হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা দেশটির ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারোর কাছে তার পরিচয়পত্র পেশ করেছেন।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্লোস ফ্রান্সা উপস্থিত ছিলেন।
পরিচয়পত্র পেশের পর রাষ্ট্রদূত ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য বৈঠকে মিলিত হন। শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ব্রাজিলের বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানায়।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত ও উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে তাকে অভিনন্দন জানান। ব্রাজিলকে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বলসোনারো বন্ধুপ্রতীম সব দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ের লক্ষ্যে তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ব্রাজিল কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির লগ্নে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তিনি ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
আলোচনার শুরুতে রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রা গাথা বর্ণনা করার পাশাপাশি ব্রাজিল-বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন। বাংলাদেশ-ব্রাজিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন যে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ়তর করার অনেক সুযোগ রয়েছে। দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার এবং কৃষি সহযোগিতা বৃদ্ধিতে তিনি ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতির সহযোগিতা কামনা করেন।
মারকুসারের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ এবং আবেদনপত্রের কথা উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রেও প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশগুলোর অন্যতম। তৈরি পোশাক শিল্প এবং বিশ্ব মানের ওষুধ উৎপাদনসহ বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিশালী দিকগুলো আলোচনা করে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ মারকুসারের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য সহযোগী হতে সক্ষম। প্রেসিডেন্ট বলসোনারো আগ্রহ সহকারে রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য শোনেন এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশ-ব্রাজিলের বাণিজ্যিক সম্পর্ক, বিশেষ করে কৃষি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। বাংলাদেশ-ব্রাজিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সব সহযোগিতা দেওয়ারও অঙ্গীকার করেন।
বাংলাদেশে ব্রাজিল ফুটবল দলের বিপুল সমর্থনের কথা জেনে প্রেসিডেন্ট বলসোনারো মুগ্ধ হন। তিনি আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি আবুধাবীতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব পালমেইরাসকে সমর্থন করার অনুরোধ করেন।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা বাংলাদেশ-ব্রাজিল কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই দেশের সম্পর্কের বহুমাত্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।
দুই দেশের সম্পর্ক পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে সরকার প্রধান পর্যায়ের একটি দ্বিপাক্ষিক সফরের ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
পরিচয়পত্র পেশ এবং ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ত্যাগ করার সময় রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে রাষ্ট্রদূত সরাসরি দূতাবাসে প্রত্যাবর্তন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় প্যালাসিয়ো প্লানাওতোতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।