ঢাকা ১১:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাতাসে বিষ ঝুঁকিতে জীবন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২২
  • ১৩৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বায়ু দূষণের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় উঠে এসেছে ঢাকা। রাজধানী ঢাকার বাতাসে কুয়াশার মতো ভাসছে ধূলিকণা। বুক ভরে নিশ্বাস নেয়া যাচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর ঢাকায় বায়ুদূষণ বেড়েছে ১৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান যাচাই বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার এর তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান আট দিন শীর্ষে ছিল। গত ১৯ থেকে ২২ জানুয়ারি টানা চারদিন বায়ুদূষণে বিশ্বের দূষিত শহরের শীর্ষে ছিল ঢাকা। এ চারদিন ঢাকায় বায়ুর মান সূচক ছিল গড়ে যথাক্রমে ২২৬, ২৩৩, ২৪৩ ও ২৫৮ পিপিএম। বিশেষজ্ঞদের মতে এটা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’। এর মধ্যে গত ২১ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় বায়ুর মান সূচক ছিল ৩৭২ পিপিএম। ওই সময় বায়ুতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা ‘পিএম ২.৫’ প্রতি ঘনমিটারে ছিল ৩২২ মাইক্রোগ্রাম। বিশেষজ্ঞদের মতে যা ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’। এই অবস্থা পরিবর্তনের এখনই উদ্যোগ না নিলে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা বা রেড এলার্ড জারি ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

বায়ুমানের যা অবস্থা তাতে বলা যায় ঢাকার বাতাসে ভাসছে বিষ। আর এই বাতাসের বিষে জনস্বাস্থ্য এখন চরম ঝুঁকিতে। এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণসহ অন্যান্য দূষণে দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস।
  জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণ যদি এভাবে চলতে থাকে তবে শ্বাসতন্ত্রের রোগ অনেক বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ক্যান্সারের মতো রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। অন্যদিকে, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে গাছের স্বাভাবিক বেড়ে উঠা ব্যাহত হচ্ছে। একই সাথে ফলজ গাছের ফলন কমে যাচ্ছে। তাই দূষণের শুরুটা বায়ু দিয়ে হলেও শেষ হচ্ছে জনজীবন ও প্রকৃতি বিনষ্টের মধ্য দিয়ে। যা পুরো পৃথিবীর জন্যই মারাত্মক হুমকি।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় মাটি থেকে দুই হাজার টন ধুলোবালি আকাশে উড়ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। ঢাকার বাতাসে ধুলোবালি এবং শিল্পকারখানার ধোঁয়া বেড়ে যাওয়ায় বাতাসের মান দিনদিন খারাপ হচ্ছে। বর্তমানে দূষণের যে মাত্রা তাতে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের এক গবেষণা অনুযায়ী, গত অক্টেবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যত শিশুকে অভিভাবকরা ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান, তাদের ৪৯ শতাংশ শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। শিশুবিশেষজ্ঞ ডা. নাজমা ইয়াসমীন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বায়ু দূষণের কারণে রাজধানীর শিশুরা শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, মাইগ্রেন বা মাথা ব্যথা জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া বায়ূদূষণ দীর্ঘমেয়াদি হলে শিশুরা ক্যান্সার এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। শুধু শিশুরাই নয় বায়ু দূষণের কারণে রাজধানীতে সব বয়সি মানুষের শ্বাসতন্ত্রের রোগ বাড়ছে। অন্তঃসত্ত্বা মা বায়ু দূষণের শিকার হলে সন্তান আকারে ছোট হতে পারে, ওজন কম হতে পারে, মানসিক ও স্নায়ুগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। অটিস্টিক শিশু জন্ম হওয়ারও একটি কারণ বায়ুদূষণ।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, রাজধানী ঢাকা এখন বিশ্বের সবোর্চ্চ দূষিত বায়ুর শহর। ধুলার কারণে এই দূষণের মাত্রা দিন দিনই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ঢাকা শহরের প্রায় দেড় কোটি মানুষ এক অবিশ্বাস্য বিষাক্ত গ্যাসের মধ্যে বাস করছে। নতুন নতুন অবকাঠামোর নামে প্রতিনিয়ত খোঁড়াখুঁড়ির হচ্ছে নগরের বিভিন্ন এলাকা। ফলে ধুলা হয়ে উঠেছে নিত্যসঙ্গী। শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীতে ধুলা দূষণের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে যায়। আমাদের দেশের বিশেষ করে ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ ইটভাটা, কলকারখানা, নির্মাণকাজ এবং যানবাহনের ধোঁয়া। এ অবস্থায় বায়ুদূষণে ঢাকায় গড় আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। বায়ুদূষণ শুধু যে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে তা নয়। এ দূষণ প্রকৃতিকেও ধ্বংস করছে। বায়ু দূষণের ফলে গাছের স্বাভাবিক বেড়ে উঠা ব্যাহত হচ্ছে। ফলজ গাছের ফলন অনেক কমে যাচ্ছে।

জনজীবন এবং প্রকৃতি ধ্বংসের পরও বায়ুদূষণ ঠেকাতে সরকারের তেমন উদ্যোগ নেই। বায়ু দূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এসব কারণে দূষণের পরিমাণ বাড়ছে। দূষণ কমাতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা দিলেও তা উপেক্ষিত। বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালত ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, ঢাকার যেসব এলাকায় উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে সেসব এলাকা (কাজের স্থান) ঘেরাও করে কাজ করা এবং উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের কারণে ধুলোবালি প্রবণ এলাকায় দিনে দুইবার পানি ছিটাতে ঢাকার দুই সিটি মেয়র ও নির্বাহীগণকে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ঢাকায় বায়ুদূষণ আবার মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছিল তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিষয়টি আবারো আদালতের নোটিশে আনতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, দূষণ কমাতে আমরা ব্যাপক কাজ করছি। গত দেড় বছরে অবৈধ ইটভাটাগুলোর ৬২ শতাংশ বন্ধ করা গেছে। চলতি মাস থেকে সারাদেশে বায়ু দূষণের বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি এবং জনগণকে বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরকে নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাতাসে বিষ ঝুঁকিতে জীবন

আপডেট টাইম : ০৯:৫৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বায়ু দূষণের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় উঠে এসেছে ঢাকা। রাজধানী ঢাকার বাতাসে কুয়াশার মতো ভাসছে ধূলিকণা। বুক ভরে নিশ্বাস নেয়া যাচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর ঢাকায় বায়ুদূষণ বেড়েছে ১৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান যাচাই বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার এর তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান আট দিন শীর্ষে ছিল। গত ১৯ থেকে ২২ জানুয়ারি টানা চারদিন বায়ুদূষণে বিশ্বের দূষিত শহরের শীর্ষে ছিল ঢাকা। এ চারদিন ঢাকায় বায়ুর মান সূচক ছিল গড়ে যথাক্রমে ২২৬, ২৩৩, ২৪৩ ও ২৫৮ পিপিএম। বিশেষজ্ঞদের মতে এটা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’। এর মধ্যে গত ২১ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় বায়ুর মান সূচক ছিল ৩৭২ পিপিএম। ওই সময় বায়ুতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা ‘পিএম ২.৫’ প্রতি ঘনমিটারে ছিল ৩২২ মাইক্রোগ্রাম। বিশেষজ্ঞদের মতে যা ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’। এই অবস্থা পরিবর্তনের এখনই উদ্যোগ না নিলে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা বা রেড এলার্ড জারি ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

বায়ুমানের যা অবস্থা তাতে বলা যায় ঢাকার বাতাসে ভাসছে বিষ। আর এই বাতাসের বিষে জনস্বাস্থ্য এখন চরম ঝুঁকিতে। এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণসহ অন্যান্য দূষণে দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস।
  জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণ যদি এভাবে চলতে থাকে তবে শ্বাসতন্ত্রের রোগ অনেক বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ক্যান্সারের মতো রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। অন্যদিকে, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে গাছের স্বাভাবিক বেড়ে উঠা ব্যাহত হচ্ছে। একই সাথে ফলজ গাছের ফলন কমে যাচ্ছে। তাই দূষণের শুরুটা বায়ু দিয়ে হলেও শেষ হচ্ছে জনজীবন ও প্রকৃতি বিনষ্টের মধ্য দিয়ে। যা পুরো পৃথিবীর জন্যই মারাত্মক হুমকি।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় মাটি থেকে দুই হাজার টন ধুলোবালি আকাশে উড়ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। ঢাকার বাতাসে ধুলোবালি এবং শিল্পকারখানার ধোঁয়া বেড়ে যাওয়ায় বাতাসের মান দিনদিন খারাপ হচ্ছে। বর্তমানে দূষণের যে মাত্রা তাতে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের এক গবেষণা অনুযায়ী, গত অক্টেবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যত শিশুকে অভিভাবকরা ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান, তাদের ৪৯ শতাংশ শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। শিশুবিশেষজ্ঞ ডা. নাজমা ইয়াসমীন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বায়ু দূষণের কারণে রাজধানীর শিশুরা শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, মাইগ্রেন বা মাথা ব্যথা জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া বায়ূদূষণ দীর্ঘমেয়াদি হলে শিশুরা ক্যান্সার এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। শুধু শিশুরাই নয় বায়ু দূষণের কারণে রাজধানীতে সব বয়সি মানুষের শ্বাসতন্ত্রের রোগ বাড়ছে। অন্তঃসত্ত্বা মা বায়ু দূষণের শিকার হলে সন্তান আকারে ছোট হতে পারে, ওজন কম হতে পারে, মানসিক ও স্নায়ুগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। অটিস্টিক শিশু জন্ম হওয়ারও একটি কারণ বায়ুদূষণ।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, রাজধানী ঢাকা এখন বিশ্বের সবোর্চ্চ দূষিত বায়ুর শহর। ধুলার কারণে এই দূষণের মাত্রা দিন দিনই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ঢাকা শহরের প্রায় দেড় কোটি মানুষ এক অবিশ্বাস্য বিষাক্ত গ্যাসের মধ্যে বাস করছে। নতুন নতুন অবকাঠামোর নামে প্রতিনিয়ত খোঁড়াখুঁড়ির হচ্ছে নগরের বিভিন্ন এলাকা। ফলে ধুলা হয়ে উঠেছে নিত্যসঙ্গী। শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীতে ধুলা দূষণের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে যায়। আমাদের দেশের বিশেষ করে ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ ইটভাটা, কলকারখানা, নির্মাণকাজ এবং যানবাহনের ধোঁয়া। এ অবস্থায় বায়ুদূষণে ঢাকায় গড় আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। বায়ুদূষণ শুধু যে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে তা নয়। এ দূষণ প্রকৃতিকেও ধ্বংস করছে। বায়ু দূষণের ফলে গাছের স্বাভাবিক বেড়ে উঠা ব্যাহত হচ্ছে। ফলজ গাছের ফলন অনেক কমে যাচ্ছে।

জনজীবন এবং প্রকৃতি ধ্বংসের পরও বায়ুদূষণ ঠেকাতে সরকারের তেমন উদ্যোগ নেই। বায়ু দূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এসব কারণে দূষণের পরিমাণ বাড়ছে। দূষণ কমাতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা দিলেও তা উপেক্ষিত। বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালত ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, ঢাকার যেসব এলাকায় উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে সেসব এলাকা (কাজের স্থান) ঘেরাও করে কাজ করা এবং উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের কারণে ধুলোবালি প্রবণ এলাকায় দিনে দুইবার পানি ছিটাতে ঢাকার দুই সিটি মেয়র ও নির্বাহীগণকে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ঢাকায় বায়ুদূষণ আবার মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছিল তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিষয়টি আবারো আদালতের নোটিশে আনতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, দূষণ কমাতে আমরা ব্যাপক কাজ করছি। গত দেড় বছরে অবৈধ ইটভাটাগুলোর ৬২ শতাংশ বন্ধ করা গেছে। চলতি মাস থেকে সারাদেশে বায়ু দূষণের বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি এবং জনগণকে বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরকে নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসবে।