ঢাকা ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেঘনার বুকে জেগে ওঠা গ্রামে ৪০ বছর পর জ্বলবে বিদ্যুতের আলো

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৫২:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৯৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চরসোনারামপুর গ্রামের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। বিদ্যুতের এত কাছে থেকেও চরসোনারামপুরবাসীর বিদ্যুৎ না পাওয়ার অপেক্ষা চার দশকেরও বেশি সময়ের।

বিদ্যুৎ আসছে আসবে, এই আশাতেই দিন, মাস ও বছর পার করেছেন চরের বাসিন্দারা। এভাবে কেটে গেছে ৪০ বছর। কিন্তু বিদ্যুতের আলোর দেখা পাননি তারা। এর মাঝেই চরসোনারামপুরকে অন্ধকারে নিমজ্জিত রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

তবে এবার বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হওয়ার অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে চরবাসীর। মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের মাধ্যমে চরে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদীর দুই প্রান্তে ১১ হাজার ভোল্টের প্রয়োজনীয় ওভারহেড লাইন নির্মাণকাজ শুরু করতে যাচ্ছে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, এ কাজের জন্য গত ৩০ জানুয়ারি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্রিলটেক ইন্টারন্যাশনালের চুক্তি হয়েছে। পুরো কাজের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি টাকা।

চরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শতবছর আগে মেঘনা নদীর বুক জেগে ওঠা চরে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মানুষ বসবাস করছেন। আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অন্তর্গত এ চরটির নামকরণ করা হয় চরসোনারামপুর। বর্তমানে চরের এই গ্রামটিতে প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস। মূলত মেঘনা নদীতে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন চরের অধিকাংশ বাসিন্দা। অবশ্য কেউ কেউ আবার বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যও করছেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১১টি ইউনিট উৎপাদনে রয়েছে। এসব ইউনিট থেকে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার একশত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয় জাতীয় গ্রিডে। এজন্য আশুগঞ্জকে বলা হয় বিদ্যুতের শহর। কিন্তু এই বিদ্যুতের শহরে বাস করেও দীর্ঘ চার দশকেও বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি চরসোনারামপুরে। অথচ গত ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

১২ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রয়োজনীয় মালামাল মেঘনা নদীর বিওসি ঘাটে এনে মজুদ করে। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চরসোনারামপুরে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল নেওয়া শুরু করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপনের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে চরসোনামপুরবাসীর দীর্ঘ চার দশকের আক্ষেপ ঘুচতে যাচ্ছে।

চরসোনারামপুর গ্রামের বাসিন্দা অশিতির বৃদ্ধ জ্যোতিশ বর্মণ বলেন, বছরের পর বছর কেটেছে শুধু বিদ্যুতের আশায়। বিদ্যুতের জন্য আমাদের দুঃখের শেষ নেই। ছেলেমেয়ে নাতি-নাতনিদের মোমবাতি-কুপি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। এখন যদি আমরা বিদ্যুৎ পাই, তা হলে জীবিত অবস্থায় চরসোনারামপুরে বিদ্যুতের আলো দেখে যেতে পারব। ফলে চরবাসীর আর কোনো দুঃখ থাকবে না।

চরের আরেক বাসিন্দা ঝুমন দাস জানান, বিদ্যুতের জন্য তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। এখন বিদ্যুৎ পাওয়ার খবরে চরবাসী অনেক আনন্দিত। দ্রুত সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপন কাজ শেষ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আশুগঞ্জ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘চুক্তি পরবর্তী ১২০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় মালামাল আসা শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপনের কাজ নির্ধারিত সময়েই শেষ করবে। আর কাজ শেষ হওয়ার পর পরই চরে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মেঘনার বুকে জেগে ওঠা গ্রামে ৪০ বছর পর জ্বলবে বিদ্যুতের আলো

আপডেট টাইম : ০২:৫২:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চরসোনারামপুর গ্রামের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। বিদ্যুতের এত কাছে থেকেও চরসোনারামপুরবাসীর বিদ্যুৎ না পাওয়ার অপেক্ষা চার দশকেরও বেশি সময়ের।

বিদ্যুৎ আসছে আসবে, এই আশাতেই দিন, মাস ও বছর পার করেছেন চরের বাসিন্দারা। এভাবে কেটে গেছে ৪০ বছর। কিন্তু বিদ্যুতের আলোর দেখা পাননি তারা। এর মাঝেই চরসোনারামপুরকে অন্ধকারে নিমজ্জিত রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

তবে এবার বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হওয়ার অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে চরবাসীর। মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের মাধ্যমে চরে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদীর দুই প্রান্তে ১১ হাজার ভোল্টের প্রয়োজনীয় ওভারহেড লাইন নির্মাণকাজ শুরু করতে যাচ্ছে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, এ কাজের জন্য গত ৩০ জানুয়ারি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্রিলটেক ইন্টারন্যাশনালের চুক্তি হয়েছে। পুরো কাজের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি টাকা।

চরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শতবছর আগে মেঘনা নদীর বুক জেগে ওঠা চরে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মানুষ বসবাস করছেন। আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অন্তর্গত এ চরটির নামকরণ করা হয় চরসোনারামপুর। বর্তমানে চরের এই গ্রামটিতে প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস। মূলত মেঘনা নদীতে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন চরের অধিকাংশ বাসিন্দা। অবশ্য কেউ কেউ আবার বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যও করছেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১১টি ইউনিট উৎপাদনে রয়েছে। এসব ইউনিট থেকে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার একশত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয় জাতীয় গ্রিডে। এজন্য আশুগঞ্জকে বলা হয় বিদ্যুতের শহর। কিন্তু এই বিদ্যুতের শহরে বাস করেও দীর্ঘ চার দশকেও বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি চরসোনারামপুরে। অথচ গত ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

১২ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রয়োজনীয় মালামাল মেঘনা নদীর বিওসি ঘাটে এনে মজুদ করে। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চরসোনারামপুরে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল নেওয়া শুরু করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপনের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে চরসোনামপুরবাসীর দীর্ঘ চার দশকের আক্ষেপ ঘুচতে যাচ্ছে।

চরসোনারামপুর গ্রামের বাসিন্দা অশিতির বৃদ্ধ জ্যোতিশ বর্মণ বলেন, বছরের পর বছর কেটেছে শুধু বিদ্যুতের আশায়। বিদ্যুতের জন্য আমাদের দুঃখের শেষ নেই। ছেলেমেয়ে নাতি-নাতনিদের মোমবাতি-কুপি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। এখন যদি আমরা বিদ্যুৎ পাই, তা হলে জীবিত অবস্থায় চরসোনারামপুরে বিদ্যুতের আলো দেখে যেতে পারব। ফলে চরবাসীর আর কোনো দুঃখ থাকবে না।

চরের আরেক বাসিন্দা ঝুমন দাস জানান, বিদ্যুতের জন্য তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। এখন বিদ্যুৎ পাওয়ার খবরে চরবাসী অনেক আনন্দিত। দ্রুত সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপন কাজ শেষ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আশুগঞ্জ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘চুক্তি পরবর্তী ১২০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় মালামাল আসা শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপনের কাজ নির্ধারিত সময়েই শেষ করবে। আর কাজ শেষ হওয়ার পর পরই চরে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।