ঢাকা ০৫:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেতে চাই রোদেলা যৌবনের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:০৬:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী ২০২২
  • ২৭৩ বার

ড. গোলসান আরা বেগমঃ ফুল ফুটে ঝরে যায়, রেখে যায় তার স্মৃতি চিহ্ন। প্রকৃতির অপরুপ খেলা চলে প্রতিনিয়ত। পৃথিবী নামক পাগলা গারদে প্রতি মহুর্তে দেখি ভাঙ্গা গড়ার খেলা। সেই খেলার মাটির পুতুল মানুষ নামক সৃস্টির সেরা জীব আমরা। দুই মিনিটের নাই ভরসা মানুষের বেঁচে থাকার। চোখ বুজিলে দুনিয়া আন্ধার। তারপরও করি হই চই। টুনকো জীবনের মানে বুঝি না। অযথা একে অপরের মাথায় ভাঙ্গি কাঁঠাল। মুখের আহার নেই কেড়ে। আমারা কেন মনুষ হতে পারি না। কেন বুঝি না এই পৃথিবীর কিচ্ছু আমাদের না। একদিন ঠুনকো অজুহাতে সব ছেড়ে চলে যেতে হবে অজানা গন্তব্যে। এই তো আজকে দুপুর ১২.২২ এ ২৩ শে ডিসেম্বর ২০২১ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু পাশা না ফেরার দেশে চলে গেলো। বন্ধুদের মুত্যুর সিঁড়ি ক্রমাগত হারে বড় হচ্ছে। বেশী দুরে নয়,আমাদেরও ওঠতে হবে সেই সিঁড়িতে। মৃত্যু ঘারের পেছনে ও নাকের নীছে ঘুরাঘুরি করছে।

ঘড়ির কাঁটা সামনে হাঁটছে, আমাদের জীবনটা ছোট হয়ে আসছে। কি চরম ও কঠিন বাস্তবতা। এই পৃথিবীতে কেন এসেছিলাম? কেউ কি জানি এ প্রশ্নের উত্তর।মায়ার বাহু বন্ধনে কি ভাবে জড়ালাম। যেতে নাহি মন চায়।তবু যেতে হবে, দিতে হবে স্থান আগামীকে। বধির পৃথিবী নীরবে হাঁটছে আর মরণ খেলা খেলছে। কতো বর্ণিল যাদু দেখাইছে। হায় জীবন, মায়ার বাঁধন। আমার পূর্ব পুরুষ, তার পূর্ব প্রজন্ম — ক্রমান্নয়ে এসেছে — গিয়েছে অন্ধকার গহব্বরে হারিয়ে। এই মাস দুইয়েক আগে হারিয়েছি বন্ধু ড. আফসার আহমেদ, কোহিমা দাড়িং কে।তারও পুর্বে আরো বন্ধুদের হারিয়েছি। এভাবেই সবাই হারিয়ে যাবো। নতুন সভ্যতা নতুনের ভীড়ে বির্নিমান করে যাবো। রেখে যাবো পৃথিবীর বুকে হাতের ও পায়ের ফিঙ্গার ফ্রিন্ট।

পরবর্তি প্রজন্মের জন্য সামান্য হলেও আরো উন্নত পৃথিবী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স যখন সাত বছর ১৯৭৭ এ তৃতীয় ব্যাচে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হই। গড়িয়ে যায় ক্লাশ রুম, কড়িডোর, বই, খাতা, ল্যাব, লাইব্রেরী, ফযজুন্নেচ্ছা হলের ডালের গামলা, প্রান্তিকে চায়ের ধুয়া উড়ানো কাপের আড্ডাতে সাত বছর। ১৯৮৪ তে বিদ্যার পাহাড় মাথায় তুলে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাই গুডবাই। এরপর চাকুরী, সংসার, জীবনযুদ্ধে থাকি মেথে।কখন যে ৬০ পেরিয়ে চলে যাই অবসর জীবনে। এখন তো শুধু হাতে পায়ে অলসতা, চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। নির্জন বারান্দায় বসে আকাশ দেখি। অপেক্ষা করি কেউ মনের মাধুরী মিশিয়ে টিলিফোন করে কি না। ফেইজ বুকের পাতা উল্টাই। খুঁজি স্মৃতির ডায়রীতে সাজানো মিস্টি মধুর কতো স্মৃতি কথা।লাল মাটির চাদরে ঢাকা ঝুপঝাড়ের আড়ালে বসে গল্প করে প্রেমিক ঝুটি থাকতো মেতে।সে দৃশ্যও চোখে ভেসে বেড়ায়।ব্যক্তি জীবনে কেউ কেউ ঝুটি বাঁধতে পেরেছে, কেউবা পেয়েছে চোখের জল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসে ঢাকা থেকে বিশ মাইল দুরে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম।

গ্রামীন পরিবেশে আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি হল যেমন মীর মোশারফ হোসেন, আলবেরুনী, এক্সটেনশান, নওয়ার ফয়জুন্নেছা এ জায়গা করে নিয়েছিলাম নিবাসি হিসেবে। একটা আন্তরিক সেতু বন্ধনে ছিলাম আবদ্ধ। যা আজো মনে হলে মধুর মধুর অনুভুতিতে ভেসে যাই। পেতে চাই আবারও সেই রোদেলা যৌবনের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। তিন দিন পর এই মাত্র ফিরে এলাম পাশার মিলাদ মাহফিল করে। ধরিয়ে দিলো তিন পেকেট বিরিয়ানি ও মিষ্টি। মানু, রাশু,আতিয়ার, ইমতিয়াজ আমি জোছনা -মাত্র ৫ /৭ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠি উপস্থিত ছিলাম। পাশা ছিলো নিঃসন্তান, তা জানতাম না। যতদুর জানি তাদের দাম্পত্য জীবন ছিলো সুখের ও মধুময়। এক বৃন্তে বাঁধা দুটি জীবন পথ ঘুরিয়ে নিলো দু’দিকে। মীর মোহাম্মদ আলী পাশা ১৯৮২ বিসিএস এ প্রশাসনিক পদে জয়েন করেছিলো। সে অত্যান্ত সহজ সরল মেধাবী গভীর ইসলামী ভাবাদর্শের নমনীয় লোক ছিলো। চাকুরী জীবনে প্রচলিত ধারার সাথে অডজাস্ট করতে না পেরে সরকারী চাকুরী থেকে সরে আসে। সে বেশ হাসি খুশি ও উচ্ছল মনের অধিকারী ছিলো। কোভিড,চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলো পাশা, সেরেও ওঠেছিলো।কিন্তু মস্তিষ্কের ভেতরে যে টিউমার বাসা বেঁধেছিলো, সেই টেনে নিলো না ফেরার দেশে।

প্রায় মাসেক সময় কোমায় থেকে জীবনযুদ্ধে লড়াই করে পরাজিত হলো। রেখে গেলো প্রানের প্রিয় বিধবা স্ত্রীকে। হাত পা ছাড়া কিছুই হাসি খুশী এই মানুষটির সঙ্গে গেলো না। আমাদেরও হবে যেতে একই পথে। ভাবতে বসলে অবশ হয়ে আসে হাত পা। যেখানেই থাকি না কেন, ১২ জানুয়ারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্টা দিবসে ছুটে যেতে চেষ্টা করি প্রানের ক্যাম্পাসে। ঘুরে দেখে আসি সেই মুক্তমঞ্চ, টিএসসি প্রাঙ্গন, সপ্তম ছায়া মঞ্চ, শীতের পাখি, রসায়ন ডিপার্টমেন্ট, নতুন আঙ্গীকে সাজানো বিশ্ববিদ্যালয়ের কারুকার্য। মাথা নিচু করে শ্রদ্ধা জানাই বিদ্যা অর্জনের পাদপিঠকে। খুঁজতে থাকি আমার হারানো যৌবনের হাসি কান্না,মর্ম পাতায়।

বন্ধুদের সাথে করি টুকরো কথার ভাব বিনিময়।রুমন্হন ব্যথায় সিক্ত হয়ে, স্মৃতির ডায়রী বুকে ভরে ফিরে আসি আবাসন ঠিকানায়। ফেলে রেখে আসি কষ্টের নিঃশ্বাস,। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট অতিক্রম করার সময় হৃদয়টা কেন যে ধরফর করে জানি না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে রয়েছে সপ্তম ছায়ামঞ্চ। ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এই মঞ্চটি তাদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরী করেছে। একটি বট গাছের চারদিকে বৃত্তাকারে রয়েছে মোজাইক করা বেদী। প্রতি বছর ১ম শুক্রবারে দিন ব্যাপি প্রোগ্রাম করি ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এই বেদিতে।সঙ্গে নিয়ে যাই অতিথি হিসেবে ছেলে,বউ, মেয়ে, নাতি সহ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে।বেশ ফুর্তি করেই সারাদিন আনন্দের ব্যাগ বোঝাই করি।নবায়ন করি প্রানের ভালোবাসা। মঞ্চের পাশেই রয়েছে সকল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষারথীদের নামের তালিকা।চুমু দিয়ে প্রণাম করি ও শুকরিয়া আদায় করি নিজের স্বনাম ধন্য ভাগ্যকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ই আমাকে পৌঁছে দিয়েছে মানবতার উচ্চ চূড়ায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

পেতে চাই রোদেলা যৌবনের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন

আপডেট টাইম : ০৪:০৬:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী ২০২২

ড. গোলসান আরা বেগমঃ ফুল ফুটে ঝরে যায়, রেখে যায় তার স্মৃতি চিহ্ন। প্রকৃতির অপরুপ খেলা চলে প্রতিনিয়ত। পৃথিবী নামক পাগলা গারদে প্রতি মহুর্তে দেখি ভাঙ্গা গড়ার খেলা। সেই খেলার মাটির পুতুল মানুষ নামক সৃস্টির সেরা জীব আমরা। দুই মিনিটের নাই ভরসা মানুষের বেঁচে থাকার। চোখ বুজিলে দুনিয়া আন্ধার। তারপরও করি হই চই। টুনকো জীবনের মানে বুঝি না। অযথা একে অপরের মাথায় ভাঙ্গি কাঁঠাল। মুখের আহার নেই কেড়ে। আমারা কেন মনুষ হতে পারি না। কেন বুঝি না এই পৃথিবীর কিচ্ছু আমাদের না। একদিন ঠুনকো অজুহাতে সব ছেড়ে চলে যেতে হবে অজানা গন্তব্যে। এই তো আজকে দুপুর ১২.২২ এ ২৩ শে ডিসেম্বর ২০২১ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু পাশা না ফেরার দেশে চলে গেলো। বন্ধুদের মুত্যুর সিঁড়ি ক্রমাগত হারে বড় হচ্ছে। বেশী দুরে নয়,আমাদেরও ওঠতে হবে সেই সিঁড়িতে। মৃত্যু ঘারের পেছনে ও নাকের নীছে ঘুরাঘুরি করছে।

ঘড়ির কাঁটা সামনে হাঁটছে, আমাদের জীবনটা ছোট হয়ে আসছে। কি চরম ও কঠিন বাস্তবতা। এই পৃথিবীতে কেন এসেছিলাম? কেউ কি জানি এ প্রশ্নের উত্তর।মায়ার বাহু বন্ধনে কি ভাবে জড়ালাম। যেতে নাহি মন চায়।তবু যেতে হবে, দিতে হবে স্থান আগামীকে। বধির পৃথিবী নীরবে হাঁটছে আর মরণ খেলা খেলছে। কতো বর্ণিল যাদু দেখাইছে। হায় জীবন, মায়ার বাঁধন। আমার পূর্ব পুরুষ, তার পূর্ব প্রজন্ম — ক্রমান্নয়ে এসেছে — গিয়েছে অন্ধকার গহব্বরে হারিয়ে। এই মাস দুইয়েক আগে হারিয়েছি বন্ধু ড. আফসার আহমেদ, কোহিমা দাড়িং কে।তারও পুর্বে আরো বন্ধুদের হারিয়েছি। এভাবেই সবাই হারিয়ে যাবো। নতুন সভ্যতা নতুনের ভীড়ে বির্নিমান করে যাবো। রেখে যাবো পৃথিবীর বুকে হাতের ও পায়ের ফিঙ্গার ফ্রিন্ট।

পরবর্তি প্রজন্মের জন্য সামান্য হলেও আরো উন্নত পৃথিবী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স যখন সাত বছর ১৯৭৭ এ তৃতীয় ব্যাচে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হই। গড়িয়ে যায় ক্লাশ রুম, কড়িডোর, বই, খাতা, ল্যাব, লাইব্রেরী, ফযজুন্নেচ্ছা হলের ডালের গামলা, প্রান্তিকে চায়ের ধুয়া উড়ানো কাপের আড্ডাতে সাত বছর। ১৯৮৪ তে বিদ্যার পাহাড় মাথায় তুলে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাই গুডবাই। এরপর চাকুরী, সংসার, জীবনযুদ্ধে থাকি মেথে।কখন যে ৬০ পেরিয়ে চলে যাই অবসর জীবনে। এখন তো শুধু হাতে পায়ে অলসতা, চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। নির্জন বারান্দায় বসে আকাশ দেখি। অপেক্ষা করি কেউ মনের মাধুরী মিশিয়ে টিলিফোন করে কি না। ফেইজ বুকের পাতা উল্টাই। খুঁজি স্মৃতির ডায়রীতে সাজানো মিস্টি মধুর কতো স্মৃতি কথা।লাল মাটির চাদরে ঢাকা ঝুপঝাড়ের আড়ালে বসে গল্প করে প্রেমিক ঝুটি থাকতো মেতে।সে দৃশ্যও চোখে ভেসে বেড়ায়।ব্যক্তি জীবনে কেউ কেউ ঝুটি বাঁধতে পেরেছে, কেউবা পেয়েছে চোখের জল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসে ঢাকা থেকে বিশ মাইল দুরে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম।

গ্রামীন পরিবেশে আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি হল যেমন মীর মোশারফ হোসেন, আলবেরুনী, এক্সটেনশান, নওয়ার ফয়জুন্নেছা এ জায়গা করে নিয়েছিলাম নিবাসি হিসেবে। একটা আন্তরিক সেতু বন্ধনে ছিলাম আবদ্ধ। যা আজো মনে হলে মধুর মধুর অনুভুতিতে ভেসে যাই। পেতে চাই আবারও সেই রোদেলা যৌবনের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। তিন দিন পর এই মাত্র ফিরে এলাম পাশার মিলাদ মাহফিল করে। ধরিয়ে দিলো তিন পেকেট বিরিয়ানি ও মিষ্টি। মানু, রাশু,আতিয়ার, ইমতিয়াজ আমি জোছনা -মাত্র ৫ /৭ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠি উপস্থিত ছিলাম। পাশা ছিলো নিঃসন্তান, তা জানতাম না। যতদুর জানি তাদের দাম্পত্য জীবন ছিলো সুখের ও মধুময়। এক বৃন্তে বাঁধা দুটি জীবন পথ ঘুরিয়ে নিলো দু’দিকে। মীর মোহাম্মদ আলী পাশা ১৯৮২ বিসিএস এ প্রশাসনিক পদে জয়েন করেছিলো। সে অত্যান্ত সহজ সরল মেধাবী গভীর ইসলামী ভাবাদর্শের নমনীয় লোক ছিলো। চাকুরী জীবনে প্রচলিত ধারার সাথে অডজাস্ট করতে না পেরে সরকারী চাকুরী থেকে সরে আসে। সে বেশ হাসি খুশি ও উচ্ছল মনের অধিকারী ছিলো। কোভিড,চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলো পাশা, সেরেও ওঠেছিলো।কিন্তু মস্তিষ্কের ভেতরে যে টিউমার বাসা বেঁধেছিলো, সেই টেনে নিলো না ফেরার দেশে।

প্রায় মাসেক সময় কোমায় থেকে জীবনযুদ্ধে লড়াই করে পরাজিত হলো। রেখে গেলো প্রানের প্রিয় বিধবা স্ত্রীকে। হাত পা ছাড়া কিছুই হাসি খুশী এই মানুষটির সঙ্গে গেলো না। আমাদেরও হবে যেতে একই পথে। ভাবতে বসলে অবশ হয়ে আসে হাত পা। যেখানেই থাকি না কেন, ১২ জানুয়ারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্টা দিবসে ছুটে যেতে চেষ্টা করি প্রানের ক্যাম্পাসে। ঘুরে দেখে আসি সেই মুক্তমঞ্চ, টিএসসি প্রাঙ্গন, সপ্তম ছায়া মঞ্চ, শীতের পাখি, রসায়ন ডিপার্টমেন্ট, নতুন আঙ্গীকে সাজানো বিশ্ববিদ্যালয়ের কারুকার্য। মাথা নিচু করে শ্রদ্ধা জানাই বিদ্যা অর্জনের পাদপিঠকে। খুঁজতে থাকি আমার হারানো যৌবনের হাসি কান্না,মর্ম পাতায়।

বন্ধুদের সাথে করি টুকরো কথার ভাব বিনিময়।রুমন্হন ব্যথায় সিক্ত হয়ে, স্মৃতির ডায়রী বুকে ভরে ফিরে আসি আবাসন ঠিকানায়। ফেলে রেখে আসি কষ্টের নিঃশ্বাস,। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট অতিক্রম করার সময় হৃদয়টা কেন যে ধরফর করে জানি না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে রয়েছে সপ্তম ছায়ামঞ্চ। ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এই মঞ্চটি তাদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরী করেছে। একটি বট গাছের চারদিকে বৃত্তাকারে রয়েছে মোজাইক করা বেদী। প্রতি বছর ১ম শুক্রবারে দিন ব্যাপি প্রোগ্রাম করি ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এই বেদিতে।সঙ্গে নিয়ে যাই অতিথি হিসেবে ছেলে,বউ, মেয়ে, নাতি সহ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে।বেশ ফুর্তি করেই সারাদিন আনন্দের ব্যাগ বোঝাই করি।নবায়ন করি প্রানের ভালোবাসা। মঞ্চের পাশেই রয়েছে সকল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষারথীদের নামের তালিকা।চুমু দিয়ে প্রণাম করি ও শুকরিয়া আদায় করি নিজের স্বনাম ধন্য ভাগ্যকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ই আমাকে পৌঁছে দিয়েছে মানবতার উচ্চ চূড়ায়।