ঢাকা ০৫:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ মহান মে দিবস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৭:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ মে ২০২২
  • ১৩৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মহান মে দিবস আজ। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা দিন। একই সঙ্গে তাদের আন্তর্জাতিক সংহতির দিন। প্রতিবছর ১ মে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়। ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ১৮৮৬ সালের এই দিন রাস্তায় নামেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা। আর এই শ্রমিকদের ওপর গুলি চলে। এতে নিহত হন ১১ জন তরতাজা শ্রমিক। তাদের জীবনদানের মধ্য দিয়ে পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বে ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি মেনে নেওয়া হয়। সেই থেকে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসাবে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

বাংলাদেশেও প্রতিবছর মে দিবস পালিত হয়। নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে দিনটি পালনের আয়োজন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বাতিল করা হয়েছিল। তবে ঈদের ছুটির মধ্যেও এবার দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অন্যতম।

বাংলাদেশে দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা।’ দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব শ্রমজীবী মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি ছিলেন শ্রমজীবী মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। স্বাধীনতার পর মে দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় এবং জাতির পিতা মে দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে মজুরি কমিশন গঠন করেন এবং তিনি শ্রমিকদের জন্যও নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। এক বার্তায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমাজ বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমজীবীরা প্রথমে বিচ্ছিন্ন এবং পরে সংঘবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে এসেছে। এ সংগ্রামের মাধ্যমে এক সময় দাস প্রথা বিলুপ্ত হলেও শ্রমিকের কাজের কোনো ধরাবাঁধা সময় ও নিয়ম ছিল না। উনিশ শতকের গোড়ায় কলকারখানায় সপ্তাহে ৬ দিন গড়ে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টার বেশি অমানুষিক পরিশ্রম করতেন শ্রমিকরা। বিনিময়ে মিলত সামান্য মজুরি। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কিংবা সামাজিক নিরাপত্তাও ছিল না তাদের। এর বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লড়াই শুরু হলেও তা বিরাট দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকায়। ১৮৮৬ সালে যা চূড়ান্ত রূপ নেয়। ওই বছরের ১ মে দৈনিক ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে শ্রমিকরা ফুঁসে ওঠেন। হে মার্কেটের কাছে তাদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে ১১ শ্রমিক নিহত হন। উত্তাল সেই আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে দিতে বাধ্য হয় এবং বিশ্বব্যাপী দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সময় চালু করা হয়। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সমাবেশে ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালিত হচ্ছে।

দিনটিতে বরাবরই বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। তবে এবার ঈদ এবং মে দিবসের ছুটি একসঙ্গে পড়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো বিবৃতি দিয়েছে। এসব বিবৃতিতে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিনটি উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠান ও টকশো সম্প্রচার করবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আজ মহান মে দিবস

আপডেট টাইম : ১০:২৭:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ মে ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মহান মে দিবস আজ। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা দিন। একই সঙ্গে তাদের আন্তর্জাতিক সংহতির দিন। প্রতিবছর ১ মে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়। ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ১৮৮৬ সালের এই দিন রাস্তায় নামেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা। আর এই শ্রমিকদের ওপর গুলি চলে। এতে নিহত হন ১১ জন তরতাজা শ্রমিক। তাদের জীবনদানের মধ্য দিয়ে পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বে ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি মেনে নেওয়া হয়। সেই থেকে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসাবে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

বাংলাদেশেও প্রতিবছর মে দিবস পালিত হয়। নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে দিনটি পালনের আয়োজন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বাতিল করা হয়েছিল। তবে ঈদের ছুটির মধ্যেও এবার দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অন্যতম।

বাংলাদেশে দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা।’ দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব শ্রমজীবী মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি ছিলেন শ্রমজীবী মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। স্বাধীনতার পর মে দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় এবং জাতির পিতা মে দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে মজুরি কমিশন গঠন করেন এবং তিনি শ্রমিকদের জন্যও নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। এক বার্তায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমাজ বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমজীবীরা প্রথমে বিচ্ছিন্ন এবং পরে সংঘবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে এসেছে। এ সংগ্রামের মাধ্যমে এক সময় দাস প্রথা বিলুপ্ত হলেও শ্রমিকের কাজের কোনো ধরাবাঁধা সময় ও নিয়ম ছিল না। উনিশ শতকের গোড়ায় কলকারখানায় সপ্তাহে ৬ দিন গড়ে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টার বেশি অমানুষিক পরিশ্রম করতেন শ্রমিকরা। বিনিময়ে মিলত সামান্য মজুরি। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কিংবা সামাজিক নিরাপত্তাও ছিল না তাদের। এর বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লড়াই শুরু হলেও তা বিরাট দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকায়। ১৮৮৬ সালে যা চূড়ান্ত রূপ নেয়। ওই বছরের ১ মে দৈনিক ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে শ্রমিকরা ফুঁসে ওঠেন। হে মার্কেটের কাছে তাদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে ১১ শ্রমিক নিহত হন। উত্তাল সেই আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে দিতে বাধ্য হয় এবং বিশ্বব্যাপী দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সময় চালু করা হয়। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সমাবেশে ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালিত হচ্ছে।

দিনটিতে বরাবরই বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। তবে এবার ঈদ এবং মে দিবসের ছুটি একসঙ্গে পড়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো বিবৃতি দিয়েছে। এসব বিবৃতিতে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিনটি উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠান ও টকশো সম্প্রচার করবে।