ঢাকা ০১:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধুকে ছাপিয়ে ওরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৪:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০১৬
  • ৩২১ বার

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী -ডেমরা এলাকায় বিভিন্ন দেয়ালে সাঁটানো বা রাস্তার পাশে বাঁশ দিয়ে ঝোলানো রয়েছে হারুন-অর রশিদ মুন্নার ছবিসংবলিত পোস্টার। মুন্না ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। পোস্টারে ঢাকা-৫ আসনের নির্বাচনী এলাকার জনসাধারণকে মহান স্বাধীনতা দিবস, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। একইভাবে সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদের ছবিসংবলিত পোস্টার ঝুলছে। এতে রয়েছে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। জাতির জনককে শ্রদ্ধা জানানো এসব পোস্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির চেয়ে নিজেদের ছবি কয়েক গুণ বড় করে ছাপিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতারা। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এ আয়োজন করা হলেও পরিষ্কার বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধু উপলক্ষমাত্র। লক্ষ্য, ‘নেতা’দের আত্মপ্রচার। কেবল এ দুই নেতাই নন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মীই দলের নির্দেশ লঙ্ঘন করে আত্মপ্রচার অব্যাহত রেখেছেন। তারা নিজেদের ছবি দিয়ে বানানো পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টানিয়েছেন নগরজুড়ে। অথচ দলের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশ রয়েছে : কোনো অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারও ছবি দিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও পোস্টার তৈরি করা যাবে না। জানা যায়, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাড়া অন্য কোনো ছবি দিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও পোস্টার তৈরি না করার নির্দেশনা দেন। সৈয়দ আশরাফ সে সময় এ নিয়ে সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং জেলা নেতাদের কাছে ডাকযোগে চিঠি পাঠান। যারা বিলবোর্ড ও পোস্টার লাগিয়েছিলেন তাদেরও খুলে ফেলতে নির্দেশ দেন। তাতেও কর্ণপাত করছেন না আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শ্রেণির নেতা। দেখা গেছে, এবার স্বাধীনতা দিবসের আগে নগরীজুড়ে পোস্টার-ফেস্টুনে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনকে ছাপিয়ে ছোট-বড় নেতাদের আত্মপ্রচারই বড় হয়ে উঠেছে। দল বা সংগঠন নয়, ব্যক্তি উদ্যোগে দেওয়া বেশির ভাগ পোস্টার-ব্যানারে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি স্থান পেয়েছে ওপরে বাঁ পাশে এক কোনায় ছোট করে। প্রচারকের নিজের এবং তিনি যার অনুসারী, তার বা তাদের ছবি আছে বিশাল অংশজুড়ে। এ প্রসঙ্গে হারুন-অর রশিদ মুন্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি যেগুলো ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড করেছি, সেগুলোয় বঙ্গবন্ধু ও নেত্রীর ছবি বড় করে দিয়েছি। যেগুলো নেতা-কর্মীরা করেছেন, সেগুলোয় ছবি ছোট করেছেন। তাদের তো আর নিষেধ করতে পারি না। করলেও তারা শুনবেন না।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পোস্টার ও বিলবোর্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারও ছবি সাঁটা নিষেধ করা হয়েছে। যারা শুনছেন না, তাদের ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। দলীয় নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে গেলে দেখা যায় নানা ধরনের পোস্টার ও ব্যানার। দলীয় কার্যালয়ের সামনে দক্ষিণের একটি ভবনের সঙ্গে টানানো হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের একটি ব্যানার। সে ব্যানারে লেখা ‘মহান স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার প্রজন্মরা রুখবে সকল যুদ্ধাপরাধী-জামায়াত-শিবির-রাজাকার, স্বাধীনতাযুদ্ধে সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি’। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির নিচেই সংগঠনের তিন নেতার ছবি শোভা পাচ্ছে। একইভাবে নিজেদের ছবি দিয়ে ব্যানার টানিয়েছেন আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের দুই নেতা। সেখানে ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন। দলীয় কার্যালয়ের প্রবেশমুখেই একটি বিলবোর্ড সবার দৃষ্টি কাড়ছে ‘কাজী হেদায়েত উল্লাহ সাকলাইন ভাইকে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই’ সৌজন্য : বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ। ২১ মার্চ ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও এখনো সে ব্যানারটি ঝুলছে সেখানে। এ ব্যানারে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি থাকলেও তা চোখে পড়াই দায়। এসব ব্যানার-পোস্টারকে ছাপিয়ে খোদ আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেই আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে হকার্স লীগের শেখ সোহেল নামের এক নেতার ব্যানার। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১৬ কোটি মানুষের পক্ষে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কারণ, সম্প্রতি ভারত থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি। মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন বলেন, দলীয় নির্দেশনা অম্যান্য করে কেউ কেউ এখনো আত্মপ্রচারে ব্যস্ত। কোনটি সফলতা, কোনটি বিশেষ উদ্যোগ তা না বুঝেই নিজেদের আত্মপ্রচারে ব্যানার, বিলবোর্ড ও পোস্টার ছাপাচ্ছেন। ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের সামনে মহান স্বাধীনতা দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে সাবেক ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান আসাদের বড় ছবি দিয়ে ডিজিটাল পোস্টার সাঁটানো রয়েছে। সেখানে জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি খুবই ছোট্ট। একই অবস্থা কলাবাগান থানা ছাত্রলীগের আরেকটি ডিজিটাল পোস্টারে। সেখানেও একই অবস্থা। পোস্টারটিতে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সাতজনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ওই সাত নেতার ছবি বড় হলেও বাম পাশের বৃত্তের এক কোণে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি।

যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় বড় বড় বিলবোর্ড ও পোস্টার শোভা পাচ্ছে স্থানীয় এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার। তার অনুসারীদের ছাপানো ওই বিলবোর্ড, পোস্টারে কোনোটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি নেই, আবার থাকলেও অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজে দেখতে হয়। যাত্রাবাড়ী-শনিরআখড়া এলাকা পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে আওয়ামী প্রজন্ম লীগের। সেখানে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি খুব ছোট আকারে থাকলেও সংগঠনটির সভাপতি দাবিদার ফাতেমা জলিল সাথীর ছবিটি বড় করে শোভা পাচ্ছে। এসব ছবি ছাপিয়ে বড় ছবি দেওয়া হয়েছে ওই নেতার অনুসারী নেতাদের। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার প্রবেশমুখে অসংখ্য বিলবোর্ড, পোস্টার চোখে পড়ে। বিভিন্ন দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে সাঁটানো এসব পোস্টার ও বাঁশে লাগানো বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে চোখেই পড়ে না। তবে উঠতি ও পাতি নেতাদের ছবি বড় বড় আকারে দেওয়া আছে। দনিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের তেমনই একটি বিলবোর্ডে খুবই ছোট করে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে টানানো বিলবোর্ডে স্থানীয় এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ জন নেতার ছবি রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বঙ্গবন্ধুকে ছাপিয়ে ওরা

আপডেট টাইম : ০৯:৪৪:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০১৬

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী -ডেমরা এলাকায় বিভিন্ন দেয়ালে সাঁটানো বা রাস্তার পাশে বাঁশ দিয়ে ঝোলানো রয়েছে হারুন-অর রশিদ মুন্নার ছবিসংবলিত পোস্টার। মুন্না ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। পোস্টারে ঢাকা-৫ আসনের নির্বাচনী এলাকার জনসাধারণকে মহান স্বাধীনতা দিবস, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। একইভাবে সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদের ছবিসংবলিত পোস্টার ঝুলছে। এতে রয়েছে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। জাতির জনককে শ্রদ্ধা জানানো এসব পোস্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির চেয়ে নিজেদের ছবি কয়েক গুণ বড় করে ছাপিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতারা। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এ আয়োজন করা হলেও পরিষ্কার বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধু উপলক্ষমাত্র। লক্ষ্য, ‘নেতা’দের আত্মপ্রচার। কেবল এ দুই নেতাই নন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মীই দলের নির্দেশ লঙ্ঘন করে আত্মপ্রচার অব্যাহত রেখেছেন। তারা নিজেদের ছবি দিয়ে বানানো পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টানিয়েছেন নগরজুড়ে। অথচ দলের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশ রয়েছে : কোনো অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারও ছবি দিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও পোস্টার তৈরি করা যাবে না। জানা যায়, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাড়া অন্য কোনো ছবি দিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও পোস্টার তৈরি না করার নির্দেশনা দেন। সৈয়দ আশরাফ সে সময় এ নিয়ে সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং জেলা নেতাদের কাছে ডাকযোগে চিঠি পাঠান। যারা বিলবোর্ড ও পোস্টার লাগিয়েছিলেন তাদেরও খুলে ফেলতে নির্দেশ দেন। তাতেও কর্ণপাত করছেন না আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শ্রেণির নেতা। দেখা গেছে, এবার স্বাধীনতা দিবসের আগে নগরীজুড়ে পোস্টার-ফেস্টুনে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনকে ছাপিয়ে ছোট-বড় নেতাদের আত্মপ্রচারই বড় হয়ে উঠেছে। দল বা সংগঠন নয়, ব্যক্তি উদ্যোগে দেওয়া বেশির ভাগ পোস্টার-ব্যানারে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি স্থান পেয়েছে ওপরে বাঁ পাশে এক কোনায় ছোট করে। প্রচারকের নিজের এবং তিনি যার অনুসারী, তার বা তাদের ছবি আছে বিশাল অংশজুড়ে। এ প্রসঙ্গে হারুন-অর রশিদ মুন্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি যেগুলো ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড করেছি, সেগুলোয় বঙ্গবন্ধু ও নেত্রীর ছবি বড় করে দিয়েছি। যেগুলো নেতা-কর্মীরা করেছেন, সেগুলোয় ছবি ছোট করেছেন। তাদের তো আর নিষেধ করতে পারি না। করলেও তারা শুনবেন না।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পোস্টার ও বিলবোর্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারও ছবি সাঁটা নিষেধ করা হয়েছে। যারা শুনছেন না, তাদের ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। দলীয় নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে গেলে দেখা যায় নানা ধরনের পোস্টার ও ব্যানার। দলীয় কার্যালয়ের সামনে দক্ষিণের একটি ভবনের সঙ্গে টানানো হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের একটি ব্যানার। সে ব্যানারে লেখা ‘মহান স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার প্রজন্মরা রুখবে সকল যুদ্ধাপরাধী-জামায়াত-শিবির-রাজাকার, স্বাধীনতাযুদ্ধে সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি’। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির নিচেই সংগঠনের তিন নেতার ছবি শোভা পাচ্ছে। একইভাবে নিজেদের ছবি দিয়ে ব্যানার টানিয়েছেন আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের দুই নেতা। সেখানে ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন। দলীয় কার্যালয়ের প্রবেশমুখেই একটি বিলবোর্ড সবার দৃষ্টি কাড়ছে ‘কাজী হেদায়েত উল্লাহ সাকলাইন ভাইকে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই’ সৌজন্য : বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ। ২১ মার্চ ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও এখনো সে ব্যানারটি ঝুলছে সেখানে। এ ব্যানারে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি থাকলেও তা চোখে পড়াই দায়। এসব ব্যানার-পোস্টারকে ছাপিয়ে খোদ আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেই আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে হকার্স লীগের শেখ সোহেল নামের এক নেতার ব্যানার। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১৬ কোটি মানুষের পক্ষে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কারণ, সম্প্রতি ভারত থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি। মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন বলেন, দলীয় নির্দেশনা অম্যান্য করে কেউ কেউ এখনো আত্মপ্রচারে ব্যস্ত। কোনটি সফলতা, কোনটি বিশেষ উদ্যোগ তা না বুঝেই নিজেদের আত্মপ্রচারে ব্যানার, বিলবোর্ড ও পোস্টার ছাপাচ্ছেন। ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের সামনে মহান স্বাধীনতা দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে সাবেক ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান আসাদের বড় ছবি দিয়ে ডিজিটাল পোস্টার সাঁটানো রয়েছে। সেখানে জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি খুবই ছোট্ট। একই অবস্থা কলাবাগান থানা ছাত্রলীগের আরেকটি ডিজিটাল পোস্টারে। সেখানেও একই অবস্থা। পোস্টারটিতে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সাতজনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ওই সাত নেতার ছবি বড় হলেও বাম পাশের বৃত্তের এক কোণে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি।

যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় বড় বড় বিলবোর্ড ও পোস্টার শোভা পাচ্ছে স্থানীয় এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার। তার অনুসারীদের ছাপানো ওই বিলবোর্ড, পোস্টারে কোনোটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি নেই, আবার থাকলেও অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজে দেখতে হয়। যাত্রাবাড়ী-শনিরআখড়া এলাকা পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে আওয়ামী প্রজন্ম লীগের। সেখানে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি খুব ছোট আকারে থাকলেও সংগঠনটির সভাপতি দাবিদার ফাতেমা জলিল সাথীর ছবিটি বড় করে শোভা পাচ্ছে। এসব ছবি ছাপিয়ে বড় ছবি দেওয়া হয়েছে ওই নেতার অনুসারী নেতাদের। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার প্রবেশমুখে অসংখ্য বিলবোর্ড, পোস্টার চোখে পড়ে। বিভিন্ন দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে সাঁটানো এসব পোস্টার ও বাঁশে লাগানো বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে চোখেই পড়ে না। তবে উঠতি ও পাতি নেতাদের ছবি বড় বড় আকারে দেওয়া আছে। দনিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের তেমনই একটি বিলবোর্ডে খুবই ছোট করে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে টানানো বিলবোর্ডে স্থানীয় এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ জন নেতার ছবি রয়েছে।