হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঈশ্বরদীর রূপপুর পাকার মোড় থেকে নিখোঁজ হওয়া তিনদিন পর কলেজছাত্র রাইমুল ইসলাম হৃদয়ের (২৪) লাশের ১০ টুকরো উদ্ধার করেছে। এর আগে শুক্রবার সকালে রূপপুর মোড়ে একজনের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে হৃদয় বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। ঘাতক আবুল হাসনাত মো. ইসমাইল ওরফে হাসানকে (৪২) আটক করেছে পুলিশ। ঘাতক পাবনা সদর থানার পৈলানপুর সফেদাবাগান পাড়ার মৃত আব্দুল হামিদ মাস্টারের ছেলে।
গতকাল সোমবার রাতে পাবনা ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নের নওদাপাড়াস্থ ফারুখ হোসেনের ভাড়া দেওয়া বাসার মেঝে খুঁড়ে এই টুকরো লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত রাইমুল ইসলাম হৃদয় ঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়নের নতুন রূপপুর বালক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মজনু মোল্লার ছেলে ও পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। একই সঙ্গে হৃদয় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সংলগ্ন মোড়ে বিকাশ ও ফ্ল্যাক্সিলোডের ব্যবসায়ী ছিলেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে (আরএনপিপি) রাশিয়ান কম্পানিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৮০ হাজার টাকা নেওয়ার পর চাকরি না দেওয়ায় রাইমুল ইসলাম হৃদয়কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরদী থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান আসাদ ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রূপপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ আতিকুর রহমান আতিক।
নিহত হৃদয়ের মা রুবিনা খাতুন ও বাবা মজনু মোল্লা জানান, শুক্রবার সকালে বাড়ির সবাইকে নিয়ে দাশুড়িয়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাওয়ার কথা ছিল। গোসলের জন্য গরম পানি করার কথা বলে রূপপুর মোড়ে একজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি হৃদয়। এরপর কয়েক ঘন্টাপর হৃদয়ের মোবাইল ফোন থেকে বাড়িতে ফোন করে জানানো হয় হৃদয়কে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ হিসেবে ৪০ লাখ টাকা দিতে হবে। এরপরই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
আটক ঘাতক আবুল হাসনাত মো. ইসমাইল ওরফে হাসানের বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) জানান, নিহত রাইমুল ইসলাম হৃদয় রূপপুর মোড়ে বিকাশ ও ফ্ল্যাক্সি লোডের ব্যবসার সুবাদে ঘাতক হাসানের সঙ্গে পূর্ব পরিচিত ছিল। হৃদয় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে (আরএনপিপি) রাশিয়ান কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে হাসানের নিকট থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক মাস পার হলেও চাকরি দিতে না পারায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরপর ঘাতক হাসান রূপপুর মোড়ের পাশে ওহিদুল ইসলামের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। ঘটনার দিন সকালে ঘাতক হাসান সুকৌশলে হৃদয়কে ভাড়াবাসার নিজ কক্ষে এনে জুসের মাধ্যমে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়ে হত্যা করে। পরে লাশগুলো পরিবহনের সুবিধার্থে ১০ টুকরো করে স্যুটকেসে ভরে রাখে। এরপর উপজেলার সলিমপুরের নওদাপাড়ায় ফারুখের নির্জন বাসাটি ভাড়া নেয়। আর সুযোগ বুঝে সেই বাসার মেঝেতেই লাশের টুকরো গুলো পুঁতে রাখে।
তিনি আরো জানান, হৃদয়ের ফোন নম্বর থেকে বাড়িতে ফোন করে ৪০ লাখ টাকার মুক্তিপণ চাওয়ার কল রেকর্ডের সূত্র ধরেই ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সোমবার ঘাতক হাসানকে পাবনার গাছপাড়া থেকে আটক করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্য থেকেই ঘটনাস্থল থেকে হৃদয়ের ১০ টুকরো করা লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঈশ্বরদী থানার ওসি আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, নিহতের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। আটক ঘাতককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই হত্যার সঙ্গে আরো কেউ জড়িত কিনা তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।