হাওর বার্তা ডেস্কঃ পৃথিবীর ইতিহাসে চীনের নানা আবিষ্কারের গল্প রয়েচে। সেসব আবিষ্কারের অনেককিছুই আমরা ব্যবহার করে চলেছি। প্রাচীন চীনা নাগরিকদের অসাধারণ সব জ্ঞানের কারণে অনেকাংশে সহজ হয়ে গিয়েছে আমাদের জীবনব্যবস্থাও। আজ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো চীনাদের তেমনই কিছু আবিষ্কারের গল্প।
ফানুস
ঘুড়ি
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে রীতিমতো আলাদা উৎসব হয়ে থাকে। কিন্ত আপনি কি জানেন, শুরুর দিকে শুধু ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন ছিল। কিন্তু পরে তা ছেলেবুড়ো সবার মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ঘুড়ি বানানোর আইডিয়া থেকে পরবর্তীতে বিশালাকার হিউম্যান গ্লাইডার বানানোর ধারণাটি আসে, যদিও এর পেছনে এক অন্ধকার ইতিহাসও আছে। গ্লাইডার বানানোর প্রথম দিকে এগুলো কয়েদিদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হতো। তাদেরকে গ্লাইডারের মধ্যে স্ট্র্যাপ দিয়ে বাঁধা হতো এবং উঁচু পাহাড়ের চূড়া থেকে ফেলে দেওয়া হতো। কিন্তু সেই সব পরীক্ষাই সফল হয়েছিল কিনা তা কি আমরা জানি?
সিল্ক এক মূল্যবান তন্তু, যা আমরা পরিধেয় পোশাক থেকে শুরু করে বিভিন্ন আনুষঙ্গিক ও গৃহসজ্জা সামগ্রীতে দেখতে পাই। ডিম পাড়ার সময়টায় পুরো ছয় সপ্তাহ গুটিপোকারা মালবেরি পাতা খেয়ে বড় হয়। গুটিপোকারা নিজেদের চারদিকে গুটি বোনে এবং তাদের শরীর থেকেই সিল্ক তন্তু বের হয়। একেকটি গুটিপোকা তার নিজের দেহকে ঘিরে ৩০০ ফুট লম্বা সুতা বুনতে পারে। প্রাচীন চৈনিকেরা এসব গুটিপোকা উৎপাদন করতো এবং গুটিগুলো পানিতে সেদ্ধ করে সুতা ছাড়াতো।
বহুকাল ধরে চীনারা গুটিপোকা থেকে সিল্ক সুতা আবিষ্কারের এই পদ্ধতি গোপন রেখেছিল, ফলে বিশ্বব্যাপী তারাই হয়ে ওঠে সিল্ক সুতার একচ্ছত্র অধিপতি। অন্যান্য দেশ তখন স্বর্ণের বিনিময়ে এই সুতা কিনে নিয়ে যেতো। সিল্ক সুতা তৎকালীন অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।
গানপাউডার
মানুষকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখবে এমন রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ভাবন করতে গিয়ে গানপাউডার তৈরি করে ফেলেন প্রাচীন চীনা রসায়নবিদেরা। গানপাউডার নামক সেই বস্তু আজ মহামূল্যবান এক পদার্থ। চীনারা এই গানপাউডার অস্ত্রের মধ্যে নয়, বরং আতশবাজি ফোটাতে ব্যবহার করতো। কিন্তু গোলাবারুদ হিসেবে অস্ত্রের মধ্যে এটি ব্যবহারের উপায় প্রথম আবিষ্কার করে ইউরোপীয়রা।
কাগজ
কাগজ আবিষ্কারকে বলা হয় মানবসভ্যতার সবচেয়ে যুগান্তকারী ও প্রভাবশালী একটি আবিষ্কার। প্রায় দুই হাজার বছর আগে চীনা বিচার দরবারের এক কর্মকর্তা প্রথম কাগজ আবিষ্কার করেন বলে প্রচলিত রয়েছে। তিনি মালবেরি গাছের ছাল, শণ এবং ছেঁড়া কাপড়ের অংশ ইত্যাদি পানির সঙ্গে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করেন। এরপর সেই মিশ্রণকে পাতলা শিটে পরিণত করে শুকিয়ে নিয়ে কাগজে পরিণত করেন।
আধুনিককালে ভূমিকম্প মাপার যন্ত্র বলে আমরা যেটিকে চিনি, ১৮৪৮ আলের আগপর্যন্ত সেটির অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু চীনারা তারও কয়েক হাজার বছর আগে নিজস্ব ঘরানায় সিসমোগ্রাফ তৈরি করেছিল, এবং তাদের আবিষ্কার বর্তমানের চাইতেও বেশি শৈল্পিক ছিল!
৬ ফুট চওড়া একটি কেটলির বাইরে মেটালের তৈরি ৮টি ড্রাগন এবং ড্রাগনগুলোর প্রতিটির মুখে একটা করে ব্রোঞ্জের তৈরি বল, এই ছিল চীনাদের সিসমোগ্রাফের কাঠামো। ড্রাগনগুলোর নিচে একটি করে ব্যাঙ আকৃতির বস্তু বানানো হয়েছিল। ভূমিকম্প হলে তার কম্পনে ড্রাগনের মুখের বল ওই ব্যাঙ এর মুখে পড়তো এবং এর শব্দ মানুষকে সতর্ক করে দিতো।
কম্পাস
দিক নির্ণয়ে কম্পাসের প্রয়োজনীয়তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দিক নির্ণয়ের কাজ ইলেক্ট্রনিক্যালি করা হলেও, আজও কম্পাসের ব্যবহার ফুরিয়ে যায়নি। চীনারা যখন কম্পাস উদ্ভাবন করে তখন এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, তারা যেন তাদের বাড়িগুলো দক্ষিণ দিকে মুখ করেই তৈরি করে। দক্ষিণা বাতাস উপভোগ করাই ছিল এমন চিন্তার কারণ।