ঢাকা ১১:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রবাসের সংসার ভাঙ্গন আর প্রজন্মের মহাসংকট

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:১৮:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১
  • ১৬৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রবাসী মানে কী? প্রবাসী মানে দাদা-দাদি, নানা-নানি, ভাইবোন আর নিকট আত্মীয়-পরিজনহারা এক অশান্ত, অনিশ্চিত জীবন। প্রবাসী মানে অঢেল অর্থ উপার্জনের কারিগর। প্রবাসী মানে, অর্থিক সচ্ছলতা, হাড়ভাঙা পরিশ্রমী একদল খেটে খাওয়া মানুষ। প্রবাসী মানে, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের মানবিক মূল্যবোধের মৌলিক আদর্শে একটু হলেও আপস করে নেওয়া। প্রবাস জীবনে সামাজিক অসঙ্গতি এবং ধর্মীয় আচার-আচরণের অনিয়ম অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নেয়া এবং মা-মাটি আর জন্মভূমিকে স্মৃতি রোমন্থন করা— আরও কত কী!

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে সুখ আর সমৃদ্ধির আশায় স্বপ্নের লীলাভূমি ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। মূলত ডাইভার্সির্টি পোগ্রামসহ স্টুডেন্ট, ভ্রমণ এবং ব্যবসায়িক ভিসায় এবং পরবর্তীতে চেইন মাইগ্রেশনের সুবাদে লাখো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পরিবার-পরিজন নিয়ে বিশ্বের মেগা শহরগুলোতে যেমন- নিউইয়র্ক, লসঅ্যাঞ্জেলেস, ফ্লোরিডা, ফ্রাঙ্কফুর্ট, স্টকহোম, এবং লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সবার জীবনের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও পারিবারিক কাঠামো, আর্থিক সামজিক অবস্থান ভিন্ন হলেও এ জনগোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য পরিবারের আদরের সন্তানটির মুখে একমুঠো হাসি ফোটানো।
সুখ-শান্তি ভরা একটি সফল পরিবার গঠনের আশায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে প্রবাস জীবন বেছে নিয়েছেন তারা। ফেলে আসা দুরন্ত শৈশব-কৈশরের বাঁধনহীন দুরন্তপনা, মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবের আড্ডা সবকিছুই আজ সোনালি অতীত।

হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে যেই চাকরিটি আত্মসম্মানের ভয়ে নিজ দেশে করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন, তার চেয়েও কঠিন চাকরি বিদেশের মাটিতে করে পরিবারের পাশে মানবতার খুঁটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং মেধাকে কাজে লাগিয়ে অনেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সফল ব্যবসায়ী হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছেন দেশে-বিদেশে। আবার অনেকে জিবন জীবিকার বেঁচে থাকার সংগ্রামে বৈধ কাগজপত্রের অভাবে বছরের পর বছর নিকট আত্মীয়স্বজনের সাক্ষাতের সুযোগ না পেয়ে হতাশ এবং আতঙ্কিত। মোট জনসংখ্যার অধিকাংশই নিজের শ্রম-মেধাকে অকাতরে বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছেন প্রবাসের মাটিতে। এই বিরতিহীন শ্রমসাধনা এবং কায়িক পরিশ্রমের কতটুকু সার্থকতা পেয়েছেন অভিবাসিত বাংলাদেশি পরিবারগুলো? বিদেশি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় ভিনদেশী ভাষা আর বাংলাভাষার  বিরোধ বৈষম্যতার মাঝে কিভাবে গড়ে তুলছেন নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের? কেমন চলছে তাদের ধর্ম-কর্ম, সামজিক রীতিনীতি, পারিবারিক আতিথিয়তা এবং বাংলা সংস্কৃতির পরিচর্চা? এমন হাজারও প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই! প্রবাসী সংসার ভাঙণের কারণ কী?

প্রবাসের কর্মময় জীবনে প্রবাসী পরিবারগুলোর সার্বিক কাঠামো, সুস্থ জীবন-দর্শন, পরস্পরের সম্পর্কের মেলবন্ধন কতটুকু শক্তিশালী এবং গতিময়? প্রতিদিনের জীবন যাত্রার মান কতটুকু মানসমৃদ্ধ এবং উন্নত? কেন ভেঙে যাচ্ছে ঘর-সংসার? কারা ভাঙছে অতি যত্নের গড়ে তোলা প্রবাসী স্বামী-স্ত্রীর চোট্ট সুখের নীড়? এক স্বপ্নদেখা যুবকের শ্রমসাধ্য উপার্জনের তিল তিল করে সঞ্চিত অর্থে দেশে বিয়ে করা স্ত্রীর সঙ্গে প্রবাসের নতুন সংসার ধর্ম  শুরু করেন। নিয়তির খেলাঘরে কোনো এক সময় স্বামী স্ত্রীর মধুর সম্পর্কের তিক্ততা আর ঘৃণা বাড়তে বাড়তে ভেঙে যায় সংসার। ভেঙে যাওয়া সংসারের হাল ছেড়ে স্বামী যখন সঙ্গিবিহীন দিশেহারা, তখন স্ত্রী আবেগের তাড়নায় পরকীয়ার মিথ্যা মায়ার জালে জড়িয়ে অর্থ-পতিপত্তির লোভে নতুন সংসারে আবদ্ধ হন। এমনও ঘটনা রয়েছে যে স্বামী তার সন্তান হারিয়ে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এবং নিরুপায় হয়ে নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে রেখেছেন। সম্পর্কহীন জীবন আজ স্বপ্নের প্রবাসে নিঃসঙ্গ, নিস্তব্ধ করে রেখেছে তাকে।

জীবনের কর্মক্লান্তি এবং একাকীত্ব তিলে তিলে ধ্বংস করে দিচ্ছে শরীর মন দুটোই। স্বামী-স্ত্রীর কান্নার আওয়াজটা চার দেয়ালের মাঝেই চাপা পড়ে আছে। অনেক দম্পতিই শোক দুঃখের গ্লানি নিয়ে একটি দৃশ্যমান কারাগারের অন্তরীণ থাকার বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছেন। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায়, স্বামীর আর্থিক দুর্বলতার সুযোগে স্ত্রী পরপুরুষের হাত ধরে নতুন করে সংসার পেতেছেন। কমিউনিটিতে কিছু ভণ্ড অসৎ মানুষের উস্কানি ও কু-প্ররোচনায় সরল নিরীহ মহিলারা বিপথগামী এবং ভুল পথে পা বাড়িয়ে নিজের পরিবারকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।

অবাদ ব্যক্তি স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতা পরিবারের সদস্যদের ভিতর দ্বিমুখী মনোভাবের সৃষ্টি হয় এবং সেই কারণে অপরিচিত মানুষের সাথে অবাদ মেলামেশার সুযোগ বেড়ে যায়। যার ফলস্বরূপ নিজেদের ভিতর অবিশ্বাস, আত্মঅহমিকা এবং পরস্পরের শ্রদ্ধা ভালোবাসা হারিয়ে পারিবারিক ঝগড়া বিবাদ যেন নিত্যদিনের ঘটনা। পরিণতিতে পরিবার ভাঙ্গন এবং পারিবারিক জটিলতা একপর্যায়ে আইন-আদালত এমনকি জেল-হাজত পর্যন্ত গড়ায়। এমনো দেখা যায়, বাবা-মা দু’জনের পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝিতে এই নিরীহ পরিবারগুলো অস্তিত্ব হুমকিতে পড়ছে। ত্বরিতগতিতে ভেঙে যাচ্ছে ঘর-সংসার এবং পারিবারিক কাঠামো।

দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আস্থার বদলে অবিশ্বাস সন্দেহ, সংশয় আর লোভ জায়গা করে নিচ্ছে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ এবং ভুল বোঝাবুঝির সহনীয় পর্যায়ে না থাকার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য কলহের ঘটনা বাড়ছে দিন দিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের মধ্যে নৈতিকতাবোধ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার মহাকাব্যে পরিবারের প্রত্যেকেরই যথেষ্ট অবদান থাকে। সম্পর্কের বিবেচনায় তা যাই হোক না কেন? পরিবার মানেই ভালোবাসার অটুট বন্ধন। বাইরের পৃথিবীর নানা জ্বালা-যন্ত্রণা, অভাব-অভিযোগের বাইরে নিজের সদস্যদের নিয়ে ভেতরের পৃথিবী।

নতুন প্রজন্মের সংকট এবং উত্তরণের পথ কী?
ইদানীং বিদেশি সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট বাবা-মা তার সন্তানদের বাংলা ভাষাও সংস্কৃতি শিখাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। শুদ্ধ উচ্চারণ সমৃদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলা এবং লেখার জন্য সন্তানদের অনীহাও ভয়ানক আকার ধারণ করছে। পাশাপাশি কমিউনিটিতে নেতৃত্বের সংকট এবং উপযুক্ত দিক নির্দেশনা বা গাইড লাইনের যথেষ্ট অভাব। একজন দায়িত্ব সচেতন আদর্শিক নেতার বড়ই প্রয়োজন; যিনি প্রবাসী বাংলাদেশি পরিবারগুলোকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সফল হওয়ার পথ নির্দেশনা দিবেন। কমিউনিটির বিপদে-আপদে স্বার্থহীনভাবে কাজ করবেন। প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশিরা একদিকে যেমন জীবন আর বাস্তবতার সাথে বেঁচে থাকার লড়াই, অন্যদিকে ধর্ম আর সংস্কৃতিকে লালন করতে গিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বৈষয়িক শিক্ষায় মেধাতালিকার শীর্ষে প্রবাসী ছেলে-মেয়েরা বাবা-মা দুজনের সমান স্নেহ-মমতা, ভালোবাসা আর সঠিক গাইডলাইন না পেয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এ সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করছে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। বাবা-মা যখন ছেলেমেয়েদের পছন্দের জীবন ধারণের পদ্ধতিগুলো কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না, তখন শুরু হয় দ্বিমত আর পরস্পরবিরোধী সংঘাতের। ছেলেমেয়েরা অপ্রাপ্ত বয়সেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। বাবা-মাও নিরুপায় এবং দিশেহারা।

কমিউনিটিতে দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বিয়ে সংক্রান্ত জটিলতা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। ছেলেমেয়ে উভয়ের পছন্দের উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী খুঁজে পাওয়া যায় না। ছেলেমেয়েরা নিজেরা যদি নিজেদের উপযুক্ত জীবনসঙ্গী সঠিক সময়ে খুঁজে নিতে না পারলে সেটা অভিভাবকদের জন্য একটা বড় ধরনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক একই সময়ে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের পারিবারিক এবং ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে তাদের সংসার টিকিয়ে রাখাও দুরূহ হয়ে পড়েছে।

সংসারের ভাঙন রোধের উপায় কী?
প্রবাসে সংসার ভাঙন রোধের কোনো প্রতিষধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি; কিন্তু মানুষের বিশ্বাস, পরিবারিক ঐতিহ্য, ধর্ম আর নিজের শিক্ষা আর মানবিক চিন্তাচেতনার ওপর  নির্ভর করে পারিবারিক বন্ধন আর সংসারে সুখ। সমাজে স্বার্থপর মানুষের সংখ্যাই বেশি।  কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর বন্ধুত্বের মাঝে স্বার্থপরতার রেশ থাকবে কেন? দু’জনই পরিবারের যথোপযুক্ত দায়িত্বের ভার গ্রহণ করবে এটাই স্বাভাবিক। কোনো ব্যক্তি তখনই সুখী থাকেন যখন তার জীবনসঙ্গী একমত থাকেন। কোনো বিষয়ে মন খুলে কথা বলার ক্ষেত্রে সাদৃশ্য থাকা এবং মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মিল থাকা। এতে দম্পতির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মন কষাকষির আশঙ্কা কম থাকে। খোলামেলা ও স্বাধীনভাবে মন খুলে কথা বলার মতো সঙ্গী যখন একই গুরুত্ব দেখান তখন নারী ও পুরুষ উভয়ই সুখী হন। পরিবারে স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, পারস্পরিক সমঝোতা,  একে অপরের প্রতি সন্মান, শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য প্রয়োজন সহনশীলতা। একজন সহনশীল নারী-পুরুষই পারেন পরিবারের কঠিন বলয়ে বিমূঢ় বাস্তবতার ভিতরে পরিবারকে শক্ত হাতে সযত্নে লালন করতে। ধৈর্যশীল নারী-পুরুষই পারেন সুখ আর শান্তির নীড় গড়ে তুলতে।

কমিউনিটির নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য
বিদেশের মাটিতে পারিবারিক কাঠামো তৈরিতে উপযুক্ত পরিবেশ এবং সরকারি উদ্যোগে সরকারি দূতাবাসের প্রতিনিধিরাও কোনো গঠনমূলক কার্যক্রম করতে পারছেন না। হয়ত তাদের সীমিত লোকবল বাস্তবিক অভিজ্ঞতার জায়গাটিও ভিত শক্তিশালী নয়। একটি সফল পরিবার এবং সুখী দম্পতি গড়ে তুলতে এবং এ সমাজে টিকে থাকার সঠিক এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

কমিউনিটিতে পরস্পরের সোহার্দ আর সম্প্রীতির মেরুবৃত্ত তৈরি করতে হবে। ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কমিউনিটি সেন্টার একান্তই দরকার। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থের একটা বিশেষ অংশ রেমিটেন্স হিসেবে দেশে পাঠানো হয়। অথচ সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে পরিপূর্ণ ব্যংকিংয়ের কোনো ব্যবস্হা কনিউনিটিতে নেই।

কারিগরি শিক্ষাসহ স্বল্পমেয়াদি চিকিৎসা বিষয়ক ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের সুযোগ হলে প্রবাসী পরিবারের আর্থিক সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এবং মজবুত হবে বলে আমার বিশ্বাস। একটা পরিবারের সবাই যখন সবরকম জ্ঞানের শাখা-প্রশাখার ভিতরে ঘুরে বেড়ায়, তখন সেই পরিবার জ্ঞানের আলোয় বিস্ফোরিত হতে থাকে।

জ্ঞানসমৃদ্ধ সেই পরিবারটি বিকশিত হবে। দেশে হোক, প্রবাসে হোক স্বার্থক করে তুলবে নতুন প্রজন্ম। আমার সোনার মাটির সোনার মানুষগুলো বাংলায় কথা বলবে, কুশল বিনিময় করবে। বাংলা গান ও সংস্কৃতির চর্চা করবে। গর্ব এবং গৌরবের সাথে লাল-সবুজের পতাকা বহন করবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রবাসে সুখের জীবনযাপন করবে। আর্থিক সচ্ছলতার উন্নতি সাধন করবে। ভিনদেশের মাটিতে নিজেরা মাথা উঁচু করে সাহসের সাথে, আত্মতৃপ্তির সাথে আগামী দিনের পথ পরিক্রমায় এগিয়ে যাবে। স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে। সময়ের সাক্ষী, কালের সাক্ষী হয়ে একটি শক্তিশালী স্বনির্ভর বাংলাদেশি কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা লাভ করবে— এই আমাদের চাওয়া পাওয়া, আমাদের স্বপ্ন; আর কিছু নয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রবাসের সংসার ভাঙ্গন আর প্রজন্মের মহাসংকট

আপডেট টাইম : ০২:১৮:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রবাসী মানে কী? প্রবাসী মানে দাদা-দাদি, নানা-নানি, ভাইবোন আর নিকট আত্মীয়-পরিজনহারা এক অশান্ত, অনিশ্চিত জীবন। প্রবাসী মানে অঢেল অর্থ উপার্জনের কারিগর। প্রবাসী মানে, অর্থিক সচ্ছলতা, হাড়ভাঙা পরিশ্রমী একদল খেটে খাওয়া মানুষ। প্রবাসী মানে, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের মানবিক মূল্যবোধের মৌলিক আদর্শে একটু হলেও আপস করে নেওয়া। প্রবাস জীবনে সামাজিক অসঙ্গতি এবং ধর্মীয় আচার-আচরণের অনিয়ম অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নেয়া এবং মা-মাটি আর জন্মভূমিকে স্মৃতি রোমন্থন করা— আরও কত কী!

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে সুখ আর সমৃদ্ধির আশায় স্বপ্নের লীলাভূমি ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। মূলত ডাইভার্সির্টি পোগ্রামসহ স্টুডেন্ট, ভ্রমণ এবং ব্যবসায়িক ভিসায় এবং পরবর্তীতে চেইন মাইগ্রেশনের সুবাদে লাখো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পরিবার-পরিজন নিয়ে বিশ্বের মেগা শহরগুলোতে যেমন- নিউইয়র্ক, লসঅ্যাঞ্জেলেস, ফ্লোরিডা, ফ্রাঙ্কফুর্ট, স্টকহোম, এবং লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সবার জীবনের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও পারিবারিক কাঠামো, আর্থিক সামজিক অবস্থান ভিন্ন হলেও এ জনগোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য পরিবারের আদরের সন্তানটির মুখে একমুঠো হাসি ফোটানো।
সুখ-শান্তি ভরা একটি সফল পরিবার গঠনের আশায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে প্রবাস জীবন বেছে নিয়েছেন তারা। ফেলে আসা দুরন্ত শৈশব-কৈশরের বাঁধনহীন দুরন্তপনা, মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবের আড্ডা সবকিছুই আজ সোনালি অতীত।

হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে যেই চাকরিটি আত্মসম্মানের ভয়ে নিজ দেশে করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন, তার চেয়েও কঠিন চাকরি বিদেশের মাটিতে করে পরিবারের পাশে মানবতার খুঁটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং মেধাকে কাজে লাগিয়ে অনেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সফল ব্যবসায়ী হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছেন দেশে-বিদেশে। আবার অনেকে জিবন জীবিকার বেঁচে থাকার সংগ্রামে বৈধ কাগজপত্রের অভাবে বছরের পর বছর নিকট আত্মীয়স্বজনের সাক্ষাতের সুযোগ না পেয়ে হতাশ এবং আতঙ্কিত। মোট জনসংখ্যার অধিকাংশই নিজের শ্রম-মেধাকে অকাতরে বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছেন প্রবাসের মাটিতে। এই বিরতিহীন শ্রমসাধনা এবং কায়িক পরিশ্রমের কতটুকু সার্থকতা পেয়েছেন অভিবাসিত বাংলাদেশি পরিবারগুলো? বিদেশি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় ভিনদেশী ভাষা আর বাংলাভাষার  বিরোধ বৈষম্যতার মাঝে কিভাবে গড়ে তুলছেন নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের? কেমন চলছে তাদের ধর্ম-কর্ম, সামজিক রীতিনীতি, পারিবারিক আতিথিয়তা এবং বাংলা সংস্কৃতির পরিচর্চা? এমন হাজারও প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই! প্রবাসী সংসার ভাঙণের কারণ কী?

প্রবাসের কর্মময় জীবনে প্রবাসী পরিবারগুলোর সার্বিক কাঠামো, সুস্থ জীবন-দর্শন, পরস্পরের সম্পর্কের মেলবন্ধন কতটুকু শক্তিশালী এবং গতিময়? প্রতিদিনের জীবন যাত্রার মান কতটুকু মানসমৃদ্ধ এবং উন্নত? কেন ভেঙে যাচ্ছে ঘর-সংসার? কারা ভাঙছে অতি যত্নের গড়ে তোলা প্রবাসী স্বামী-স্ত্রীর চোট্ট সুখের নীড়? এক স্বপ্নদেখা যুবকের শ্রমসাধ্য উপার্জনের তিল তিল করে সঞ্চিত অর্থে দেশে বিয়ে করা স্ত্রীর সঙ্গে প্রবাসের নতুন সংসার ধর্ম  শুরু করেন। নিয়তির খেলাঘরে কোনো এক সময় স্বামী স্ত্রীর মধুর সম্পর্কের তিক্ততা আর ঘৃণা বাড়তে বাড়তে ভেঙে যায় সংসার। ভেঙে যাওয়া সংসারের হাল ছেড়ে স্বামী যখন সঙ্গিবিহীন দিশেহারা, তখন স্ত্রী আবেগের তাড়নায় পরকীয়ার মিথ্যা মায়ার জালে জড়িয়ে অর্থ-পতিপত্তির লোভে নতুন সংসারে আবদ্ধ হন। এমনও ঘটনা রয়েছে যে স্বামী তার সন্তান হারিয়ে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এবং নিরুপায় হয়ে নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে রেখেছেন। সম্পর্কহীন জীবন আজ স্বপ্নের প্রবাসে নিঃসঙ্গ, নিস্তব্ধ করে রেখেছে তাকে।

জীবনের কর্মক্লান্তি এবং একাকীত্ব তিলে তিলে ধ্বংস করে দিচ্ছে শরীর মন দুটোই। স্বামী-স্ত্রীর কান্নার আওয়াজটা চার দেয়ালের মাঝেই চাপা পড়ে আছে। অনেক দম্পতিই শোক দুঃখের গ্লানি নিয়ে একটি দৃশ্যমান কারাগারের অন্তরীণ থাকার বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছেন। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায়, স্বামীর আর্থিক দুর্বলতার সুযোগে স্ত্রী পরপুরুষের হাত ধরে নতুন করে সংসার পেতেছেন। কমিউনিটিতে কিছু ভণ্ড অসৎ মানুষের উস্কানি ও কু-প্ররোচনায় সরল নিরীহ মহিলারা বিপথগামী এবং ভুল পথে পা বাড়িয়ে নিজের পরিবারকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।

অবাদ ব্যক্তি স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতা পরিবারের সদস্যদের ভিতর দ্বিমুখী মনোভাবের সৃষ্টি হয় এবং সেই কারণে অপরিচিত মানুষের সাথে অবাদ মেলামেশার সুযোগ বেড়ে যায়। যার ফলস্বরূপ নিজেদের ভিতর অবিশ্বাস, আত্মঅহমিকা এবং পরস্পরের শ্রদ্ধা ভালোবাসা হারিয়ে পারিবারিক ঝগড়া বিবাদ যেন নিত্যদিনের ঘটনা। পরিণতিতে পরিবার ভাঙ্গন এবং পারিবারিক জটিলতা একপর্যায়ে আইন-আদালত এমনকি জেল-হাজত পর্যন্ত গড়ায়। এমনো দেখা যায়, বাবা-মা দু’জনের পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝিতে এই নিরীহ পরিবারগুলো অস্তিত্ব হুমকিতে পড়ছে। ত্বরিতগতিতে ভেঙে যাচ্ছে ঘর-সংসার এবং পারিবারিক কাঠামো।

দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আস্থার বদলে অবিশ্বাস সন্দেহ, সংশয় আর লোভ জায়গা করে নিচ্ছে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ এবং ভুল বোঝাবুঝির সহনীয় পর্যায়ে না থাকার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য কলহের ঘটনা বাড়ছে দিন দিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের মধ্যে নৈতিকতাবোধ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার মহাকাব্যে পরিবারের প্রত্যেকেরই যথেষ্ট অবদান থাকে। সম্পর্কের বিবেচনায় তা যাই হোক না কেন? পরিবার মানেই ভালোবাসার অটুট বন্ধন। বাইরের পৃথিবীর নানা জ্বালা-যন্ত্রণা, অভাব-অভিযোগের বাইরে নিজের সদস্যদের নিয়ে ভেতরের পৃথিবী।

নতুন প্রজন্মের সংকট এবং উত্তরণের পথ কী?
ইদানীং বিদেশি সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট বাবা-মা তার সন্তানদের বাংলা ভাষাও সংস্কৃতি শিখাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। শুদ্ধ উচ্চারণ সমৃদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলা এবং লেখার জন্য সন্তানদের অনীহাও ভয়ানক আকার ধারণ করছে। পাশাপাশি কমিউনিটিতে নেতৃত্বের সংকট এবং উপযুক্ত দিক নির্দেশনা বা গাইড লাইনের যথেষ্ট অভাব। একজন দায়িত্ব সচেতন আদর্শিক নেতার বড়ই প্রয়োজন; যিনি প্রবাসী বাংলাদেশি পরিবারগুলোকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সফল হওয়ার পথ নির্দেশনা দিবেন। কমিউনিটির বিপদে-আপদে স্বার্থহীনভাবে কাজ করবেন। প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশিরা একদিকে যেমন জীবন আর বাস্তবতার সাথে বেঁচে থাকার লড়াই, অন্যদিকে ধর্ম আর সংস্কৃতিকে লালন করতে গিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বৈষয়িক শিক্ষায় মেধাতালিকার শীর্ষে প্রবাসী ছেলে-মেয়েরা বাবা-মা দুজনের সমান স্নেহ-মমতা, ভালোবাসা আর সঠিক গাইডলাইন না পেয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এ সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করছে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। বাবা-মা যখন ছেলেমেয়েদের পছন্দের জীবন ধারণের পদ্ধতিগুলো কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না, তখন শুরু হয় দ্বিমত আর পরস্পরবিরোধী সংঘাতের। ছেলেমেয়েরা অপ্রাপ্ত বয়সেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। বাবা-মাও নিরুপায় এবং দিশেহারা।

কমিউনিটিতে দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বিয়ে সংক্রান্ত জটিলতা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। ছেলেমেয়ে উভয়ের পছন্দের উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী খুঁজে পাওয়া যায় না। ছেলেমেয়েরা নিজেরা যদি নিজেদের উপযুক্ত জীবনসঙ্গী সঠিক সময়ে খুঁজে নিতে না পারলে সেটা অভিভাবকদের জন্য একটা বড় ধরনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক একই সময়ে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের পারিবারিক এবং ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে তাদের সংসার টিকিয়ে রাখাও দুরূহ হয়ে পড়েছে।

সংসারের ভাঙন রোধের উপায় কী?
প্রবাসে সংসার ভাঙন রোধের কোনো প্রতিষধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি; কিন্তু মানুষের বিশ্বাস, পরিবারিক ঐতিহ্য, ধর্ম আর নিজের শিক্ষা আর মানবিক চিন্তাচেতনার ওপর  নির্ভর করে পারিবারিক বন্ধন আর সংসারে সুখ। সমাজে স্বার্থপর মানুষের সংখ্যাই বেশি।  কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর বন্ধুত্বের মাঝে স্বার্থপরতার রেশ থাকবে কেন? দু’জনই পরিবারের যথোপযুক্ত দায়িত্বের ভার গ্রহণ করবে এটাই স্বাভাবিক। কোনো ব্যক্তি তখনই সুখী থাকেন যখন তার জীবনসঙ্গী একমত থাকেন। কোনো বিষয়ে মন খুলে কথা বলার ক্ষেত্রে সাদৃশ্য থাকা এবং মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মিল থাকা। এতে দম্পতির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মন কষাকষির আশঙ্কা কম থাকে। খোলামেলা ও স্বাধীনভাবে মন খুলে কথা বলার মতো সঙ্গী যখন একই গুরুত্ব দেখান তখন নারী ও পুরুষ উভয়ই সুখী হন। পরিবারে স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, পারস্পরিক সমঝোতা,  একে অপরের প্রতি সন্মান, শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য প্রয়োজন সহনশীলতা। একজন সহনশীল নারী-পুরুষই পারেন পরিবারের কঠিন বলয়ে বিমূঢ় বাস্তবতার ভিতরে পরিবারকে শক্ত হাতে সযত্নে লালন করতে। ধৈর্যশীল নারী-পুরুষই পারেন সুখ আর শান্তির নীড় গড়ে তুলতে।

কমিউনিটির নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য
বিদেশের মাটিতে পারিবারিক কাঠামো তৈরিতে উপযুক্ত পরিবেশ এবং সরকারি উদ্যোগে সরকারি দূতাবাসের প্রতিনিধিরাও কোনো গঠনমূলক কার্যক্রম করতে পারছেন না। হয়ত তাদের সীমিত লোকবল বাস্তবিক অভিজ্ঞতার জায়গাটিও ভিত শক্তিশালী নয়। একটি সফল পরিবার এবং সুখী দম্পতি গড়ে তুলতে এবং এ সমাজে টিকে থাকার সঠিক এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

কমিউনিটিতে পরস্পরের সোহার্দ আর সম্প্রীতির মেরুবৃত্ত তৈরি করতে হবে। ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কমিউনিটি সেন্টার একান্তই দরকার। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থের একটা বিশেষ অংশ রেমিটেন্স হিসেবে দেশে পাঠানো হয়। অথচ সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে পরিপূর্ণ ব্যংকিংয়ের কোনো ব্যবস্হা কনিউনিটিতে নেই।

কারিগরি শিক্ষাসহ স্বল্পমেয়াদি চিকিৎসা বিষয়ক ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের সুযোগ হলে প্রবাসী পরিবারের আর্থিক সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এবং মজবুত হবে বলে আমার বিশ্বাস। একটা পরিবারের সবাই যখন সবরকম জ্ঞানের শাখা-প্রশাখার ভিতরে ঘুরে বেড়ায়, তখন সেই পরিবার জ্ঞানের আলোয় বিস্ফোরিত হতে থাকে।

জ্ঞানসমৃদ্ধ সেই পরিবারটি বিকশিত হবে। দেশে হোক, প্রবাসে হোক স্বার্থক করে তুলবে নতুন প্রজন্ম। আমার সোনার মাটির সোনার মানুষগুলো বাংলায় কথা বলবে, কুশল বিনিময় করবে। বাংলা গান ও সংস্কৃতির চর্চা করবে। গর্ব এবং গৌরবের সাথে লাল-সবুজের পতাকা বহন করবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রবাসে সুখের জীবনযাপন করবে। আর্থিক সচ্ছলতার উন্নতি সাধন করবে। ভিনদেশের মাটিতে নিজেরা মাথা উঁচু করে সাহসের সাথে, আত্মতৃপ্তির সাথে আগামী দিনের পথ পরিক্রমায় এগিয়ে যাবে। স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে। সময়ের সাক্ষী, কালের সাক্ষী হয়ে একটি শক্তিশালী স্বনির্ভর বাংলাদেশি কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা লাভ করবে— এই আমাদের চাওয়া পাওয়া, আমাদের স্বপ্ন; আর কিছু নয়।