আজ শবেবরাত। মুসলিম উম্মাহর এক বরকতময় পবিত্র রাত। কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সারা রাত ইবাদত বন্দেগী করবেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন, তিনি যেন আমাদের স্বস্তি, শান্তি ও দেশকে বিপদমুক্ত রাখেন। কটিয়াদী আসমিতা ইউনিয়নের মধ্যপাড়া পাশাপাশি প্রাথমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাঁবুতে বসে যখন লিখছি তখন কত কথা মনে পড়ছে। ৪ দিন পর প্রতিবেশী মহান ভারতের জনপ্রিয় নেতা শ্রী নরেন্দ্র দামাদোর দাস মোদি জীবনে প্রথম রক্তের দামে কেনা বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তিনি যদি বর্তমান সরকার এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে তুলে ধরতে বা শক্তিশালী করতে আসেন তাহলে মানুষের অন্তরে খুব একটা জায়গা পাবেন না। আর একজন পোড় খাওয়া সফল রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বাংলার প্রাণ খুঁজতে আসেন এবং খুঁজে পান তাহলে তা হবে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন বা সাফল্য।
গতকাল বাজিতপুর ছিলাম। বাজিতপুরের এক বিরল চরিত্রের মানুষ আলহাজ মজিবুর রহমান মঞ্জু। দুই দুইবার এমপি হয়েছিলেন। প্রথমে মেম্বার, তারপর চেয়ারম্যান, সেখান থেকে এমপি। কোনো সভা-সমাবেশে কখনো কোনো বক্তৃতা করেছিলেন কিনা জানি না। কিন্তু সংসদে তার ফ্লোর নেওয়ার নজির নেই। সংসদে দাঁড়িয়ে একবারও কথা বলেননি। দুটি মন্ত্রণালয়ে আমার সঙ্গে সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। অংশ না নেওয়ার কারণে কখনো কোনো দিন কার্যপত্রে নাম উঠেনি। এ নিয়ে দু-চারবার পীড়াপীড়িও করেছি, সভাপতি সাহেবকে সালাম দিয়ে, ‘আপনারা যে আলোচনা করেছেন, ভালো করেছেন। আমি আপনাদের সঙ্গে একমত’- এ ধরনের দুকথা বলে শেষ করতে। কিন্তু তাকে টলাতে পারিনি। সেই মজিবুর রহমান মঞ্জু কিছুদিন আগে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। থাকলে বাজিতপুর এসেছি শুনে কতবার যে আসতেন তা বলা মুশকিল। ১০-১২ বছর আগে একবার এক সভা করতে বাজিতপুর গিয়েছিলাম। মজিবুর রহমান মঞ্জুর বাড়ির পাশে এক রেস্ট হাউসে ছিলাম। সকালে হাঁটতে হাঁটতে তার বাড়ি গিয়েছিলাম। অসম্ভব যত্ন করেছিলেন। এবার কিশোরগঞ্জে অবস্থান কর্মসূচিতে এসে তার কথা বেশি করে মনে পড়ছে। আমার দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ভাটি বাংলার বেশ প্রিয় মানুষ অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। আমার সঙ্গে তিনি এই অমানবিক কষ্ট সইতে পারেননি, তাই অল্পতে পাওয়ার জন্য হয়তো প্রধান বিরোধী দল বিএনপিতে গেছেন। তা যেতেই পারেন। আমায় যদি বলে যেতেন ভালো করতেন, বাধা দিতাম না, সেটাই হতো তার জন্য সাহসের বা মর্যাদার। বেগম খালেদা জিয়া একবারের জন্যও যদি বলতেন, ‘আপনার সাধারণ সম্পাদক আমাদের দলে আসতে চায়, কী বলেন?’ সেটাই ভালো হতো, সেটাই হতো উত্তম রাজনৈতিক শিষ্টাচার। কিন্তু তা হওয়ার নয়। এখন রাজনীতিতে আদব-কায়দা, শালীন-অশালীনের কোনো তফাৎ নেই। নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকির খাতায় পড়ে থাক শূন্য। তাই সম্মান পেলেও যেমন পুলকিত হই না, স্বার্থান্বেষীদের অপমানেও তেমন ব্যথা পাই না। অনেক কিছুই গা সওয়া হয়ে গেছে। গভীর রাতে যখন লিখছিলাম, তখন সবকিছু ছাপিয়ে আমার সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যাওয়ার কথা বারবার মনে পড়ছিল।
আট বছর আগে কোনো এক দলীয় কর্মসূচিতে কিশোরগঞ্জ এসেছিলাম। ছিলাম সার্কিট হাউসে। সে ছিল ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিন। হঠাৎ পত্রিকায় চোখ পড়তেই কুশিমনির ছবি। মাটি চাপা ক্ষত-বিক্ষত ছোট্ট এক শিশু ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। কেন জানি খবরটা আমায় চমকে দিয়েছিল। পরদিন ঢাকা ফিরে মেডিকেল হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলাম। তাই হাসপাতালে গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। এমনিতেই এক ব্রিগেডিয়ার বেশ ভালো মানুষ ডাইরেক্টর ছিলেন। আমার সঙ্গে তিনিও সেই সদ্য ভূমিষ্ঠ ক্ষত-বিক্ষত শিশুকে দেখতে গিয়েছিলেন। ১৩০ বা ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ড। একেবারে দরজার মুখে বিছানার উপর যেন তুলার স্তূপ। কত আর হবে, এক-দেড় কেজির এক টুকরো মাংস। শুধু ছোট্ট ছোট্ট হাতের আঙ্গুলগুলো নাড়াচাড়া করছিল। যেখানেই তাকিয়েছি সেখানেই ক্ষত আর ক্ষত। পায়ের দিকের হাড় বেরিয়েছিল। মনে হচ্ছিল একটা রগ বেরিয়ে আছে। ডান গালে মাংস ছিল না। গলার ভেতর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। সারা শরীরে শুধু ব্যান্ডেজ আর ব্যান্ডেজ। বিছানার পাশে স্থির দাঁড়িয়ে ছিলাম। ক্ষত-বিক্ষত দেহে দুটো চোখ তখনো তারার মতো জ্বলজ্বল করছিল। সেই চোখে চোখ পড়তেই দেড়-দুই বছর আগে দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে আমাদের ছেড়ে যে মা চলে গিয়েছিলেন তাকে পেয়েছিলাম। সবকিছুর মাঝেও একটা গুমরে মরা বুকফাটা হাহাকার আমায় তাড়িয়ে বেড়াত। কিছুই ভালো লাগত না। সে হাহাকার, সে শূন্যতা শুধু অনুভব করা যায়, প্রকাশ করা যায় না। প্রকাশের ভাষাও অনেকের থাকে না, যেমন আমার নেই। আমার চোখ তার চোখে যখন আটকে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল সে বলছে, ‘বাবা এসেছ। এত দেরি করে এলে। বড় কষ্ট। আমায় মার কাছে নিয়ে চল। এখানে থাকতে আমার আর ভালো লাগছে না।’ আমার বুক দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে গিয়েছিল, চোখ পানিতে ভরে গিয়েছিল। বারবার চেষ্টা করেও চোখ ফেরাতে পারিনি। মনে হচ্ছিল ১৬ বছর নির্বাসনে থেকে ‘৯০-এ দেশে ফিরলে ‘৯৫-র দিকে আমার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা হয়েছিল। হয়তো আমাদেরই কোনো দোষে আমাদের সে সন্তান দুনিয়ার মুখ দেখেনি। আমরা তাকে পৃথিবীতে আনতে পারিনি। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে অনুরাগে অভিমানে তার মুখ না দেখিয়ে, আমাদের মুখ না দেখেই চলে গিয়েছিল। কি যে ব্যথা পেয়েছিলাম কাউকে বুঝাতে পারিনি। যার কায়া দেখিনি, তার মায়ায় লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছি। আমার স্ত্রী সাদামাটা মানুষ অতটা বুঝত না। কিন্তু মা আমার বোবা কান্না বুঝতেন। কতবার তার বুকে মাথা চেপে সান্ত্বনা দিতেন, ‘আল্লাহর ধন আল্লাহ নিয়েছে। মন খারাপ করে কী করবি?’ কিন্তু মার সান্ত্বনা আমায় আরও ব্যাকুল করত। চোখ জুড়ে দুনিয়ার পানি ঝরত। নিজের বুক তো ভাসাতামই, মার বুকও সেই পানিতে ভাসত। অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু হারিয়ে যাওয়া সন্তানের ব্যথা ভুলতে পারিনি। আজ লিখতে গিয়েও দেহমন অবশ হয়ে আসছে, চিন্তা চৈতন্য অসার হয়ে যেতে চাচ্ছে। ২০ বছর পরও সেই সন্তানের জন্য চোখে পানি রাখতে পারি না। বুকের ভেতর বেদনার নহর বয়ে যায়। ২০০৭ সালে ঢাকা মেডিকেলে ক্ষত-বিক্ষত মামণিকে দেখে মনে হয়েছিল আমার সেই হারানো সন্তানই বিছানায় পড়ে আছে। বাড়ি ফিরতে গিয়েও তাকে ভুলতে পারিনি। স্ত্রীকে বলেছিলাম, ‘কাকের ঠুকরে ক্ষত-বিক্ষত এক শিশু দেখে এলাম। আমাদের দীপ-কুঁড়ি তো বেশ বড় হয়েছে। আল্লাহ যদি বাচ্চাটিকে বাঁচিয়ে রাখে আমরা তাকে ঘরে আনলে কেমন হয়?’ কথা শুনে আমার স্ত্রী হাসপাতালে যাওয়ার জন্যে তৈরি হয়। দীপ-কুঁড়িও সঙ্গে যায়। আমার এলাকার এক শিশু চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর শাহ আলম বাচ্চাটিকে দেখাশুনা করছিল। আমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েও শিশুটির প্রতি আকৃষ্ট হয়। ডাক্তার-নার্সদের বলা হয় চিকিৎসায় যেন কোনো অবহেলা না হয়। ওষুধপত্র খাবার-দাবার যা প্রয়োজন আমরা দেব, আমাদের পরিবারের একজন হিসেবে তার চিকিৎসা হবে। বাসায় ফিরেই বাচ্চার জন্য কাপড়-চোপড়, কাঁথা-বালিশ, ওষুধপত্র নিয়ে আমার স্ত্রী হাসপাতালে ছুটে। পরদিন সকালে আবার আমি যাই। দুপুরে ছেলেমেয়েরা মায়ের সঙ্গে যায়। আমরা বাড়িতে থাকলেও মন পড়ে থাকে হাসপাতালে। দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার কালে ১০-১৫ দিন মা হাসপাতালে ছিলেন। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা আমরা সেখানে থাকতাম। বড় মা চলে যাওয়ার পর ছোট মায়ের জন্য আবার হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি। কয়েকদিনের মধ্যেই তার প্রতি আমাদের মায়া পড়ে যায়। যেদিকেই তাকাই সেদিকেই তাকে দেখতে পাই। বাড়িতে একটুও শান্তি পাই না। ব্যাপারটা শুধু আমার নয়, ছেলেমেয়ে এবং তার মায়েরও। দেখতে দেখতে দিন কেটে যায়। মামণি আমার অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠে। তার সারা শরীরে ৫০টি ক্ষত ছিল, তার মধ্যে পা এবং গালেরটা ছিল মারাত্দক।
দুধ খেতে পারত না, কাঁটা গালের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পড়ত। হঠাৎই একদিন ঢাকা মেডিকেলের পরিচালকের চিঠি, ‘শিশুটি আল্লাহর দয়ায় সুস্থ হয়ে উঠেছে। তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’ আমি ভেবেছিলাম কোর্টে একটা এফিডেভিট করে মামণিকে ঘরে নিয়ে আসব। পরে দেখি ব্যাপারটা অত সোজা নয়। বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও একটি অসহায় শিশুকে খুব সহজে পিতৃমাতৃ স্নেহে লালন করা যাবে না। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ ধরনের শিশুর দায়িত্ব দিয়েছে কোনো এক এনজিওকে। বিএনপি সরকারে জামায়াতের নেতা মুজাহিদুল ইসলাম ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী। তাই সেদিকে যাওয়ার চিন্তা করিনি। ডিজি সমাজকল্যাণ আমার অনুরক্ত ভক্ত, সচিবও ছিলেন খুবই বাধ্য। তারা একথা ওকথা বলছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছু করছিলেন না। এ নিয়ে হাইকোর্টে রিট করতে ড. কামাল হোসেনের কাছে গিয়েছিলাম। সেদিন তাকে পাইনি। সেখান থেকে আবার হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ডাইরেক্টর মিলিটারি ভদ্রলোক বলেছিলেন, ‘স্যার, বাচ্চাটার জন্য বেগম সাহেবের যখন এত মায়া। ওকে এনজিওর কাছ থেকেই নিয়ে নিন। তারপর আইন-আদালত যা করার করবেন। তার পরামর্শ সেদিন আমার কাজে লেগেছিল। তিন পাতা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে মামণিকে আমাদের ঘরে এনেছিলাম। হাসপাতালে ওকে দেখাশোনা করত মিনু। তাকে এনে প্রায় এক বছর রেখেছিলাম। আমরা অনেক লোক গিয়েছিলাম মামণিকে আনতে। তখন বাবর রোডের বাড়ি ভাঙচুর হচ্ছিল। মোস্তফা নামে এক পুলিশ হাবিলদার থাকত সেখানে। মামণিকে বাড়ি আনলে সে আজান দিয়েছিল। আমাদের দেশে ছেলে হলে মসজিদে আজান দেয়। আমার মামণির জন্য মোহাম্মদপুরের বাসায় হাবিলদার মোস্তফা আজান দিয়েছিল। এভাবেই আমার কুশিমণি আমাদের ঘর আলো করতে আসে। আমাদের বাড়িতে তখন কোনো ছোট্ট মানুষ ছিল না। দীপের ১৯, কুঁড়ির ১৪। দুজনই বেশ বড়। পিঠাপিঠি ভাইবোনের কারণে একজন আরেকজনের সঙ্গে ছিল সাপে-নেউলে সম্পর্ক। এক টেবিলে খাওয়ানো যেত না, এক ঘরে পড়ত না, এক গাড়িতে চড়ত না। কোথাও যাওয়ার পথে বলে কয়ে উঠালেও খোঁচাখুঁচির কারণে রাস্তায়ই নেমে যেত। একবার ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল যাওয়ার পথে মৌচাকে তেমনটা হয়েছিল। খোঁচাখুঁচির এক পর্যায়ে দীপ বলেছিল, ‘তুই যদি ছোট বোন না হতি’। ওই পর্যন্তই। কুঁড়ি তার স্বরে খিচিয়ে উঠে, ‘ছোট বোন না হলে কী করতা, কী করতা?’ আবার খোঁচাখুঁচি। এক পর্যায়ে দীপ বেঁকে বসে, সে কুঁড়ির সঙ্গে যাবে না। গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ে। সঙ্গে আরেক গাড়ি ছিল বলে সে যাত্রায় রক্ষা। কিন্তু কুশিমণি আসার পর আমূল পরিবর্তন। আমরা যেমন ১০ ভাইবোন মার সঙ্গে এক রসুনের কোয়া ছিলাম। ঠিক তেমনি কুশির সঙ্গে আমরা সব একাকার। বাড়িতে কোনো অশান্তি নেই, ভাইবোনের কোনো ঝগড়াঝাঁটি মারামারি নেই, আমার বুকে কোনো জ্বালা নেই, ব্যথাবেদনা নেই, অবহেলা অপমান কিছুই স্পর্শ করে না। কুশি আজ আমাদের পরিবারে অন্ধকারে আলোর দীপশিখা, সব শক্তির উৎস, হতাশায় আশা, ধ্রুবতারার মতো এক প্রেরণার আধার।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মহান নেতা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের পদচারণায় ধন্য কিশোরগঞ্জে এবার শবেবরাতে রাত কাটাব। তাই কিছুই পাব না, তেমনটা ভাবব কেন? নিশ্চয়ই দয়াময় প্রভুর কাছে কায়মনে প্রার্থনা করব, তিনি যেন আমাদের কামিয়াবি করেন, দেশের সব দুর্যোগ-দুর্ভোগ দূর করে দেন। মধ্যপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে যখন লিখছিলাম তখন ‘৭৫-এর প্রতিরোধ সংগ্রামী মোস্তফার (মস্তু) কথা বারবার মনে পড়ছিল। গোসল সেরে তাঁবু থেকে বেরিয়েই দেখি মস্তু দাঁড়িয়ে। স্বাস্থ্য ভেঙে অনেক বুড়ো হয়ে গেছে। তার আইএ পড়া ছেলেকে দেখলাম, ভালোই লাগল। মোস্তফা যখন প্রতিরোধ সংগ্রামে গারো পাহাড়ের পাদদেশে আমার সঙ্গে শরিক হয়েছিল তখন এই ছেলের মতোই ছিল। তারপর কতদিন, দেখতে দেখতে ৪০ বছর কেটে গেছে। মনে হয় এই তো সেদিন আমরা রাতদিন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। দেখতে দেখতে ৪০ বছর ভাবাই যায় না। বড় ভালো লেগেছে মধ্যপাড়ার হাজারো মানুষকে।
বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাচ্চারা যে কী অসাধারণ দুই বেলা যত্ন করে খাবার খাইয়েছে। বাচ্চাদের কলকোলাহলে ভীষণ আনন্দিত হয়েছি। সেখান থেকে গতকাল দুপুরে ভাটগাঁও ব্রাহ্মণকচুরীতে ঢেরা ঘেরেছি। জিয়াউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ গেটে দেখলাম জননেত্রী শেখ হাসিনার বোনা এক কাঁঠাল গাছ। প্রস্তরফলক যত বড় কাঁঠাল গাছটি তার চেয়ে খুব একটা বড় হয়নি। একজন প্রধানমন্ত্রীর গাছেরই যদি এই দশা, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী? আল্লাহর যা দয়া তাই করবেন। আমরা মাথা পেতে নেব। আর মাত্র ১৫ দিন মুসলিম জাহানের সবচেয়ে পবিত্র মাহে রমজান। আল্লাহ যেন আমাদের ভালোভাবে রমজানের নির্দেশ পালন করতে দেন।
লেখক : রাজনীতিক।