হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঘুঘু দেখেছ, ঘুঘুর ফাঁদ তো দেখনি। প্রবাদটি এমনিতেই তৈরি হয়নি। ঘুঘু যেমন চালাক পাখি তার জন্য তেমন কঠিন ফাঁদ। শিকার করতে কতই না ফন্দি আঁটতে হয় শিকারিকে। শিকারি বাঘই হোক কিংবা পাখি। যেসব প্রাণীর অন্য প্রাণী শিকার করে খাবারের ব্যবস্থা করতে হয় তাদের এসব ছল চাতুরির আশ্রয় নিতেই হয়।
পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী বলা হয় মানুষকে। তবে মানুষের চেয়েও ঢের বেশি বুদ্ধি রয়েছে প্রাণিকুলের অনেকেরই। যেমন ব্ল্যাক এগ্রেটস বা কালো সারসের কথাই ধরা যাক। আফ্রিকান প্রজাতির সারস এরা। এদের মাছ ধরার অভিনব কৌশল জানলে অবাক হবেন বৈকি!
এরা শিকারের জন্য যখন অপেক্ষা করে তখন নিজেদের ডানাকে ছাতার মতো মেলে ধরে। দেখে মনে হবে কচুরিপানা বা কোনো জলজ গাছের শুকনা স্তূপ। ডানার নিচে পানিতে ছায়া পড়ে। আর সেই ছায়ায় যখনই মাছ আসে তখনই ধরে ফেলে।
ডানা প্রসারিত করে নিজেকে একেবারে ঢেকে ফেলে ব্ল্যাক এগ্রেটস। এতে ঢাকা পড়ে এদের তীক্ষ্ণদৃষ্টি। কালো সারসদের শিকারের এই কৌশলকে বলা হয় ‘ক্যানোপি ফিডিং’। এটিকে প্রাণিজগতের সবচেয়ে গোপন কৌশলগুলোর অন্যতম একটি বলে ধরা হয়।
যদিও আফ্রিকান কালো সারসদের এই অদ্ভুত কৌশল ব্যবহারের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কৌশলটির মাধ্যমে পাখিটি নানা সুবিধা পেয়ে থাকে। সেই সঙ্গে এই অসাধারণ কৌশলই কালো সারসকে নিঃসন্দেহে প্রাণিজগতের এক অন্যতম গুপ্ত শিকারির পরিচিতি দিয়েছে।
এদের পা অন্যান্য সারসের মতোই বেশ লম্বা। পানিতে হাঁটার সময় কোনো শব্দই করে না। অগভীর পানিতে ধীরে ধীরে হেঁটে গিয়ে নিজের ডানা ছড়িয়ে ছাতার মতো করে ফেলে। যেন আলো প্রবেশ করতে না পারে। ফলে সেই অন্ধকারে ছোট মাছেরা বড় শিকারিদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে আসে।
এতে উল্টো নিজের মৃত্যুর দিকেই ধাবিত হয় মাছেরা। ডানার ছায়ার কারণে ব্ল্যাক এগ্রেটসরা ভালো করে মাছ লক্ষ্য করতে পারে। এরপর নিজেদের লম্বা চঞ্চুর সাহায্যে পানি থেকে শিকার ধরে।
ব্ল্যাক এগ্রেটসরা সাধারণত মাটির নিচের ছোট আকৃতির শিকারের দিকেই বেশি নজর দেয়। তাই এটা তাদের শিকারি কৌশলের একটি অংশ।
মজার ব্যাপার হলো, আফ্রিকান সারস পাখির পায়ের রং হলুদ। যা সহজেই শিকারকে তাদের লক্ষ্য থেকে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। অন্যান্য সারসের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটলেও আফ্রিকান কালো সারসদের বেলায় এটি একেবারেই উল্টো।
এদের ডানার ছায়া ও পায়ের হলুদ উজ্জ্বল রং মিলে মাছকে আরও প্রলুব্ধ করে মৃত্যুর দিকে টেনে আনতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করেন।