হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীত মানেই পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম। নানা স্বাদের, নানা পদের পিঠা উৎসব যেন। এই শীতে তৈরি করতে পারেন সেরা স্বাদের শীতের ১৬ টি পিঠা। যা খেয়ে আপনি এবং আপনার পরিবারের সবাই মুগ্ধ হবে।
পাকন পিঠা
উপকরণ:
ময়দা- ২কাপ, দুধ- ২কাপ, লবণ- ১চা চামচ, ডিমের কুসুম- ১টি, বিস্কুটের গুঁড়া- ২ টেবিল চামচ, ঘি- ২টেবিলচামচ।
সিরার জন্য:
চিনি- ২ কাপ, পানি- ৩ কাপ, সবুজ এলাচ- ৩টি।
প্রণালী:
একটি পাত্রে দুধ, ঘি ও লবণ দিয়ে বলক এলে ময়দা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ঢেকে একদম অল্প আঁচে ৫ মিনিট রাখুন। সসপ্যানে খামির নিয়ে একটু ঠান্ডা করে হাতে ঘি মাখিয়ে ভালো করে মথুন। খামির অন্তত ১০ মিনিট মথতে হবে। ডিম ও বিস্কুটের গুড়ো দিয়ে আরও কিছু সময় মথতে হবে।
এবার গোল বা ডিমের আকৃতি করে পিঠার ছাঁচ বা চামচ দিয়ে ডিজাইন করে ডুবো তেলে অল্প তাপে বাদামি করে ভাজুন। ঠান্ডা হতে দিন। একটি পাত্রে পানি, চিনি ও এলাচ দিয়ে সিরা ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। একটি ছড়ানো পাত্রে সিরা হাল্কা গরম থাকা অবস্থায় পিঠা সিরায় দিয়ে ৪-৫ ঘণ্টা রেখে দিন। পিঠা যেন একটার সাথে অারেকটা লেগে না যায় কারণ সিরায় ভিজে এটা ফুলে বড় হবে।
মুগ ডালের নকশি পিঠা
উপকরণ:
ব্লেন্ড করা মুগ ডাল আধা কাপ, আতপ চালের গুঁড়া ২ কাপ, দুধ ১ কাপ, পানি আধা কাপ, এলাচ গুঁড়া সামান্য, ঘি ১ টেবিল-চামচ, তেল ২ কাপ।
সিরার জন্য—১ কাপ চিনি, ১ কাপ পানি, দারচিনি ২-৩ টুকরা, এলাচ গুঁড়া অল্প, ময়লা কাটার জন্য ২ টেবিল-চামচ পাতলা দুধ, গোলাপ পানি ১ টেবিল-চামচ।
প্রণালি:
ডালে দুধ ও পানি দিয়ে ভালোভাবে ঘুটে নিতে হবে। এবার এলাচ গুঁড়া দিয়ে ঘুটতে হবে। ফুটে এলে চালের গুঁড়া দিয়ে দুই-তিন মিনিট ঢেকে রেখে চুলার আঁচ কমিয়ে ভালোভাবে নাড়তে হবে। ঠান্ডা হলে হাতে ঘি নিয়ে খামির নরম করে ছেনে নিতে হবে। প্রয়োজনে পানি দিয়েও ছানা যাবে। তারপর যেকোনো ছাঁচে বা হাত দিয়ে নকশি করে পিঠা বানাতে হবে। চিনি ও পানি চুলায় দিয়ে ফুটে উঠলে একটু একটু দুধ দিয়ে চিনির ময়লা কেটে সিরা পরিষ্কার করতে হবে। এলাচ ও দারচিনি দিয়ে ঘন করে রাখতে হবে। এখন পিঠা ভেজে গরম গরম সিরায় দিয়ে ওপরে গোলাপজল ছিটিয়ে পরিবেশন করতে হবে মুগডালের নকশি পিঠা।
লাল পুয়াপিঠা
উপকরণ:
আতপ চালের গুঁড়া ৩ কাপ, মিহি করে বাটা নারকেল আধা কাপ, ময়দা ১ টেবিল-চামচ, বেকিং পাউডার আধা চা-চামচ, খেজুরের গুঁড় মিষ্টি অনুযায়ী, পানি পরিমাণমতো, ডিম ২টি, এক চিমটি লবণ।
তেল ছাড়া সবকিছু মিশিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এবার তেল গরম হলে গোল চামচে গোলা নিয়ে একটা একটা করে ভেজে তুলতে হবে। এই পিঠা গুড়ের বদলে চিনি দিয়েও করা যায়। চিনি দিয়ে পিঠা বানালে পিঠা দেখতে সাদা হবে।
নারকেলের তিল পুলি
উপকরণ:
পুরের জন্য—কুরানো নারকেল ২ কাপ, ভাজা তিলের গুঁড়া আধা কাপ, খেজুরের গুড় ১ কাপ, আতপ চালের গুঁড়া ২ টেবিল-চামচ, এক চিমটি এলাচ গুঁড়া, দারচিনি ২-৩টা। খামিরের জন্য—আতপ চালের গুঁড়া ২ কাপ, পানি দেড় কাপ, লবণ স্বাদমতো, ভাজার জন্য তেল দুই কাপ।
প্রণালি:
কুরানো নারকেলে গুড় দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রান্না করতে হবে। একটু শক্ত হয়ে এলে এলাচ, তিল ও চালের গুঁড়া ছড়িয়ে আরও একটু রান্না করতে হবে। তেল উঠে পুর যখন পাকানোর মতো শক্ত হবে, তখন নামিয়ে ঠান্ডা করে লম্বাভাবে সব পুর বানিয়ে রাখতে হবে। এবার চালের গুঁড়া সেদ্ধ করে ভালোভাবে চুলার আঁচ কমিয়ে নাড়তে হবে, যাতে খামিরে কোনো চাকা না থাকে। একটু ঠান্ডা হলে পানি ছিটিয়ে ভালো করে ছেনে রুটি বানাতে হবে। রুটির এক কিনারে পুর রেখে বাঁকানো চাঁদের মতো উল্টে পিঠে আটকে দিতে হবে। এবার টিনের পাত অথবা পুলিপিঠা কাটার চাকতি দিয়ে কেটে নিতে হবে। কিনারে মুড়ি ভেঙে ও নকশা করা যায়। গরম তেলে মচমচে করে ভাজতে হবে। এই পিঠা এয়ারটাইট পাত্রে দুই-তিন দিন রেখে খাওয়া যায়।
খেজুর রসে ভাপাপিঠা
উপকরণ: ঘন খেজুরের রস আধা কাপ,
পাতলা খেজুরের রস ২ কাপ,
মিহি কুরানো নারকেল ১ কাপ,
সেদ্ধ চালের গুঁড়া ২ কাপ,
আতপ চালের গুঁড়া আধা কাপ,
পানি ১ কেজি,
পাতলা পরিষ্কার কাপড় ২ টুকরা,
ভাপাপিঠার হাঁড়ি ও বাটি ১টি করে,
লবণ এক চিমটি।
প্রণালি:
সেদ্ধ ও আতপ চালের গুঁড়া, লবণ ও ঘন রস আস্তে আস্তে দিয়ে মাখাতে হবে, যাতে পুরো মিশ্রণ ঝরঝরে থাকে। খেয়াল রাখতে হবে, যাতে চাকা না হয়ে যায়। তারপর একটা মোটা চালনিতে মিশ্রণটুকু চেলে নিতে হবে। এই মিশ্রণে হালকা হাতে নারকেল মেশাতে হবে। হাঁড়িতে পানি ফুটে উঠলে বাটিতে হালকা হাতে চেপে পিঠা বসাতে হবে।
এবার বাটি কাপড়ে মুড়িয়ে ভাপে বসিয়ে চটজলদি কাপড় একটু ফাঁক করে বাটি উঠিয়ে দিয়ে আর একটি পিঠা তৈরি করতে হবে। বাটি ওঠাতে দেরি করলে পিঠা বাটিতে আটকে যাবে।সব পিঠা বানানো হলে ঠান্ডা করে ওপরে ঠান্ডা পাতলা রসে ভিজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার শীতের রসে ভেজানো লাল ভাপাপিঠা।
ক্ষীরের পাটি সাপটা
ক্ষীরঃ গোলাঃ
দুধ ২লিটার চালের গুড়ি ৬কাপ
চিনি ১/২ কাপ ময়দা ১/৪ কাপ
চালের গুঁড়া ১টে.চা গুড় বা চিনি ৭০০ গ্রাম
১। দুধ ফুটাও। মাঝে মাঝে নাড়তে হবে। দুধ শুকিয়ে অর্ধেক হলে ১/৪ কাপ দুধ তুলে রাখ। ১টে.চামচ করে চিনি দুধে দিয়ে জ্বাল দিতে থাক। আরও একটু ঘন হলে তুলে রাখা দুধে চালের গুঁড়ি গুলে দাও এবং ঘন ঘন নাড়। তিন চারবার ফুটে উঠলে নামিয়ে নাও। ঢাকনা দেওয়া বাটিতে রাখ।
২। গুঁড় ভেঙ্গে ১ কাপ পানিতে গুলে নাও। গুঁড়ি, ময়দা ও গুড় দিয়ে গোলা কর। গোলা এমন আন্দাজে করবে যেন খুব ঘন না হয় আবার পাতলাও না হয়।
৩। লেহার কড়াই বা ফ্রাইপ্যান গরম করে সামান্য তেল মাখাও। আধা কাপ গোলা কড়াইয়ে দিয়ে কড়াই ঘুরিয়ে গোলা ছড়িয়ে নাও। পিঠার উপরের দিক শুকিয়ে গেলে এবং রুটির কিনার কড়াই থেকে আগলা হয়ে আসলে ১টে.চামচ ক্ষীর একপাশে রাখ। ক্ষীর ভিতরে রেখে পিঠা মুড়াও। চামচ দিয়ে পিঠা চ্যাপ্টা করে দাও। ঘন দুধের পরিবর্তে ১কৌটা কনডেন্সড মিল্ক নেয়া যায়।
দুধ চিতই
চালের গুঁড়ি ২কাপ গুড় ১১/৪ কাপ
লবণ ১/২ চা চা দুধ, ঘন ২কাপ
১। দেড়কাপ পানিতে গুড় জ্বাল দিয়ে ছেঁকে রাখ।
২। চালের গুঁড়িতে লবণ ও এককাপ পানি দিয়ে মসৃণ করে মিশাও। পাতলা হলে আরও গুঁড়ি মিশাও। তবে পাতলা গোলার পিঠা ভিজে নরম হয়। গোলা বেশি ঘন হলে পিঠা নরম হয় না।
৩। চিতুই পিঠার খোলায় সামান্য তেল মাখাও। খোলা গরম করে দুটে. চামচ গেলা দিয়ে ঢেকে দাও। ঢাকনার চারপাশে পানি ছিটিয়ে দাও। ৩-৪ মিনিট পর পিঠা তুলে গুড়ের সিরায় ভিজাও (পিঠায় ফুটি ফুটি ছিদ্র হলে এবং পিঠার মাঝখানে ফুললে সে পিঠা দুধে ভিজে নরম হয়)।
৪। সব পিঠা ভিজান হলে চুলায় দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বাল দাও। ঠান্ডা হলে দুধ দিয়ে একরাত ভিজিয়ে রাখ। চিতুই পিঠা দুধে না ভিজিয়ে ভাজি, ভুনা মাংস বা কলিজা কারি দিয়েও পরিবেশন করা যায়।
ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন খাজার রেসিপি
খাজা এবং গজা, বাঙালি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্নের অন্যতম দুটো খাবার। আমরা যারা গ্রামে বড় হয়েছি, তারা দুই টাকা জমিয়ে দোকানে দৌঁড়াতাম খাজা বা গজা কেনার জন্য। এছাড়া যেকোনো মেলা বা বৈশাখী মেলায় ঘুরতে গেলে খাজা খাওয়া তো খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। তবে সময়ের সাথে সাথে প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছে এসব ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার।শহরাঞ্চলে খুব খুঁজে হয়তো পাওয়া যায়। গ্রামাঞ্চলে আজকাল এসব খাবার তেমন দেখা যায়।
সেজন্যই এসব মজাদার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো নিজে তৈরি করা শিখে নেয়া প্রয়োজন। বাড়িতে এসব খাবার তৈরি করে নিজের শৈশবের সাথে বর্তমান প্রজন্মকেও পরিচয় করিয়ে দেয়া যাবে। আজ থাকছে খাজা এবং গজা তৈরির রেসিপি। আশাকরি রেসিপি দুটো জেনে নিয়েই চটপট তৈরি করে পরিবারের সবাইকে চমকে দিতে পারবেন।
ঘাবড়াবেন না, খাজা তৈরি করাও বেশ সোজা। ঘরে তৈরি করা খাজা অনায়াসে ফ্রিজে রেখে সপ্তাহখানেক খেতেও পারবেন।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
খাজা তৈরির কাজগুলো দুটো ধাপে সম্পন্ন করতে হবে। খাজা তৈরি করে ভাজা এবং সিরা তৈরি করা।
খাজার জন্য
৪ কাপ ময়দা
২ টেবিল চামচ ময়দা
১ কাপ তেল/ঘি
১/২ কাপ ঘি
১/৪ টেবিল চামচ বেকিং পাউডার
১/২ টেবিল চামচ লবণ
১/২ কাপ পানি
সিরা তৈরির জন্য
১ কাপ চিনি
১ কাপ পানি
১/২ টেবিল চামচ গোলাপজল
প্রস্তুত প্রণালী
১. প্রথমে ১টি বড় বাটিতে ময়দা, বেকিং পাউডার, লবণ নিয়ে নিন। ময়দাতে ৪ টেবিল চামচ ঘি দিয়ে দু হাতে ভালো করে মেখে নিন মিশিয়ে নিন। এরপর ১/২ কাপ পানি দিয়ে ময়দা ময়ান করে ডো তৈরি করুন। বাটিটি ঢেকে ২০ মিনিট রেখে দিন।
২. ডো তৈরি করার পরেই সিরা তৈরি করে রেখে দিতে হবে। এতে সিরা ঠাণ্ডা হওয়ার সময় পাবে। সিরা তৈরির জন্য ১টি পাত্রে পানিতে চিনি দিয়ে মধ্যম আঁচে জ্বাল করে ঘন করে নিন। আঠালো হয়ে এলে গোলাপজল দিয়ে আরো মিনিট খানেক চুলায় রেখে নামিয়ে নিন। সিরাটি বড় ১টি পাত্রে ঢেলে ঠাণ্ডা হতে রেখে দিন।
৩. সিরা তৈরি হতে হতে বানিয়ে ময়দারn ডোটুকু খাজা বানানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। ডো দিয়ে পাতলা করে রুটি তৈরি করে নিন। খেয়াল রাখবেন রুটি যেন মোটা না হয়, পাতলা রুটি ছাড়া খাজার আকার ভালো হবে না।
৪. এবার ১টি রুটি নিয়ে তার উপর প্রথমে ১ টেবিল চামচ ঘি ও তারপর চালের গুঁড়োর মিশ্রন মেখে নিন। প্রথম রুটিটির উপর আরেকটি রুটি দিন। এই রুটির উপর আবার ঘি ও চালের গুঁড়োর মিশ্রন মেখে নিন। একই প্রক্রিয়া ৫ম রুটি পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি করুন। এভাবে ৫টি রুটি একসাথে করে নিন। ৫টি রুটি একসাথে করা হয়ে গেলে রুটিগুলো দিয়ে ১টি রোল তৈরি করে নিন।
৫. ১টি ধারালো ছুরি দিয়ে রোল করা রুটি ১ ইঞ্চি কেটে নিন। প্রতিটা খাজার পিস নিয়ে রুটিবেলার পিড়িতে চেপে ধরে সামান্য বেলে কিছুটা পাতলা করে নিন। খাজা তৈরির কাজ শেষ। এবার শুধু ভেজে সিরায় দেয়া বাকি।
৬. ১টি ফ্রাইপ্যান চুলায় বসিয়ে গরম হলে এতে তেল দিয়ে গরম করে নিন। এবার ডুবোতেলে খাজাগুলো ভেজে তুলে নিন। এসময় চুলায় মধ্যম মানের আঁচ রাখবেন। নাহলে খাজা পুড়ে যেতে পারে।
৭. ভাজা হতেই গরম খাজা সিরাতে ঢুবিয়ে ১-২ মিনিট রাখুন। সিরাটি যেন একবারে ঠাণ্ডা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। হালকা গরম সিরাতেই খাজা ভালো হয়। এবার গরম গরম পরিবেশন করুন রসে ভরা টসটসে খাজা।
চিংড়ি মাছের নোনতা পাটিসাপটা
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১ কাপ ময়দা
১/২ কাপ চাউলের গুঁড়া
১ চা চামচ লবণ
১ টি ডিম
৬০০ মিলি দুধ
২৫ গ্রাম মাখন
৪০ গ্রাম পনির
৫০০ গ্রাম চিংড়ি মাছ (টুকরো করা)
১ টি পেঁয়াজ কুচি
১ টেবিল চামচ ধনেপাতা কুচি
তেল ভাজার জন্য।
প্রস্তুত প্রণালী
পুর তৈরি
প্রথমে একটি প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচিগুলো ভেজে নিন। পেঁয়াজ সেদ্ধ হয়ে গেলে এতে ২৫ গ্রাম মাখন এবং ২৫ গ্রাম ময়দা মিশিয়ে মৃদু আঁচে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। এবার এতে ৩০০ মিলি দুধ দিয়ে ঘন না হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন। এর পর আঁচ বাড়িয়ে দিয়ে তার মধ্যে পনিরের টুকরো, লবণ, ধনেপাতা কুচি এবং চিংড়ি মাছগুলো দিয়ে দিন। ১০ মিনিট নেড়েচেড়ে রান্না করুন। এটিই পাটিসাপটা পিঠা তৈরির পুর।
গোলা তৈরি
একটি পাত্রে ময়দা, চাউলের গুঁড়া ও লবণ নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে বাকি ৩০০ মিলি দুধ ও ডিম মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। খেয়াল রাখবেন, মিশ্রণটি যেন খুব বেশি পাতলা বা খুব বেশি ঘন না হয়।
পিঠা তৈরি
একটি ননস্টিক ফ্রাইপ্যান চুলায় বসিয়ে গরম হতে দিন। গরম হয়ে গেলে ফ্রাইপ্যানে ১ টেবিল চামচ তেল মাখিয়ে নিন। এবার আধাকাপ সমপরিমাণ গোলা প্যানে দিয়ে গোল করে ঘুরিয়ে ছড়িয়ে দিন। পিঠার ওপরের দিক শুকনা হয়ে কড়াই থেকে আলাদা হয়ে না আসা পর্যন্ত তাপ দিতে থাকুন। এবার আগে তৈরি করে রাখা চিংড়ি মাছের পুর থেকে ১ টেবিল চামচ পুর নিয়ে পিঠার একপাশে লম্বা করে দিয়ে দিন। পুর ভেতরে রেখে পিঠা আস্তে আস্তে করে মুড়িয়ে ফেলুন। চামচ দিয়ে হালকা চাপ দিয়ে পিঠা চ্যাপ্টা করে দিন।
এভাবে সবগুলো পিঠা বানিয়ে পছন্দমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন গরম গরম চিংড়ি মাছের নোনতা পাটিসাপটা পিঠা।
গাজর-কপি পাটিসাপটা
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১ কাপ চাউলের গুঁড়া
১ কাপ ময়দা
১ কাপ খেজুরের রস
১/২ কাপ গাজরকুচি
১/২ কাপ ফুলকপি কুচি
১ কাপ নারকেল কোড়ানো
১ কাপ চিনি
প্রস্তুত প্রণালী
পুর তৈরি
একটি পাত্রে নারকেল কোড়ানো, গাজর কুচি, ফুলকপি কুচি ও চিনি দিয়ে মৃদু আঁচে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। প্রয়োজনমতো সামান্য পরিমাণে পানি দিয়ে নাড়তে থাকুন। চিনে গলে গেলে এবং সব উপকরণগুলো সেদ্ধ হয়ে আঠালো একটি মিশ্রণ তৈরি হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন। এটিই পিঠা তৈরির পুর।
গোলা তৈরি
খেজুরের রস, চাউলের গুঁড়া এবং ময়দা একসাথে মিশিয়ে খুব বেশি ঘন ও না আবার খুব বেশি পাতলাও না এমন একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এটি পিঠা তৈরির গোলা।
পিঠা তৈরি
একটি ননস্টিক ফ্রাইপ্যান চুলায় বসিয়ে গরম হতে দিন। গরম হয়ে গেলে ফ্রাইপ্যানে ১ টেবিল চামচ তেল মাখিয়ে নিন। এবার আধাকাপ পরিমাণ গোলা প্যানে দিয়ে গোল করে ঘুরিয়ে ছড়িয়ে দিন। পিঠার ওপরের দিক শুকনা হয়ে কড়াই থেকে আলাদা হয়ে না আসা পর্যন্ত তাপ দিতে থাকুন। এবার আগে তৈরি করে রাখা পুর থেকে ১ টেবিল চামচ পুর নিয়ে পিঠার একপাশে লম্বা করে দিয়ে দিন। পুর ভেতরে রেখে পিঠা আস্তে আস্তে করে মুড়িয়ে ফেলুন। চামচ দিয়ে হালকা চাপ দিয়ে পিঠা চ্যাপ্টা করে দিন। এভাবে সবগুলো পিঠা বানিয়ে সার্ভিং ডিশে রেখে জ্বাল দেয়া ঘন খেজুরের রস পিঠার ওপরে দিয়ে পরিবেশন করুন গাজর কপি পাটিসাপটা পিঠা।
নারিকেলের নাড়ু
নারিকেলের নাড়ু খেতে পছন্দ করি। এটি আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। অতিথি আপ্যায়ন, উৎসব-পার্বন কিংবা ঘরোয়া আড্ডায় এই খাবারের জুড়ি নেই। খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনই এটি তৈরির পদ্ধতিও বেশ সহজ। আপনাদের জন্য সেই রেসিপিটি ।
উপকরণ : নারিকেল- ১টা, আখের গুড়- ২০০ গ্রাম, ঘি- ১ টে. চামচ, ভাজা তিল- ২ টে. চামচ।
প্রণালি : প্রথমে নারিকেল ধুয়ে কুড়িয়ে নিতে হবে। এবার কড়াইয়ে গুড়ের সাথে অল্প পানি মিশিয়ে সাথে কোড়া নারিকেল দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে। এভাবে ১০/১২ মিনিট রাখতে হবে। এখন নারিকেল আঠা আঠো হয়ে এলে তাতে ভাজা তিল ও ঘি দিয়ে আবারো নাড়তে হবে। এমন ভাবে নাড়তে হবে যেন লেগে না যায়। চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে দেখতে হবে নাড়ু হাতে ঠিক মতো হচ্ছে কিনা। এখন হাতের তালুতে নিয়ে নাড়ু বানিয়ে পরিবেশন করুন।
দুধ চিতই
উপাদান
চালের গুঁড়া, দুধ, গুঁড় অথবা চিনি।
তৈরীর প্রক্রিয়া
পুলি পিঠাকে যেভাবে দুধে ভিজিয়ে দুধ পুলি বানানো হয়, চিতই পিঠাকে একই পদ্ধতিতে দুধে ভিজিয়ে দুধ চিতই বানানো হয়। সারা রাত ভেজার পর সকালে যখন দুধ থেকে উঠিয়ে মুখে দেয়া হয় তখন তার স্বাদ হয় অসাধারণ! জামাই আপ্যায়নের পিঠার তালিকায় সবসময় এই পিঠাকে এক নম্বরে রাখা হয়। কুষ্টিয়া অঞ্চলে দুধ চিতইকে রস পিঠা বলে।
দুধ পুলি
এক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি উপাদান হিসেবে লাগে দুধ। দুধ ও গুঁড় আগুনে একসাথে জ্বাল করে ভাপা পুলিগুলো তার মধ্যে ভিজিয়ে রাখলেই তা হয়ে যায় দুধ পুলি। সারারাত দুধে ভিজিয়ে রেখে শীতের সকালে দুধ থেকে উঠিয়ে মোমের মত নরম নরম দুধ পুলি খেতে যে কী মজা! আহা! পিজ্জা, স্যান্ডউইচ কোনোকিছুই তার ধারের কাছে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারবে না।
পুলি পিঠা
আরেকটি উল্লেখযোগ্য পিঠার নাম হচ্ছে পুলি পিঠা। পুলি পিঠা অবশ্য কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে ভাপা পুলি, দুধ পুলি, তিল পুলি এবং ভাজা পুলি উল্লেখযোগ্য।
উপাদান
নারিকেলের গুঁড়া, খেজুর গুঁড় অথবা চিনি এবং চালের গুঁড়া।
তৈরীর প্রক্রিয়া
সবগুলো পুলি পিঠা বানানোর প্রাথমিক প্রক্রিয়া একই। প্রথমে নারিকেলের গুঁড়া এবং গুঁড় মিশিয়ে হালুয়া তৈরী করা হয়। এরপর চালের আটার রুটি বানিয়ে সেই রুটি গোল গোল করে কাটা হয়। রুটির গোল অংশগুলোতে হালুয়া ভরে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে মোড়ানো হয় । এরপর নিম্নরুপে বিভিন্ন পুলি পিঠা বানানো হয়।ভাপা পুলি ভাপা পিঠা তৈরীর প্রক্রিয়ায় পুলি পিঠাগুলোকে গরম পানির তাপে ভাপা পুলি বানানো হয়।
ভাপা পিঠা
বাংলাদেশি পিঠাসমূহের মধ্যে অতিপরিচিত এবং অন্যতম একটি পিঠার নাম ভাপা পিঠা। শীতকালে যখন এদেশে ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়, তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ধুমের শুরুতে থাকে ভাপা পিঠা। সাধারণত গরম পানির ভাপ দিয়ে তৈরীর কারণে এই পিঠার নাম ভাপা পিঠা। গ্রামাঞ্চলে এই পিঠাকে মানুষ আরেকটি নামে ডেকে থাকে। তা হলো বড় পিঠা। আকারে বড় হওয়ার কারণে একে এমন নামে সম্বোধন করে সবাই।
উপাদান
চালের গুঁড়া, খেজুরের গুঁড়, ও নারিকেল
তৈরীর প্রক্রিয়া
প্রথমে বড় একটি পাত্র ভর্তি পানি চুলোয় বসিয়ে গরম করা হয়। এই পিঠা বানানোর উপযুক্ত এক ধরনের ছোট পাত্র আছে। এই পাত্রে চালের আটা সাজিয়ে তাতে নারিকেলের গুঁড়া ও গুঁড় চাহিদা মতো ছড়িয়ে আবার চালের গুঁড়া দিয়ে ঢেকে, ভেজা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে একে পানির পাত্রের ওপর রাখা হয়। এবার এই গরম পানির তাপ ও আর্দ্রতায় তৈরী হতে থাকে অত্যন্ত মজাদার ভাপা পিঠা। চার থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে একটি ভাপা পিঠা খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়।
স্বাদ ও পরিবেশন
ভাপা পিঠা স্বাদে অত্যন্ত মজাদার। তবে দুধ দিয়ে খেলে আরও ভাল লাগে। বাড়িতে মেহমান অথবা নতুন জামাইকে আপ্যায়নের জন্য এই পিঠা বানানো হয়। এছাড়া প্রতি শীতেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ভাপা পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়। শীতের সকালে বারান্দায় পিঁড়ি পেতে রোদে পিঠ ঠেকিয়ে বসে এই পিঠা খাওয়ার যে কী মজা, যে না খেয়েছে তাকে কখনও বোঝানো যাবে না।