ঢাকা ১০:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিলেন আল্লামা শফী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৪:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৬
  • ৩১৩ বার

জামিয়া দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের খতমে বুখারি ও দোয়া মাহফিলে মাদরাসার মহাপরিচালক হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, তাকওয়া তথা খোদাভীতি ছাড়া পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না। অপর দিকে আল্লাহর ভয় মানুষের অন্তরে না থাকার ফলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্তরে খোদাভীতি থাকলে কারো পক্ষে শরিয়তের হুকুম লঙ্ঘন করা, হারাম পথে চলা কিছুতেই সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, খোদাভীতির অপর নাম তাকওয়া, আর এই তাকওয়া থেকে দূরে থাকার কারণেই বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মুসলমানগণ নানাভাবে পর্যুদস্ত ও নির্যাতিত হচ্ছে। মুসলমানদেরকে এই দুর্দশা থেকে রেহাই পেতে পূর্ণাঙ্গ তাকওয়া অর্জনের পাশাপাশি ঈমানী শক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলিম জাতিসত্তা ও দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে। তিনি সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মুসলমানদেরকে এক কালিমার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

হেফাজত আমির বলেন, মুসলমানদেরকে সর্বপ্রথম নিজের ঈমান মজবুত করতে হবে। ঈমান মজবুত করার জন্য সকাল-বিকেল বেশি বেশি করে কালিমার জিকির করতে হবে, আল্লাহর নাম জপতে হবে। অন্তরে আল্লাহর বড়ত্ব, রহমতের আশা ও আজাবের ভয় তৈরি হলে ইসলামের বিরুদ্ধের কোনো শক্তিই মুসলমানদেরকে কাবু ও বিপথগামী করতে পারবে না।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আল্লামা শাহ্ আহ্মদ শফী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আজ সর্বত্র ইসলামকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে। ইসলামের ওপর আঘাতহানা হচ্ছে নানাভাবে। আমাদের অনৈক্য আর নিজ ধর্মের মধ্যে কিছু গোমরাহ ও ধর্মবিরোধীর কারণেই বিধর্মীরা সুযোগকে কাজে

লাগাচ্ছে। ইসলামে অসত্য, অন্যায়, সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই। ইসলাম ন্যায় ও শান্তির ধর্ম। ইসলামকে অনুসরণ করতে পারলে এ দেশে কোনো হানাহানি ও সন্ত্রাস থাকবে না।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, দেশের উলামা-মাশায়েখসহ সর্বস্তরের মুসলমানদেরকে আল্লাহ-রাসূলের ইজ্জত-সম্মান, ঈমান, ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের প্রশ্নে সবসময় সাহসিকতার সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, মৃত্যু আমাদের একদিন অবশ্যই হবে। মুসলমানের স্থায়ী নিবাস পরকাল ও জান্নাত। তাই মুসলমান কখনো মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয় না। আর সেই মৃত্যুটা যদি শাহাদাতের মৃত্যু হয়, তা তো একজন মুসলমানের জন্য অবশ্যই গর্বের বিষয়। তিনি বলেন, আমাদেরকে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণসহ যেকোনো পদক্ষেপ শুধু আবেগ দিয়ে নয়, সিদ্ধান্ত নিতে হবে মেধা ও বুদ্ধি প্রয়োগের মাধ্যমে। মেধা ও বুদ্ধিহীন আবেগ অনেক সময় ভুল পথে পরিচালিত করে।

আজ শুক্রবার জামিয়া দারুল উলুম হাটহাজারীর দাওরায়ে হাদিস (স্নাতকোত্তর) সমাপনী বর্ষের হাদিসশাস্ত্রের সর্বনির্ভরযোগ্য গ্রন্থ বুখারি শরিফের শেষ ক্লাসের পর আখেরি মুনাজাত ও বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী ক্লাস ও দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই দ্বীনি সমাবেশে আগত অতিথি ছাড়াও দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) সমাপনী ক্লাসের দুই হাজার ৬০০ জন তরুণ আলেম শরিক ছিলেন।

বিকেল সাড়ে ৩টায় সহিহ বুখারি শরিফের আখেরি দরস শুরু হয়। দরসের শুরুতে আখেরি হাদিসের পুরো সনদসহ মতন পাঠের পর আহমদ শফী ছাত্রদের উদ্দেশে হাদিসের ওপর বিশদ আলোচনা করেন। আখেরি দরসের আগে বিদায়ী তরুণ আলেম এবং সমাবেশে উপস্থিত হাজার উলামায়ে কেরাম ও ইসলামি নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মুফতি জসীম উদ্দীন, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী প্রমুখ।

হেফাজত মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, বর্তমানে দেশে ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী ষড়যন্ত্র ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মূলত জাতিকে ধর্মহীন ও আদর্শহীনভাবে গড়ে তোলে ভোগবাদিতায় নিমগ্ন করার জোর আয়োজন চলছে। ইসলাম ও মুসলমানদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করা হচ্ছে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে। যেকোনো নেতিবাচক ও অঘটনের সাথে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে উলামা-মাশায়েখ ও ইসলামপন্থীদেরকে জড়ানোর চেষ্টা চলছে। ইসলামের আবশ্যকীয় বিভিন্ন বিধিবিধানের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও উলামা-মাশায়েখের বিরুদ্ধে বহুমুখী মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র চলছে। হেফাজত মহাসচিব ঈমান ও ইসলামের হেফাজতের লক্ষ্যে উলামা-মাশায়েখ ও সাধারণ মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করে তরুণ আলেমদের উদ্দেশ করে বলেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে ইসলামের শান্তি, সাম্য ও ঐক্যের বাণী জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে আপনাদেরকে জোরদার ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি নাস্তিক্যবাদের অপতৎপরতা এবং ইসলাম ও নৈতিকতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিষয়েও ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিলেন আল্লামা শফী

আপডেট টাইম : ১১:৫৪:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

জামিয়া দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের খতমে বুখারি ও দোয়া মাহফিলে মাদরাসার মহাপরিচালক হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, তাকওয়া তথা খোদাভীতি ছাড়া পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না। অপর দিকে আল্লাহর ভয় মানুষের অন্তরে না থাকার ফলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্তরে খোদাভীতি থাকলে কারো পক্ষে শরিয়তের হুকুম লঙ্ঘন করা, হারাম পথে চলা কিছুতেই সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, খোদাভীতির অপর নাম তাকওয়া, আর এই তাকওয়া থেকে দূরে থাকার কারণেই বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মুসলমানগণ নানাভাবে পর্যুদস্ত ও নির্যাতিত হচ্ছে। মুসলমানদেরকে এই দুর্দশা থেকে রেহাই পেতে পূর্ণাঙ্গ তাকওয়া অর্জনের পাশাপাশি ঈমানী শক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলিম জাতিসত্তা ও দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে। তিনি সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মুসলমানদেরকে এক কালিমার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

হেফাজত আমির বলেন, মুসলমানদেরকে সর্বপ্রথম নিজের ঈমান মজবুত করতে হবে। ঈমান মজবুত করার জন্য সকাল-বিকেল বেশি বেশি করে কালিমার জিকির করতে হবে, আল্লাহর নাম জপতে হবে। অন্তরে আল্লাহর বড়ত্ব, রহমতের আশা ও আজাবের ভয় তৈরি হলে ইসলামের বিরুদ্ধের কোনো শক্তিই মুসলমানদেরকে কাবু ও বিপথগামী করতে পারবে না।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আল্লামা শাহ্ আহ্মদ শফী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আজ সর্বত্র ইসলামকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে। ইসলামের ওপর আঘাতহানা হচ্ছে নানাভাবে। আমাদের অনৈক্য আর নিজ ধর্মের মধ্যে কিছু গোমরাহ ও ধর্মবিরোধীর কারণেই বিধর্মীরা সুযোগকে কাজে

লাগাচ্ছে। ইসলামে অসত্য, অন্যায়, সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই। ইসলাম ন্যায় ও শান্তির ধর্ম। ইসলামকে অনুসরণ করতে পারলে এ দেশে কোনো হানাহানি ও সন্ত্রাস থাকবে না।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, দেশের উলামা-মাশায়েখসহ সর্বস্তরের মুসলমানদেরকে আল্লাহ-রাসূলের ইজ্জত-সম্মান, ঈমান, ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের প্রশ্নে সবসময় সাহসিকতার সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, মৃত্যু আমাদের একদিন অবশ্যই হবে। মুসলমানের স্থায়ী নিবাস পরকাল ও জান্নাত। তাই মুসলমান কখনো মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয় না। আর সেই মৃত্যুটা যদি শাহাদাতের মৃত্যু হয়, তা তো একজন মুসলমানের জন্য অবশ্যই গর্বের বিষয়। তিনি বলেন, আমাদেরকে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণসহ যেকোনো পদক্ষেপ শুধু আবেগ দিয়ে নয়, সিদ্ধান্ত নিতে হবে মেধা ও বুদ্ধি প্রয়োগের মাধ্যমে। মেধা ও বুদ্ধিহীন আবেগ অনেক সময় ভুল পথে পরিচালিত করে।

আজ শুক্রবার জামিয়া দারুল উলুম হাটহাজারীর দাওরায়ে হাদিস (স্নাতকোত্তর) সমাপনী বর্ষের হাদিসশাস্ত্রের সর্বনির্ভরযোগ্য গ্রন্থ বুখারি শরিফের শেষ ক্লাসের পর আখেরি মুনাজাত ও বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী ক্লাস ও দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই দ্বীনি সমাবেশে আগত অতিথি ছাড়াও দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) সমাপনী ক্লাসের দুই হাজার ৬০০ জন তরুণ আলেম শরিক ছিলেন।

বিকেল সাড়ে ৩টায় সহিহ বুখারি শরিফের আখেরি দরস শুরু হয়। দরসের শুরুতে আখেরি হাদিসের পুরো সনদসহ মতন পাঠের পর আহমদ শফী ছাত্রদের উদ্দেশে হাদিসের ওপর বিশদ আলোচনা করেন। আখেরি দরসের আগে বিদায়ী তরুণ আলেম এবং সমাবেশে উপস্থিত হাজার উলামায়ে কেরাম ও ইসলামি নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মুফতি জসীম উদ্দীন, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী প্রমুখ।

হেফাজত মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, বর্তমানে দেশে ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী ষড়যন্ত্র ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মূলত জাতিকে ধর্মহীন ও আদর্শহীনভাবে গড়ে তোলে ভোগবাদিতায় নিমগ্ন করার জোর আয়োজন চলছে। ইসলাম ও মুসলমানদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করা হচ্ছে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে। যেকোনো নেতিবাচক ও অঘটনের সাথে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে উলামা-মাশায়েখ ও ইসলামপন্থীদেরকে জড়ানোর চেষ্টা চলছে। ইসলামের আবশ্যকীয় বিভিন্ন বিধিবিধানের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও উলামা-মাশায়েখের বিরুদ্ধে বহুমুখী মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র চলছে। হেফাজত মহাসচিব ঈমান ও ইসলামের হেফাজতের লক্ষ্যে উলামা-মাশায়েখ ও সাধারণ মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করে তরুণ আলেমদের উদ্দেশ করে বলেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে ইসলামের শান্তি, সাম্য ও ঐক্যের বাণী জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে আপনাদেরকে জোরদার ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি নাস্তিক্যবাদের অপতৎপরতা এবং ইসলাম ও নৈতিকতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিষয়েও ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।