ঢাকা ০৪:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরের গ্রামীণ সংস্কৃতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৪৩:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২
  • ১৬২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় হাওর সৃষ্টির বহু বছর পূর্ব হতেই মানুষজনের বসবাস। বর্তমানে কেউ হাওর পারের মানুষ, অনেক মানুষ হাওরের ভিতরে বসবাস করেন। এক সুপ্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক সমৃদ্ধ জনপদ। মোগল বাদশাহ আকবরের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলার বার ভূঁইয়াদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও যোগ্যতম মসনদে আলা ঈশাখাঁর যাবতীয় খ্যাতি ও কার্যাবলী হাওর জনপদ আবর্তিত ছিল।

ধারণা করা হয়, বখতিয়ার খিলজী বঙ্গ বিজয় করতে এসে রাজধানী জয় করে পরবর্তী সময় যে অঞ্চলে বিপত্তির সম্মুখীন হন, আর এগুতে পারেন নি, সে অঞ্চলটি হল: এই হাওরাঞ্চল; যাকে নিম্নভূমি কিংবা জলাভূমিও বলা হয়ে থাকে। বৃটিশরা যে অঞ্চল নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল এবং ইংরেজ বিরোধী এখানকার ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র বিদ্রোহ, বিপ্লব ছিল স্বার্থক। বাঙালির হাজার বছরের নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতি তার এক বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে হাওর পাড়ের মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প, আনন্দ-বেদনা ও জীবনযাপনের বর্ণিল উৎসব আয়োজন। বাউল গান, সারিগান, জারি গান, বিয়ের গীত, দেহতত্ত্ব, শরিয়তি, মারফতি, মুর্শিদি, মরমি, লোকগীতি, ভাটিয়ালি, পালাগান, ঘেটুগানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় গানের বিশাল সম্ভার এই হাওরাঞ্চলে।

হাওরের উর্বর মাটির বুকে জন্ম নিয়েছেন সাহিত্যিক, মনীষীরা। হাওরাঞ্চলের অন্যতম বিয়ের আনন্দ হলো গীত ও লাইট্টা বারি (লাঠি বারি) খেলা। পালকি দিয়ে বউ নিয়া আসা এখনো দেখা যায় হাওরের বুকে। গবেষণা, চর্চা, সংরক্ষণ এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সব কিছুই কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে। হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন, পানির সঙ্গে সংগ্রাম করে বছরের ৬-৭ মাস টিকে থাকা, হাওরের আফাল (ঢেউ)-এর সঙ্গে হাওরবাসীর মানিয়ে নেয়া জীবন শৈল্পিকতা, হাওরের সংস্কৃতি, গান, বিচিত্র পেশা, হাওরের মৎস্য সম্পদ, হাওরের সোনার ফসল, হাওরের সম্ভাবনা, হাওরাঞ্চলের জলেভাসা দ্বীপ ছোট ছোট গ্রাম, ঢেউয়ের গর্জন, হিজল-করচের বাগ, হাওরে চাঁদনি উদযাপন প্রভৃতি আমাদের বাঙালি জাতিসত্তার কৃষ্টি-সভ্যতার অংশ।

হাওরের বরপুত্র বলে খ্যাত রাষ্ট্রপতিও হাওরের জ্যোৎস্না জলের মানুষ। ইচ্ছে করলে বিভিন্ন পুকুরের ঘাটলায় বসে কাটিয়ে দেয়া যাবে একটা বিকেল। আবার দিল্লির আখড়ার পাশেই রয়েছে বিথঙ্গলের আখড়া ও বন। এখানে মোগল আমলে তৈরি একটা স্থাপনা রয়েছে। তবে সংরক্ষণের অভাবে সেটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দিল্লির আখড়া কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায় পড়লেও বিথঙ্গলের আখড়ার অবস্থান হবিগঞ্জের বানিয়াচং এ। এ দুটি আখড়াই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এছাড়া অষ্টগ্রামের প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরনো পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট কুতুব শাহ মসজিদ, আওরঙ্গজেব মসজিদ, ঈশাখাঁ সময়ে নির্মিত ইটনার শাহী মসজিদ, মোঘল আমলে নির্মিত নিকলীর গুরুই মসজিদ হাওর পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরের গ্রামীণ সংস্কৃতি

আপডেট টাইম : ০৭:৪৩:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় হাওর সৃষ্টির বহু বছর পূর্ব হতেই মানুষজনের বসবাস। বর্তমানে কেউ হাওর পারের মানুষ, অনেক মানুষ হাওরের ভিতরে বসবাস করেন। এক সুপ্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক সমৃদ্ধ জনপদ। মোগল বাদশাহ আকবরের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলার বার ভূঁইয়াদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও যোগ্যতম মসনদে আলা ঈশাখাঁর যাবতীয় খ্যাতি ও কার্যাবলী হাওর জনপদ আবর্তিত ছিল।

ধারণা করা হয়, বখতিয়ার খিলজী বঙ্গ বিজয় করতে এসে রাজধানী জয় করে পরবর্তী সময় যে অঞ্চলে বিপত্তির সম্মুখীন হন, আর এগুতে পারেন নি, সে অঞ্চলটি হল: এই হাওরাঞ্চল; যাকে নিম্নভূমি কিংবা জলাভূমিও বলা হয়ে থাকে। বৃটিশরা যে অঞ্চল নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল এবং ইংরেজ বিরোধী এখানকার ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র বিদ্রোহ, বিপ্লব ছিল স্বার্থক। বাঙালির হাজার বছরের নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতি তার এক বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে হাওর পাড়ের মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প, আনন্দ-বেদনা ও জীবনযাপনের বর্ণিল উৎসব আয়োজন। বাউল গান, সারিগান, জারি গান, বিয়ের গীত, দেহতত্ত্ব, শরিয়তি, মারফতি, মুর্শিদি, মরমি, লোকগীতি, ভাটিয়ালি, পালাগান, ঘেটুগানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় গানের বিশাল সম্ভার এই হাওরাঞ্চলে।

হাওরের উর্বর মাটির বুকে জন্ম নিয়েছেন সাহিত্যিক, মনীষীরা। হাওরাঞ্চলের অন্যতম বিয়ের আনন্দ হলো গীত ও লাইট্টা বারি (লাঠি বারি) খেলা। পালকি দিয়ে বউ নিয়া আসা এখনো দেখা যায় হাওরের বুকে। গবেষণা, চর্চা, সংরক্ষণ এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সব কিছুই কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে। হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন, পানির সঙ্গে সংগ্রাম করে বছরের ৬-৭ মাস টিকে থাকা, হাওরের আফাল (ঢেউ)-এর সঙ্গে হাওরবাসীর মানিয়ে নেয়া জীবন শৈল্পিকতা, হাওরের সংস্কৃতি, গান, বিচিত্র পেশা, হাওরের মৎস্য সম্পদ, হাওরের সোনার ফসল, হাওরের সম্ভাবনা, হাওরাঞ্চলের জলেভাসা দ্বীপ ছোট ছোট গ্রাম, ঢেউয়ের গর্জন, হিজল-করচের বাগ, হাওরে চাঁদনি উদযাপন প্রভৃতি আমাদের বাঙালি জাতিসত্তার কৃষ্টি-সভ্যতার অংশ।

হাওরের বরপুত্র বলে খ্যাত রাষ্ট্রপতিও হাওরের জ্যোৎস্না জলের মানুষ। ইচ্ছে করলে বিভিন্ন পুকুরের ঘাটলায় বসে কাটিয়ে দেয়া যাবে একটা বিকেল। আবার দিল্লির আখড়ার পাশেই রয়েছে বিথঙ্গলের আখড়া ও বন। এখানে মোগল আমলে তৈরি একটা স্থাপনা রয়েছে। তবে সংরক্ষণের অভাবে সেটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দিল্লির আখড়া কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায় পড়লেও বিথঙ্গলের আখড়ার অবস্থান হবিগঞ্জের বানিয়াচং এ। এ দুটি আখড়াই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এছাড়া অষ্টগ্রামের প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরনো পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট কুতুব শাহ মসজিদ, আওরঙ্গজেব মসজিদ, ঈশাখাঁ সময়ে নির্মিত ইটনার শাহী মসজিদ, মোঘল আমলে নির্মিত নিকলীর গুরুই মসজিদ হাওর পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে।