ঢাকা ০৩:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঋণ পৌঁছে যাবে কৃষকের ঘরে, সুদহার ১১ শতাংশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৫৩:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই ঋণ বিতরণ করা হবেপরিকল্পনা কমিশন অধিক সুদ বললেও পিইসি সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছেনির্ধারিত সেবামূল্যকে সুদ বলতে নারাজ এসএফডিএফ

দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতায় ১১ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন প্রান্তিক কৃষক। এই ঋণ বিতরণ করা হবে কৃষকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে। সুদহার ১১ শতাংশ। যদিও এই ১১ শতাংশকে সুদ না বলে সার্ভিস চার্জ বলছে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। এই ঋণ হবে জামানতবিহীন। ১ শতাংশ আবার কৃষক ফেরত পাবেন। ১ শতাংশ যাবে তহবিলে। ঋণের পৌনে তিনশ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে দুইশ উপজেলার কৃষকের মধ্যে। পরিকল্পনা মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) এরই মধ্যে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে।

‘রূপকল্প ২০৪১: দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র সঞ্চয় যোজন’ প্রকল্পের আওতায় বাড়তি ঋণের প্রস্তাব করে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ)। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে পিইসি সভায় ১১ শতাংশ সুদে প্রান্তিক কৃষককে ঋণ বিতরণের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ১৫০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন মেয়াদে এটি বাস্তবায়ন করবে এসএফডিএফ। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৫০ কোটি টাকা উল্লেখ করা হলেও লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্কসহ একাধিক অনুচ্ছেদে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ২৭৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। একই বিষয়ে দুই রকম তথ্য থাকায় তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছিল কমিশন। প্রকল্পে ক্ষুদ্রঋণ ৮৬ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ ২০ কোটি ৬০ লাখ এবং বিশেষ উৎসাহ তহবিল বাবদ ১০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এ অর্থ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৭৮ শতাংশ প্রায়। তবে প্রকল্পে সুফলভোগী নির্বাচন নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে দাবি পরিকল্পনা কমিশনের। যদিও পিইসি সভায় এসএফডিএফের প্রস্তাবনা মেনে নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এখন প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের দপ্তরে রয়েছে। মন্ত্রী অনুমোদন দিলেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) বলেন, প্রথমে ১১ শতাংশ সুদহার দেখে আমি চমকে গিয়েছিলাম। তবে এর মধ্যে ১ শতাংশ ফেরত দেওয়া হবে প্রান্তিক কৃষককে। আরও ১ শতাংশ মূল তহবিলে চলে যাবে। কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যারা ঋণ বিতরণ করবেন, ওই অর্থ দিয়ে তাদের বেতন হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সব ব্যাখ্যা নেওয়ার পরই এটা অনুমোদন দিয়েছি। প্রকল্পটি পিইসি সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর অনুমোদনের পরই এটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।

ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ) জানায়, ব্যাংকের সুদের সঙ্গে এটার তুলনা করলে হবে না। ১১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ নেওয়া হবে। এরপর আবার ১ শতাংশ ফেরত দেওয়া হবে। এই ঋণ বিতরণ করা হবে কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে।

ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক সচিব বলেন, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন অলাভজনক সংস্থা। সিঙ্গেল ডিজিট ঋণ আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। তবে আমরা ১১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ নেই।

বাড়তি সুদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সুদ নয়, সার্ভিস চার্জ। ব্যাংকের ঋণের সঙ্গে এটার তুলনা করলে হবে না। আমরা কৃষকের ঘরে ঘরে গিয়ে ঋণ দিয়ে আসি। এ কাজে এনজিওগুলো ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ সুদ নেয়। আমরা নেই ১১ শতাংশ সার্ভিস। ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ আবার কৃষকদের ফেরত দেওয়া হবে। আমরা প্রফিট করি না, আয় থেকে ব্যয় হবে। প্রতি বছর আমাদের মন্ত্রিপরিষদে জবাবদিহি করতে হয়। এটার সঙ্গে অন্য পাঁচটা সংস্থার তুলনা করলে হবে না।

প্রকল্প এলাকা
বর্তমানে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম দেশের ৩৬টি জেলার ১৭৩টি উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি আরও ২৭টি নতুন উপজেলায় সম্প্রসারণসহ ২০০টি উপজেলায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রান্তিক চাষিদের জামানতবিহীন ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য ১৫৩ কোটি টাকা আবর্তক ঋণ তহবিল ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ অর্থ উৎপাদনশীল বা আয়বর্ধক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অত্যন্ত অপ্রতুল। এরই ধারাবাহিকতায় পল্লি অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের একটি সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আর্থিক সহায়তা, উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য দূরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে আরও ২৭টি উপজেলা অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২০০টি উপজেলায় বাস্তবায়নের জন্য ‘রূপকল্প ২০৪১: দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র সঞ্চয় যোজন’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

প্রকল্পের উদ্দেশ্য
প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের দারিদ্র্যপীড়িত ২০০টি উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য ২০২৪ সালের মধ্যে সুফলভোগী ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু আয় চার হাজার টাকা বাড়ানো। প্রকল্প মেয়াদে ৩০ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া সুফলভোগীদের নিজস্ব সঞ্চয় ও প্রকল্পের অর্জিত সার্ভিস চার্জের ১ শতাংশ সঞ্চয় যোজনের মাধ্যমে মাথাপিছু সঞ্চয় দুই হাজার ৫০০ টাকা বাড়ানো। প্রকল্প মেয়াদে ২০ হাজার জন সুফলভোগীর আয়বর্ধক কার্যক্রম পরিচালনা ও সচেতনতায় দক্ষতা বাড়ানোও অন্যতম উদ্দেশ্য। সুফলভোগীদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমও বাড়ানো হবে।

ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, পরিবার কল্যাণ, যৌতুক প্রথা ও বাল্যবিয়ে রোধ, নারী নেতৃত্বের বিকাশ, নারীর ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ, শিশু অধিকার সংরক্ষণ, ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণের যথাযথ ব্যবহার, আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, মাতৃত্ব ও শিশুস্বাস্থ্য ইত্যাদি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধকরণ ও উৎসাহ দেওয়া হবে প্রকল্পের আওতায়।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম
গ্রাম পর্যায়ে দুই হাজার চারটি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক উন্নয়ন কেন্দ্র গঠন এবং ১০ হাজার সুফলভোগীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করবেন ১৭৩ জন উপজেলা ব্যবস্থাপক ও ৪৬৮ জন মাঠ কর্মকর্তা। দুই লাখ ১৬ হাজার ১৮৩ জন সুফলভোগীকে জামানতবিহীন ঋণসহায়তা দেওয়ার জন্য ১৫৩ কোটি টাকার ‘আবর্তক ঋণ তহবিল’ গঠন করা হবে।

প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার ২০০টি উপজেলায় মোট জনসংখ্যা পাঁচ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে তিন কোটি জনগোষ্ঠী প্রান্তিক কৃষক। তাদের মাসিক আয় আট হাজার টাকার মতো। প্রকল্পভুক্ত ২০০টি উপজেলায় দারিদ্র্য বিমোচন এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এসব উপজেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। দারিদ্র্য বিমোচন ও আত্ম-কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ অন্যতম স্বীকৃত পন্থা।

বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিভিন্ন ধরনের সংগঠন সমন্বিত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বিশেষভাবে পল্লি এলাকার দরিদ্র, যারা কার্যত সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫ একর চাষযোগ্য জমির মালিক- এরূপ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র কৃষককেন্দ্রিক। ক্ষুদ্রঋণের সহজলভ্যতা প্রান্তিক এসব কৃষককে দারিদ্র্যসীমার নিচে নামা রোধ করতে সাহায্য করবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ঋণ পৌঁছে যাবে কৃষকের ঘরে, সুদহার ১১ শতাংশ

আপডেট টাইম : ০৭:৫৩:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই ঋণ বিতরণ করা হবেপরিকল্পনা কমিশন অধিক সুদ বললেও পিইসি সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছেনির্ধারিত সেবামূল্যকে সুদ বলতে নারাজ এসএফডিএফ

দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতায় ১১ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন প্রান্তিক কৃষক। এই ঋণ বিতরণ করা হবে কৃষকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে। সুদহার ১১ শতাংশ। যদিও এই ১১ শতাংশকে সুদ না বলে সার্ভিস চার্জ বলছে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। এই ঋণ হবে জামানতবিহীন। ১ শতাংশ আবার কৃষক ফেরত পাবেন। ১ শতাংশ যাবে তহবিলে। ঋণের পৌনে তিনশ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে দুইশ উপজেলার কৃষকের মধ্যে। পরিকল্পনা মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) এরই মধ্যে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে।

‘রূপকল্প ২০৪১: দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র সঞ্চয় যোজন’ প্রকল্পের আওতায় বাড়তি ঋণের প্রস্তাব করে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ)। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে পিইসি সভায় ১১ শতাংশ সুদে প্রান্তিক কৃষককে ঋণ বিতরণের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ১৫০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন মেয়াদে এটি বাস্তবায়ন করবে এসএফডিএফ। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৫০ কোটি টাকা উল্লেখ করা হলেও লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্কসহ একাধিক অনুচ্ছেদে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ২৭৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। একই বিষয়ে দুই রকম তথ্য থাকায় তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছিল কমিশন। প্রকল্পে ক্ষুদ্রঋণ ৮৬ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ ২০ কোটি ৬০ লাখ এবং বিশেষ উৎসাহ তহবিল বাবদ ১০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এ অর্থ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৭৮ শতাংশ প্রায়। তবে প্রকল্পে সুফলভোগী নির্বাচন নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে দাবি পরিকল্পনা কমিশনের। যদিও পিইসি সভায় এসএফডিএফের প্রস্তাবনা মেনে নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এখন প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের দপ্তরে রয়েছে। মন্ত্রী অনুমোদন দিলেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) বলেন, প্রথমে ১১ শতাংশ সুদহার দেখে আমি চমকে গিয়েছিলাম। তবে এর মধ্যে ১ শতাংশ ফেরত দেওয়া হবে প্রান্তিক কৃষককে। আরও ১ শতাংশ মূল তহবিলে চলে যাবে। কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যারা ঋণ বিতরণ করবেন, ওই অর্থ দিয়ে তাদের বেতন হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সব ব্যাখ্যা নেওয়ার পরই এটা অনুমোদন দিয়েছি। প্রকল্পটি পিইসি সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর অনুমোদনের পরই এটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।

ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ) জানায়, ব্যাংকের সুদের সঙ্গে এটার তুলনা করলে হবে না। ১১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ নেওয়া হবে। এরপর আবার ১ শতাংশ ফেরত দেওয়া হবে। এই ঋণ বিতরণ করা হবে কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে।

ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক সচিব বলেন, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন অলাভজনক সংস্থা। সিঙ্গেল ডিজিট ঋণ আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। তবে আমরা ১১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ নেই।

বাড়তি সুদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সুদ নয়, সার্ভিস চার্জ। ব্যাংকের ঋণের সঙ্গে এটার তুলনা করলে হবে না। আমরা কৃষকের ঘরে ঘরে গিয়ে ঋণ দিয়ে আসি। এ কাজে এনজিওগুলো ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ সুদ নেয়। আমরা নেই ১১ শতাংশ সার্ভিস। ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ আবার কৃষকদের ফেরত দেওয়া হবে। আমরা প্রফিট করি না, আয় থেকে ব্যয় হবে। প্রতি বছর আমাদের মন্ত্রিপরিষদে জবাবদিহি করতে হয়। এটার সঙ্গে অন্য পাঁচটা সংস্থার তুলনা করলে হবে না।

প্রকল্প এলাকা
বর্তমানে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম দেশের ৩৬টি জেলার ১৭৩টি উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি আরও ২৭টি নতুন উপজেলায় সম্প্রসারণসহ ২০০টি উপজেলায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রান্তিক চাষিদের জামানতবিহীন ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য ১৫৩ কোটি টাকা আবর্তক ঋণ তহবিল ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ অর্থ উৎপাদনশীল বা আয়বর্ধক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অত্যন্ত অপ্রতুল। এরই ধারাবাহিকতায় পল্লি অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের একটি সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আর্থিক সহায়তা, উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য দূরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে আরও ২৭টি উপজেলা অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২০০টি উপজেলায় বাস্তবায়নের জন্য ‘রূপকল্প ২০৪১: দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র সঞ্চয় যোজন’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

প্রকল্পের উদ্দেশ্য
প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের দারিদ্র্যপীড়িত ২০০টি উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য ২০২৪ সালের মধ্যে সুফলভোগী ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু আয় চার হাজার টাকা বাড়ানো। প্রকল্প মেয়াদে ৩০ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া সুফলভোগীদের নিজস্ব সঞ্চয় ও প্রকল্পের অর্জিত সার্ভিস চার্জের ১ শতাংশ সঞ্চয় যোজনের মাধ্যমে মাথাপিছু সঞ্চয় দুই হাজার ৫০০ টাকা বাড়ানো। প্রকল্প মেয়াদে ২০ হাজার জন সুফলভোগীর আয়বর্ধক কার্যক্রম পরিচালনা ও সচেতনতায় দক্ষতা বাড়ানোও অন্যতম উদ্দেশ্য। সুফলভোগীদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমও বাড়ানো হবে।

ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, পরিবার কল্যাণ, যৌতুক প্রথা ও বাল্যবিয়ে রোধ, নারী নেতৃত্বের বিকাশ, নারীর ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ, শিশু অধিকার সংরক্ষণ, ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণের যথাযথ ব্যবহার, আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, মাতৃত্ব ও শিশুস্বাস্থ্য ইত্যাদি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধকরণ ও উৎসাহ দেওয়া হবে প্রকল্পের আওতায়।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম
গ্রাম পর্যায়ে দুই হাজার চারটি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক উন্নয়ন কেন্দ্র গঠন এবং ১০ হাজার সুফলভোগীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করবেন ১৭৩ জন উপজেলা ব্যবস্থাপক ও ৪৬৮ জন মাঠ কর্মকর্তা। দুই লাখ ১৬ হাজার ১৮৩ জন সুফলভোগীকে জামানতবিহীন ঋণসহায়তা দেওয়ার জন্য ১৫৩ কোটি টাকার ‘আবর্তক ঋণ তহবিল’ গঠন করা হবে।

প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার ২০০টি উপজেলায় মোট জনসংখ্যা পাঁচ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে তিন কোটি জনগোষ্ঠী প্রান্তিক কৃষক। তাদের মাসিক আয় আট হাজার টাকার মতো। প্রকল্পভুক্ত ২০০টি উপজেলায় দারিদ্র্য বিমোচন এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এসব উপজেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। দারিদ্র্য বিমোচন ও আত্ম-কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ অন্যতম স্বীকৃত পন্থা।

বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিভিন্ন ধরনের সংগঠন সমন্বিত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বিশেষভাবে পল্লি এলাকার দরিদ্র, যারা কার্যত সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫ একর চাষযোগ্য জমির মালিক- এরূপ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র কৃষককেন্দ্রিক। ক্ষুদ্রঋণের সহজলভ্যতা প্রান্তিক এসব কৃষককে দারিদ্র্যসীমার নিচে নামা রোধ করতে সাহায্য করবে।