ঢাকা ০২:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দলীয় নিয়োগে বাড়ছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৯:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৬
  • ৪৬৯ বার

গ্রাহকরা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করাই ছিল এক সময় ব্যাংকের অনিয়ম। বর্তমানে ব্যাংকের কর্মকর্তারাই জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন অনিয়মে। তারাই সরিয়ে ফেলছেন আমানতের অর্থ। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, ভুয়া হিসাব খুলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মতো নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন কর্মকর্তারা। ঋণ অনিয়মে জড়াচ্ছেন পর্ষদ সদস্যরাও। এসব অপরাধ করে জমি, ফ্ল্যাট, গাড়ি-বাড়ি করছেন অনেকে। কেউ আবার বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।

ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে কর্মরত দেড় লাখেরও বেশি কর্মকর্তা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক কর্মকর্তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়লেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। একারণে অন্যদের মধ্যেও তা ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে ব্যাংকিং খাতে অপরাধ। তাছাড়া ব্যাংকের বড় অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদ ও এমডিরা জড়িত থাকেন। এর সঙ্গে থাকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও। একারণে এসব অনিয়মের সাজা হয় না। সাজা না হওয়ার কারণে তারা রাতারাতি বড় লোক হতে চায়। ফলে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নাজুক হয়ে থাকে।

ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি আমলে না নেয়ার মধ্য দিয়ে একে উসকে দেয়া হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সরকার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এখাতে শৃঙ্খলা আসছে না। তারা আরো বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে পরিচালক নিয়োগের কারণেই বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আর তাদের সঙ্গে অসৎ ও দুর্নীতিবাজ ব্যাংকাররা জড়িয়ে পড়ায় বাড়ছে আর্থিক কেলেঙ্কারির মত ঘটনা ঘটছে।

বিভিন্ন তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে অর্ধডজনও বেশি বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। যদিও এসব ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হয়নি। এবার ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আরো ৮০০ কোটি টাকা লোপাটের সূচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিরা বলেন, বিশেষ করে রাজনৈতিক কারণে ব্যাংকে এ ধরনের দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে। রাজনীতির ভিত্তিতে ব্যাংকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে অযোগ্য লোকদের্। এতে করে ব্যাংক আর্থিক দিক দিয়ে অনেক ক্ষতির সমুক্ষীণ হচ্ছে।

দেশে ব্যাংকিং ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হল-মার্ক কেলেঙ্কারি। সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়া হল-মার্কসহ ছয় প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালে এ অনিয়ম উদ্ঘাটন হওয়ার পর এমডিকে অপসারণ ও পর্ষদ ভেঙে দেয়া হলেও দৃশ্যমান কোনো শাস্তি হয়নি জড়িত কর্মকর্তাদের।

২০১২ ও ২০১৩ সালে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম হয় বেসিক ব্যাংকে। এঘটনায় গত বছর ব্যাংকটির এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পুরনো পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদও গঠন করা হয়। এ ঘটনায়ও জড়িত কর্মকর্তাদের বিচার হয়নি।

ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে প্রথম বড় ধরনের দুর্নীতি হয় ২০০৪-০৫ সালে। ৪৮৮ কোটি টাকার অনিয়ম সংঘটিত হয় ব্যাংকটিতে। এ নিয়ে সে সময় অনেক হইচই হলেও পরে তা আড়ালে চলে যায়। উল্টো ব্যাংকটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সরকারের অন্য একটি ব্যাংকে একই পদে নিয়োগ দেয়া হয়।

এদিকে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদের কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না। একারণে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে তারা পার পেয়েছেন। কিন্তু ২০১৩ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়েছে। সেখানে পরিচালনা পর্ষদকে এক দিকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের দায়বদ্ধতার আওতায় আনা হয়েছে। এখন পরিচালনা পর্ষদ অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

ব্যাংকের দুর্নীতি প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে সেন্টার ফর পলিসির (সিপিডি) ফ্যালো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দুর্নীতি সেটা শুধু ব্যাংক কর্মকর্তারাই করেন না। দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে অন্তরালে দুর্নীতি লুকায়িত আছে। এ ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছুই নেই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দলীয় নিয়োগে বাড়ছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি

আপডেট টাইম : ১১:০৯:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

গ্রাহকরা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করাই ছিল এক সময় ব্যাংকের অনিয়ম। বর্তমানে ব্যাংকের কর্মকর্তারাই জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন অনিয়মে। তারাই সরিয়ে ফেলছেন আমানতের অর্থ। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, ভুয়া হিসাব খুলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মতো নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন কর্মকর্তারা। ঋণ অনিয়মে জড়াচ্ছেন পর্ষদ সদস্যরাও। এসব অপরাধ করে জমি, ফ্ল্যাট, গাড়ি-বাড়ি করছেন অনেকে। কেউ আবার বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।

ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে কর্মরত দেড় লাখেরও বেশি কর্মকর্তা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক কর্মকর্তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়লেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। একারণে অন্যদের মধ্যেও তা ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে ব্যাংকিং খাতে অপরাধ। তাছাড়া ব্যাংকের বড় অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদ ও এমডিরা জড়িত থাকেন। এর সঙ্গে থাকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও। একারণে এসব অনিয়মের সাজা হয় না। সাজা না হওয়ার কারণে তারা রাতারাতি বড় লোক হতে চায়। ফলে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নাজুক হয়ে থাকে।

ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি আমলে না নেয়ার মধ্য দিয়ে একে উসকে দেয়া হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সরকার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এখাতে শৃঙ্খলা আসছে না। তারা আরো বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে পরিচালক নিয়োগের কারণেই বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আর তাদের সঙ্গে অসৎ ও দুর্নীতিবাজ ব্যাংকাররা জড়িয়ে পড়ায় বাড়ছে আর্থিক কেলেঙ্কারির মত ঘটনা ঘটছে।

বিভিন্ন তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে অর্ধডজনও বেশি বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। যদিও এসব ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হয়নি। এবার ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আরো ৮০০ কোটি টাকা লোপাটের সূচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিরা বলেন, বিশেষ করে রাজনৈতিক কারণে ব্যাংকে এ ধরনের দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে। রাজনীতির ভিত্তিতে ব্যাংকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে অযোগ্য লোকদের্। এতে করে ব্যাংক আর্থিক দিক দিয়ে অনেক ক্ষতির সমুক্ষীণ হচ্ছে।

দেশে ব্যাংকিং ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হল-মার্ক কেলেঙ্কারি। সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়া হল-মার্কসহ ছয় প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালে এ অনিয়ম উদ্ঘাটন হওয়ার পর এমডিকে অপসারণ ও পর্ষদ ভেঙে দেয়া হলেও দৃশ্যমান কোনো শাস্তি হয়নি জড়িত কর্মকর্তাদের।

২০১২ ও ২০১৩ সালে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম হয় বেসিক ব্যাংকে। এঘটনায় গত বছর ব্যাংকটির এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পুরনো পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদও গঠন করা হয়। এ ঘটনায়ও জড়িত কর্মকর্তাদের বিচার হয়নি।

ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে প্রথম বড় ধরনের দুর্নীতি হয় ২০০৪-০৫ সালে। ৪৮৮ কোটি টাকার অনিয়ম সংঘটিত হয় ব্যাংকটিতে। এ নিয়ে সে সময় অনেক হইচই হলেও পরে তা আড়ালে চলে যায়। উল্টো ব্যাংকটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সরকারের অন্য একটি ব্যাংকে একই পদে নিয়োগ দেয়া হয়।

এদিকে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদের কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না। একারণে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে তারা পার পেয়েছেন। কিন্তু ২০১৩ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়েছে। সেখানে পরিচালনা পর্ষদকে এক দিকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের দায়বদ্ধতার আওতায় আনা হয়েছে। এখন পরিচালনা পর্ষদ অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

ব্যাংকের দুর্নীতি প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে সেন্টার ফর পলিসির (সিপিডি) ফ্যালো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দুর্নীতি সেটা শুধু ব্যাংক কর্মকর্তারাই করেন না। দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে অন্তরালে দুর্নীতি লুকায়িত আছে। এ ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছুই নেই।