হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৯৯৬ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল দিয়ে বিশ্বকাপে দেখা দুই প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের। সেবার ৬ উইকেটে জিতেছিল অজিরা। এর ১০ বছর পর ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সেমিফাইনালে ৩৪ রানে হেরে যায় কিউইরা। একই প্রতিযোগিতার ফাইনালে ২০০৯ সালে দেখা হয়েছিল দুই দলের। সেখানেও অজিদের ৬ উইকেটের জয়। আর সবশেষ ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ৭ উইকেটে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্লাকক্যাপসরা।
২০১৫ সালে প্রথম কোনো ফরম্যাটের বিশ্বকাপ ফাইনালে দাপট দেখিয়ে উঠলেও বেদনাবিধুর হয় নিউজিল্যান্ডের হৃদয়। তবে আগমণী বার্তা যেন দিয়ে রেখেছিল কিউইরা। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় ফাইনালে উঠেছিল। এবার যেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ। ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে সেই হারের যন্ত্রণা এবার নিউজিল্যান্ড লাঘব করেছে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেটের দারুণ জয়ে। বদলা নিয়ে প্রথমবার ওঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের মতো তারাও কি নিউজিল্যান্ডের প্রতিশোধের আগুনে পুড়বে? নাকি বিশ্বমঞ্চে বজায় থাকবে অস্ট্রেলিয়ান আধিপত্য?
আজ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু এই ফাইনাল। তাসমান সাগরপাড়ের দুই প্রতিবেশীরই লক্ষ্য প্রথমবার শিরোপা জয়। আগের ছয় আসরে কোনবারই শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি এবারের দুই ফাইনালিষ্ট। তাই প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে মরিয়া নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া উভয় দলই। দ্বিতীয়বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নামবে অস্ট্রেলিয়া। এর আগে ২০১০ সালে ফাইনালে উঠলেও, শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি অজিরা। ইংল্যান্ডের কাছে ৭ উইকেটে ম্যাচ হারে অস্ট্রেলিয়া। এরপর আর ফাইনালের টিকিট পায়নি অজিরা। সপ্তম আসরে এসে আবার ফাইনালে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে কিউইদের সর্বোচ্চ সাফল্য সেমিফাইনাল। ছোট ফরম্যাটের এই টুর্নামেন্টে দলটির জন্য এটি প্রথম ফাইনাল। এরআগে ২০০৭ ও ২০১৬ সালে শেষচারে খেলেছিল কেন উইলিয়ামসনের দল। দুই প্রতিবেশীর জন্য এটা শুধু বিশ্বকাপের ফাইনালই নয়, বরং গৌরব ও ঐতিহ্যের লড়াই।
যদিও পরিসংখ্যানে অনেক এগিয়ে থেকেই শুরু করবে অ্যারন ফিঞ্চের দল। দু’দলের মুখোমুখি ১৪ লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়া ৯-৫ ব্যবধানে এগিয়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে অবশ্য ৩-২ ব্যবধানে জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। আরও এক জায়গায় এগিয়ে আছে কিউইরা। দুবাইয়ে এই আসরে ১২ ম্যাচ হয়েছে, সেখানে কেবল একটি ম্যাচ জিতেছে প্রথমে ব্যাট করা দল আর ১১টি জিতেছে রান তাড়া করতে নামা দল। প্রথমে ব্যাট করে একমাত্র জয় পাওয়া দলটি নিউজিল্যান্ড, ৩ নভেম্বর স্কটল্যান্ডকে ১৬ রানে হারায় তারা।
এই মাঠে ৭৪টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির মধ্যে ৩৬টি জিতেছে প্রথমে ব্যাট করা দল, আর ৩৮ জয় পরে ব্যাটিং করা দলের। ২২ বারের প্রচেষ্টায় কেবল দুইবার এই গ্রাউন্ডে ১৫৫-এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের ঘটনা ঘটেছে, সবশেষটি হলো এই তো পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনাল জয়।
দুই দলের খেলার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়া খেলছে ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড বোলিং নির্ভর। প্রতিযোগিতায় নিউজিল্যান্ডের সব মিলিয়ে ইকোনমি রেট প্রতি ওভারে ৬.৭৫, অংশ নেওয়া ১৬ দলের মধ্যে সেরা। ট্রেন্ট বোল্ট এই প্রতিযোগিতায় শীর্ষ সিম বোলার, ১৪.০৯ গড় ও ৬.৫৪ ইকোনমি রেট নিয়ে ১১ উইকেট তার। টিম সাউদি পেয়েছেন ৮ উইকেট, প্রতি ওভারে রান ৫.৭৫। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জাম্পা ১২ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সেরা বোলার। তিনি কেবল ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার নিচে।
তবে মুখের কথায় ছাড় দিলেন না কেউই। অ্যারন ফিঞ্চের মুখে ফাইনাল জেতার বলিষ্ঠ কণ্ঠ, ‘এটি ফাইনাল ম্যাচ। আর প্রতিপক্ষ হিসেবে নিউজিল্যান্ড অনেক ক্যালকুলেটিভ দল। তারা অনেক পরিকল্পনা নিয়ে খেলতে নামবে। আমাদের সেভাবেই প্রস্তুত থাকতে হবে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ফাইনাল জিততে হবে এবং প্রথমবারের মত শিরোপার স্বাদ নিতে হবে।’ প্রথমবারের মত ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করতে চান উইলিয়ামসনও, ‘ওয়ানডে বিশ্বকাপে শেষ দুই আসরের ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই প্রথম ফাইনাল খেলছি আমরা। শিরোপা জিতে এই প্রথমকে স্মরনীয় করতে চাই। অস্ট্রেলিয়ার মত দলের বিপক্ষে জিততে হলে, তিন বিভাগেই তাদের চেয়ে ভালো খেলতে হবে। ম্যাচের শুরু থেকেই অজিদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।’
পরিসংখ্যানে অনেক এগিয়ে থাকলেও অবশ্য অজিদের উপর একটা চাপ কিন্তু থেকেই যাবে। সেটা কিউইদের সাম্প্রতিক ফর্ম। তিন বছরে তিন ফরম্যাটের বিশ্বকাপ ফাইনালে নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল আথারটনের মতে, এই মুহূর্তে সব ফরম্যাটের সেরা দল এই ব্ল্যাকক্যাপরা। তাই আপাতদৃষ্টিতে অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য থামিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার মোক্ষম সুযোগ নিউজিল্যান্ডের। যদিও ছেড়ে কথা বলবে না অস্ট্রেলিয়াও।
নিউজিল্যান্ডের দুশ্চিন্তা হতে পারে তাদের ব্যাটিং শক্তি। ৮৫ শতাংশ ম্যাচই জিতেছে বেশি বাউন্ডারি মারা দল এবং চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে বাউন্ডারির হার সবচেয়ে কম নিউজিল্যান্ডের। তাদের বল প্রতি বাউন্ডারি ৭.৩২। অস্ট্রেলিয়া বাউন্ডারি মেরেছে ৫.৯১ বল প্রতি।