ঢাকা ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মনোনয়ন বাণিজ্য সিক্রেট আওয়ামী লীগ নেতাদের অফিস নমিনেশন বিক্রির হাট

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৫:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৬
  • ৩৪৬ বার

সব নির্বাচনেই যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের বাইরে কিছু নমিনেশন বাণিজ্যের কথা শোনা যায়। কিন্তু চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের নমিনেশন বা মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্যের ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সারা দেশে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নমিনেশন বিক্রির ঘটনা এখন ওপেন সিক্রেট।

দলীয় মনোনয়ন পেতে ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা জেলা-উপজেলা নেতাদের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত অফিসকে তাদের নমিনেশন বিক্রির হাটে পরিণত করেছেন। তদবিরের জন্য ভিড় জমাচ্ছেন দলীয় এমপিদের সংসদ ভবন কিংবা ন্যাম ভবনের কার্যালয়ে। কেউ কেউ দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নেতাদের বাড়ি বাড়ি ধরনাও দিচ্ছেন। যে যেভাবে পারছেন মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে নৌকার মনোনয়নকে কেন্দ্র করে চলমান মনোনয়ন বাণিজ্যের পরিণামে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এরই মধ্যে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। মনোনয়ন বাণিজ্যের পরিণামে অতীতে কোনো নির্বাচনেই আওয়ামী লীগকে এত বিপুলসংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থীর মুখোমুখি হতে হয়নি। নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে এত ব্যাপকহারে খুনোখুনি ও মারামারির ঘটনা ঘটেনি। এসব ঘটনায় বিব্রত হাইকমান্ড নমিনেশন বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃণমূলে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নের সঙ্গে জড়িতদের টার্গেট ত্যাগী নেতারা নন, তাদের টার্গেট বিত্তশালীরা। তাই অতীতে দলের জন্য ত্যাগ ও দলীয় কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাকে পাশ কাটিয়ে শুধু অর্থের বিনিময়ে নৌকার প্রার্থী করা হচ্ছে।

দলের স্থানীয় ইউনিয়ন কমিটিকে চাপ দিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে উপজেলা ও জেলা কমিটিকে ম্যানেজ করে প্রার্থী চূড়ান্ত করছেন প্রভাবশালীরা। একক প্রার্থী দিতে না পারলে, কোনোরকম তালিকায় নিজের পছন্দের প্রার্থীর নাম পাঠিয়ে কেন্দ্রে এসে শুরু করেন তদবির। এদিকে এ সুযোগে বিদেশে ব্যবসায় ও চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে অনেকে দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। দেশে এসেই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের টিকিট। টাকার সামনে গৌণ হয়ে উঠছে তাদের রাজনৈতিক অতীত ও দলীয় আনুগত্য। জানা গেছে, স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে বিশেষ সুবিধা (বাণিজ্য) নিয়ে বিতর্কিত লোকদের মনোনয়ন দেওয়ার এন্তার অভিযোগ পড়েছে কেন্দ্রে। অভিযোগে বলা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের পাঠানো প্রার্থী তালিকার ভিত্তিতে কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এও অভিযোগ উঠেছে, কোথাও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা দলের ত্যাগী নেতাকে মনোনয়ন দিলেও পরে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রভাবশালী নেতারা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিয়ে ত্যাগী ওই কর্মীর মনোনয়ন বাতিল করাচ্ছেন। তৃণমূলের নেতাদের নমিনেশন বাণিজ্যের কারণে জনপ্রিয়তা থাকার পরও মনোনয়ন না পাওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন। অনেকে রাগে-ক্ষোভে দল ছাড়ছেন। যে কারণে প্রতি ধাপেই মোট সংখ্যার প্রায় অর্ধেক ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকছেন। মনোনয়ন বাণিজ্য ও বিদ্রোহীদের কারণে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ খুনোখুনির ঘটনা।

এদিকে ছয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের শেষের দিকে এসে এবার মনোনয়ন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসক দল। নমিনেশন বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের। যদিও বলা হচ্ছে, শেষ বেলায় এসে এসব তদন্ত করে আর কী হবে। অনেকে তো মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়ে ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান হয়ে গেছেন। তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন প্রক্রিয়া চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে হচ্ছে। প্রথমে এটা স্থানীয় ইউনিয়নের বর্ধিত সভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে পাস হয়, এরপর উপজেলা এবং সর্বশেষ জেলা কমিটির বর্ধিত সভায় মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়। ইদানীং মনোনয়ন না পেলে বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে বলা হয়— রাজাকারপুত্র মনোনয়ন পেয়েছে কিংবা অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন পেয়েছে। এসব কথাবর্তা বাস্তবে যতটা না সত্য তার চেয়ে বেশি অপপ্রচার। বিষয়টি তদন্ত করতে আমরা একটি কমিটি ঠিক করেছি। সে কমিটি এসব বিষয়ে খোঁজ নেবে। জানা গেছে, চতুর্থ ধাপ নমিনেশন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর গত মঙ্গলবার কক্সবাজারের একটি উপজেলার নেতারা কেন্দ্রে অভিযোগ নিয়ে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ যৌথ সভা ও ভোটের মাধ্যমে একক প্রার্থী বাছাই করলেও জেলা সভাপতি সে তালিকা জমা নেননি। তিনি তার ইচ্ছামতো প্রার্থী তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, জেলা সভাপতির চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি ওই তালিকায় স্বাক্ষর করেননি।

এদিকে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। এ ধাপের মনোনয়নের জন্য লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ১ নম্বর উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়ন পরিষদে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান শহিদ উল্লাহ বিএসসি। কিন্তু উপজেলা ও জেলা নেতারা তাকে বাদ দিয়ে একক প্রার্থী হিসেবে জাফর উল্লাহ দুলাল হাওলাদারের নাম কেন্দ্রে পাঠান। পরে কেন্দ্র থেকেও দুলাল হাওলাদারকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পেছনে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা এলাকাবাসীকে রীতিমতো অবাক ও চরম ক্ষুব্ধ করে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যমে বিষয়টি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নজরে আনা হলে তত্ক্ষণাৎই প্রার্থী পরিবর্তন করে শহিদ উল্লাহ বিএসসিকে চূড়ান্ত প্রার্থীর চিঠি দেয় কেন্দ্র। বিষয়টি পুরো জেলায় ব্যাপক আলোড়ন তোলে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড সূত্র জানান, তৃণমূল যদি কোনো ইউনিয়নে একক প্রার্থী পাঠায় দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া তিনিই দলের টিকিট পান। তবে ঠাকুরগাঁওয়ের একটি ইউনিয়নে একক প্রার্থী পাঠানোর পরও তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। স্থানীয় এমপি নিজের প্রভাব ধরে রাখতে ফ্রিডম পার্টির এক নেতার নাম পাঠিয়েছিলেন। এ খবর জানতে পেরে হাইকমান্ড আরেকজনকে মনোনয়ন দেয়। এদিকে বাণিজ্যের মাধ্যমে ত্যাগী নেতাদের দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তৃণমূলে দলীয় প্রার্থী বনাম বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনাও ঘটছে। ২২ মার্চ ৭১২টি ইউপির ভোটকে কেন্দ্র করে নিহত হন ২৪ জন। আহত দুই সহস্রাধিক। ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ধাপের সহিংসতায় শিশুসহ নিহত হন ৯ জন। আহত শতাধিক। ইউপি নির্বাচনের আগে ও পরে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৫ জন নিহত হয়েছেন, যার অর্ধেকই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বলে জানা গেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মনোনয়ন বাণিজ্য সিক্রেট আওয়ামী লীগ নেতাদের অফিস নমিনেশন বিক্রির হাট

আপডেট টাইম : ১১:৩৫:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৬

সব নির্বাচনেই যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের বাইরে কিছু নমিনেশন বাণিজ্যের কথা শোনা যায়। কিন্তু চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের নমিনেশন বা মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্যের ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সারা দেশে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নমিনেশন বিক্রির ঘটনা এখন ওপেন সিক্রেট।

দলীয় মনোনয়ন পেতে ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা জেলা-উপজেলা নেতাদের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত অফিসকে তাদের নমিনেশন বিক্রির হাটে পরিণত করেছেন। তদবিরের জন্য ভিড় জমাচ্ছেন দলীয় এমপিদের সংসদ ভবন কিংবা ন্যাম ভবনের কার্যালয়ে। কেউ কেউ দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নেতাদের বাড়ি বাড়ি ধরনাও দিচ্ছেন। যে যেভাবে পারছেন মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে নৌকার মনোনয়নকে কেন্দ্র করে চলমান মনোনয়ন বাণিজ্যের পরিণামে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এরই মধ্যে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। মনোনয়ন বাণিজ্যের পরিণামে অতীতে কোনো নির্বাচনেই আওয়ামী লীগকে এত বিপুলসংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থীর মুখোমুখি হতে হয়নি। নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে এত ব্যাপকহারে খুনোখুনি ও মারামারির ঘটনা ঘটেনি। এসব ঘটনায় বিব্রত হাইকমান্ড নমিনেশন বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃণমূলে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নের সঙ্গে জড়িতদের টার্গেট ত্যাগী নেতারা নন, তাদের টার্গেট বিত্তশালীরা। তাই অতীতে দলের জন্য ত্যাগ ও দলীয় কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাকে পাশ কাটিয়ে শুধু অর্থের বিনিময়ে নৌকার প্রার্থী করা হচ্ছে।

দলের স্থানীয় ইউনিয়ন কমিটিকে চাপ দিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে উপজেলা ও জেলা কমিটিকে ম্যানেজ করে প্রার্থী চূড়ান্ত করছেন প্রভাবশালীরা। একক প্রার্থী দিতে না পারলে, কোনোরকম তালিকায় নিজের পছন্দের প্রার্থীর নাম পাঠিয়ে কেন্দ্রে এসে শুরু করেন তদবির। এদিকে এ সুযোগে বিদেশে ব্যবসায় ও চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে অনেকে দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। দেশে এসেই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের টিকিট। টাকার সামনে গৌণ হয়ে উঠছে তাদের রাজনৈতিক অতীত ও দলীয় আনুগত্য। জানা গেছে, স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে বিশেষ সুবিধা (বাণিজ্য) নিয়ে বিতর্কিত লোকদের মনোনয়ন দেওয়ার এন্তার অভিযোগ পড়েছে কেন্দ্রে। অভিযোগে বলা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের পাঠানো প্রার্থী তালিকার ভিত্তিতে কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এও অভিযোগ উঠেছে, কোথাও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা দলের ত্যাগী নেতাকে মনোনয়ন দিলেও পরে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রভাবশালী নেতারা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিয়ে ত্যাগী ওই কর্মীর মনোনয়ন বাতিল করাচ্ছেন। তৃণমূলের নেতাদের নমিনেশন বাণিজ্যের কারণে জনপ্রিয়তা থাকার পরও মনোনয়ন না পাওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন। অনেকে রাগে-ক্ষোভে দল ছাড়ছেন। যে কারণে প্রতি ধাপেই মোট সংখ্যার প্রায় অর্ধেক ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকছেন। মনোনয়ন বাণিজ্য ও বিদ্রোহীদের কারণে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ খুনোখুনির ঘটনা।

এদিকে ছয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের শেষের দিকে এসে এবার মনোনয়ন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসক দল। নমিনেশন বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের। যদিও বলা হচ্ছে, শেষ বেলায় এসে এসব তদন্ত করে আর কী হবে। অনেকে তো মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়ে ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান হয়ে গেছেন। তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন প্রক্রিয়া চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে হচ্ছে। প্রথমে এটা স্থানীয় ইউনিয়নের বর্ধিত সভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে পাস হয়, এরপর উপজেলা এবং সর্বশেষ জেলা কমিটির বর্ধিত সভায় মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়। ইদানীং মনোনয়ন না পেলে বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে বলা হয়— রাজাকারপুত্র মনোনয়ন পেয়েছে কিংবা অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন পেয়েছে। এসব কথাবর্তা বাস্তবে যতটা না সত্য তার চেয়ে বেশি অপপ্রচার। বিষয়টি তদন্ত করতে আমরা একটি কমিটি ঠিক করেছি। সে কমিটি এসব বিষয়ে খোঁজ নেবে। জানা গেছে, চতুর্থ ধাপ নমিনেশন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর গত মঙ্গলবার কক্সবাজারের একটি উপজেলার নেতারা কেন্দ্রে অভিযোগ নিয়ে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ যৌথ সভা ও ভোটের মাধ্যমে একক প্রার্থী বাছাই করলেও জেলা সভাপতি সে তালিকা জমা নেননি। তিনি তার ইচ্ছামতো প্রার্থী তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, জেলা সভাপতির চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি ওই তালিকায় স্বাক্ষর করেননি।

এদিকে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। এ ধাপের মনোনয়নের জন্য লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ১ নম্বর উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়ন পরিষদে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান শহিদ উল্লাহ বিএসসি। কিন্তু উপজেলা ও জেলা নেতারা তাকে বাদ দিয়ে একক প্রার্থী হিসেবে জাফর উল্লাহ দুলাল হাওলাদারের নাম কেন্দ্রে পাঠান। পরে কেন্দ্র থেকেও দুলাল হাওলাদারকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পেছনে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা এলাকাবাসীকে রীতিমতো অবাক ও চরম ক্ষুব্ধ করে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যমে বিষয়টি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নজরে আনা হলে তত্ক্ষণাৎই প্রার্থী পরিবর্তন করে শহিদ উল্লাহ বিএসসিকে চূড়ান্ত প্রার্থীর চিঠি দেয় কেন্দ্র। বিষয়টি পুরো জেলায় ব্যাপক আলোড়ন তোলে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড সূত্র জানান, তৃণমূল যদি কোনো ইউনিয়নে একক প্রার্থী পাঠায় দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া তিনিই দলের টিকিট পান। তবে ঠাকুরগাঁওয়ের একটি ইউনিয়নে একক প্রার্থী পাঠানোর পরও তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। স্থানীয় এমপি নিজের প্রভাব ধরে রাখতে ফ্রিডম পার্টির এক নেতার নাম পাঠিয়েছিলেন। এ খবর জানতে পেরে হাইকমান্ড আরেকজনকে মনোনয়ন দেয়। এদিকে বাণিজ্যের মাধ্যমে ত্যাগী নেতাদের দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তৃণমূলে দলীয় প্রার্থী বনাম বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনাও ঘটছে। ২২ মার্চ ৭১২টি ইউপির ভোটকে কেন্দ্র করে নিহত হন ২৪ জন। আহত দুই সহস্রাধিক। ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ধাপের সহিংসতায় শিশুসহ নিহত হন ৯ জন। আহত শতাধিক। ইউপি নির্বাচনের আগে ও পরে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৫ জন নিহত হয়েছেন, যার অর্ধেকই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বলে জানা গেছে।