হাওর বার্তা ডেস্কঃ আলু উৎপাদনে দেশের শীর্ষস্থানীয় জেলা মুন্সিগঞ্জ। স্বাভাবিক চাষ প্রক্রিয়া অনুযায়ী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই জেলায় আলু রোপণ শেষ হওয়ার কথা। তবে এ বছর তা হয়নি। আলুর বীজ রোপণ এখনো চলছে, চলবে আরও কিছুদিন। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের থাবা এলোমেলো করে দিয়েছে সবকিছু।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলু রোপণের উপযুক্ত সময়েই দেশে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ। তাতে ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় ব্যাহত হয়েছে আলুর আবাদ। আর ঘূর্ণিঝড়ে চারদিনের বৃষ্টিতে যেসব ক্ষেতে আলু ছিল, সেগুলোর বেশির ভাগ চারাই নষ্ট হয়ে গেছে।
মুন্সিগঞ্জ জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খুরশিদ আলম বলেন, এ জেলায় ১৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর আলুর জমি আক্রান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ১১ হাজার ৬০০ হেক্টরের আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন অনেক কৃষক নতুন করে আলু রোপণ করছেন। তবে দেরিতে রোপণের কারণে ফলন কম হবে।
খুরশিদ আলম জানান, জেলায় এ পর্যন্ত (২০ ডিসেম্বর) ২০ হাজার হেক্টরে আলু রোপণ সম্ভব হয়েছে। যেখানে লক্ষমাত্রা ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর। প্রতি বছর এ জেলায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিকটন আলু উৎপাদন হয়। সে তুলনায় এ বছর উৎপাদন বেশ কমবে।
এ অবস্থা শুধু মুন্সিগঞ্জে নয়। উত্তরবঙ্গে ক্ষতি খুব বেশি না হলেও ঢাকা বিভাগ এবং দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় আলুর বেশ ক্ষতি হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে। সার্বিকভাবে এর বড় প্রভাব পড়বে চলতি মৌসুমের আলু উৎপাদনে। এর প্রভাবে এ বছর আলুর উৎপাদন কোটি টনের নিচে নামার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে গত বছর উৎপাদন ছিল এক কোটি ৬ লাখ টন।
যদিও দেশে উদ্বৃত্ত আলু উৎপাদন হচ্ছে বলে বাজারে এর তেমন প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করছে সরকার। সরকারি তথ্য মতে, ২০২১ সালে আলুর উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৬ লাখ টন। যেখানে দেশে আলুর চাহিদা রয়েছে ৮৫-৯০ লাখ টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, আলুর উৎপাদন এ বছর কমছে এটা সত্য। তবে সেজন্য আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের চাহিদা থেকে আলুর উৎপাদন অনেক বেশি।
আসাদুল্লাহ বলেন, উৎপাদন কমবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। সারাদেশে রোপণ শেষ হওয়ার তথ্য না পেলে বলা সম্ভব নয়।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে এ বছর ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৬ লাখ ৫১ হাজার টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ মৌসুমের সময় শেষ হলেও এ পর্যন্ত আবাদ শেষ হয়েছে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬১২ হেক্টরে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৮১ শতাংশ।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ও নিম্নচাপের প্রভাবে আলুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে হিমাগার মালিকদের সংগঠন।
তারা বলছে, এ ঘূর্ণিঝড়ে আলু চাষিরা সর্বস্বান্ত। জাওয়াদ ও এর পরবর্তী নিম্নচাপে টানা চারদিন বৃষ্টির কারণে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আলুর ক্ষেতে পানি জমে বীজ-আলু নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকের পাশাপাশি হিমাগার মালিকরাও সংকটে পড়বেন।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আলুচাষিদের প্রয়োজনীয় বীজ, সার ও সেচযন্ত্র সরবরাহ করে সহায়তা এবং পরামর্শ দেওয়ার জন্য আমরা সর্বত্র অনুরোধ জানাচ্ছি। কোল্ড স্টোরেজ থেকে খাওয়ার আলু বীজ হিসেবে সংগ্রহ করে অনেকে নতুন করে আলু লাগাচ্ছেন। এতে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না, কমানো যাবে।
সার্বিক ফসলের ক্ষতি প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমিতে
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে প্রবল বর্ষণে দেশের প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলু ও শীতকালীন অন্যান্য ফসল মিলে এ ক্ষতি দুই লাখ হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জাওয়াদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৬৭ হেক্টর জমিতে আবাদি আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য ফসলের ক্ষতির সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
যশোর অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা। আর বরিশাল অঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালী।
তবে জাওয়াদের প্রভাবে এটিই ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব নয়।