হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন নওগাঁর যুবক মোখলেছুর রহমান। অভাবের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। তার এ সফলতা দেখে এখন এলাকার অনেকেই হাঁস পালন করছেন।
মোখলেছুর রহমানের বাড়ী জেলার মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের চেরাগপুর গ্রামে। স্ত্রী আঙ্গুর বেগম, দুই মেয়ে তানিয়া ও সামিয়া এবং ছেলে তামিম। হাঁস পালন করে বড় মেয়ে তানিয়াকে বিয়ে দিয়েছেন এবং ছেলে তামিম গ্রামের স্কুলে প্রথম শ্রেনীতে পড়ে এবং মেয়ে সামিয়া এখন স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি।
গ্রামের বাড়ী চেরাগপুর হলেও প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে কয়াপাড়া কামার কুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এবং মান্দা সেতুরদক্ষিণ পার্শ্বে আত্রাই নদীতে এসে হাঁস পালন করছেন। শুকনো নদীতে পড়ে আছে বিস্তর জায়গা।
তবে নদীতে সামান্য পানি থাকায় সেখানে প্রায় ১ কিলোমিটারের অধিক এলাকা জুড়ে হাঁসগুলো চড়ে বেড়াচ্ছে। আর সময় করে এসে খাবার খেয়ে যাচ্ছে। রাতে নিরাপত্তার জন্য জাল দিয়ে দুই স্তর ঘের দেওয়া হয়েছে। কারণ এখন গ্রামে চারিদিকে বোরো আবাদ হওয়া সেখানে হাঁস পালনের সমস্যা হচ্ছে। আবার বোরো আবাদ কাটামাড়া শুরু হলে গ্রামে ফিরে যাবেন এমনটাই জানা গেছে মোখলেছুর রহমানের কাছ থেকে।
প্রায় ১২ বছর আগে ২৫০ টি খাকি প্রজাতির হাঁস নিয়ে পালন শুরু করেন। এরপর হাঁস পালনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে তার খামারে ক্যাম্বেল, জেলডিন, খাকি, রানা প্রজাতিরসহ ৮শ’টি হাঁস আছে। এর মধ্যে পুরুষ/নর হাঁস আছে ৮০ টি। প্রতিদিন খামার থেকে প্রায় ৩শ’ ডিম পান। পাইকারী দরে একশ’টি ডিম হাজার টাকায় বিক্রি করেন। প্রতিদিন তিন হাজার টাকা আয় এবং ১ হাজার ৬শ’ টাকার মতো হাঁসের খাবারে জন্য খরচ হয়।
হাঁসের জন্য ধান, গম, ফিড খাওয়ানো হয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য বগুড়া জেলার সান্তাহার লোকজন এসে নিয়ে যান। উন্নত মানের বাচ্চা নিয়ে এসে বড় করা হয়। বাচ্চা নিয়ে আসার ১৫দিনের মাথায় ভ্যাকসিন দিতে হয়। তিনমাস বয়সে ডিম দেওয়ার জন্য ভিটামিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। প্রতিটি হাঁস বছরে ২০০-২৫০ টি ডিম দেয়। এভাবে দুই বছর ডিম দেওয়ার পর সবগুলো হাঁস বিক্রি করে দেওয়া হয়। ঢাকা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বড় ব্যবসায়ীরা এসে নিয়ে যান। একশটি হাঁস প্রায় ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া খুচরাও ২৫০ টাকা পিচ বিক্রি করা হয়।
হাঁস খামার দেখা শুনার জন্য সাথে আবুল হোসেনকে মাসে তিন হাজার টাকা বেতনে কাজে নিয়েছেন। গত এক বছর থেকে কাজে সহযোগীতা করছে। দেখাদেখি এখন এলাকার ১২/১৫ জন যুবক হাঁস পালন করছেন। তারাও স্বাবলম্বী হওয়া চেষ্টা করছেন।
একই গ্রামের মুনতাজ আলী জানান, খামারে ৭৫০ টি হাঁস আছে। মোখলেছুর ভাইয়ের দেখে হাঁস পালন করছি। কোন ধরনের সমস্যায় পড়লে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিই। হাঁস পালনে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে পাইকারি বিক্রি করা হয়। লাভও ভাল হয়। এজন্য হাঁস পালনে আগ্রহটা বেশি। পাশাপাশি কৃষি কাজও করা হয়। এছাড়া মকুল হোসেন পাশের গ্রামের সাদ্দাম হোসেনসহ অনেকেই হাঁস পালন করছেন।
মোখলেছুর রহমান জানান, হাঁস পালনের বড় সমস্যা ডাক প্লেগ রোগ। এ রোগ হলে হাঁস বাচাঁনো সম্ভব হয় না। খামারে ৪ বার এ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। এ রোগ হওয়ায় লোকসান না হলেও তেমন লাভ হয়নি। ডাক প্লেগ রোগে হাঁস পালনে কিছুটা অর্থের সমস্যা হওয়ায় এবার গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৩৫ হাজার ঋণ নিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, হাঁস পালন করে আগের তুলনায় এখন অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। প্রায় সাড়ে চার বিঘার মতো জমি কিনেছেন। কোন ধরনের সমস্যায় পড়লে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে থাকি।
মান্দা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, আমাদের নিকট এরকম চাষি যারা আসেন তাদেরকে বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিয়ে থাকি তবে সরকারিভাবে কোন ওষুধ বা ভ্যাকসিন ফ্রি দেবার নিয়ম নেই সরকার নির্ধারিত মূল্যে টাকা দিয়ে কিনে নিতে হয়।