ঢাকা ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
চোখ ও হাত পা বেঁধে রাতভর দুই যুবককে নির্যাতন, চোর বানানোর চেস্টা, ভিডিও ভাইরাল সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে জেদ্দা কনস্যুলেটের উদ্যোগ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করছে সরকার: সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সচেষ্ট অন্তর্বর্তী সরকার: আইসিটি সচিব  অধ্যাদেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ  হয়রানী মূক্ত ও জনবান্ধব ভূমি সেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ভূমি মন্ত্রণালয় অঙ্গিকারাবব্ধ: সিনিয়র সচিব অভিনেত্রী শাওন ও ডিবি হারুনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে কানে ঐশ্বরিয়া ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে চায় ৫০ শতাংশ পাকিস্তানি জালিয়াতি বন্ধে পাঠ্যবইয়ের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ হচ্ছে

ঐতিহ্যের ঢোল সমুদ্রদীঘি, বেদনাবিদূর উপাখ্যান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০১৬
  • ৪৫১ বার

ঝিনাইদহ শহরের কাছে অবস্থিত ঐতিহাসিক ঢোল সমুদ্রদীঘি। শহর থেকে পশ্চিমে এর দুরত্ব ৪ কিলোমিটার। ভ্যান রিক্সা, ইজিবাইকযোগে আপনি চলে যেতে পারেন ঢোল সমুদ্রদীঘি।

ইতিহাস : ঝিনাইদহে রাজা মুকুট রায় নামে এক প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন। রাজা মুকুট রায়ের অনেক সৈন্য সামন্ত ছিল। কথিত আছে তিনি ১৬ হল্কা হাতি, ২০ হল্কা অশ্ব ও ২,২০০ কোড়দার না নিয়ে বের হতেন না। খাঁন জাহান আলী (রাঃ) এর মত তিনিও জলাশয় প্রতিষ্ঠায় যতœবান ছিলেন।

রাস্তা নির্মাণ ও জলাশয় খনন করতে করতে তিনি অগ্রসর হতেন। ঝিনাইদহে তাঁর এমনি একটি অমর কীর্তি ঐতিহ্যবাহী পাগলা কানাই ইউনিয়নের ঢোল সমুদ্র দীঘি। প্রায় ৫২ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত এ দীঘি ঝিনাইদহের সর্ববৃহৎ দীঘি।

দীঘিটি শতাব্দিকাল ধরে স্থানীয় অধিবাসীদের পানীয় জলের অফুরন্ত আধার হিসেবে কাজ করেছে। একজন পরাক্রমশালী রাজার রাজকীয় স্থাপনা সমূহের একটি স্মৃতি হিসেবে আজও টিকে আছে।

ঝিনাইদহ শহরের পূর্বে বিজয়পুর ছিল রাজা মুকুট রায়ের রাজধানী। বাড়ীবাথানে রাজার প্রকান্ড গোশালা ছিল। বহু সংখ্যক গাভী ছিল বলে লোকে তাকে। বৃন্দাবনের নন্দ মহারাজা বলত। বেড়বাড়ীতে রাজার উদ্যান ছিল। রাজার কোড়াদার সৈন্যরা যেখানে বসবাস করত সে স্থানের নাম কোড়াপাড়া হয়েছে। এ সমস্ত স্থান এখনও বর্তমান।

রাজা মুকুট রায়ের রাজবাটির কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবে ঢোল সমুদ্র দীঘির দক্ষিণে ক্ষয়ে যাওয়া ইটের স্তুপে কোন ঐতিহাসিক নিদর্শন লুক্কায়িত থাকতে পারে বলে পুরাতাত্ত্বিকেরা মনে করেন। ঢোল সমুদ্র দীঘিটি ঝিনাইদহের একটি আকর্ষণীয় বিনোদন স্থান।

ঢোল সমুদ্র দীঘি খননের পেছনে একটি লোকশ্রততি আছে-রাজা মুকুট রায়ের রাজত্বকালে একবার জলকষ্ট দেখা দেয়। বিল, বাওড়, নদী দীঘি- কোথাও জল ছিল না। অনন্যোপায় হয়ে রাজা দীঘি খননের সিদ্ধান্ত নেন। অগণিত লোকের দিন রাত পরিশ্রমে দীঘি গভীর হতে গভীরতর এবং চতুর্দিকে প্রশস্ত হতে লাগল। কিস্তু পুকুরে জল উঠল না।

হতাশ রাজা একদিন স্বপ্ন দেখলেন যে, রাণী যদি পুকুরে নেমে পূজা দেন, তবে পুকুরে জল উঠবে। এ কথা জেনে প্রজাহিতৈষী রাণী পূজার নৈবেদ্য নিয়ে পুকুরে নামলেন। রাণী পুকুরের তলদেশে উপস্থি হয়ে ইষ্টদেবতাকে নিবেদন করলেন পূজার অর্ঘ্য। জল ওঠা শুরু হলো।

প্রার্থনা পূর্ণ হওয়ায় রাণী উপরে উঠতে শুরু করলেন। সহসা প্রবলবেগে জলরাশি উত্থিত হল। জল দেখে উদ্বেলিত পাড়ের সহস্র প্রজার উৎসব-আনন্দ আর বাদ্য-বাজনার মধ্যে অলক্ষ্যে রাণী অথৈ জলরাশির গভীরে তলিয়ে গেলেন। গভীর শোকে শোকাভিভূত প্রজাগণ রাজাকে রাজপুরীতে যেয়ে এই দুঃসংবাদ জানালেন। সেই স্মৃতি স্মরণে আজও লোকজন এ দীঘিকে ঢোল সমুদ্রদীঘি বলে জানে।

রাজা মুকুট রায় বাড়ীবাথানের যুদ্ধে নবাবের ও পাঠান সৈন্যের মিলিত শক্তির কাছে পরাজিত হন। নবাব সৈন্যরা রাজা মুকুট রায়কে বন্দী করে রাজধানীতে নিয়ে যায়। রাজার পরিচয় জেনে নবাব তাঁকে মুক্তি দেন। কিন্তু রাজার পরিবারের সদস্যগণ রাজার অনিবার্য পরিণতি, মৃত্যু ভেবে সবাই আত্মহত্যা করেন। তাঁর কন্যার আত্মহত্যার স্থানকে কন্যাদহ, দু’রাণীর আত্মহত্যার স্থানকে দুসতীনের, রাজ জ্যোতিষীর আত্মহত্যার স্থানকে দৈবজ্ঞদহ নামে অভিহিত করা হয়েছে, যা আজও এ নামেই পরিচিত।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

চোখ ও হাত পা বেঁধে রাতভর দুই যুবককে নির্যাতন, চোর বানানোর চেস্টা, ভিডিও ভাইরাল

ঐতিহ্যের ঢোল সমুদ্রদীঘি, বেদনাবিদূর উপাখ্যান

আপডেট টাইম : ১২:০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০১৬

ঝিনাইদহ শহরের কাছে অবস্থিত ঐতিহাসিক ঢোল সমুদ্রদীঘি। শহর থেকে পশ্চিমে এর দুরত্ব ৪ কিলোমিটার। ভ্যান রিক্সা, ইজিবাইকযোগে আপনি চলে যেতে পারেন ঢোল সমুদ্রদীঘি।

ইতিহাস : ঝিনাইদহে রাজা মুকুট রায় নামে এক প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন। রাজা মুকুট রায়ের অনেক সৈন্য সামন্ত ছিল। কথিত আছে তিনি ১৬ হল্কা হাতি, ২০ হল্কা অশ্ব ও ২,২০০ কোড়দার না নিয়ে বের হতেন না। খাঁন জাহান আলী (রাঃ) এর মত তিনিও জলাশয় প্রতিষ্ঠায় যতœবান ছিলেন।

রাস্তা নির্মাণ ও জলাশয় খনন করতে করতে তিনি অগ্রসর হতেন। ঝিনাইদহে তাঁর এমনি একটি অমর কীর্তি ঐতিহ্যবাহী পাগলা কানাই ইউনিয়নের ঢোল সমুদ্র দীঘি। প্রায় ৫২ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত এ দীঘি ঝিনাইদহের সর্ববৃহৎ দীঘি।

দীঘিটি শতাব্দিকাল ধরে স্থানীয় অধিবাসীদের পানীয় জলের অফুরন্ত আধার হিসেবে কাজ করেছে। একজন পরাক্রমশালী রাজার রাজকীয় স্থাপনা সমূহের একটি স্মৃতি হিসেবে আজও টিকে আছে।

ঝিনাইদহ শহরের পূর্বে বিজয়পুর ছিল রাজা মুকুট রায়ের রাজধানী। বাড়ীবাথানে রাজার প্রকান্ড গোশালা ছিল। বহু সংখ্যক গাভী ছিল বলে লোকে তাকে। বৃন্দাবনের নন্দ মহারাজা বলত। বেড়বাড়ীতে রাজার উদ্যান ছিল। রাজার কোড়াদার সৈন্যরা যেখানে বসবাস করত সে স্থানের নাম কোড়াপাড়া হয়েছে। এ সমস্ত স্থান এখনও বর্তমান।

রাজা মুকুট রায়ের রাজবাটির কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবে ঢোল সমুদ্র দীঘির দক্ষিণে ক্ষয়ে যাওয়া ইটের স্তুপে কোন ঐতিহাসিক নিদর্শন লুক্কায়িত থাকতে পারে বলে পুরাতাত্ত্বিকেরা মনে করেন। ঢোল সমুদ্র দীঘিটি ঝিনাইদহের একটি আকর্ষণীয় বিনোদন স্থান।

ঢোল সমুদ্র দীঘি খননের পেছনে একটি লোকশ্রততি আছে-রাজা মুকুট রায়ের রাজত্বকালে একবার জলকষ্ট দেখা দেয়। বিল, বাওড়, নদী দীঘি- কোথাও জল ছিল না। অনন্যোপায় হয়ে রাজা দীঘি খননের সিদ্ধান্ত নেন। অগণিত লোকের দিন রাত পরিশ্রমে দীঘি গভীর হতে গভীরতর এবং চতুর্দিকে প্রশস্ত হতে লাগল। কিস্তু পুকুরে জল উঠল না।

হতাশ রাজা একদিন স্বপ্ন দেখলেন যে, রাণী যদি পুকুরে নেমে পূজা দেন, তবে পুকুরে জল উঠবে। এ কথা জেনে প্রজাহিতৈষী রাণী পূজার নৈবেদ্য নিয়ে পুকুরে নামলেন। রাণী পুকুরের তলদেশে উপস্থি হয়ে ইষ্টদেবতাকে নিবেদন করলেন পূজার অর্ঘ্য। জল ওঠা শুরু হলো।

প্রার্থনা পূর্ণ হওয়ায় রাণী উপরে উঠতে শুরু করলেন। সহসা প্রবলবেগে জলরাশি উত্থিত হল। জল দেখে উদ্বেলিত পাড়ের সহস্র প্রজার উৎসব-আনন্দ আর বাদ্য-বাজনার মধ্যে অলক্ষ্যে রাণী অথৈ জলরাশির গভীরে তলিয়ে গেলেন। গভীর শোকে শোকাভিভূত প্রজাগণ রাজাকে রাজপুরীতে যেয়ে এই দুঃসংবাদ জানালেন। সেই স্মৃতি স্মরণে আজও লোকজন এ দীঘিকে ঢোল সমুদ্রদীঘি বলে জানে।

রাজা মুকুট রায় বাড়ীবাথানের যুদ্ধে নবাবের ও পাঠান সৈন্যের মিলিত শক্তির কাছে পরাজিত হন। নবাব সৈন্যরা রাজা মুকুট রায়কে বন্দী করে রাজধানীতে নিয়ে যায়। রাজার পরিচয় জেনে নবাব তাঁকে মুক্তি দেন। কিন্তু রাজার পরিবারের সদস্যগণ রাজার অনিবার্য পরিণতি, মৃত্যু ভেবে সবাই আত্মহত্যা করেন। তাঁর কন্যার আত্মহত্যার স্থানকে কন্যাদহ, দু’রাণীর আত্মহত্যার স্থানকে দুসতীনের, রাজ জ্যোতিষীর আত্মহত্যার স্থানকে দৈবজ্ঞদহ নামে অভিহিত করা হয়েছে, যা আজও এ নামেই পরিচিত।