ঢাকা ০৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাশরাফির প্রতি কেন এই অবহেলা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৬:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৬
  • ৪৪৮ বার

বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিকিন নাফিসা কামাল লটারিতে মাশরাফি মুর্তজাকে পেয়ে খুশি ছিলেন না। সেই মাশরাফিই বিপিএলের তৃতীয় আসরে প্রথম খেলতে আসা কুমিল্লাকে শিরোপা এনে দেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল বারবার জয়বিমুখ হয়েছে জেতার অবস্থায় পৌঁছেও। মাশরাফি অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবিস্মরণীয় সব সাফল্য ধরা দিতে শুরু করে। সারা দেশে ‘মাশরাফি, মাশরাফি’ রব ওঠে। সংগঠক, ক্রিকেটার, কোচ, কর্মকর্তা- সবাই অধিনায়ক মাশরাফির গুণমুগ্ধ, প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নেতা মাশরাফি ঠাঁই করে নিয়েছেন ক্রিকেটামোদীদের অন্তরে। শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। অথচ সেই মাশরাফিকে নিয়ে এবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের ক্লাবগুলোর আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। লটারির মাধ্যমে পছন্দের খেলোয়াড়কে বাছাই করার ক্ষেত্রে প্রথম ১০ ক্লাব মাশরাফিকে রাখেনি প্লেয়ার ড্রাফটে। ১১ নম্বরে থাকা ক্লাব কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাশরাফিকে দলে নেয়। প্লেয়ার্স বাই চয়েসের মাধ্যমে দলবদল শেষে সব ক্লাবই এখন বলছে, মাশরাফির প্রতি অনাগ্রহ নয়, দলের কম্বিনেশন ঠিক রাখার জন্যই অনিচ্ছাকৃতভাবে তাকে পাশ কাটাতে হয়েছে। আসলে কি তাই?

গেলবার মোহামেডানে খেলেছিলেন। তার দুর্বলতার সুযোগে টাকা-পয়সা নিয়ে গত আসরে মাশরাফিকে ঠকিয়েছে মোহামেডান। এবার প্লেয়ার্স বাই চয়েসের মাধ্যমে সুযোগ পেয়েও মাশরাফিকে নেয়নি তারা। মোহামেডান নিয়েছে মুশফিকুর রহিমকে। মাশরাফির প্রতি অনাগ্রহের কারণ জানতে চাইলে মোহামেডান দল গঠনের সমন্বয়ক জিয়াউর রহমান তপু বলেন, ‘এখানে আসলে সবাই দলের প্রয়োজনে এসেছেন। আগে দুই বোলার নিয়ে ফেলেছিলাম। এরপর হয়তো ব্যাটসম্যানের জন্য অপেক্ষা ছিল। আমরা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান খুঁজছিলাম। মুশফিককে পাওয়ায় অধিনায়ক, উইকেটকিপার, ব্যাটসম্যান সবই পেলাম। সবাই তো নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী অলরাউন্ডার, বোলার, ব্যাটসম্যান নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মাশরাফি অনেক বড় খেলোয়াড়। তার প্রতি আগ্রহ থাকবে না, এমন কোনো ক্লাব আছে নাকি?’

ব্রাদার্স ইউনিয়ন মাশরাফিকে দলে নেয়ার মতো সুযোগই পায়নি। লটারিতে তারা ছিল ১২তম দল। তার এক ধাপ আগে মাশরাফিকে টেনে নেয় কলাবাগান ক্রীড়া চক্র। বাংলাদেশ ওয়ানডে ও টি ২০ অধিনায়ককে দলে নেয়ার সুযোগ পেলে ব্রাদার্স কী করত জানতে চাইলে তাদের কোচ সারওয়ার ইমরান বলেন, ‘আমরা সুযোগ পাইনি। তবে সুযোগ পেলে কী করতাম এখন সেটা বলা ঠিক হবে না। কারণ আমরা যে খেলোয়াড় পেয়েছি এখন সেদিকেই ফোকাস রাখতে হবে। যদি’র কথা এখন বলতে চাই না।’

আইকন খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রথম পছন্দ হিসেবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বেছে নিয়েছে শেখ জামাল। আবাহনীর ক্লাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা যে দল পেয়েছেন তাতে খুশি। আবাহনীতেও খেলেছেন মাশরাফি। গত আসরে মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচের সময় আবাহনীর সমর্থকদের একাংশ মাশরাফির পরিবার তুলে গালাগালি করে। মাশরাফি ওই ঘটনায় কষ্ট পেয়েছিলেন।

প্রাইম দোলেশ্বরের কোচ মিজানুর রহমান বাবুল জানালেন, কম্বিনেশনের কারণে মাশরাফিকে নিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আইকন তালিকা থেকে খেলোয়াড় পাওয়ার সুযোগ কম ছিল। আমি কম্বিনেশনের দিকে তাকিয়েছি। আমরা শুরুতে পেসার আল-আমিনকে নিয়েছি, এরপর পেস অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজা ও জিয়াউর রহমানকে। শেষদিকে আমাদের একজন অফ-স্পিনারের দরকার ছিল। এই বিবেচনায় আমরা মাহমুদউল্লাহ ও নাসিরকে নিয়ে ভাবছিলাম। নাসিরকে পেয়ে আমরা খুশি।’

চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাশরাফি প্রতিবারই ফিরে এসেছেন। নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তার ত্যাগ ও সততা আবাহনী কিংবা মোহামেডান ভুলে গেলেও ক্রিকেটভক্তরা ঠিকই মনে রেখেছেন। অসুস্থতায় খেলতে না পেরে আবাহনী থেকে এক মৌসুম কোনো পারিশ্রমিক নেননি মাশরাফি। গতবার ১০ লাখ টাকা কমে খেলেছিলেন মোহামেডানের হয়ে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মাশরাফির প্রতি কেন এই অবহেলা

আপডেট টাইম : ১০:৩৬:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিকিন নাফিসা কামাল লটারিতে মাশরাফি মুর্তজাকে পেয়ে খুশি ছিলেন না। সেই মাশরাফিই বিপিএলের তৃতীয় আসরে প্রথম খেলতে আসা কুমিল্লাকে শিরোপা এনে দেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল বারবার জয়বিমুখ হয়েছে জেতার অবস্থায় পৌঁছেও। মাশরাফি অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবিস্মরণীয় সব সাফল্য ধরা দিতে শুরু করে। সারা দেশে ‘মাশরাফি, মাশরাফি’ রব ওঠে। সংগঠক, ক্রিকেটার, কোচ, কর্মকর্তা- সবাই অধিনায়ক মাশরাফির গুণমুগ্ধ, প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নেতা মাশরাফি ঠাঁই করে নিয়েছেন ক্রিকেটামোদীদের অন্তরে। শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। অথচ সেই মাশরাফিকে নিয়ে এবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের ক্লাবগুলোর আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। লটারির মাধ্যমে পছন্দের খেলোয়াড়কে বাছাই করার ক্ষেত্রে প্রথম ১০ ক্লাব মাশরাফিকে রাখেনি প্লেয়ার ড্রাফটে। ১১ নম্বরে থাকা ক্লাব কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাশরাফিকে দলে নেয়। প্লেয়ার্স বাই চয়েসের মাধ্যমে দলবদল শেষে সব ক্লাবই এখন বলছে, মাশরাফির প্রতি অনাগ্রহ নয়, দলের কম্বিনেশন ঠিক রাখার জন্যই অনিচ্ছাকৃতভাবে তাকে পাশ কাটাতে হয়েছে। আসলে কি তাই?

গেলবার মোহামেডানে খেলেছিলেন। তার দুর্বলতার সুযোগে টাকা-পয়সা নিয়ে গত আসরে মাশরাফিকে ঠকিয়েছে মোহামেডান। এবার প্লেয়ার্স বাই চয়েসের মাধ্যমে সুযোগ পেয়েও মাশরাফিকে নেয়নি তারা। মোহামেডান নিয়েছে মুশফিকুর রহিমকে। মাশরাফির প্রতি অনাগ্রহের কারণ জানতে চাইলে মোহামেডান দল গঠনের সমন্বয়ক জিয়াউর রহমান তপু বলেন, ‘এখানে আসলে সবাই দলের প্রয়োজনে এসেছেন। আগে দুই বোলার নিয়ে ফেলেছিলাম। এরপর হয়তো ব্যাটসম্যানের জন্য অপেক্ষা ছিল। আমরা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান খুঁজছিলাম। মুশফিককে পাওয়ায় অধিনায়ক, উইকেটকিপার, ব্যাটসম্যান সবই পেলাম। সবাই তো নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী অলরাউন্ডার, বোলার, ব্যাটসম্যান নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মাশরাফি অনেক বড় খেলোয়াড়। তার প্রতি আগ্রহ থাকবে না, এমন কোনো ক্লাব আছে নাকি?’

ব্রাদার্স ইউনিয়ন মাশরাফিকে দলে নেয়ার মতো সুযোগই পায়নি। লটারিতে তারা ছিল ১২তম দল। তার এক ধাপ আগে মাশরাফিকে টেনে নেয় কলাবাগান ক্রীড়া চক্র। বাংলাদেশ ওয়ানডে ও টি ২০ অধিনায়ককে দলে নেয়ার সুযোগ পেলে ব্রাদার্স কী করত জানতে চাইলে তাদের কোচ সারওয়ার ইমরান বলেন, ‘আমরা সুযোগ পাইনি। তবে সুযোগ পেলে কী করতাম এখন সেটা বলা ঠিক হবে না। কারণ আমরা যে খেলোয়াড় পেয়েছি এখন সেদিকেই ফোকাস রাখতে হবে। যদি’র কথা এখন বলতে চাই না।’

আইকন খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রথম পছন্দ হিসেবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বেছে নিয়েছে শেখ জামাল। আবাহনীর ক্লাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা যে দল পেয়েছেন তাতে খুশি। আবাহনীতেও খেলেছেন মাশরাফি। গত আসরে মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচের সময় আবাহনীর সমর্থকদের একাংশ মাশরাফির পরিবার তুলে গালাগালি করে। মাশরাফি ওই ঘটনায় কষ্ট পেয়েছিলেন।

প্রাইম দোলেশ্বরের কোচ মিজানুর রহমান বাবুল জানালেন, কম্বিনেশনের কারণে মাশরাফিকে নিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আইকন তালিকা থেকে খেলোয়াড় পাওয়ার সুযোগ কম ছিল। আমি কম্বিনেশনের দিকে তাকিয়েছি। আমরা শুরুতে পেসার আল-আমিনকে নিয়েছি, এরপর পেস অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজা ও জিয়াউর রহমানকে। শেষদিকে আমাদের একজন অফ-স্পিনারের দরকার ছিল। এই বিবেচনায় আমরা মাহমুদউল্লাহ ও নাসিরকে নিয়ে ভাবছিলাম। নাসিরকে পেয়ে আমরা খুশি।’

চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাশরাফি প্রতিবারই ফিরে এসেছেন। নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তার ত্যাগ ও সততা আবাহনী কিংবা মোহামেডান ভুলে গেলেও ক্রিকেটভক্তরা ঠিকই মনে রেখেছেন। অসুস্থতায় খেলতে না পেরে আবাহনী থেকে এক মৌসুম কোনো পারিশ্রমিক নেননি মাশরাফি। গতবার ১০ লাখ টাকা কমে খেলেছিলেন মোহামেডানের হয়ে।