ঢাকা ০৯:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওড়ে ক্ষতির প্রকৃত চিত্র নেই সরকারি হিসাবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২২:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২
  • ১৪৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলের পানিতে একের পর এক বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে হাওড়ের বোরো ধান। এখনো ঝুঁকিতে অনেক হাওড়ের ফসল। ঢলের পানি থেকে ফসল বাঁচাতে সরকারিভাবে ৮০ শতাংশ পাকলেই ধান কাটার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পানির ভয়ে কোথাও কোথাও আধাপাকা ধানই কাটছেন কৃষক। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৯টি হাওড়ের ৫৭৩৫ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে হাওড়গুলোর ৮৫ হেক্টর জমির পাকা ধান কর্তনের হিসাবও দিচ্ছেন তারা। কিন্তু প্রকৃত চিত্র ভিন্ন বলছেন পরিবেশ ও হাওড় উন্নয়ন সংস্থা এবং হাওড় বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা।

হাওড় বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, কৃষি কর্মকর্র্তারা ঘরে বসে এসব তালিকা করছেন। ক্ষয়ক্ষতি কম দেখাচ্ছেন, কর্তনের হিসাব বেশি দেখাচ্ছেন। এটা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। তিনি দাবি করেন, প্রকৃত চিত্র তুলে ধরলে সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি নিরূপণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে।

তাই অফিসে বসে তালিকা না করে মাঠে গিয়ে তালিকা তৈরির আহ্বান জানান তিনি। একই রকম কথা বলেন পরিবেশ ও হাওড় উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমীর রেজা। তিনি বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা মনে করেন ক্ষয়ক্ষতি কম দেখাতে পারলেই তাদের সফলতা। এবারও তাই লক্ষ করা যাচ্ছে। হাওড়গুলোর ক্ষতির প্রকৃত চিত্র সরকারি হিসাবে নেই।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক  বলেন, ঘরে বসে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের অভিযোগ সত্য নয়। প্রকৃত ক্ষতির হিসাবই দিচ্ছি আমরা। আগামী এক মাসের মধ্যে কৃষকদের তালিকা করা হবে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কৃষক ও জমির তথ্য কৃষি কর্মকর্তাদের কাছেই থাকে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে তাদের ওপরই ভরসা করতে হয়। তবে তিনি জানান, ক্ষতি নিরূপণ যাতে মাঠ পর্যায় থেকে ভালোভাবে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন তিনি।

জেলা কৃষি বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ পর্যন্ত ছোট-বড় ১৯টি হাওড় ও বিলের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৭৩৫ হেক্টর। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, এক হেক্টর জমিতে ধান হয় ৬ মেট্রিক টন।

এক কেজি ধানের দাম ২৭ টাকা ধরে ছয় মেট্রিক টন বা ৬ হাজার কেজি ধানের দাম হয় ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। সে হিসাবে সুনামগঞ্জে টাকার অঙ্কে ধানের ক্ষতি হয়েছে ৯২ কোটি ৯০ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

এ পর্যন্ত জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া হাওড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দিরাই উপজেলা চাপতির হাওড়। এটির বাঁধ ভেঙে ফসলহানি ঘটে ৭ এপ্রিল। তখনও হাওড়ের ফসল পাকেনি।

কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, এখানে ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। তারা ক্ষতি দেখিয়েছে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। স্থানীয় চণ্ডীপুর গ্রামের কৃষকরা বলেছেন, এটা কৃষি বিভাগের মনগড়া হিসাব। হাওড় থেকে গরুকে খাওয়ানোর জন্য কিছু ধান ছাড়া আর কোনো ধানই কাটা যায়নি। সব ধান কাঁচা ছিল।

এই হাওড়ে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৪৬টি গ্রামের ফসল ছিল। একই উপজেলার হুরামন্দিরা হাওড়ের বাঁধ ভেঙে ফসলহানি ঘটে। কৃষি বিভাগ বলছে, এখানে জমি আছে ১ হাজার হেক্টর, ক্ষতি হয়েছে ২০০ হেক্টরের।

তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ইউনিয়নের সব মানুষের ধান ছিল চাপতির হাওড় ও হুরামন্দিরা হাওড়ে। সব ধান তলিয়ে গেছে। চাপতির হাওড়ে কোনো ধানই কাটা যায়নি। হুরামন্দিরা হাওড়ে আধাপাকা কিছু ধান লোকজন কেটেছেন, সেটা অর্ধেকের বেশি হবে না।

হাওড়ের ধান যখন একেবারে কাঁচা, তখন ৪ এপ্রিল পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় সদর উপজেলার কানলার হাওড়ের ফসল। ফসল কাটার মতো কোনো অবস্থা ছিল না। এই হাওড়ে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি আছে কৃষি বিভাগের হিসাবে। এই হাওড়ে ক্ষতি দেখানো হয়েছে মাত্র ১০০ হেক্টর। স্থানীয় কৃষকদের মতে, হাওড়ের কিছু উঁচু জমি ছাড়া পুরোটাই প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৭০০ থেকে ৮০০ হেক্টর হবে।

তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওড় ছাড়াও গুরমার হাওড় (বর্ধিত অংশ), কাউজানি হাওড়, ফানা হাওড়, নয়াহালট হাওড়ে পানি ঢুকে জমির ফসল তলিয়ে গেছে। সর্বশেষ রোববার বিকালে ভাঙে গুরমার হাওড়ের বাঁধ। হাওড়ের তীর উপচে পানি ঢুকে কাউজানি, নয়াহালট ও ফানা হাওড়ে। কৃষি বিভাগ বলছে, এসব হাওড়ে ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ হেক্টর।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, তাহিরপুরে এ পর্যন্ত ২০০০ থেকে ২৫০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে হবে। এতে সরকারের পরবর্তী কার্যক্রম বা কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে সুবিধা হবে। এ

ছাড়া কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওড়ের ডোবাইল বিলে ফসলের ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৬৫ হেক্টর জমির, শাল্লা উপজেলায় ২০০ হেক্টর, ছাতকে ৩০ হেক্টর, জগন্নাথপুরে ৯০ হেক্টর, দোয়ারাবাজারে ২০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

১৩ এপ্রিল সুনামগঞ্জে আসেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। পরদিন সকালে হাওড় পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সভায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরলে সেটির সঙ্গে স্থানীয়রা দ্বিমত পোষণ করেন। তাদের প্রতিক্রিয়া শুনে গণশুনানির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য কৃষি বিভাগের উপপরিচালককে নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু সেই নির্দেশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

এদিকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাওড়ের ৮৫ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে বলে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক  জানান। তিনি বলেন, সব ধানই পাকা অবস্থায় কর্তন করা হচ্ছে। এবার ফলনও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে। হাওড়ের বাঁধ নিয়েও কোনো শঙ্কা নেই।

কিন্তু হাওড়ের কৃষকদের মত ভিন্ন। তাহিরপুরে শনির হাওড়ে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই আধাপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন ঢলের পানির ভয়ে। সরকার নির্দেশিত ৮০ ভাগ ধান পাকলে কাটার কথা; কিন্তু বেশির ভাগ স্থানে সেটা হচ্ছে না। শনির হাওড়ের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, তিনি গত বছর ৭ মন ধান ঘরে তুলেছিলেন; কিন্তু এবার এর অর্ধেকও পাবেন কি না সন্দেহ।

একই অবস্থা আরও অনেক কৃষকের। তারা জানান, প্রতি কেয়ারে (৩০ শতাংশ) ১৮ থেকে ২০ মন ধান হয়; কিন্তু আধাপাকা অবস্থায় কেটে ফেলায় ৮ থেকে ৯ মন ধান তারা পাচ্ছেন। সেটা দিয়ে খরচও ঠিকমতো উঠবে না। কৃষকদের মতে, এই হাওড়ের তিন ভাগের এক ভাগ ধানও এখনো কাটা হয়নি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওড়ে ক্ষতির প্রকৃত চিত্র নেই সরকারি হিসাবে

আপডেট টাইম : ১১:২২:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলের পানিতে একের পর এক বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে হাওড়ের বোরো ধান। এখনো ঝুঁকিতে অনেক হাওড়ের ফসল। ঢলের পানি থেকে ফসল বাঁচাতে সরকারিভাবে ৮০ শতাংশ পাকলেই ধান কাটার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পানির ভয়ে কোথাও কোথাও আধাপাকা ধানই কাটছেন কৃষক। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৯টি হাওড়ের ৫৭৩৫ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে হাওড়গুলোর ৮৫ হেক্টর জমির পাকা ধান কর্তনের হিসাবও দিচ্ছেন তারা। কিন্তু প্রকৃত চিত্র ভিন্ন বলছেন পরিবেশ ও হাওড় উন্নয়ন সংস্থা এবং হাওড় বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা।

হাওড় বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, কৃষি কর্মকর্র্তারা ঘরে বসে এসব তালিকা করছেন। ক্ষয়ক্ষতি কম দেখাচ্ছেন, কর্তনের হিসাব বেশি দেখাচ্ছেন। এটা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। তিনি দাবি করেন, প্রকৃত চিত্র তুলে ধরলে সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি নিরূপণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে।

তাই অফিসে বসে তালিকা না করে মাঠে গিয়ে তালিকা তৈরির আহ্বান জানান তিনি। একই রকম কথা বলেন পরিবেশ ও হাওড় উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমীর রেজা। তিনি বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা মনে করেন ক্ষয়ক্ষতি কম দেখাতে পারলেই তাদের সফলতা। এবারও তাই লক্ষ করা যাচ্ছে। হাওড়গুলোর ক্ষতির প্রকৃত চিত্র সরকারি হিসাবে নেই।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক  বলেন, ঘরে বসে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের অভিযোগ সত্য নয়। প্রকৃত ক্ষতির হিসাবই দিচ্ছি আমরা। আগামী এক মাসের মধ্যে কৃষকদের তালিকা করা হবে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কৃষক ও জমির তথ্য কৃষি কর্মকর্তাদের কাছেই থাকে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে তাদের ওপরই ভরসা করতে হয়। তবে তিনি জানান, ক্ষতি নিরূপণ যাতে মাঠ পর্যায় থেকে ভালোভাবে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন তিনি।

জেলা কৃষি বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ পর্যন্ত ছোট-বড় ১৯টি হাওড় ও বিলের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৭৩৫ হেক্টর। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, এক হেক্টর জমিতে ধান হয় ৬ মেট্রিক টন।

এক কেজি ধানের দাম ২৭ টাকা ধরে ছয় মেট্রিক টন বা ৬ হাজার কেজি ধানের দাম হয় ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। সে হিসাবে সুনামগঞ্জে টাকার অঙ্কে ধানের ক্ষতি হয়েছে ৯২ কোটি ৯০ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

এ পর্যন্ত জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া হাওড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দিরাই উপজেলা চাপতির হাওড়। এটির বাঁধ ভেঙে ফসলহানি ঘটে ৭ এপ্রিল। তখনও হাওড়ের ফসল পাকেনি।

কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, এখানে ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। তারা ক্ষতি দেখিয়েছে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। স্থানীয় চণ্ডীপুর গ্রামের কৃষকরা বলেছেন, এটা কৃষি বিভাগের মনগড়া হিসাব। হাওড় থেকে গরুকে খাওয়ানোর জন্য কিছু ধান ছাড়া আর কোনো ধানই কাটা যায়নি। সব ধান কাঁচা ছিল।

এই হাওড়ে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৪৬টি গ্রামের ফসল ছিল। একই উপজেলার হুরামন্দিরা হাওড়ের বাঁধ ভেঙে ফসলহানি ঘটে। কৃষি বিভাগ বলছে, এখানে জমি আছে ১ হাজার হেক্টর, ক্ষতি হয়েছে ২০০ হেক্টরের।

তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ইউনিয়নের সব মানুষের ধান ছিল চাপতির হাওড় ও হুরামন্দিরা হাওড়ে। সব ধান তলিয়ে গেছে। চাপতির হাওড়ে কোনো ধানই কাটা যায়নি। হুরামন্দিরা হাওড়ে আধাপাকা কিছু ধান লোকজন কেটেছেন, সেটা অর্ধেকের বেশি হবে না।

হাওড়ের ধান যখন একেবারে কাঁচা, তখন ৪ এপ্রিল পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় সদর উপজেলার কানলার হাওড়ের ফসল। ফসল কাটার মতো কোনো অবস্থা ছিল না। এই হাওড়ে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি আছে কৃষি বিভাগের হিসাবে। এই হাওড়ে ক্ষতি দেখানো হয়েছে মাত্র ১০০ হেক্টর। স্থানীয় কৃষকদের মতে, হাওড়ের কিছু উঁচু জমি ছাড়া পুরোটাই প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৭০০ থেকে ৮০০ হেক্টর হবে।

তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওড় ছাড়াও গুরমার হাওড় (বর্ধিত অংশ), কাউজানি হাওড়, ফানা হাওড়, নয়াহালট হাওড়ে পানি ঢুকে জমির ফসল তলিয়ে গেছে। সর্বশেষ রোববার বিকালে ভাঙে গুরমার হাওড়ের বাঁধ। হাওড়ের তীর উপচে পানি ঢুকে কাউজানি, নয়াহালট ও ফানা হাওড়ে। কৃষি বিভাগ বলছে, এসব হাওড়ে ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ হেক্টর।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, তাহিরপুরে এ পর্যন্ত ২০০০ থেকে ২৫০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে হবে। এতে সরকারের পরবর্তী কার্যক্রম বা কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে সুবিধা হবে। এ

ছাড়া কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওড়ের ডোবাইল বিলে ফসলের ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৬৫ হেক্টর জমির, শাল্লা উপজেলায় ২০০ হেক্টর, ছাতকে ৩০ হেক্টর, জগন্নাথপুরে ৯০ হেক্টর, দোয়ারাবাজারে ২০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

১৩ এপ্রিল সুনামগঞ্জে আসেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। পরদিন সকালে হাওড় পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সভায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরলে সেটির সঙ্গে স্থানীয়রা দ্বিমত পোষণ করেন। তাদের প্রতিক্রিয়া শুনে গণশুনানির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য কৃষি বিভাগের উপপরিচালককে নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু সেই নির্দেশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

এদিকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাওড়ের ৮৫ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে বলে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক  জানান। তিনি বলেন, সব ধানই পাকা অবস্থায় কর্তন করা হচ্ছে। এবার ফলনও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে। হাওড়ের বাঁধ নিয়েও কোনো শঙ্কা নেই।

কিন্তু হাওড়ের কৃষকদের মত ভিন্ন। তাহিরপুরে শনির হাওড়ে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই আধাপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন ঢলের পানির ভয়ে। সরকার নির্দেশিত ৮০ ভাগ ধান পাকলে কাটার কথা; কিন্তু বেশির ভাগ স্থানে সেটা হচ্ছে না। শনির হাওড়ের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, তিনি গত বছর ৭ মন ধান ঘরে তুলেছিলেন; কিন্তু এবার এর অর্ধেকও পাবেন কি না সন্দেহ।

একই অবস্থা আরও অনেক কৃষকের। তারা জানান, প্রতি কেয়ারে (৩০ শতাংশ) ১৮ থেকে ২০ মন ধান হয়; কিন্তু আধাপাকা অবস্থায় কেটে ফেলায় ৮ থেকে ৯ মন ধান তারা পাচ্ছেন। সেটা দিয়ে খরচও ঠিকমতো উঠবে না। কৃষকদের মতে, এই হাওড়ের তিন ভাগের এক ভাগ ধানও এখনো কাটা হয়নি।