০১১ ও ২০১৫ সালেও ছিল। তাই এ বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এ বিষয়ে প্রকৌশলীরা বলছেন, জেলা পর্যায়ে অনেক কমিটি আছে, যেখানে ডিসিদের সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলীরা সদস্য সচিব হিসেবে আছেন। তাই প্রকল্প তদারকির ক্ষেত্রে এক ধরনের কমিটিই হওয়া প্রয়োজন। উল্লেখ্য, প্রকল্প তদারকিতে ডিসিদের দায়িত্ব দিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি চিঠি ইস্যু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে মাঠ পর্যায়ে এডিপিভুক্ত প্রকল্পগুলোতে জেলা প্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মাধ্যমে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ নির্দেশনা জারির পর থেকে প্রকৌশলীরা আন্দোলনে নামেন। মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে একাধিকবার তারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
এমন অবস্থায় ১৫ মার্চ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রকৌশলীরা। ওই বৈঠকে প্রকৌশলীদের পক্ষ থেকে প্রকল্প তদারকি সংক্রান্ত চিঠি বাতিল করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করে মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের নিয়ে যৌথ কমিটি করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে ডিসিদের সভাপতি ও এডিসিকে (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটিতে জেলা পর্যায়ের প্রায় সব দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীদের সদস্য রাখা হয়েছে। তবে এডিসিকে সদস্য সচিব মানতে আপত্তি রয়েছে প্রকৌশলীদের। তারা নির্বাহী প্রকৌশলীকে সদস্য সচিব হিসেবে চান।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকৌশলীদের আপত্তির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া এ ধরনের কমিটি অতীতেও ছিল। এরপরও একই অবস্থানে থাকলে সরকারের অংশ হিসাবে তাদের অসহযোগিতাই ফুটে উঠবে। অন্যদিকে আইইবির নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগে এডিসির নেতৃত্বে কমিটি ছিল, এখন ডিসির নেতৃত্বে করতে চাচ্ছে। আবার সেই এডিসিকেই সদস্য সচিব করা হচ্ছে। তাহলে লাভটা কী হলো? বাস্তবে সেই এডিসিই সব দায়িত্ব সামলাবেন। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কথা হয়েছিল ডিসি সভাপতি ও নির্বাহী প্রকৌশলী সদস্য সচিব হবেন। কিন্তু কমিটিতে প্রকৌশলীদের রাখা হয়েছে সদস্য হিসেবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য দপ্তরের প্রকৌশলীদের রাখা হয়েছে। আবার প্রকল্প তদারকির সময় অন্য দপ্তরের প্রকৌশলীদের নেওয়া হবে। এ ধরনের বিশ্বাসহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করলে তো পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।
আইইবির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সবুর বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করার বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু কমিটি গঠনের যে প্রক্রিয়ার কথা চলছে সেটার বিষয়ে আমাদের বিশেষজ্ঞ কমিটি পর্যালোচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেবে সে অনুযায়ী কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হবে। তিনি বলেন, দেশের জন্য যেটা ইতিবাচক তেমন সিদ্ধান্ত সবাই মিলে নিতে পারব বলে আমাদের বিশ্বাস।