ঢাকা ১১:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যস্ত শহরবাসীকে আশ্চর্য্য করল কাঠ শালিকটি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৭:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২
  • ১৬৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানুষকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা থাকায় সর্বসাধারণের কাছে অপরিচিত পাখি কাঠ শালিক। এদের বিচরণ হালকা বন-বনানীতে।

ভূমিতে খুব একটা বিচরণ করে না এরা।

তবে হবিগঞ্জ শহরে কয়েকদিন ধরে ঘুরে বেড়ানো একটি কাঠ শালিক সবাইকে আশ্চর্য্য করেছে। জানালার ধারে, ছাদে কাপড় শুকানোর রশিতে অথবা মাঝেমধ্যেই পাখিটি এসে বসছে বসতবাড়ির আঙিনায়।

গত বুধবার জেলা শহরের সালেহা টাওয়ারে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর কোম্পানি রবি’র অফিসে ঢুকে পড়ে একটি কাঠ শালিক। প্রায় ১০ মিনিট ধরে অফিসের এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে পাখিটি। পরে কর্মকর্তারা সেটিকে ধরে জানালার বাইরে অবমুক্ত করেন।
পাখিটির পরিচয় না জানায় তারা একটি ছবি তুলে রেখেছেন। পরে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে পাখির পরিচয় জানতে চেয়েছেন বন্ধুদের কাছে।

রবিতে কর্মরত সূর্য কুমার বৈষ্ণব বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম দিন পাখিটি ধরে ছেড়ে দিয়েছি। এর একদিন পর এটি দ্বিতীয়বার আমাদের এখানে আসে। তবে জানালা বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। আমরা সবাই দূর থেকে দেখেছি। পাখিটিকে আমরা চিনতে পারিনি। মার্কেটে থাকা সবার কাছেই এটি অপরিচিত। এজন্য পাখিটিকে ধরে ছবি তুলে রেখে ছেড়ে দিয়েছি। ফেসবুকে পোস্ট করার পর এটির সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়েছেন অনেকে।

তিনি বলেন, পাখিটি লম্বায় ২২ সেন্টিমিটার প্রায়। মাথা, ঘাড় ধূসরাভ-রূপালি। থুতনি-গলা সাদা। ঠোঁটের গোড়া নীল, মাঝখানটা সবুজ এবং ডগাটা হলুদ। পিঠ রূপালি ধূসরের ওপর হালকা খয়েরি। ডানার প্রান্তটা কালো। গলা ফিকে লালচের ওপর সাদাটে ধূসরের টান। বুক, পেট পাটকিলে। পা হলদেটে। লেজের উপরিভাগ ধূসর, তলদেশ পাটকিলে।

পুরান মুন্সেফী এলাকার বাসিন্দা তানজিন রহমান বাংলানিউজকে জানান, তার ছোট্ট ভাগ্নে প্রতিদিন বিকেলে পাখি দেখার জন্য বায়না ধরে। এজন্য তিনি বাড়ির আশপাশে বের হন। মাঝে মধ্যেই কাঠ শালিকটিকে সীমানা প্রাচীরে বসতে দেখেন। তিনিও এটিকে প্রথমবার দেখেছেন। পাখিটিকে নিয়ে তার প্রতিবেশীদের মাঝেও আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী গৌরী রায় বলেন, কাঠ শালিকের সঙ্গে আমার আগে কখনও দেখা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে পাখিটি দেখার জন্য আগ্রহ বেড়েছে।

জেলা শহরের শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ সালিক আহমদ, মো. নূরুল হক কবিরসহ আরও কয়েকজন একটি কাঠ শালিককে একাধিকবার দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটি (ডাব্লিউসিএস) বাংলাদেশের বণ্যপ্রাণী অপরাধ দমন প্রোগ্রামের সমন্বয়কারী সামিউল মোহসেনিন জানান, কাঠ শালিকের ইংরেজি নাম চেস্টনাটটেইলড স্টার্লিং Chestnut-tailed Starling), বৈজ্ঞানিক নাম:স্টুরনাস মালাবারিকাস (Sturnus malabaricus)। স্টুরনিদি গোত্রের পাখি এটি।

গায়ের বর্ণ অতি উজ্জ্বল না হলেও অতি সুদর্শন পাখি এটি। চলাফেরা করে এরা দলবেঁধে আবার জোড়ায়-জোড়ায় কিংবা একাকিও বিচরণ করে। মানুষকে এড়িয়ে চললেও মাঝেমধ্যে বিচরণ করে কোলাহল সম্পূর্ণ এলাকায়। কাঠ শালিকের খাদ্য তালিকায় রয়েছে কীটপতঙ্গ, ছোট ফল, ফুলের মধু ইত্যাদি। প্রজনন সময় বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে। নরম লতাপাতা বাসা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিমে তা দেয় শুধু স্ত্রী পাখি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্যস্ত শহরবাসীকে আশ্চর্য্য করল কাঠ শালিকটি

আপডেট টাইম : ১০:০৭:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানুষকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা থাকায় সর্বসাধারণের কাছে অপরিচিত পাখি কাঠ শালিক। এদের বিচরণ হালকা বন-বনানীতে।

ভূমিতে খুব একটা বিচরণ করে না এরা।

তবে হবিগঞ্জ শহরে কয়েকদিন ধরে ঘুরে বেড়ানো একটি কাঠ শালিক সবাইকে আশ্চর্য্য করেছে। জানালার ধারে, ছাদে কাপড় শুকানোর রশিতে অথবা মাঝেমধ্যেই পাখিটি এসে বসছে বসতবাড়ির আঙিনায়।

গত বুধবার জেলা শহরের সালেহা টাওয়ারে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর কোম্পানি রবি’র অফিসে ঢুকে পড়ে একটি কাঠ শালিক। প্রায় ১০ মিনিট ধরে অফিসের এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে পাখিটি। পরে কর্মকর্তারা সেটিকে ধরে জানালার বাইরে অবমুক্ত করেন।
পাখিটির পরিচয় না জানায় তারা একটি ছবি তুলে রেখেছেন। পরে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে পাখির পরিচয় জানতে চেয়েছেন বন্ধুদের কাছে।

রবিতে কর্মরত সূর্য কুমার বৈষ্ণব বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম দিন পাখিটি ধরে ছেড়ে দিয়েছি। এর একদিন পর এটি দ্বিতীয়বার আমাদের এখানে আসে। তবে জানালা বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। আমরা সবাই দূর থেকে দেখেছি। পাখিটিকে আমরা চিনতে পারিনি। মার্কেটে থাকা সবার কাছেই এটি অপরিচিত। এজন্য পাখিটিকে ধরে ছবি তুলে রেখে ছেড়ে দিয়েছি। ফেসবুকে পোস্ট করার পর এটির সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়েছেন অনেকে।

তিনি বলেন, পাখিটি লম্বায় ২২ সেন্টিমিটার প্রায়। মাথা, ঘাড় ধূসরাভ-রূপালি। থুতনি-গলা সাদা। ঠোঁটের গোড়া নীল, মাঝখানটা সবুজ এবং ডগাটা হলুদ। পিঠ রূপালি ধূসরের ওপর হালকা খয়েরি। ডানার প্রান্তটা কালো। গলা ফিকে লালচের ওপর সাদাটে ধূসরের টান। বুক, পেট পাটকিলে। পা হলদেটে। লেজের উপরিভাগ ধূসর, তলদেশ পাটকিলে।

পুরান মুন্সেফী এলাকার বাসিন্দা তানজিন রহমান বাংলানিউজকে জানান, তার ছোট্ট ভাগ্নে প্রতিদিন বিকেলে পাখি দেখার জন্য বায়না ধরে। এজন্য তিনি বাড়ির আশপাশে বের হন। মাঝে মধ্যেই কাঠ শালিকটিকে সীমানা প্রাচীরে বসতে দেখেন। তিনিও এটিকে প্রথমবার দেখেছেন। পাখিটিকে নিয়ে তার প্রতিবেশীদের মাঝেও আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী গৌরী রায় বলেন, কাঠ শালিকের সঙ্গে আমার আগে কখনও দেখা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে পাখিটি দেখার জন্য আগ্রহ বেড়েছে।

জেলা শহরের শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ সালিক আহমদ, মো. নূরুল হক কবিরসহ আরও কয়েকজন একটি কাঠ শালিককে একাধিকবার দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটি (ডাব্লিউসিএস) বাংলাদেশের বণ্যপ্রাণী অপরাধ দমন প্রোগ্রামের সমন্বয়কারী সামিউল মোহসেনিন জানান, কাঠ শালিকের ইংরেজি নাম চেস্টনাটটেইলড স্টার্লিং Chestnut-tailed Starling), বৈজ্ঞানিক নাম:স্টুরনাস মালাবারিকাস (Sturnus malabaricus)। স্টুরনিদি গোত্রের পাখি এটি।

গায়ের বর্ণ অতি উজ্জ্বল না হলেও অতি সুদর্শন পাখি এটি। চলাফেরা করে এরা দলবেঁধে আবার জোড়ায়-জোড়ায় কিংবা একাকিও বিচরণ করে। মানুষকে এড়িয়ে চললেও মাঝেমধ্যে বিচরণ করে কোলাহল সম্পূর্ণ এলাকায়। কাঠ শালিকের খাদ্য তালিকায় রয়েছে কীটপতঙ্গ, ছোট ফল, ফুলের মধু ইত্যাদি। প্রজনন সময় বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে। নরম লতাপাতা বাসা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিমে তা দেয় শুধু স্ত্রী পাখি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।